পার্লামেন্টারি মিটিং
বেহেশতে বাংলাদেশ রিজিওনের পার্লামেন্টারি মিটিং শুরু হইছে। এইটা ৬৯ তম পার্লামেন্টারি মিটিং। মিটিংয়ের সাবজেক্ট 'বাঙলার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ'। মিটিং চলতেছে ৩২ নম্বর বিল্ডিংয়ে। বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জে আছেন মেজর খালেদ মোশাররফ আর মেজর জিয়া। মেজর খালেদ আর মেজর জিয়া সিকিউরিটি রুমে বসে আছেন। এমন সময় ভাস্কর মৃণাল হক সিকিউরিটি রুমে এসে বললেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে চাই। খুব আর্জেন্ট।
মেজর খালেদ সিগারেটে আয়েশে লাস্ট টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, এইটা এখন পসিবল না। ভিতরে আরো আর্জেন্ট মিটিং চলে। আপনার ওয়েট করা লাগবে।
মৃণাল হক বললেন, আমাকে তো তিনি নিজেই মিটিংয়ে আসতে বলছেন।
মেজর জিয়া এইবার চেয়ারে একটু নড়া দিয়ে বললেন, সাথে পাস আছে? পাস না থাকলে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট কিনে নিয়ে আসেন। পাসের ব্যবস্থা করতে হবে না?
মৃণাল হক বললেন, পাস আছে। সিগারেট খাইতে চাইলে এমনিই বলতে পারেন, খাওয়াবো। পাসের দোহাই দেন কেন?
অবস্থা বেগতিক বুঝে মেজর খালেদ বললেন, যান, সিগারেট লাগবে না। মিটিংয়ে লেট হয়ে যাইতেছে।
মিটিং-রুমের দরজা খুলে দাঁড়াতেই বঙ্গবন্ধু দরাজ গলায় বললেন, কে মৃণাল নাকি? তুই তো লেট করে ফেলছিস। আয় ভিতরে আয়। চেয়ারে বইসা যা। মরার পরেও বাঙালের লেট হবার অভ্যাস আর গেল না। আমরা কবে পাঙচুয়াল হবো কে জানে?
মৃণাল হক কাঁচুমাচু মুখে সরি বলে চেয়ারে বসলেন। এই কথার উত্তর আসলে দেয়া যায় না। দিতে গেলেও পুরা গল্প বলতে হয়। এত বড় মাপের মানুষের কথার পিঠে কথা বলাটা ধৃষ্টতা। মিটিং অবশ্য বেশি দূর আগায় নাই। শেখ কামাল বর্তমান বাংলাদেশের ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিবেদন দিতেছে সবার সামনে।
শেখ কামাল বললেন, ফেসবুকে ক্রিকেটার সাকিবকে প্রচুর গালাগাল করা হইতেছে। একজন তো ফেসবুক লাইভে এসে হত্যার হুমকিও দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু বললেন, সাকিব মানে ঐ অলরাউন্ডার টা? ভালোই তো খেলে। কেন কী করছে সে?
শেখ কামাল বললেন, সাকিব কলকাতায় কোনো এক দীপাবলি কালীপূজা'র অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে গিয়েছিল। তাতেই কাঠমোল্লারা ক্ষেপছে। কাফের বলা হইতেছে তারে।
বঙ্গবন্ধু বললেন, দীপাবলি একটা নস্টালজিক ব্যাপার। কলকাতায় যখন ছিলাম তখন দেখতাম আলো দিয়া গোটা শহর ভরায়া ফেলছে। মনে হইতো দুনিয়া আলোয় আলোকিত হয়া গেছে। এই সামান্য ব্যাপারের জন্য কাফের বলতেছে তারে? হত্যা করতে চায়? খুব অন্যায়। এতটা গোঁড়ামি আমি আশা করি নাই বাংলাদেশে।
তাজউদ্দীন বললেন, এইটার জন্য পুরাপুরি এরশাদ দোষী। বাংলাদেশে এরশাদই রাষ্ট্রধর্ম কায়েম করছে। দেশের মেনুস্ক্রিপ্ট চেঞ্জ করে মেজোরিটিরে ফোকাস করছে। এর দায় এরশাদকে নিতেই হবে।
এরশাদ একটু ঢোক গিলে বললেন, একটু ওয়েট। এইভাবে একতরফা দোষারোপ আমি মানবো না। মেজর জিয়া কই? ওহ তিনি তো সিকিউরিটি ইন চার্জ। যাক, জিয়ার কি কোনো দোষ নাই? আর খন্দকার মোস্তাক তো সমসময়ই পাকিস্তানপন্থী ছিলেন। তার কোনো দোষ নাই?
এই কথা শুনে মোস্তাকের মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। মোস্তাক আমতা আমতা করে ঢোক গিলে বললেন, আ...আমি? আমি তো মাত্র ৮৩ দিন ক্ষমতায় ছিলাম। তা-ও আবার অন্যের কথায় উঠবোস করছি। নিজের কোনো ক্ষমতাই ছিল না।
সোহরাওয়ার্দী বললেন, মোস্তাক তুমি তোমার দোষ এড়ায়ে যাইও না। তোমাকে দায় নিতে হবেই। তুমি বেঈমানী করছো। তুৃমি বঙ্গবন্ধুরে হত্যায় মদদ দিছ।
সিরাজ শিকদার বললেন, হ্যা। দায়-স্বীকার করতেই হবে। আর বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সেইটার কোনো ইফেক্ট কি নাই?
বঙ্গবন্ধু বললেন, একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশরে রিপেয়ার তুমি কেমনে করবা সিরাজ? তোমার মতো শ্রেণীশত্রু মাইরা কি দেশরে রিপেয়ার করা যায়? সেই সময় কি আমাদের হত-দরিদ্র দেশের জন্য ভিক্ষার দরকার ছিল না? বিশ্বজনমত দরকার ছিল না? দেশটার স্বীকৃতি লাভের জন্য বিশ্বরাজনীতির সাথে কোলাবরেটের দরকার ছিল না? সর্বহারা হইয়া খালি শ্রেণিশত্রু মাইরা কি সেইসব করা যাইতো? আর হ্যা আমি ভিক্ষাই বলবো ঐটা। সাহায্য না।
সোহরাওয়ার্দী বললেন, তোমরা এগুলা দোষারোপের ফিরিস্তি বন্ধ করবা নাকি মিটিংয়ে এগুলাতেই সময় বরবাদ করবা? অতীতের ইতিহাস থেকে বাঙালাদেশিরা কিছু শিখতে পারছে কিনা সেইটাই এখন প্রশ্ন।
মৃণাল হক বললেন, আমার তো সেইরকম মনে হয় না। আমার জাস্টিস লেডি ভাস্কর্যটারে তো অশ্লীল, অর্ধামিক, কাফের কাজের তকমা দিয়ে মাঝরাতে পুলিশের পাহারায় কোর্টের সামনে থেকে সরায়া দিল। আমি তো আর্টিস্ট তাই না? আমারো তো খারাপ লাগে। এখন দেখেন, যে মৌলবাদী গোষ্ঠী আমার আর্টকে সহ্য করতে পারলো না তারাই আবার ধোলাইখালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বানাইতে বাঁধা দিতেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গার পানিতে ফেলে দিতে চাইছে মৌলবাদীরা। এই গোষ্ঠীর প্রেতাত্মারাই কিন্তু অতীতে শহীদ মিনার ভাঙছিল। তাইলে অতীত থেকে বর্তমান কী শিখলো আর বর্তমান থেকে ভবিষ্যতই বা কী শিখবে?
এতক্ষণ মিটিংয়ে বাংলার বাঘ এ. কে ফজলুল হক চুপচাপ শুধু সব কথা শুনছিলেন। এই প্রথম তিনি গমগম গলায় কথা বললেন, শোনো আমরা অতীতে দেশটারে নিয়ে যেমনে ভাবছি তারই কম্পাউন্ড ইফেক্ট হইলো আজকের বাংলাদেশ। আর আজকের দিনের মানুষ যেইভাবে ভাবতেছে তার কম্পাউন্ড ইফেক্টই হবে দেশের ভবিষ্যৎ।
মাওলানা ভাষানী সাহেব খুক খুক করে কেশে বললেন, কিন্তু আমার কিষাণ ভাইগোর কী হইবো? হেরা এখন মনের দুঃখে কৃষিকাজ ছাইড়াই দিতাছে। হুনছি-- তারা ঢাকায় চইলা যায় চাকরি করতে, রিক্সা চালাইতে। তারা নাকি এখন আর চাষবাসের স্বপ্ন দেখে না। সবাই নাকি ছেলে-মেয়েরে কেরানী বানাইতে চায়। চাষবাস কী অপূর্ব কাজ তুমি জানো? কত দায়িত্বশীল হইতে হয় কাজের প্রতি তার কোনো আইডিয়া আছে তোমাগো? গাছ মানে তো জীবন, সেই জীবনের যত্ন করতে হয় দিনরাত। কয়জন পারে এতটা দায়িত্ব নিতে? তুমি আমি ঐরকম দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে পারছি?
মাওলানা সাহেবের কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলেন। জাতীয় চার নেতাবৃন্দ মিটিংয়ে আর কিছুই বলতে পারলেন না। সবাই নিজের নিজের মনে সুন্দর একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন আঁকার চেষ্টা করলেন। যে স্বপ্নে মানুষ তাড়িত হয় ভীষণ ইচ্ছাশক্তির দিকে। তাঁদের স্বপ্নের ছবিতে একটা ফুটফুটে শিশুর মুখে বাংলার ছবি। সেই ছবিতে একটা ফোকলা দাঁতের খুকির হাসি।
এক কাপ সাংবিধানিক চা
বেহেশতে হিমেল হাওয়া বহিতেছে। চায়ের দোকানগুলা একটু ফাঁকাফাঁকাই। তো শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ইনফরমেশন পেয়েছেন যে, সিলেট থেকে নতুন চা ইম্পোর্ট করেছে বেহেশতের টঙ দোকানগুলা। তাই চা খেতে তিনি বের হয়েছেন। যেতে যেতে রাস্তায় ড. আনিসুজ্জামানের সাথে তার দেখা হয়ে গেল। আনিসুজ্জামান সাহেব কয়েকমাস হলো বেহেশত-নসিব করেছেন। এখনও পুরা এলাকাটা তিনি আয়ত্তে আনতে পারেন নাই। তাই একটু হেঁটে হেঁটে হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন। দেখা হওয়ায় শিল্পাচার্য সাহেব প্রফেসর সাহেবকে চা খাওয়ার ইনভাইটেশন দিলেন। বললেন, চলেন বেহেশতের টঙ দোকানগুলা আর আড্ডার ঘাঁটিগুলা আপনেরে চিনায়া দেই। টিএসসিতে তো বহুত রঙ-চা আর অপরাজিতা-চা খাইছেন। এইখানকার গ্রিন-টি খায়া দেখেন। আনিসুজ্জামান সাহেব ইনভাইটেশন এক্সেপ্ট করে বললেন, চলেন যাওয়া যাক।
তারা দুইজনে টঙ দোকানে গিয়ে দেখেন জাতীয় চার নেতা চা খেতে খেতে আড্ডা দিতেছে।
ওনাদেরকে দোকানে আসতে দেখেই তাজউদ্দীন আহমদ খোশমেজাজে বললেন, আরে দেখেন দেখেন কে এসেছে...আমাদের দুই লিজেন্ড। ও মনা লিজেন্ডগোরে চা খাওয়া। স্পেশাল সিলেটের গ্রিন-টি দে। আর আপনারা ঐ চেয়ার দুইটা টান দিয়ে বসেন এইখানে।
শিল্পাচার্য সাহেব একটু লাজুকভাবে বললেন, আ..হা.. এগুলা কী যে বলেন! আপনেরা হইলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রথম মন্ত্রী মিনিস্টার। আর আপনে এইভাবে বললে তো শরম লাগে। আচ্ছা কী লইয়া ডিসকাস হইতেছিল? দূর থেকে দেখে মনে হইলো খুব সিরিয়াস কিছু?
ক্যাপ্টেন মনসুর আলী একটু কেশে গলা সাফ করে বললেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েই কথা বলতেছিলাম। দেশে তো অনেক সমস্যা। বেহেশতে থেকে তো গসিপ করা ছাড়া আর কোনো কাজ করতে পারতেছি না।
আনিসুজ্জামান সাহেব বললেন, তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু স্পেসিফিক কোনটা ইন্ডিকেট করছেন তা বলেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাগী ভঙ্গিতে বললেন, ঐ যে কিছু দিন আগে সংসদে গিয়ে বগুড়া ৭ আসনের সাংসদ বাবলু ফেমিনিস্টদের উপর আর পোশাকের উপর রেইপের দায় চাপায়া দিলো--এইটা কেমন কথা? এইটা নিয়েই কথা বলতেছি আমরা।
আনিসুজ্জামান সাহেব মাথা নেড়ে বললেন, ও আচ্ছা। বাংলাদেশের সাংসদদের তো অর্ধেকের বেশিই মূর্খ আর বর্বর। বাবলুও তাই। তার মধ্যে সে তো জিয়ার এলাকার লোক। বাবলু আসলে একটা পটেনশিয়াল রেপিস্ট। আসলে এইরকম যারাই রেইপের জন্য রেপিস্টরে ব্লেইম না দিয়ে ইনায়াবিনায়া মেয়েদের পোশাক বা আচরণ কিংবা ফেমিনিজমকে ব্লেইম দেয়--তারাই পটেনশিয়াল রেপিস্ট। কারণ সে ক্রাইমটারে রোমিং দিতেছে। এবং নিজে হয়তো মানসম্মান যাওয়ার ভয়ে ক্রাইম করতেছে না, কিন্তু ইনারা সুযোগ পেলে যে ক্রাইমটা করবে না--তার শিওরিটি দেওয়া যায় না।
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বললেন, এইটা আপনি হক-কথা বলছেন প্রফেসর সাহেব। কিন্তু আমার কোয়েশ্চেন অন্য জায়গায়। এতগুলা নারী সাংসদ ছিল সেইখানে স্পিকারও তো নারীই ছিলেন তাহলে কেউ প্রটেস্ট করলো না কেন? প্রটেস্ট না করাটা মেনে নিতে পারতেছি না।
শিল্পাচার্য সাহেব চিন্তিতভাবে বললেন, আপনের সাথে আমিও একমত। প্রটেস্ট করা উচিত ছিল সংসদে। কিন্তু বাংলাদেশে আরেকটা সমস্যা যে কী বিশাল বপু ধারণ করছে সেইটা লইয়া আপনেরা চিন্তাফিকির কিছু করছেন?
তাজউদ্দীন আহমদ বললেন, স্পেসিফাই করে বলেন। কোনটার কথা বলতে চাচ্ছেন?
শিল্পাচার্য সাহেব গলার স্বর একটু নামিয়ে বললেন, কাঠমোল্লাদের ফতোয়ার কথা বলতেছি। উনারা ওয়াজ-মাহফিল করে যেমনে মানুষরে ভরকায়া দিতেছে, উনারা যেইভাবে আর্ট-কালচারকে পলিউটেড করতে চাইতেছে, সংবিধানরে পলিউটেড করতেছে, যেইভাবে বারবার কুসংস্কারের অন্ধকারের কথা বলতেছে...এইভাবে চললে তো দেশে প্রগতিশীলতা বলতে কিছুই থাকবো না। মানুষ গান গাইবে, ছবি আঁকবে, কবিতা লিখবে, বিজ্ঞান জানবে তবেই তো প্রগতিশীলতা আসবে।
আনিসুজ্জামান সাহেব নিস্পৃহভাবে বললেন, এইটা কি আজকে নতুন নাকি বাংলাদেশে? বাকশাল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকেই তো সংবিধান ম্যানুপুলেটেড হইছে। ম্যানুপুলেট না বলে পলিউটেডও বলা যায়।
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আশ্চর্য হয়ে বললেন, এইটা আপনে কী বললেন? এই চরম পরিস্থিতির জন্য আপনে বাকশালরে ব্লেইম দিতেছেন কেন? আর সেইটা তো কার্যকরও না এই সময়।
আনিসুজ্জামান সাহেব বললেন, দেখেন বাকশালের যদি কোনো ইফেক্ট না থাকতো তা হলে তো আর ১৯৭৫ এর মতো কালো অধ্যায় বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটতো না তাই না? এমন মর্মান্তিক একটা বছর ১৯৭৫ সেইটা আপনারা নিজেরাই বুঝতেছেন। আপনারা সবাই সেই ভয়াল গ্রাসের ভুক্তভোগী। বাকশালের জন্য সংবিধানের মূল চার নীতির মধ্যে গণতন্ত্র পলিউটেড হইছে। আর এরপর সংবিধানের ৫ম এবং ৮ম সংশোধনী করে জিয়া আর এরশাদ তো বাংলাদেশের খৎনা করে দিছে। এই জিয়া আর এরশাদের কারণে সংবিধানের মূলনীতিগুলা থেকে সেক্যুলারিজম পলিউটেড হয়েছে। আর এইসবের কম্পাউন্ড ইফেক্টই হলো আজকের বাংলাদেশ। দেশ তো মৌলবাদী কিংবা প্রগতিশীল হয় না, দেশের মানুষ হয়। মানে দেশের মানুষ যদি প্রগতিশীল হয় তবে দেশও হয়। এখন সংবিধানই যদি প্রগতিশীলতাকে কোয়েশ্চেনে ফেলে তাহলে আপনি কী বলবেন?
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বললেন, আপনে ঠিকই বলছেন। দেশের মানুষেই আসলে দেশ। আর জিয়া এবং এরশাদের সময় রিলিজিয়াস পয়েন্টটারে তারা এমন ভাবে মিসগাইডেড করছে যার কারণে আজকে এই অবস্থা।
আনিসুজ্জামান সাহেব মৃদু হেসে বললেন, আপনারা তো বেহেশতে আছেন অনেকদিন যাবৎ তাই হয়তো আপডেট খবর একটু দেরিতে আসে। জিয়া আর এরশাদের পরেও দেশে মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেয়া হইছে। শুধুমাত্র ভোটব্যাংকের কথা মাথায় রেখে এই কাজ করা হইছে। বর্তমানে দেশে মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থেকেও মাদরাসা অনেক বেশি। দেশে প্রচুর এতিম এবং গরিব বাচ্চারা মাদরাসা থেকে এডুকেটেড হয়। গ্রামে ভালো স্কুল না থাকলেও মাদরাসা আছে। তো এই যে মাদরাসার জয়জয়কার। এবং মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে মিলিয়ে দেয়া হইছে এতেও মৌলবাদ ইগনাইটেড হইতেছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এতিমদের এবং গরিবদের জন্য মূলধারার শিক্ষা কারিকুলামকেই আপডেটেড করতে পারতো। এতিম আর গরিবের উপযোগী করে তুলতে পারতো। মাদরাসার জায়গায় যদি পাড়ায় মহল্লায় গ্রামে গ্রামে ভালো সরকারি স্কুল থাকতো হোস্টেল থাকতো এতিমদের জন্য হোমস থাকতো তাহলে হয়তো দেশটা অন্যরকম হতো। শিক্ষাব্যবস্থা যদি এইভাবে শুধু মুনাফাখোরদের হাতে না চলে যেত তবে অন্যরকম হতো দুনিয়া।
তাজউদ্দীন সাহেব জিজ্ঞাসু সুরে বললেন, আচ্ছা প্রফেসর সাহেব তো সংবিধান বঙ্গানুবাদের টিমে কাজ করছিলেন তাই না? আর শিল্পাচার্য সাহেবও তো সংবিধান অলংকরণের টিমে কাজ করছিলেন?
শিল্পাচার্য সাহেব গর্বিত ভঙ্গিতে বললেন, হ্যা আমরা সংবিধান সৃষ্টির সাক্ষী। আমরা একটা নতুন দেশ সৃষ্টির সাক্ষী। আমাদের স্বপ্নে একটা ছোট্ট সুন্দর খুকি হইলো আমাদের বাংলাদেশ।
তাজউদ্দীন উদাসভাবে বললেন, মাঝেমাঝে খুব কষ্ট হয়। আমরা কি এই দেশটা দেখার জন্যই বৈদ্যনাথ তলায় গিয়ে সরকার গঠন করছিলাম? দেশকে স্বাধীন করার জন্য এত এত সাংগঠনিক শক্তি সৃষ্টি করছিলাম কি এই দেশটা দেখার জন্য? মুক্তিযুদ্ধের ফসল কি এই পলিউটেড দেশ? ভাবতে খারাপ লাগে, কষ্ট হয়।
শিল্পাচার্য সাহেব বললেন, দেখবেন একদিন সব রঙ ফিরে পাবে আমাদের বাংলা। উজ্জ্বল মুখে ভরে উঠবে দেশ। পৃথিবীর বেহেশত হয়ে উঠবে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমদের প্রিয় খুকি।
কথাগুলা শুনতে শুনতে উপস্থিত সবার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল আবেগে। হয়তো সবার চোখের সামনে আবছা আবছা একটা দুনিয়ার জ্যান্ত বেহেশতের ছবি ফুটে উঠছে। যেখানে নদীর পাড়ে ফড়িং উড়ে বেড়াচ্ছে। সেই ফড়িঙের পিছন পিছন ছুটছে এক ফোকলা দাঁতের দুই বেনি ঝোলানো খুকি।
মনা সবার জন্য সিলেটের গ্রিন-টি দিয়ে গেল। সবাই সেই চায়ের কাপে দেখতে পেল এক টুকরা বাংলাদেশ।
- ঘটনা, সংলাপ এবং চরিত্র পুরাপুরিই লেখকের মনোজগতের কল্পনা ।
- ‘কতোই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’ হইতেছে সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা ‘হীরক রাজার দেশে’র গান। গানটার ভোকাল আর্টিস্ট ছিলেন অমর পাল। আমি এই গানের সাথে আত্মিক সম্বন্ধ খুঁজিয়া পাইয়াছি। সোজা কথায় ইনস্পায়ার হইয়াছি।
- “সুদিন কাছে এসো, ভালো বাসি একসাথে সবকিছুই...”
- মুক্তচিন্তার জয় হোক। মানবতার জয় হোক।
মন্তব্য