মাসুমুল আলমের জন্ম ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি, যশোরে। দিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার।
বাবা আজহার উদ্দীন ছিলেন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার আগে জীবিকার সন্ধানে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির সৈনিক হয়ে কোলকাতা-শিয়ালকোট-কোয়েটা-তামিলনাড়ু-রেঙ্গুন হয়ে '৪৭ এর আগে আগে চাকরি শেষে দেশে ফিরে যশোরে শিক্ষকতায় যুক্ত হন৷ বই আছে ২টি; কবিতার। অপ্রকাশিত হাজারের ওপর লিমেরিক।
আর মায়ের একটাই পরিচয়— ব্যাপক পড়ুয়া। না, বিষাদসিন্ধু বা আনোয়ারা বা প্রেমের সমাধি-টমাধি না, —রীতিমতো ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের 'ডমরু-চরিত' বা পরশুরামের 'কজ্জলি' অথবা 'হনুমানের স্বপ্ন' পড়তে দেখা গেছে তাঁকে।
৫ ভাই। মোটামুটি সবাই লেখে। আঁকে। বইপত্র আছে কারো কারো।
মাসুমুল আলম নিজে পড়াশোনা শেষ করেছেন যতোটুকু করলে হয়। এবং একটা চাকরিও করতে হচ্ছে তাকে। ফুলটাইমার লেখক নন বরং মায়ের মতোই পড়ুয়া হওয়ার চেষ্টা। যেহেতু বাড়িতে বহু বিচিত্র বইয়ের সমাহার ছিলো। পড়ার অভ্যাসটা জারি রাখার চেষ্টা করেন এখনো।
মাসুমুল আলমের লেখালেখির শুরু ’৯০-এর দশকে। প্রতিশিল্পও বের হচ্ছে সে সময়ে৷ তাঁর গল্প, অনুবাদ এই লিটল ম্যাগাজিনটি ঘিরেই তখন। পরে, ক্রমশ শিরদাঁড়া, গাণ্ডীব, জঙশন, দ্রষ্টব্য, অনিন্দ্য, দুয়েন্দে, সূর্যঘড়ি লিটলম্যাগের সাথে যুক্ততা তৈরি হয়৷
প্রথম গল্পের বই প্রকাশিত হয় উলুখড় থেকে। কথাসাহিত্যিক প্রয়াত কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর তাঁর 'গল্পের গল্প' বইটির 'নয় দশকের গল্পকারঃ একটি প্রাথমিক সমীক্ষা' প্রবন্ধে মাসুমুল আলমের ২০ টি গল্পসমেত ‘নামপুরুষ ও অন্যান্য’ এই দীর্ঘায়তন বইটি সম্বন্ধে বলেছেন, “নিজেকে আড়ালের ভেতর দাপট বহাল রাখার বিষয, নিজেকে দেখার রূপ ছড়ান তিনি।” মূলত এই অবলোকন সৃজিত হয়েছে বাস্তবের আকার ও পরাবাস্তব অথবা তীর্যক বাস্তবের নিরাকারের দ্বন্দ্বে ও বিভ্রমে, নিরন্তর চর্চা এবং মনননির্ভর ধ্যানে।
মাসুমুল আলম একজন নিমগ্ন কথাসাহিত্যক। একইসঙ্গে তিনি গোষ্ঠীগত আবার পরক্ষণে আলাদা, এবং একা। নিজের মতো একলা চলার পথ রয়েছে তাঁর। তবু, অতোটা উচ্চকিত নন তিনি।
আমরা জানি, লেখালেখি অনেক রকমের হয়। এক একজন লেখকের ভিত্তিতে বলা হয় কথাটা। সেখানে গত ২৬ বছর ধরে একজন মাসুমুল আলমের লেখালেখি অনেক রকম হয়ে উঠতে দেখা যায়। শুধুমাত্র লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া নয়, দেখার নানা সম্ভাবনা জারি থাকা হলো একজন লেখকের চলিষ্ণুতা। ইন- বিটুইন- দ্য লাইনস অতীত আর সমসাময়িক বিষয়ের ট্যুইস্ট তাঁর ন্যারেশনকে ঘনবুনট মাল্টিডাইমেনশনাল করেছে। স্বতঃস্ফূর্ত চকিত বয়ানের ক্যাসুয়ালিটির ভেতর সচেতন পাঠে রয়েছে এক আন্ডারটোন — টেক্সটের মধ্যে লুকানো হাতের তাশ আবিষ্কার করেন অনুসন্ধানী পাঠক। হ্যাঁ, মনস্ক পাঠক।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো:
- বরফের ছুরি (গল্প, ২০২০)
- কথাপরিধিঃ ২২ পয়েন্ট বোল্ড ও অন্যান্য (গদ্য, ২০২০)
- দর্শনীর বিনিময়ে (গল্প, ২০১৯)
- মৌন ধারাপাত (উপন্যাস, ২০১৭)
- আরব্যরজনীর ঘোড়া (উপন্যাস, ২০১৬)
- র্যাম্প, বার-বি-কিউ আর কানাগলির হুলো (উপন্যাস, ২০১৩)
- নামপুরুষ ও অন্যান্য (গল্প, ২০১১)
- মেন ইন দ্য সান- ঘাসান কানফানি (ফিলিস্তিনি উপন্যাস/অনুবাদ)
আর রয়েছে বিভিন্ন ছোটকাগজে, ওয়েবজিনে ছড়ানো ছিটানো ৩০টির মতো অনূদিত গল্প এবং একটি অপ্রকাশিত উচ্চাকাঙ্খী উপন্যাসের ভার নিয়ে এখন তিনি দিনাতিপাত করছেন।
এই৷ এইই তাঁর আখ্যানবিশ্ব। তাঁকে নিয়ে এবার বিন্দুর অনলাইন সংস্করণে আমরা প্রকাশ করছি বিশেষ সংখ্যা৷ তাঁকে নিয়ে, তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা লিখতে পারেন আপনিও৷ এমনকি লিখতে পারেন স্মৃতিগদ্যও৷ শব্দসংখ্যা অনির্ধারিত৷ ১৫ নভেম্বর ২০২০ এর মধ্যে লেখাটি প্রস্তুত করে ইউনিকোড ফর্মেটে পাঠিয়ে দিন বিন্দুর মেইলে৷ ইমেইল এড্রেসঃ bindumag2006@gmail.com
মাসুমুল আলমের কয়েকটি ছোটগল্প পড়ুন:
মন্তব্য