প্রগতিশীলতা
আমি: ব্রো, তুমি এত্তগুলা রেসিস্ট! এত্ত অপ্রগতিশীল! ব্রো, তোমার ফাঁসি দরকার!
রাতুল রাহা: মেট্রোরেলের সাথে আমারে ঝুলায়া দে!
গণপ্রজাতান্ত্রিক জোকস
তো বেশ অনেকগুলা দিন হয়ে গেছে এরশাদ বেহেশত-নসিব প্রাপ্ত হইছে। তাই সে একটা হাফ প্যান্ট পরে বাগানে বসে বসে আয়েশে এক গ্লাস সুরা নিয়ে সেলিব্রেট করার সময় দেখে-- একটা কাঁঠাল গাছের ছায়ায় বসে নূর হোসেন মোবাইল স্ক্রোল করতে করতে হাসতেছে। তো এই ব্যাপার দেখে এরশাদ ঘটনা জানার জন্য আগায়া গেল।
-- কিরে নূর হোসেন? তুই মোবাইলে কী দেখে হাসতেছিস? সেফু'র নতুন ভিডিও নাকি?
-- না চাচা। আইজ তো ১০ নভেম্বর। ফেইসবুক ভইরা গেছে আমার ছবিতে। তাই দেখে হাসতেছি।
-- কিন্তু এইটা দেখে হাসির কী আছে? তোর শহীদ হবার দিনে পাবলিক তোরে ইয়াদ করতেছে। এইটা তো হাসির জিনিস না।
-- আরে চাচা আপনে বিষয়টা বুঝেন নাই। মানে যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়া আমার বেহেশতী-নসিব হইলো, আপনেরও তো কম বদনাম হয় নাই--তাও আপনে বেহেশতে জায়গা পাইলেন, কিন্তু সেই ফ্যাসিবাদের জন্যই বেহেশতে জায়গা নাই। বেচারা ফ্যাসিবাদ, তাকে মনে হয় কেয়ামত পর্যন্ত বাংলাদেশের অই জাহান্নামি পাবলিকের লগেই থাকতে হইবো!
ডেমোক্রেটিক ভেঙচি
ইলেকশনে হারার পর জনৈক বাংলাদেশি সাংবাদিক ট্রাম্পের ইন্টারভিউ নিতেছে।
-- স্যার, ইলেকশনে হেরে আপনার অনুভূতি কেমন?
-- আর কইস নারে ভাই, বউ ঘরে ঢুকতে দিতেছে না। বলতেছে, পীরবাবা'র পায়ের ধূলা নিয়া আসতে।
-- পীরবাবা? কোথাকার পীর?
-- আরে...সপ্তাহখানেক আগে আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মহানগরীর মুরিদ হইছিলাম। তারই পায়ের ধূলা নিয়া আসতে বলতেছে।
-- তা পীরসাহেব কী বলছিলেন?
-- আর কইস নারে ভাই। পীরবাবায় কইছিল-- চোখ বন্ধ কইরাই আমি এই ইলেকশন জিতা যাবো। খালি কিছু নজরানা দিয়া পীরবাবার পায়ের ধূলা নিলেই কার্য হাসিল হবে।
-- আপনে কী করলেন?
-- আরে...আমি ১০০১ ডলার নজরানা দিয়া তার পায়ের ধূলা বোতলে ভইরা সাথে নিয়া আসলাম।
-- ব্যাস, এইটুকুই?
-- আর কইস নারে ভাই। পীরবাবায় কইছিল চোখ বন্ধ কইরাই ইলেকশন জিতা ফেলবো। তাই বাসায় আইসা চোখ দুইটা বন্ধই কইরা রাখছিলাম। এখন চোখ খুইলা দেখি ইলেকশন হেরে গেছি।
-- তাহলে এখন আপনার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী?
-- আরে... আমি চাইতেছি নেক্সট ইলেকশনে পীরবাবারে নমিনেশন দিব। দেখি চোখ বন্ধ কইরা সে কেমনে জিতে।
আগে মরিয়া বাঁচিয়া গিয়াছি
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বেহেশতের পান খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছেন। বেহেশতের পান খেয়ে তেমন পোয়েটিক ফিলিংসও তাঁর আসে না! যখনই এইরকম বিরক্তি আসে তখনই তিনি খোঁজ-খবর করেন, ২/৪ দিনে বাংলাদেশ থেকে কেউ বেহেশতে আসছে কিনা! বাংলাদেশি অনেকেই বেহেশতে আসার সময় পান নিয়ে আসে। তাদের কাছ থেকে ২/১খিলি পান খেতে পারলেই আবার পোয়েটিক ফিলিংস চাঙ্গা হয়ে যায়।
খোঁজ নিতে গিয়ে কবি জানতে পারলেন, লালমনিরহাট থেকে শহীদুন্নবী জুয়েল নামে একজন সদ্যই বেহেশত-নসিব প্রাপ্ত হয়েছেন। কবি স্বয়ং জুয়েলের সাথে দেখা করতে গেলেন। গিয়ে দেখেন, জুয়েল বসে বসে দৈনিক প্রথম আলো পেপার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তেছে।
-- কী হে? এত মনোযোগ দিয়া কী পড়িতেছ?
-- আরে কবিবর!! আপনে? কী সৌভাগ্য আমার। দুনিয়ায় তো আপনার চরণধূলা নিতে পারি নাই। তা বেহেশতে আইসা সেই ধূলাটুকু দেন।
-- আরে থাক থাক। আর সালাম করতে হইবে না। দুনিয়ায় তো সালাম করলে তবু বলা যায় 'দীর্ঘজীবী হও'। এইখানে সেইটা বলারও চান্স নাই।
-- তা কবিবর কোনো বিশেষ দরকার আছে নাকি?
-- বিশেষ দরকার আরকি। শুনলাম তুমি বাংলাদেশ থেকে আসিয়াছ। তাই সাক্ষাৎ করিতে আসিলাম। তা তোমার ট্যাঁকে পান-সুপাড়ি আছে নাকি?
-- পান খাইবেন? একটু ওয়েট করেন। আপনারে এক খিলি জবরদস্ত পান বানায়া দেই। রতন-জর্দা চলবো তো।
-- আরে জর্দা ছাড়া পান আর নুন ছাড়া ডাল একই কথা। দাও, খয়ের-জর্দা দিয়া একখানা পোক্ত পান বানাইয়া দাও। তা তোমার মরণ হইলো কেমনে? ইতিহাস বলো।
-- কী কমু আর দুঃখের কথা, কবিবর। আপনে মনে হয় ফেইসবুক ইউজ করেন না। এইজন্যই এই ইতিহাস আপনে জানতে পারেন নাই। আচ্ছা সংক্ষেপে বলি।
-- আগে পানখানা দাও তো দিকি, মুখে পুড়িয়া লই। তাহারপর বলো। হা সংক্ষিপ্ত করিয়াই বলো।
-- "মানুষেরে ঘৃণা করি'/ ও' কা'রা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি'/ ও' মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর ক'রে কেড়ে,/যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে।/ পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল!---মূর্খরা সব শোনো,/মানুষ এনেছে গ্রন্থ; --- গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো! "
-- আরে ইহা তো আমার কবিতা। তোমার নিকটে তো আমি কবিতা শুনিতে চাহি নাই। তোমার মরণের ইতিহাস বলো।
-- আজ্ঞে কবিবর, কবিতার মধ্যেই আমার মরণের ইতিহাস আছে। কোরান অবমাননা'র গুজব ছড়ায়া পাবলিক গণপিটুনি দিয়া আমারে মেরে ফেলছে। তারপর আগুনে জ্বালায়া দিছে।
-- কী বলো? এতটা মর্মান্তিক কিছু আমি আশা করি নাই। বুঝিতেছ জুয়েল? আগে মরিয়া বাঁচিয়া গিয়াছি। তাহা না হইলে কবিতা লেখার অপরাধে পাবলিক আমার যে কী হাল করিয়া ছাড়িত তাহা খোদাই জানে। এই বুড়া বয়সে পাবলিকের রোষানল কোনোভাবেই হজম হইতো না।
শঙ্খনীল কারাগার
নরকের সবচেয়ে ফেমাস পাবের নাম শঙ্খনীল কারাগার। এই পাব'কে পরলোকের বাসিন্দারা সেকেন্ড প্যারিস বলে জানে। পরলোকগত তাবড়-তাবড় আর্টিস্টরা এই পাবে বসেই আড্ডা দেয়। ড্রিংক করে, পট করে আর দুনিয়ার দুঃখ-দুর্দশা'র জন্য হাহুতাশ করে। নাম থেকেই বোঝা যায়, এই পাবের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে আজকে পার্টি অর্গানাইজ করা হয়েছে। ইনভাইটেড প্রায় সবাই চলে আসছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানালার ধারে একটা টেবিলে আসন গ্রহণ করেছেন। তাকে ঘিরে আছেন বাংলা'র আরো কয়েকজন আর্টিস্ট।
তিনি ভ্যাপে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, নাহ হে এটা নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গই। যা-ই বলো হুক্কার মজা ভ্যাপে পাওয়া যায় না।
শক্তি চট্টোপাধ্যায় বললেন, গুরুদেব ধর্মেও থাকেন জিরাফেও থাকেন। আজকের দিনে একটু মদ চেখে দেখেন।
রবিঠাকুর বললেন, না হে-- ও আমার সয় না। বমি-টমি করে অসুস্থ হইতে চাই না। তা হুমায়ূন কই? অনুষ্ঠান এখনো শুরু হয় না কেন? বাঙালির ভায়া সব কিছুতেই এই লেট হবার অভ্যাসটা মরার পরেও গেল না।
জহির রায়হান বললেন, হাজার বছর ধরে আমি একটা জিনিসই আইডেন্টিফাই করতে পারছি। তা হইলো ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের থেকে নরকটাই বেশি কমফোর্টেবল।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, কই? কেউ তো কথা রাখলো না। ঐ তো হুমায়ূন। যাই, ডেকে আনি।
হুমায়ূন আহমেদ দরজার সামনে শামসুর রাহমানের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। বিরক্ত হয়ে বারবার রিস্টওয়াচ দেখছেন। সুনীল এসে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার হুমায়ূন? সবাই তো এসে গেছেন। ঐ দেখো এরই মধ্যে শক্তি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গেছে। আর ঐ দেখো জীবনানন্দ বাবু মহীনের ঘোড়াগুলো শুনতে শুনতে টেবিলে বসেই ঘুমিয়ে গেছেন। মূল পর্বটা শুরু করবে কখন?
হুমায়ূন বললেন, আরে তেত্রিশ মিনিটই তো কেবল হয়েছে। অস্থির হয়েছ কেন? কথা রাখবো তো আমরা।
শামসুর বললেন, এই সুনীল জানোই তো প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে। ভাই কিছু মনে করো না। একটা বিপদ হয়ে গেছে। আহমদ ছফাকে তো চেনোই। তাকে নিয়ে গোলমাল। আর ছফাকে ছাড়া তো হুমায়ূন সেলিব্রেট করতে চায় না।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ পাড় মাতাল হয়ে লাল লাল চোখে বললেন, কী বিপদ? বাতাসে লাশের গন্ধ?
হুমায়ুন বললেন, আরে নাহ। হিসাবরক্ষক চিত্রগুপ্তের সাথে গেটের দারোয়ানদের গাভী-বৃত্তান্ত নিয়ে একটা ঝামেলা। গাভীর খাবারের জন্য যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ তা নাকি চিত্রগুপ্ত ঠিকঠাক দেয় না। লেবার সিন্ডিকেটের সবাই অনশন ডেকেছে। সেই প্রটেস্টে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বয়ং ঋত্বিক ঘটক। তার সাথে জুটে গেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য আর আহমদ ছফা।
রুদ্র চিৎকার করে বললেন, এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।
সুনীল বললেন, ভাই মাফ করো। এবার তুমি ক্ষেপো না। আর হুমায়ূন, তোমাকে গুরুদেব ডাকছেন।
হুমায়ূন বললেন, চলো ভানুসিংহের কথা শুনে আসি। আর রুদ্র তুমি ভায়া একটু এগিয়ে দেখে আসতে পারবে মিটিং মিছিল শেষ হলো কিনা?
রুদ্র হা-বোধক মাথা নেড়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেল।
হুমায়ূন আহমেদ রবিঠাকুরের টেবিলে যাবার সময় শুনলেন কাজী নজরুল ইসলাম পিছন থেকে ডাকছেন।
হুমায়ূন বললেন, জ্বি কবিবর বলেন।
নজরুল বললেন, মাইকেল মধুসূদন'কে একটু মাতলামি কম করতে বলো প্লিজ। ঐ দেখো বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রো দেখে কেমন মেঘনাদকে বধ করতে গেছে।
হুমায়ূন বললেন, আচ্ছা ঠিকাছে। আমি রাহমানকে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে বলছি। আমরা তো সাম্যের গানই গাই, তাই না?
নজরুল বললেন, ঠিকাছে। আর আমার জন্য একখানা পোক্ত পান পাঠিও তো। আর আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন গানটা।
হুমায়ূন আহমেদ সব বন্দোবস্তো করে রবিঠাকুরের কাছে গেল।
এরই মাঝে রবিঠাকুরের টেবিলে অন্তরাক্ষর খেলা শুরু হয়ে গেছে। হুমায়ূন গিয়ে দেখেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দেবদাসের মতন আমারো পরাণও যাহা চায় গেয়ে শোনাচ্ছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পুতুল নাচের ইতিকথার ড্রামার হয়ে টেবিল বাজাচ্ছেন। সৈয়দ শামসুল হক পরানের গহীন ভিতর থেকে একটা দোতরা বাজাচ্ছেন। হুমায়ুন আজাদ লাল নীল দীপাবলি'র মতো হেড-ব্যাং করছেন। রীতিমতো জমে গেছে আসর।
এমন সময় রুদ্রের সাথে ঋত্বিক, ছফা আর নবারুণ মেঘে ঢাকা তারা থেকে এসে শঙ্খনীল কারাগারে ঢুকলেন।
ঋত্বিক এসেই এক বোতল মদ টেবিল থেকে তুলে নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা সাবাড় করে চিৎকার দিয়ে বললেন, কম্প্রোমাইজ করবো না বলেই মদ খাই। ওহে তোমরা সবাই আমার সঙ্গে চিৎকার করে বলো, শুভ জন্মদিন হে নন্দিত নরকের কবি। শুভ জন্মদিন।
সবাই একসাথে বলে উঠলো, বহুব্রীহি সমাসের ভয়ে মৃন্ময়ীর মন ভালো না-ই থাকুক, কেউ কোথাও না থাকে তো না-ই থাকুক, শুভ্র বনে চলে গেলে--যাক; তবু আগুনের পরশমণি নিয়ে এই দারুচিনি দ্বীপের শঙ্খনীল কারাগারে আমরা থাকবো--আছি। শুভ জন্মদিন হে আর্টিস্ট।
লেখকের নোট:
- ঘটনা, সংলাপ এবং চরিত্র পুরাপুরিই লেখকের মনোজগতের কল্পনা ।
- ‘কতোই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’ হইতেছে সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা ‘হীরক রাজার দেশে’র গান। গানটার ভোকাল আর্টিস্ট ছিলেন অমর পাল। আমি এই গানের সাথে আত্মিক সম্বন্ধ খুঁজিয়া পাইয়াছি। সোজা কথায় ইনস্পায়ার হইয়াছি।
- “সুদিন কাছে এসো, ভালো বাসি একসাথে সবকিছুই...”
- মুক্তচিন্তার জয় হোক। মানবতার জয় হোক।
ওয়াও! কি লিখছেন ভাই। এক্কেবার হাড্ডাস হইছে। যাকে বলে তুমুল। তয় ভাই একটু দেখেন তো এই লাইনটা কি ঠিক আছে? ==আর ঐ দেখো জীবনানন্দ বাবু মহীনের ঘোড়াগুলো শুনতে শুনতে টেবিলে বসেই ঘুমিয়ে গেছেন।== এখানে কি ঘোড়াগুলো শুনতে শুনতে হবে নাকি গুনতে গুনতে হবে। তবে যাই হোক আমি পুলকি হইছি। আর হ্যাঁ, মসজিদের পাশের কবর দেয়ায় কাজি নজরুল তো বেহেশতে গেছে, সে আবার নাস্তিক মালাউনদের মদের পার্টিতে নরকে আইসল কেমনে-- এইটা বুঝলাম না।
উত্তরমুছুন