রাষ্ট্র যেভাবে অমিমাংসিত : রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ
রাষ্ট্র মানে লেফট-রাইট-লেফট, এইভাবে ঘোষিত হয়ে গেল রাষ্ট্রের চরিত্র।
সংগ্রাম ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে যেখানে ভূখন্ডের স্বাধীনতা অর্জিত হয়– দিকে-দিকে, এশিয়ায়- আফ্রিকায়-লাতিন আমেরিকায়, এমন কি ইয়োরোপে, কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র-র ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়ায় ১৯৪০-সালের লাহোর প্রস্তাবের বিকৃতির ছল-চাতুরীময় কৌশলে দেশটির স্বাধীনতা মানানসই করা হয়েছে এবং দেশভাগ শুধু নয় পৃথিবীর বৃহত্তম হলোকাস্টে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছিল একটি জাতিসত্তাকে।
দ্বি-জাতি তত্ত্বএবং দুই আর্থনীতিক ব্যবস্থাপনায় পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মের অব্যহতি পরে জাতি রাষ্ট্র হতে ব্যর্থ দেশটি কোটারী স্বার্থের অনুকুলে রক্ত সফলতায় যাবতীয় সম্পদ লুন্ঠনে মনোযোগী ছিল।
লাহোর প্রস্তাব বিকৃতি পাকিস্তান জন্ম
+
বাংলা ভাগ + পাঞ্জাব ভাগ
পাকিস্তানী-জাতি গঠনে ব্যর্থতা
(রেখা চিত্র ক)
পাঞ্জাব ও কোটারী < দুইটি হাতিয়ার
স্বার্থের অনুকুলে
শোষণ ও সম্পদ লুন্ঠন।
=
পূর্ব বাংলা + বালুচিস্তান
সোনালী আঁশ (পূর্ববাংলা) + গ্যাস (বালুচিস্তান)
(রেখা চিত্র খ)
আমরা জাতি রাষ্ট্র হিসাবে দাবীদার সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে পাবো যে,
কোনও জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্র গঠন করে যখন, বাঙালিদের দ্বারা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মতো তখন কোনও জাতিরাষ্ট্র গঠিত হতে পারে।
জাতি বলতে, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নির্দিষ্ট থাকে। ধর্ম, সংস্কৃতির উপাদান হলেও তা একমাত্র নয়। নানা ধর্মের মানুষ যে কোনও জাতির জন-মানচিত্রে বিন্যস্ত থাকা স্বাভাবিক। অতীতে যেমন নানা ধর্মের সংমিশ্রণ পাওয়া যায় তেমনি ভবিষ্যতে অভিবাসন প্রাবল্যের কারণে আরও বেশি করে নানা ধর্মের সংমিশ্রণে মানুষের মানচিত্র দেশ হতে দেশে বদলে যেতে থাকবে।
সভ্যতার আদি হিসেবে অভিবাসনকে আখ্যায়িত করা অনায্য হবে না,সভ্যতার ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, বৈরী আবহাওয়া, ধ্বংসকারী প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যুদ্ধ-বিগ্রহ, খাদ্য সঙ্কট ও অনাহার ইত্যাদি মৃত্যুর ঝুঁকি হতে বাঁচতে মানুষ উন্মুল যাত্রা করেছে বেঁচে বর্তে থাকার জন্য, আবার জীবিকার জন্য সে হয়েছে অভিবাসী নতুন ভূখন্ডে, অচেনা অথচ সম্ভাবনাময় পরিসরে। নানা ধর্ম-বর্ণ-সংস্কৃতির মানুষের সমবেত আর্তনাদ হতে সমবেত উদ্ভাবনায় ও সংগ্রাম-সফলতায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়েছে নতুন নতুন সভ্যতার। অশেষ প্রস্তর যুগ হতে সভ্যতার বিলুপ্তি ও আবির্ভাবের দ্বৈত মুখরতায় তীব্রতায় মানুষেরই জয়গান রচিত হয়েছে।
বর্বরেরা সভ্যতার চাকা পেছনে ঘোরাতে ঘোরাতে শোষণের সভ্যতা– সভ্যতার নামে অসভ্যতার অমানবিক সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
যে রাষ্ট্র,--পাকিস্তান, কাগজে কলমে বাকচাতুর্যে ধর্মের দোহাই জারী করে, খুনখারাপির ধমকধামক থেকে স্বপ্ন লোভ দেখিয়ে ধর্মের ধোঁয়া তুলে সরল জন-জাতিকে ফুসলিয়ে ক্ষমতারোহনের নতিজায় গঠিত হয়, তার পক্ষে রাষ্ট্রে সুবিধাভোগী শ্রেণী ও কোটারী স্বার্থের পুষ্টিতে রীতিমত পাশবিকভাবে যা কিছু ভালো ও সম্ভবনাময় রয়েছে সেইসব শোষণ দোহন, দহন ও মরনের জন্য অসভ্য সমাজ-সভ্যতা গড়ার তাগিদ অনিবার্য হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রত্যাহারের পর বিকলাঙ্গ রাষ্ট্র পাকিস্তান নিজস্ব চিকিৎসার বদলে, সব জন-জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করে বিভেদ নীতি প্রয়োগ করে, দুই অর্থনীতি ব্যবস্থার জাল বিছিয়ে দিয়ে এবং অবস্থা দৃষ্টে, শোষিত জন জাতির পক্ষে প্রতিবাদ প্রতিরোধ অঙ্কুরে বিনাশ ও পরিতাজ্য করতে ধর্মের রশি দেয় জুড়ে রাখার অপকর্মটি করা হয়। জাতি রাষ্ট্র হতে ব্যর্থ এবং পঙ্গু ও বক ধার্মিক রাষ্ট্রের পক্ষে শোষণের অস্ত্র হিসেবে প্রথমতঃ দ্বি-জাতি তত্ত্ব এবং দ্বিতীয়তঃ দুই অর্থনীতি ব্যবস্হা বলবৎ করা অস্ত্র হিসেবে রক্ত সফলতায় ব্যবহৃত হয়েছিল।
অন্ধ-কালা-বোবা-নুলা হয়েও কেবলমাত্র পুরুষাঙ্গ বিশিষ্ট বলেই আদম সন্তান যেভাবে যে কোনও বিবি এমন কি শিক্ষিত আওরাতদের চেয়ে উন্নত জীব তেমনি জোড়াতালি দেয়া পাকিস্তান ও রাষ্ট্র অর্থে প্রতিষ্ঠান।
পুরুষাঙ্গ যেমনভাবে স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক তেমনি শোষণ জুলুম জারী রাখতে তার যে পুরুষাঙ্গের প্রয়োজন সেই জন্য প্রতীক হিসেবে সেনাবাহিনী লাগে এবং পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনীর বড়াই তৈরি করতে মিথ্ তৈরি করতে হয়। অথচ এই সেনাবাহিনীর পক্ষে নিজস্ব লোভ-লালসা এবং দমন-পীড়নের জন্য নিজের দেশ নিজেরা দখল করা ছাড়া আর কোনও সাফল্যের পালক মুুকুটের শোভায় পাওয়া যায় নি।
যৌন সভ্যতার রক্ষক-ভক্ষক এই সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক নীরিহ মানুষ খেকো, নারীকাতর, ইন্দ্রিয় সন্তুষ্ট তৎপরতা শেষে বিশাল কলেবরে পাক ওয়াতানের জন্য আত্মহুতি তো পরাহত বরং নির্লজ্জ কুশলতায় বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর পদতলে আত্মসমর্পনে পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিল। সেনা আদবে এমন ধ্বজভঙ্গ অচল পুরুষ বাহিনী তারপরেও শুধুমাত্র নিজ দেশ দখলের কুশলতায় অদ্যাবধি, প্রায় সত্তর বৎসর ব্যাপী হোয়াইট কলারম্যান হিসেবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের চৌকিদারি করে চলেছে।
রাষ্ট্র মাত্র, যে কোনও মন্দ অভিপ্রায়ে, রাষ্ট্রীয় নাক সর্বত্র গলিয়ে দেয়ার যে স্বভাব বহন কর,-- স্বৈরাচারী গণতন্ত্র ঘৃণিত পাকিস্তান রাষ্ট্রও বদগুণে গুণান্বিত তো বটেই রীতিমত উদ্দীপ্তভাবে নাক গলানো থেকে মগজ শূণ্য মাথা গলানোর তড়পানির জন্য প্রেরণার অভাব করে নাই– পাকিস্তান ভেঙে চৌচির হয়ে গেলেও স্বভাব যাবে না মরলেও বই কি।
প্রজনন প্রিয় জাতি হিসেবে বাঙালির খ্যাতি-অখ্যাতি দুই-ই রয়েছিল। উপরন্তু যোগ হয়েছিল মুসলমানী শাহী মসল্লার উত্তেজনা। খাবার-দাবার রন্ধনে পেঁয়াজের গুণ ছিল,--ঝাঁঝ ছিল। মশলার তেজ রান্না-বান্নার বৈশিষ্ট্য মরিচ ঝাল হলেও মশলা হলো গরম। রান্না আবার দুই রকম। হিন্দু রান্না, মুসলিম রান্না। ঘি-তেল-বাদাম-পেস্তা-আখরোট-খুবানি-দারুচিনি-লবঙ্গ-নানা উপাদান রান্না গুণবতী হয়। তাতে, গরমাগরম গো-মাংস চর্বি কিংবা মগজ থেকে যে তাপ সঞ্চার হয় তাতে সাক্ষাত বীর্যে নারী গর্ভবতী হয়। গরীবের আছে গাছ-গাছালি, শেঁকড়-বাকড়। যত হাত বাড়বে তত আয় বাড়বে বলে গরীব এই উদ্দেশ্য মেটায় গর্ভপূর্তি করে, এমনই যে নারীদের উদর শূণ্য বলার জো নাই– সর্বদা পূর্ণ থাকে। তৈলাক্ত গুণে বেগুন ভর্তা সুস্বাদু হলেও তেলবীজ খাঁটি হলে ঘানি টানা নির্যাসে উচ্ছৃত অঙ্গের তৎপরতা কঠিনে কোমল এমনই যে তা থামাতে পরিকল্পনা জরুরি হয়ে ওঠে।
ধ্বজভঙ্গ রাষ্ট্র জনগণের ধ্বজ নিয়ে চিন্তিত হয়ে ওঠে। প্রতিযোগিতামুখর প্রজননে বাঙালি নাকি পাক ভূমির বিস্তর এলাকা, জমিন-মমিন সব ছয়লাব করে ফেললে যেমনভাবে বাঙাল মোসলেম ক্ষেত মজুরের দোহাই নিয়ে ১৯৪৭ এর আগের জমানায় অখন্ড বাংলা শাসন করেছিল,--ভাষণ দিয়েছিল এবং এই সুযোগে দো-আশলা সোরায়ার্দি গং-দের ফুসলিয়ে বিহারী কুট্টির দল রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে কোলকাতা দখলের ভয়টাকে হিন্দুদের মধ্যে জমে ক্ষীর করে দিয়ে এমনই ছেলেখেলায় তেলের শিশি ভাঙা সাঙ্গ করে দেশ মাতৃক বাংলাটাকে টেনে উরু দুইটা ফাঁক করে হেইও টানে দুইভাগ করে ফেলেছিল ধর্ষিতা নারী দেহের মত অসাধারণ ক্ষীপ্রতায়– সেই স্মৃতিকে সেভাবে অভিজ্ঞতার বরপুত্র জ্ঞান করে বাঙালীর জন্ম সামলানোর জন্য বাঙ্গাল মূলকে সঙ্গম নিয়ন্ত্রণ আইন করার মানসে পরিবার বিষয়ক পরিকল্পনা বানানোর ছক কষে লক্ষ্য পূরণে প্রজনন উপকরণ খাপ ও বর্তনী প্রদান করতে উন্মুখ ও উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
মশলাযুক্ত খাদ্য শুধু সুস্বাদু নয় উত্তেজকও বটে ফলে গো-মাংশ ভক্ষণ করতে বাঙালিরা খান সাহেবদের পাক সরকারের বিবেচনায় হিন্দুর জাত হিসেবে নিশ্চিত ধারণায় বসবাস করলেও তাদের বংশ বিস্তার করার পটুত্ব রীতিমত আতংকজনক কাজ মনে হতে থাকে বলেই রাষ্ট্রের লম্বা বকের মতো নাক থাকুক বা অনুপস্থিত থাকুক– সিঁধা অন্দরমহলে নাক ঢুকাতে বেশ সরস হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের ভূমিকা।
কৃষিভিত্তিক সমাজ, গ্রাম্য ও কাঁচামাল সরবরাহকারী। কল-কারখানা যা হচ্ছে সব পশ্চিমে। পাট বেচা টাকা-বিদেশী মুদ্রা আহরণ এবং তা দিয়ে কলকারখানা স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানী করে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল সেখানে। কৃষক ঘাম ফেলে রক্ত ঢেলে বৈদেশিক মুদ্রা যা কিছু আয় করে তা সব ব্যয় হত পশ্চিমে। কৃষকের সন্তান হাল বইত কিন্তু তাদের পক্ষে ২০০০ মাইল দূরে গিয়ে শিল্প শ্রমিক হয়ে জীবনযাপনের হাওয়া বদলের স্বপ্ন ছিল অকল্পনীয়। তাছাড়া, নদীমাতৃক দেশের মানুষেরা বড় কাব্যিক; কষ্ট এইভাবে জেগে থাকত এবং জাগিয়ে রাখত: আমারি বধূ আঁন বাড়ি যায় আমারই আঙিনা দিয়া– এইমত ক্ষোভ বিস্তার রক্তকে উসকে দেয়ার মতো।
যত হাত তত বেশী কাজের লোক, তাছাড়া গরু বা বলদ মরলে জুড়ে দেয়াও চলে –আরও আছে গান্ডে পিন্ডে কন্যা সন্তানের জন্ম– একটা চায় তো হচ্ছে আরেকটা— তো, মেয়েদেরও ধান ভাঙা, উঠান ঝাঁট, বলদ প্রতি পালনে লাগিয়ে দেয়ার রাখ ঢাক যেমন নাই তেমনি অন্যের গর্ভে উৎপাদিত হলেও নিজের জরু হাঁপানি কিংবা বাচ্চা বিয়োতে বিয়োতে মাটিতে মিশে গেলে- পুনরুৎপাদন কাজে পুনঃনিয়োগ করতে অসুবিধা একেবারে শূন্যের কোঠায়। যায় পূরণ হয় যায় আসে–,মধ্যখানে কেবল চমক।
পশ্চিমে শরীর সঙ্গিনী হিসেবে একাধিক বিবাহ দাবী না করলেও তাদের কল্যাণে যোনিদ্বার পথে যে সব শাবক প্রসব হতো তাদেরকে বলদ রূপে অবৈধ উৎপাদনের প্রতি শ্রদ্ধা কিংবা মায়াবশতঃ নিষ্ঠুর নিযুক্তি দেয়া হতো না। সম্পত্তি হতে বঞ্চিত রেখে বরং সেই সম্পত্তির পাহারাদারের পদসমূহ পাকা থাকত। বৈধ-অবৈধ সন্তানে-সন্তানে পশ্চিমা ভূ-স্বামীদের উঠোন-দালান সয়লাব হলেও ভাবনা ছিল না; বরং সুবিধাই ছিল যেমন- নারী ভোগে সফলতা বিফলতায় অজস্র বীর্যবর্ষণ জরুরি মোচন ও শরীর মোক্ষণ করত বটে তবে কিনা অভয়া ছিল তারা এবং নির্ভয় থাকত সন্তানরা।
কিন্তু সমস্যা যতসব পূর্বে। এরা রোজ খাটাতে শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার চেয়ে বিয়ে-শাদী করে খাওয়া-দাওয়া দিয়ে শরীর সেবা ও শরীরকে দৈনিক শ্রমে– ‘এক গতরে দুই কাম’ সম্পন্ন করত।
এইবার রাষ্ট্রের নাক গলানো ছাড়া উপায় নাই; পাক জমিতে মানুষের মানচিত্র বাঙালিতে ভরপুর হয়ে গেলে যখন-তখন সাধের পাকিস্তান কব্জা করে ফেলতে পারে। জারজ প্রজাতি ভয়ের কোনও কারণ নয়,-- অন্ড কোষ কেটে ফেলা নিছক সময়ের ব্যাপার হলেও বাঙালির জেনুইন পুত্র-কন্যারা রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক। সংখ্যা দ্বিগুণ-ত্রিগুণ হলে ভোট বিপ্লবে মসনদ দখল করে হয়তো দেখা যাবে ঘুঘু উড়ছে সেনা ছাউনিতে এবং নির্বিষ অস্ত্রধারী স্বীয় যন্ত্রের আস্থাহীনতায় ভুগছে।
সুতরাং রাষ্ট্র শয়নকক্ষে অনায়াসে ঢুকে পড়ে। বাঁধা দিতে তৎপর হয়। প্রজনন যন্ত্রকে বিরতি, পারলে পাকাপাকি দম শেষ করে দিতে। রতির আঠায় শয্যা কিংবা চটবস্ত্র যত চটচটে হোক না কেন গন্তব্য জরায়ু হওয়া চলবে না। শুক্রানু-ডিম্বানু পরস্পর বিমুখ থাকবে। এই জন্য জুতা আবিস্কারের মতো আচ্ছাদন ও বেষ্ঠনী নির্মাণ ও বিতরণ ব্যবস্থা প্রচলিত করতে অশেষ গতিশীল হয়ে ওঠে রাষ্ট্র। সরকার যখন রাষ্ট্রকে বলাৎকার করে ফল দ্যায় রাষ্ট্রও।
রাষ্ট্র তার দুরন্তপনা দিয়ে এই কাজটিও করতে চায়। বাচ্চা কয়টা হবে না-হবে তা ঠিক করে দিতে চায়। যারা রতিক্রিয়া করছে তাদের একমাত্র নিখরচায় বিনোদন মেনে নেয়া গেলেও সন্তান গ্রহণ অথবা বর্জন, যোনিদ্বার কিংবা মাতৃদ্বার কোনটা বাধ্য-অবাধ্য তা নিরূপন করে দিতে চায় আবার বীর্যের চাওয়া-পাওয়া, জরায়ুর আক্ষেপ এবং শারীরবৃত্তির ওপর রাষ্ট্র তার কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চায়।
রাষ্ট্র পরিবার পরিকল্পনা চায়; মন্ত্রী নিয়োগ করে; মন্ত্রণালয়ে সব উদগ্রীব মানুষজনের সমাহার ঘটে। কল্যাণের Concept আসে নাই তখনও– যেভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা যায়–পরিকল্পনা কোথায় হে? এতো কল্যাণ কামনা।
বকযন্ত্রের মতো নাসিকা রাষ্ট্রের,--সোজা প্রবেশ করতে থাকে শয়ন কক্ষে, শুঁকে দেখে আবৃত না অনাবৃত, যথাস্থানে প্রোথিত কিংবা বিপথগামী এবং শেষ পর্যন্ত ট্যালকম পাউডারের গন্ধ– চন্দন না বেলী? না, বিনা পয়সায় বিতরণ করা চেরী ফ্লেভার কিংবা ভ্যানিলা গন্ধী বীর্যাধার অসম্ভব ছিল তখন; পরিস্থিতি এমন যে, তখন বীর্য স্খলনের পর কনডম উত্তম ভাবে ধুয়ে পুনরায় ব্যবহারের জলদি স্বপ্ন ছিল।
রাষ্ট্র সর্বদাই পুরুষতান্ত্রিক। বিবাহিত জায়ার জন্য মোটাতাজাকরণ ঔষধাদির মত সেব্য দ্রব্যতে আস্থা রাখলেও বারনারীর জন্য ঢাকাঢাকির বালাই থাকত না। রবারের থলি যেন কনডম,দন্ড ধারণ ছাড়া অন্যথা অসম্ভব। তাই জনমিতি নিয়ে চিন্তিত ও অস্থির সরকার বড়ির ভারসাম্য রাখতে গিয়ে ক্যাপকে উৎসাহিত করলে গোড়া শ্রেণী, –সমাজের ভেতর যারা খুন চাপা দিতে সক্ষম-- এমনই ক্ষমতাবান এই সব মানুষ শিশ্নকে খাপ যুক্ত করতে অনিচ্ছা হতে রীতিমত গর্জে ওঠে। বিশাল হল্লাগোল্লা শুরু করে দেয়।
তো, ইসলামিক একাডেমীকে প্রজনন বিদ্যার গ্রন্থ প্রকাশ করতে হয়–উল্লেখ থাকে যে, এহেন ধারণ ও নিরারণ অগ্রহণীয় নয়।
সব রাষ্ট্রের ইচ্ছা, রাষ্ট্র সব পারে। শুক্রানু-ডিম্বাণুর মিলনে বাঁধা দিতে ফরমায়েসী বিয়োগ গাঁথা ও স্বপ্ন-নকশা প্রণয়ন করতে পারে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের রয়েছে বৈধ শিল্প।
এই যে প্রতিবাদ, প্রতিরোধে সঙ্কল্প, পরিবার পরিকল্পনা ধারণার বিপরীতে সংঘটিত হয়েছিল বলে জানা যায়,-- কোন অবস্থায় তাকে বাদ দেয়া যায় না। স্বীকার করে নিতে হবে যে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই ভাবে রাষ্ট্রের নিজস্ব অন্ত:সত্তা কাঠামো থেকে উৎসারিত হয়েছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা।
আমরা এই বিরোধিতাকে বলতে পারব, স্যুডো- প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা (Pseudo-antiestablishment) কারণ যে ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয় তার সঙ্গে--তাকে পরিবর্তনের সঙ্গে সমাজ বিবর্তনের যোগ নাই কোনও। প্রচলিত মূল্যবোধের হেরফের হয় নাই। স্থিতাবস্থার স্তরান্তর হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দুর্গম পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া গেলেও রূপান্তর সুদূর পরাহত; রাষ্ট্রযন্ত্র চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হয় না বরং দর কষাকষিতে এক ধরণের পদ্ধতির ভেতরে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
বাংলার কৃষক-প্রজাদের ঘাড় গর্দানে পা রেখে পাকিস্তান কায়েম হওয়ার পর সেই চেপে বসা পদ মোবারক ক্রমে বাংলার মানুষের বক্ষ বরাবর স্থাপন ও মর্দানা প্রয়োগে পিঞ্জরে হাড় কড়মড়ির শব্দে, আপন নৈপুন্যের জন্য করতালি শুনতে শুনতে বিভোর হতে থাকল। ১৯৪৭-র পর রাষ্ট্র পাকিস্তান গণতন্ত্রের পশুশক্তির উপাসনা শুরু করে। প্রয়োগক্ষেত্র P (পাঞ্জাব) A (আফগানিস্তান) K(কাশ্মীর) I(ইরান) S(সিন্ধু) TAN নয় বরং ব্রিটিশদের কাছ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া পূর্ববাংলা, সিন্ধু, বালুচিস্তান। দু’মুখো অর্থনীতি গেঁড়ে বসে; এক দিকে পাঞ্জাবীরা বর্ধিত কলেরব অর্জন করতে থাকে অন্যদিকে বাঙালি, বালুচ, পাঠানদের শীর্ণতা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল।
কাশ্মীরের সৌভাগ্য এই যে, ১৯৪৭ সালে পাঞ্জাব ও বাংলার জলবিভাজিকা স্বরূপ ভূমিখন্ডন তাকে বরণ করে নিতে হয় নাই। এবং দুর্ভাগ্য এই যে, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ১৯৪৭ উত্তরকালে তার ওপর এমনই অভিশাপ বর্ষিত হলো–ফলে তিনেক্কে তিনভাগ হয়ে রক্তময় অস্ত্রোপচারের শিকার হতে হয়। পাক-ভারত চিন,-- তিন দেশ মিলে হিড় হিড় করে টানাটানি জুড়ে দিয়ে লেজ, মাথা ও বপু ফর্দাফাই করে ফেলল ;কাশ্মীরের আপন ইচ্ছার কোনও প্রতিফলন হলো না বরং তিন দিক থেকে চেপে বসলো রাষ্ট্র তিনটি রাষ্ট্র (যথা প্রতিষ্ঠান অতিশয়) এবং কাশ্মীর রাজ্য আর প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারল না। তাই তাকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার জ্বলন্ত সংগ্রামে অংশ নিতে হয়।
রাজনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতা এবং ক্ষমতা যখন নিরঙ্কুশ—,তখন অবধারিতভাবে যাচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা মানে জনস্বার্থে করে যাওয়া দাবীকৃত তাদের বৈশক্যকরণীয় তাৎপর্য– এহেন দৃষ্টে ক্ষমতা অবশ্যম্ভাবী অর্থবাচক প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতাকে কেন্দ্রে রেখে পৃথিবী আবর্তিত হয়। কোন না কোনও আবর্তনে যেমন কেউ কেন্দ্র হতে ক্রমশঃ দূরবর্তী হয় অথবা ছিটকে পড়ে তেমনি লক্ষণীয় হয় কে বা কাহারা পৌঁছে যাচ্ছে ক্ষমতা কেন্দ্রে।Marginalization
& concentration show goes on|
পূর্ববাংলা, বর্তমানে বাংলাদেশ যথা প্রতিষ্ঠান, পাকিস্তান রাষ্ট্রের অঙ্গ-ভঙ্গি চূর্ণ ও ভগ্ন করে Clitoris removal যেন সম্পন্ন করে নিজের পুরুষত্ব তথা প্রতিষ্ঠান সত্তা কায়েম, নতুন জাতি রাষ্ট্রের উদ্বোধনে জাদুর মোচড়ে নিজে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে নিজে ক্ষমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপযুক্ত ক্ষেত্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে গোলামীর জন্য নির্বাচন করতে হয়। বিশেষ ক্ষমতা ও অধিকার প্রাপ্ত অঞ্চলের মর্যাদা হ্রাসকরণ প্রক্রিয়া জ্ঞান করে সাব্যস্ত করে যে, রাষ্ট্রের কাছে অধিকারের যুক্তি প্রকৃতির রাজ্যে নিহিত আছে।
প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া নয় বরং প্রকৃতির নিয়ম মেনে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যেই থাকে অধিকারের যাথার্থ্য। এখানে তর্ক উঠতে পারে যে, অধিকারকে কী প্রকৃতির বিরুদ্ধে অভিযানের সমার্থক ভাবা হচ্ছে? প্রকৃতির সঙ্গে অধিকারের বৈপরীত্যের দায় এঙ্গেলসের ওপর থাকে। তিনি বিজ্ঞানের জয় যাত্রার পক্ষে মত দিয়েছেন। বিজ্ঞানকে মনে করা হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ। প্রকৃতিকে জয় করে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মধ্য দিয়ে মানবজাতির সঙ্কটাপন্ন অস্তিত্বের আশংকা পূর্ণদৈর্ঘ্যে প্রকাশমান।
প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে মেনে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন শুভেন্দু দাশগুপ্তের ‘অধিকার কথা’।
বিজ্ঞান হলো ‘বিশেষ’ জ্ঞান; এই জ্ঞানের অধিকারী হচ্ছেন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু সকলের এই জ্ঞান থাকে না। তাই অন্যরা অ- বিশেষজ্ঞ। বিশেষজ্ঞদের জ্ঞান প্রসূত চিন্তা-ভাবনা, বিধি-বিধানের বিষয়ে প্রশ্ন করার উপায় থাকে না। ফলে সমাজে প্রকৌশলগত যুক্তির কাছে হার মানে গণতান্ত্রিক যুক্তি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রামপাল কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে কথা বলে না। এমন কি সংসদেও যে ‘টেকনোক্র্যাট’ কোটারি স্বার্থ রক্ষা করা হয়– তাদের জনগণের ম্যান্ডেট লাগে না। নলেজ সোসাইটির প্রতিনিধি হিসেবে জ্ঞান উৎপাদন, বিধি-বিধান, নিষেধ-উপদেশ জারি করে এবং অ-জ্ঞান সমাজের প্রতিনিধিগণ,-- জননির্বাচিত কিংবা সাধারণ মরণশীল সকলকেই তা বিনা বাক্য ব্যয়ে প্রশ্নহীন গ্রহণ করতে হয়; কারণ বিজ্ঞান পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রযত্নে যেভাবে অনুসৃত হয়ে আসছিল– রাজা যায় রাজা আসে— নতুন রাষ্ট্র উদিত হলেও প্রতিষ্ঠান ভোল পাল্টে ম্যাচিওরড প্রতিষ্ঠান হিসেবে বলবৎ থাকে। অতএব, প্রতিষ্ঠান আপনি আচরি ধর্ম। বাংলাদেশের গোলামী দূর হলেও পার্বত্য দুঃখ যায় না। আর অভূতপূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র- পুরাতন সেই প্রতিষ্ঠানের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে আমৃত্যু তার বালুচিস্তান–কখনো দাঁত ভাঙে, নাক কাটে, কান ছিঁড়ে– কুকুরকে খাওয়ায়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বালুচদের দুঃখ শোনার কোই নেহি হ্যায়। রক্তে ভাসে, রক্তে জাগে-- এইভাবে বালুচিস্তান মৃত্যুময় উপত্যকা।
পর্বত ও উপত্যকা অর্থাৎ দুর্গম প্রান্তর মহৎ বৃহৎ ক্ষমতার ধ্বজাধারীদের চোখে শোষণ ও লুন্ঠনের সুগম রম্য রাজত্ব হয়েছে–ক্ষমতার ভোগ্য হয়েছে। পার্বত্য ও উপত্যকায় দুর্গম অবস্থান শোষণকে প্রান্তবর্তী করে নাই; শোষণ হয়ে উঠেছে প্রধানতম অনুষঙ্গ এবং শোষিতের কূললক্ষণ পরিবর্তন না হয়ে উপর্যুপরি প্রান্তবর্তী রয়ে গেছে।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আর বালুচিস্তানের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে– যা রাষ্ট্রের ছিনিমিনি খেলার ক্ষমতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় নিঃসন্দেহে।
১৯৪৭- এ একদিকে স্বাধীনতা ও অপর দিকে দেশভাগের প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করতে পারব;-- পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিভাজিত পূর্ববাংলার সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছিল , যেমন মালদহ কিংবা মুর্শিদাবাদকে পূর্ব-বাংলার সঙ্গে সংযুক্তির বদলে ছেঁটে ফেলা হলো আর খুলনা পশ্চিম বাংলার বদলে রয়ে গেল পূর্ব-বঙ্গের ভেতরে।
গ র্যাডক্লিফ সাহেব নাপিতের প্রতিভা নিয়ে এসেছিলেন, তিনি এমনভাবে পুরো বাংলাটাকে ছাঁট দিলেন যে, দ্বিভাজিত বাংলার পূর্ব অংশে ৫৪টি হিন্দু প্রধান থানা, পাকিস্তান হয়ে টিকে রইল আর পশ্চিম বাংলার ভারতে মুসলমান প্রধান থানার সংখ্যা থাকল ৩৪টি।
কাশ্মিরের মত বালুচিস্তানের,-- পাকিস্তান না ভারত সংযুক্তি অথবা একক থাকার সুযোগ রাখা হয়েছিল–যে অধিকার বিসর্জিত হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে।
রাষ্ট্র শুধু ভূমি নিয়ে যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ করতে পারে তাই নয়, সে পারে জনমানুষের মানচিত্রকে ইচ্ছামত টুকরা করে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে যথেচ্ছাচারিত সাজাতে।
বিশ্বসভা ‘হলোকাস্ট’ নামক নিষ্ঠুর মারণঘাতী মৃত্যু ঝরানো প্রক্রিয়ার জার্মানিকে যেমন ভাগ করে, দাগা মেরে শিক্ষা দিতে পারে–হিটলারের জন্য থুথু নিক্ষেপ করতে পারে তেমনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের উপনিবেশে ব্রিটিশরা যখন বৃহত্তর ‘হলোকাস্ট’-- দেশ বিভাজনের নিষ্ঠুর আয়োজনে সম্পন্ন করলো– কোটি মানুষ মুছে গেল মানচিত্র থেকে,--নতুন পরিচয় উদ্বাস্তু আর মাথার ওপরে আঁছড়ে পড়া বিষ নিঃশ্বাস– আরেক দেশ, আরেক বাস্তবতা। এত পরিমাণ মানবাত্মার নিকাশ হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশদের দন্ডিত হতে হয় নাই, এমন কি জবাবদিহিও করতে হয় নাই; দেশ ভাগ থেকে দেশ-ত্যাগ, নিদারুন গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগের আবর্তে জেনোসাইডের জন্য ব্রিটিশদের কোনও অপনোদন ছিল না। কারণ যুদ্ধোত্তর ক্ষমতার বিন্যাসে পৃথিবীজোড়া অক্ষশক্তি কামিয়াবি হয়েছে দানবের প্রতিভায় সেখানে বৃটেন যুদ্ধ শেষে প্রভু আমেরিকাকে গান শোনাতে পেরেছিল। উল্লেখ্য, হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে উত্থিত নতুন শক্তি আমেরিকা ততক্ষণে বুক ডন দেয়া আরম্ভ করেছে।
নয়া কুতুব মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র, এই অঞ্চলে নতুন নতুন দেশের অভ্যুদয়–শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে দেশে-দেশে প্রতিরোধের সংগ্রামকে নিরুৎসাহিতকরণ ও বিপক্ষে অবস্থান করার মাধ্যমে বেয়াদব রাষ্ট্র সৃষ্টি বিরতিকরণ: এক ধরনের এলার্জিগ্রস্থ দশা বলা যেতে পারে – এমন ক্লিনিক্যাল অবস্থার সূচনা প্রকাশিত হয়েছিল।
বালুচদের মধ্যে স্বাধীনচেতা মনোভাব বরাবর ছিল যদিও বহুধা উপজাতি সমন্বিত এই জাতির পক্ষে বৃহৎ উপজাতীয় চার গোষ্ঠীর নেতাদের কল্যাণে ব্রিটিশের আনুগত্য স্বীকার করা হলেও, ১৯৪৭-এ পাকিস্তানের অংশী করা হলে তাদের সঙ্গে জন্য মিলে মিশে যেতে অস্বীকৃতি ছিল বলেই স্বায়ত্তশাসনের শর্তে সহাবস্থানের নীতিতে জিন্নাহ্ সাহেবের স্বীকৃতি ও পরবর্তীতে বিশ্বাস ঘাতকতার সম্মুখিন হতে হয়। পাকিস্তানের বৃহৎ প্রদেশ বালুচিস্তানে উপজাতি ও গোত্রের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য। যে কোন অংশকে লোভের ভেতর টেনে নেয়ার ব্যবস্থা বারবার গ্রহণ করে গোষ্ঠীগত ঐক্যে তাদের মধ্যে সাংগঠনিক ফাটল ধরিয়ে রাজত্ব কায়েম, উপনিবেশ জাহির ও দুই অর্থনীতি ভিত্তিক ব্যবস্থার যাঁতাকলে পিষে ফেলার কাজ করা সহজ হয়েছিল।
বালুচরা ১৯৪৭-এর আগে অনেকদিন নিজেদের মত থাকলেও সাতচল্লিশ পরবর্তী পাকিস্তানের অংশ হতে উৎসাহী ছিল না। একদা জিন্নাহ্ সাহেবও বালুচিস্তানের সার্বভৌমত্বের জন্য ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীন বালুচিস্তানের চারজন শাসকের একজনের পক্ষে উকিলি লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। অথচ পাকিস্তানের অংশ হিসেবে রাজী না হওয়াতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সেখানে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল।জিন্নাহর ওকালতি যে ছিল পয়সার কাঙালি তা রাষ্ট্রের কান্ডারি হয়ে প্রাক্তন মনোভাব বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের তাপকে মাথা পেতে নিতে হয়েছিল।
বালুচিস্তানকে দখলদারীর আওতায় এনে স্বায়ত্তশাসন তো দূরে কথা বরং ঐ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠন করে এবং স্বাভাবিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে বালুচিস্তানে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া গেলে,--বেল পাকলে কাকের কী,-- এই প্রবাদসম অবস্থা জারী রাখা হয়েছিল বলে অবুঝ বালুচরা সিন্ধু হতে কাঠ এনে পোড়ায় জ্বালানীর জন্য আর তাদের সম্পদ—প্রাকৃতিক গ্যাস অপহরণ করে তা পাঠানো হত পাকিস্তানের বাদবাকি অংশে। পূর্ব-বাংলাতে অবশ্যই নয়।
দমন পীড়নের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী বালুচদের গুম, অপহরণ ও নির্যাতন চালানো পাক শাসক গোষ্ঠীর নিয়মিত কর্মকান্ড। শুধু তাই নয়, ঐতিহ্য- সংস্কৃতি নিয়ে অহংকৃত জাতিকে আত্মপরিচয়ের সংকটে নিপতিত করা হয়েছে। ইরান ও আফগানিস্তান পার্শ্ববর্তী হলেও ছেকে রেখেছে পাকিস্তানের অপরাংশ এবং চীনের সংগে এক পাশ দিয়ে গিয়েছে অর্থনৈতিক করিডোর; দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান এই পথ উভয়েরই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে বালুচিস্তান চীনের প্রশ্রয় লাভ করে নাই। ফলে পাক অত্যাচারে নিঃসঙ্গ যোদ্ধা অপরাপর সাহায্যকারী ও প্রতিবাদী শক্তির সহায়তা লাভ করে নাই।
পাকিস্তান সেনারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরে আলকাতরা বানিয়ে পিচের মধ্যে ঢেলে দিয়েছে।
বালুচরা, বাঙালিদের মতো লড়াই করছে; ইন বালুচিস্তানThere is no pakistan। বালুচিস্তান যে চারটি প্রিন্সলি স্টেটে বিভক্ত এবং যাদের ভারতীয় আরও ৫৩৫ প্রিন্সলি স্টেটের মত ভারত বা পাক-অন্তর্ভুক্তির সুযোগ অথবা স্বাধীন থাকার অধিকার ছিল। চারটির মধ্যে তিনটি পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হয়ে গেলে বাকি রাজ্য কালাত ইয়ার খানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তান তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে অবশেষে সমঝোতা করার ছদ্মবেশী কৌশলের আশ্রয়ে প্রতারণা করেই ক্ষান্ত হয় নাই বরং নির্বিচারে অপকর্ম ও দমন পীড়ন চালায়। ইয়ার খান পাকিস্তানের সাথে সমঝোতা করতে নিরূপায় বাধ্য হলেও ছোটভাই আবদুল করিম ও মোহাম্মদ রহিম বশ্যতা স্বীকার না করে পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারপর নাই যুদ্ধ আরম্ভ করে।
এইভাবে দেখা যায় যে, রাষ্ট্র যারপর নাই শত সহস্র রূপে প্রকাশিত হয়েছে।
রাষ্ট্র অর্থে প্রতিষ্ঠান, দাঁত-শিং-নখ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠানকে তোয়াক্কা বা বিরোধিতাকারীদের পাল্টা আক্রমন শুরু হয়।
এইভাবে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বীজ লুকিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের দাতব্য অবয়ব যখন পূর্ণদ্যোমে দানবীয় রূপ গ্রহণ করে তখন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা অন্তর্হিত শক্তি সঞ্চয় করতে করতে এক সময় যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মারে তাতে ঢিল লেগে আয়না চৌচির হলে ভাঙা আয়নায় প্রতিষ্ঠানের মুখচ্ছবি বহুধা বিভক্ত,ফাটল পূর্ণ এবং সংকটাপন্ন অবস্থায় পতিত হয়। রাষ্ট্র অর্থে প্রতিষ্ঠান স্ববিরোধিতার বীজ নিয়ে বসবাস করে। রাষ্ট্রের নিজস্ব চারিত্র্যগুণে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা যুগ যুগ ধরে সংজ্ঞায় কিংবা প্রজ্ঞায় অন্তঃশীলা।
প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ও সন্ত্রাসবাদ– এক কথা নয়। সন্ত্রাসবাদ নির্বিচার। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা নিরুপায়ের বাঁচার তাগিদ।এখানে বিপ্লব থাকে। সমাজ পরিবর্তনের ইঙ্গিত থাকে।কখনো থাকে নিরীহ মানুষের রক্তমাখা হাতে রাষ্ট্রের মত হাত ধুঁয়ে রক্ত সাফ করা। সন্ত্রাসবাদের মধ্যে নির্বিচার থাকে আতংক উৎপাদন থাকে অথচ প্রতিষ্ঠান বিরোধোতা নিরীহ ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হয় না বরং চাল হিসেবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে অন্তর্গত ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এক ধরণের প্রত্যাঘাত করার ক্ষমতা সচকিত হয়ে ওঠে। প্রত্যাহার, প্রত্যাঘাত, আক্রমন ধাপেধাপে প্রতিষ্ঠান বিরোধী উত্তরণ রাষ্ট্র যখন স্বৈরাচারের পদতলে– সম্মুখে তখন বিরোধিতা। রাষ্ট্র যখন আক্রমণাত্মক, সামনে তখন ব্যারিকেড।
মন্তব্য