একটা হাউমাউ-চিৎকারে ঘুমটা ভেঙে গেল আমার। ধড়ফড় করে বিছানার থেকে উঠে বাইরে উঁকি মারতেই দেখলাম, রিমার হেল্পিং-হ্যান্ড কাম-রিপোর্টার, কাম ঝানু-গোয়েন্দা ঝিঙ্কি, বাংলা-হিব্রু-তামিল-তেলেঙ্গি-ভাষায় উচ্চগ্রামে কী-সব যেন ওকে বোঝাচ্ছে। ভাবলাম হটাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়াতেই বোধহয়, এরকমটা মনে হচ্ছে আমার। যাইহোক ঝিঙ্কিকে, ‘কী হয়েছে’! জিজ্ঞেস করতেই, ও সেরকমই হাউমাউ করে বললো, ওই-যে গো দাদা, সেই-যে, সেই হ্যাংলাথেরিয়াম-লোকটা, সেই-একদিন তোমার ঘরে ঢুকে পড়েছিল! ওই লোকটা গলিতে ঝুলছে!
তাড়াতড়ি করে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম গলির মুখটাতে বেশ ভিড় জমে আছে। ভিড়টা লক্ষ্য করে উপর দিকে তাকাতেই,আমার সমস্ত শরীরটা যেন কেঁপে উঠল। দেখলাম চক্রবর্তীদের দোতলা-বরাবর উঠে যাওয়া নিমগাছটাতে একটা লোক দড়ি-বাঁধা অবস্থায় ঝুলে রয়েছে! তবে দড়ির ফাঁসটা লোকটার গলায় নয়, সেটা বাঁধা আছে ওর ডানপায়ের গোছের কাছটাতে! সবচেয়ে জঘন্য-ব্যাপারটা হলো, লোকটা উলটো হয়ে ঝুলে থাকায়, ওর পরনের লুঙ্গিটা সরে এসে মুখের দিকটাকে ঢেকে ফেলেছে। আর রিগরমর্টিজের ফলে শক্ত হয়ে ঝুলে থাকা প্রায়-ন্যাংটো-চোংটা লোকটার পুরুষাঙ্গটা সকালের রোদ মেখে যেন খাপখোলা তলোয়ারের মতোই, আমাদের একেবারে নাকের সামনে ঝলসাচ্ছে। ভীড় ঠেলে একটু ভিতরে ঢুকতেই, নজরে পড়লো, লোকটার মাথার দিকের লুঙ্গি আর যেখানটায় সে ঝুলছে, ঠিক সেই জায়গার মাটিতে চাপ-চাপ রক্ত জমে কালো হয়ে আছে!
গেলসপ্তাহে এই লোকটাই তারকের-টি-স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বিচিত্র-একটা আব্দার জুড়েছিল। এমনকী আমাকেও বলেছিল, ‘আসুন-না স্যার, আজ এই বেকার-ছেলেটার সঙ্গে এক-কাপ চা খেয়ে যান!’ ওর কথা শুনে কেউ হাসছিল, কেউ-কেউ শেষপর্যন্ত কী হয়, তা দেখার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে ঘটনাটা লক্ষ করছিল। আর যাদের খুবই অসহ্য ঠেকছিল তাদের মধ্যে আবার, অনেকেই গিয়ে লোকটাকে চড়-চাপাটিও লাগিয়ে দিচ্ছিল!
লাশটার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা একটা হাভাতেমার্কা-লোক বললো, বোকা-গাধাটাও শেষমেশ খেল দেখিয়েই ছাড়ল। শ্লা, সব- হারামিগুলোর মুখে একেবারে মুতে দিয়ে চলে গেল!
পাশের বারান্দা থেকে কেউ-একজন বললেন, বোকা-গাধা না, ঘেঁচু! ওটা ছিল পাজির পা-ঝাড়া, সেয়ানা-বদমাস! মরার আগেও নোংরামি করতে ছাড়ল না!
কয়েকজন সাংবাদিক ঘিরে ধরতেই, থানার ইয়াং ইন্সপেক্টরটি খুবই গম্ভীর-গলায় বললেন, পোস্টমর্টেম না-হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে কিছুই বলা যাবে না। তবে খুনের বিষয়টাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না! এখন দেখতে হবে, সরকারকে ম্যালাইন করার জন্য এর পিছনে বিরোধী-পার্টির কেউ আছে কি না!
সঙ্গে-সঙ্গে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মোনালি-কাকিমা বললেন, তাহলেই বুঝুন স্যার,কী-সব জিনিস নিয়ে আমরা পাড়াতে থাকি!
একজন বয়স্ক-মতন কনস্টেবল মাথা চুলকিয়ে বললেন, কিন্তু স্যার, যে-ভাবে দড়িটা ডালে পেঁচিয়েছে, তাতে করে ফাঁসটা পায়ে আঁটকেও এই অ্যাক্সিডেন্টটা…
কথাটা শেষ করার আগেই, ইয়াং-বসের দাবড়ানিতে তিনি মাঝপথেই থেমে গেলেন।
একদিন এই লোকটাই হটাৎ, রিমাকে টপকে ঘরে ঢুকে একেবারে আমার সামনাসামনি এসে হাজির হয়েছিল। বলেছিল,আপনার তো অনেক চেনা-জানা স্যার! দিন-না একটা কাজ জোগাড় করে! দেখবেন আমি খুব মন দিয়ে কাজ করব!
কিন্তু এখন আর লোকটার কাজের দরকার নেই! আলো-বাতাস, দু-মুঠো ভাত কোনোকিছুরই আর দরকার নেই ওর। অথচ মরার পরেও লোকটাকে ঘিরে নানা মুনির নানা মত, ওর লাশটার মতোই দুলছে। একবার ডাঁয়ে, একবার বাঁয়ে।
একবার ডাঁয়ে, একবার বাঁয়ে
দেবব্রত রায়
দেবব্রত রায়
অনেকদিন পরে একটি দারুণ ছোট গল্প পড়লাম ফুটবল । অসাধারণ !
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগল
উত্তরমুছুন