বাঙলাদেশে ছোটকাগজ আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব, ১৯৮০-র দশকের অন্যধারার কথাসাহিত্যিক সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ। তাঁর গল্পের ভাষা ও বিষয়বস্তুর প্রক্ষেপণ সমাজবাস্তবতাকে নন্দনতত্ত্বের অন্য এক মাত্রায় নিয়ে আসে। বাঙলা গল্পের একটি নিজস্ব ও মৌলিক বিন্যাস তাঁর লেখায় উপস্থিত। মূলত মানুষের অস্তিত্বের বিপন্নতা ও বিচিত্র নানাবিধ অনুষঙ্গ চিত্রিত হয়েছে তাঁর কথাসাহিত্যে। তাঁর লেখায় এক প্রকার চিত্রকল্পধর্মীতার পরিচয় পাওয়া যায়, এ কারণে একজন চিত্রকরের জন্যও তাঁর ভাষার নানান উপাদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বাঙলাদেশে অন্যধারার কথাসাহিত্যিক হিসেবে তিনি নিজ আসন পোক্ত করেছেন। বাঙলা ভাষায় কথাসাহিত্যের চর্বিতচর্বন কাহিনীর বদলে অন্যকিছু পড়তে চাইলে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের সাহিত্য পড়তেই হবে।
১৯৯৩ সালে লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কিত প্রবন্ধ রচনার মধ্য দিয়ে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বর্তমানে তিনি ছোটগল্প সৃষ্টির সঙ্গে প্রবন্ধ রচনা ও উপন্যাসে নিজেকে ব্যাপিত রেখেছেন।
মানুষের সঙ্গে মানুষের মানবিক সম্পর্ক নির্ণয়, অবক্ষয়ের উন্মোচন ও বণিকপ্রবর-ধনপতি কর্তৃক অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক ও যৌথঅস্তিত্বের ক্রন্দন তার সমগ্র রচনাজুড়ে প্রতিফলিত হয়েছে।
মূলত গল্পকার হলেও প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে প্রবন্ধ এবং উপন্যাসও।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক আবহ, সামাজিক নানা অসঙ্গতি তিনি কখনও তীর্যকভাবে কখনও সহজে কিন্তু শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন। নিজস্ব ভাষা তৈরি করে সাহসের সাথে তিনি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তাঁর সকল রচনায় ভাষা নিয়ে কঠিন নিরীক্ষার প্রবণতা দেখা যায়। প্রাত্যহিকতায় মলিন, অতিচেনা বিশেষ্য বিশেষণ ক্রিয়াপদের পুরানো চেহারাকে নিজস্ব কায়দায় দুমড়ে মুচড়ে, সচেতন প্রয়াসে দিয়েছেন ঝকঝকে টাটকা অন্য এক আদল।
জুলাইয়ের ১৪ তারিখ আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কথাসাহিত্যিক সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ সংখ্যা’ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। এরপর কেটে গেল চারটি মাস; লেখা সংগ্রহ— লেখকদের কাছে বই পৌঁছানো, কত কী! এতসবকিছুর পর প্রকাশিত হলো এ বিশেষ সংখ্যা। বরাবরের মতোই লেখকগণ শ্রমলব্ধ প্রবন্ধ দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গপ্রাপ্ত কয়েকজন লিখেছেন স্মৃতিকথা, অসামান্য প্রচ্ছদটি ডিজাইন করেছে কারখানা আইটি; এছাড়া আরো অনেক লেখক-সম্পাদক নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন, বিন্দু কৃতজ্ঞ সকলের প্রতি। সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত এ আয়োজন সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। বিন্দুর ক্ষুদ্র সামর্থে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের সাহিত্য পর্যালোচনা-মূল্যায়নের উদ্যোগে আমাদের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না, তবুও অগোচরে যদি কোনো ত্রুটি রয়ে যায়, পাঠকগণ যদি আমাদের নজরে আনেন, ত্রুটি উৎরে যাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। বাঙলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ এই কথাসাহিত্যিককে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে পারা বিন্দু পরিবারের জন্য গৌরবের। পাঠক, শীতের রাত্তিরে এ পাঠ আপনাকে উষ্ণতা দিতে সক্ষম।
সাম্য রাইয়ান
সম্পাদক, বিন্দু
মন্তব্য