সমুদ্রসৈকতে এই ভৌতিক ভ্রমণ আমাদের
সারাটা বাসে সমুদ্রজল ঢুকে পড়েছে
এবং বৃষ্টি
একশো বছর বৃষ্টি পড়ছে এই বাসের কবরে
আঁশটে পুরোনো সমুদ্রপৃথিবী, মাছ ও নৌকার হিংসা
লতাগুল্মময় এই বৃষ্টি সূতিকাগন্ধ নিয়ে আসে
দরজা নষ্ট হয়, শারীরিক জানলাগুলো খুলে যায় অলৌকিক সূর্যের কিরণে
প্রসূতি-সদন তৈরি করে কারা ভৌতিক নির্মাণপ্রক্রিয়ায়
নীল ঔষধ, ধর্ষণের ক্লান্তি, অনন্ত ব্যান্ডেজের ঈর্ষা
জনন এবং মৃত্যুবাহী শুশ্রুষার ঝাপট লাগে মুখে
বাসের ভিতর ঢুকে পড়েছে সমুদ্র-চক্রবাল
জলের বিষণ্ণ চিৎকারে ও প্রার্থনায় চিকিৎসাপ্রবণ গোঙানি
লতাগুল্মময় এই বৃষ্টি সূতিকাগন্ধ নিয়ে আসে
প্রাণীমৃত্যুর প্রথম নীতিস্রোত ভেঙে, জন্মের আলো-প্রণালীতে,
দরজা নষ্ট হয়, শারীরিক জানলাগুলো খুলে যায় অলৌকিক সূর্যের কিরণে
পুরাতত্ত্ব
হাড়ের প্রত্নপ্রাচীন কাঠামোটির ভিতর ঢুকে বসে আছি;
অন্ধকার সূর্যাস্তরশ্মি চুঁয়ে পড়ে ভিতরে
শরীর সামান্য চুরমার ক'রে উবু হয়ে চমৎকার বসে থাকা যায়,
কোনও প্রাগৈতিহাসিক বাইসন্ হয়তো,
অথবা কোনও পুরাণলীন বিরাটদেহী প্রাণী,
তামাটে হাড়ের সংসার নিয়ে জেগে রয়েছে এই মৌন অধিত্যকায়,
অন্ন ও নারী টেনে আনি কাঠামোটির মধ্যে
শিহরণময় যৌনতা হয়,
এই হাড়গুলি পুরাতাত্ত্বিক বিভাগে বিক্রি ক'রে আমার বেশ কিছুদিন চলে যাবে
পুঁথিমঙ্গল
মহামৎস্য লুপ্ত হয়, মহামৎস্য প্রলয়ে শয়ান,
বিন্দু বিন্দু মধু মূত্র কালকূট ভরে নিয়ে ঘটে
শ্রীপদে প্রণাম ক'রে লিখি এই রাত্রির বয়ান
সমূহ লেখার পুঁথি বিদ্যুৎ যৌন-শকটে
মহামৎস্য কী প্রবল, মধুপিণ্ড সমুদ্র-তলায়,
রোজ রোজ জন্ম ঘটে রোজ রোজ প্রলয়প্রবাহ
আচমকা যৌন দশনে তোমায় গোটাটা যদি পায়,
পাঁচালি প্রণামলেখা, আগুনে ভরিয়ে রাখা দাহ
বাখান করবে কাকে, জন্ম-চক্র-এই-ঘটনায়,
শ্রীঘটে প্রণাম ক'রে
রোজ লিপি লিখে যায়....
পাথর
সূর্যাস্তময় একটা পাথর গাঁথা স্তালিনের প্রায়ান্ধ গোরে, মাঝে-মাঝে সেখান থেকে চক্রান্তের নীল কূট বাতাস উড়ে আসে তোমার প্রসবী অলকে, চুরমার করে দু-একটি চুল, ডান হাতে মণিবন্ধের ক্ষত গভীর হয়, প্রবাল খসে পড়ে, মুখে আশ্চর্য রূপের প্রণালীতে ছায়া ফেলে প্রতীচ্যের বিস্তীর্ণ চাঁদ, এই বুর্জোয়া নাবালভূমিতে পতঙ্গ উড়ছে কত, অসংখ্য, মৃত্যুর নিঃশব্দ অর্কেস্ট্রা, অন্ধকার বিস্তীর্ণ ঘাস ও মাটি আ-শরীর মেখেছো তুমি, সমূহ ধ্বনি এই উপত্যকায় পান করে নিয়েছে বিলুপ্ত পশুর দল, মেষ মহিষ ও অন্ধ হরিণ নিয়ে এখন তোমার এই যৌনসংসারে ভেসে আসে বাতাস, আচমকা, স্তালিনের গোর থেকে, দু-একটা চুল ভেঙে টুকরো হয়, মণিবন্ধের ক্ষতে আছড়ে পড়ে সংকেত ও প্রলেপ, নামাজের ভংগিতে বসে আছো বিবিধ পশুর থেকে দূরে, স্বাভাবিকভাবে জানতে পারোনি, তোমার ঈশ্বরবিহীন প্রার্থনার সময়ে, কাছেই, অথবা যখন বিষণ্ণ কালো চামড়া ছাড়িয়েছো পশুগুলির, অন্য উপত্যকায়, চাঁদ-হত টেবিলের দু'ধারে বসে, বুলগাকভের ভূতের সংগে আমি হুইস্কি পান করেছি, নির্জন হুল্লোড়ে
প্রতিটি সমুদ্রের তলায় পাতা থাকে আত্মহননের নিছক
উপকূলবর্তী বাতাস
ডানা-মুড়ে-বসা বিষণ্ণ বাজ-কে চিরে যায় এই রাত্রিবেলা;
তোমার স্নানদৃশ্যের সামনে আভূমি নত হয়েছিল যে গন্ধগোকুল
এখন ঈশ্বরের বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকে, শাস্তিবিধান:
তাকিয়ে দেখো
দক্ষিনে জন্মের যে ঝিনুকময় পাথর পড়ে আছে,
তাতে রক্ত লেগে আছে কোন অন্ধ নর্তকীর?
সেই একই রক্তের খনিজ কি আমারও দেহঘটনায়?
এখন এই সময়সর্বস্ব শরীর নিয়ে বিষণ্ণ বাজের বদলে আমিই ডানা মুড়ে বসেছি দ্যাখো,
এবং হুহু মৎস্যগন্ধী বাতাস গুপ্তসময়ের মুদ্রা ছুঁয়ে এসে ঝাপট মারছে আমার কাটা দু-হাতে
অনতিদূরে তিমির অখণ্ড অতিপ্রাচীন কঙ্কাল
এবং সমুদ্রে চক্রান্তঢেউ,
অলক্ষ্যে মাছগুলির আক্রমণ প্রজননমুহূর্তে আমায় স্বাভাবিক করে
পালকসমেত পাখিটি তার তীব্র রক্তমাংস ও লোভ ছড়িয়ে আছড়ে পড়ছে আমারই চোখের সামনে,
এবং
অসমান প্রত্নজমি পেরিয়ে এখানেই তুমি অসামাজিক পাথর হয়ে গেছ
পুঁথিমঙ্গল ও অন্যান্য কবিতা
সৌমাল্য মুখোপাধ্যায়
সৌমাল্য মুখোপাধ্যায়
❤️❤️❤️❤️
উত্তরমুছুন