প্রথম পর্ব
বহুদূর থেকে
ইটে-পাথরে বাঁধা পড়ে পড়ে
খুব জড়সড় হয়ে
নদীটা এখানে এসে
ব্রিজের তলায় শুয়ে আছে
আর
আমাদের বহুদিনের সাধ
সাধ্য হয়ে
জলের বুনোট ভেদ করে
সাড়াশির মতো
সারি সারি দাঁত বসিয়ে দিয়েছে
নরম কাদায়, নদীটার বুকে।
এশহরে
আর সকলের মতো
যাপিত দিনগুলো একঘেয়ে মনে হলে
আমিও এখানে আসি।
ব্রিজের রেলিঙে বসে
চর থেকে ভেসে আসা হাওয়া
হা করে টেনে নিই বুকের ভেতর।
চুপ করে বসে থাকি।
সিগারেটের হালকা ধোঁয়ার মতো ধীরে
আমার আটাশ বছরের ছেড়াখোড়া স্মৃতি
হাত ধরাধরি করে উঠে আসে।
এদিকে—
নদীর ধার ঘেষে
একটা কাশবন ছিল তখন।
সেবার আমরা ক’জন,
স্কুলের সাদা শার্ট গায়ে
ক’জন কিশোর সিগারেটখোর
কাশবনের শাদায়
নিজেদের ডুবিয়ে দিয়ে,
বুকভরে ধোঁয়া নেয়ার সময়,
কে যেন হঠাৎ
ম্যাচ ঠুকে দিয়েছিল
কাশের শুকনো ডগায়।
নিমেষেই
একটা বিশাল কাশবনের সাদামাথা
কালো হয়ে গেল!!
আর একবার
আমার বুক ধক্ ধক্ খুব বেড়ে গিয়েছিল।
ওই পাশে,
চার পা ওয়ালা যে খুটির মাথায় ঝুলে
বিদ্যুতের তার
নদীর ওপার চলে গেছে
তার নিচে
ডিঙিনৌকায় ভেসে
আমি যখন
ঠোঁট ছুয়ে দিয়েছিলাম
কালো প্রেমিকার ঠোঁটে।
সে সূত্র ধরে
প্রেমিকা আমার
বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে
তার উরুসন্ধিজাত রূপকথা
আমাকে শুনিয়ে দিয়েছিল
ফিস ফিস করে।
ওমের বিছানা ছেড়ে
আমার মন
এক লাফে নিমগাছে।
আমিও কেমন
নির্বিকার হয়ে ভাবি,
আমার প্রথম ওমজ্ঞান
শনি ও মঙ্গলের মাঝামাঝি
মহাশূন্যে কোথাও
ঘড়ি-ঘন্টা হয়ে গেছে!
আর একবার,
আমার কিছুদিন
খুব বাজে কেটেছিল।
হাফ ছাড়বার সুযোগ খুঁজে খুঁজে
আমি তখন হয়রান।
নদীর কাছে
যাওয়া হয় নাই
তিন তিনটি মাস।
তাই স্বাভাবিক হতে
অতীত ব্যবস্থাপত্র মতে
ব্রিজের ওপরে হাঁটি।
স্রোত দেখি।
জানি,
এভাবেই সব ঠিক হয়ে যাবে!?
দ্বিতীয় পর্ব
আমার ছেড়াখোড়া গল্পগুলো
ধরলার বুক থেকে
জলের সীমানা ছেড়ে
বাতাসে মিলায়।
আমিও শান্ত থাকি
ডাল-ভাত-নুনে।
সেমিনারে যাই।
বক্তৃতা শুনে বুঁদ হয়ে থাকি।
রাতে বিছানায় গেলে,
কিচ্চা কাহিনী থেকে
এক পন্ডিত মশাই
তার লেজ সমেত উঠে এসে
আমাকে খাইয়ে দেয় জ্ঞানের ভিটামিন।
শুভ বাক্যে আশীর্বাদ করে,
কানমন্ত্রে বলেন,
কী লাভ ইউটোপিয়ায়?
জ্ঞানের ধাক্কায়,
আমি ঘুম ভেঙে
ধরফড় করে জেগে উঠে,
রাত্রি সময় দেখে,
আবার ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘুমের রাজ্যে ফের,
কিচ্চা কাহিনী থেকে
এক বুজুর্গ বণিক
আমাদের ঘাটে এসে নামে।
খুলি বৈঠকে,
ছবিওলা বই থেকে
আমাকে বুঝিয়ে দেন;
দ্যাখো!
কতো কতো প্রয়োজন
বয়স বৃষ্টিতে ডগমগ হয়ে
তোমাকে পেঁচিয়ে
তর-তর করে বেড়ে ওঠে
সময়ের সাথে।
এই নাও সোলেমানি ঋণ,
শত এক শর্ত সমেত
তোমাকে দিলাম।
দোয়া করি!
যদি বিশ্বাস রাখো (?)
এদেশে শান্তি পাবে।
এর পর আসে,
অনিন্দ্য সুন্দরী
এক ডানাওয়ালা নারী।
সিফন জড়ানো শরীর
আর তার
আলো করা বৃন্ত যুগল
আমার ঘুমের
এক পরত খসিয়ে দিলে,
আমি আঁতকে উঠে,
কিচ্চা কাহিনী থেকে
নিস্তার পেতে,
বালুচর ধরে
প্রাণপনে দৌঁড়াতে থাকি…
ধরলার বুকে ছুটে আসা
উজানের বেনো জল
আমাকে
চকিতে কোলে তুলে নেয়!
ঢেউয়ে ঢেউয়ে মিশে গিয়ে,
আমিও!
কীভাবে যেন
ঢেউ হয়ে যাই!
ঢেউ হয়ে ছুটি
ঘোলা জলের মাথায় …
দূর থেকে দ্রুত
দৃষ্টিসীমায়
ধরলার ব্রিজ চলে আসে।
আমাকে শাসন করে
দুপাশের ইট ও পাথর।
আমি
হাঁস-ফাঁস করে উঠি।
বিপদের সীমা
তখন
আমার অনেক নিচে
চলে গেছে।
বিড়বিড় করে বলি,
আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে,
এইখানে (?)
এশহরের কোল ঘেঁষে
ব্রিজের বাঁধনে
আটো হয়ে আসা
ধরলার বুকে।
রচনাকাল: ২০০৮
ধরলার ব্রিজে
ফুলপুত্র
ফুলপুত্র
ছবি ক্রেডিট: মৌসুমী রহমান
মন্তব্য