AM I BEING PARANOID?
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ
ঢাকা শহরে অলিগলির কমতি নাই। কোনো গলি পাতলা খানের, কোনো গলি গরমপানির আবার কোনো গলি ভূতের।
ভূতের গলির নাম কেন>ভূতের গলি>তা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির দায় পড়েছে কামরুজ্জামানের ওপর।
ভূতের গলি নামকরণের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ৫ পর্বে সম্প্রচার হবে প্রাইম টাইম সংবাদে। বাংলা সংবাদে নানা বিষয়ে প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে করে থাকে সে। কামরুজ্জামান এই এসাইনমেন্ট পেয়ে রীতিমত উত্তেজিত। তার বুক জুড়ে হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। ভূতের গলি নিয়ে এমনিতেই তার অনেক বেগ ও আবেগ আছে। ভূতের গলি তাকে পুরুষ করেছে। স্তন সৌন্দর্যে হর্ষোৎফুল্ল অনুপম সেইসব দিন ছিল। ইতোপূর্বে শনির আখড়া নিয়ে বাংলা সংবাদে ৬ পর্বের ধারাবাহিক তৈরি করেছিল। দূর হয়েছিল শনির আখড়ার পিশাচ বাজনা; ভয় দেখিয়েছিল ফিরে আসার। তো, শনির আখড়ার নাম পাল্টে গেল; যতদিন এই নাম বহাল ছিল শহরে ঢোকার মুখে ঘ্যামাঘাট্টা জ্যামে পড়তে হতো এই শনির আখড়ায়। প্রতিবেদন টিভি নিউজে প্রচারের পর শনির জ্যাম উধাও। এখন শনির আখড়া নামটাও নাই– আর শহরের প্রবেশমুখে দমবদ্ধ জ্যামও উবে গেছে।
কামরুজ্জামানের ধন্য-ধন্য পড়ে গিয়েছিল। এবার ভূতের গলির মুখোমুখি হলো সে। উত্তর দিকে ভূতেরা বসবাস করে কীনা– তা অজানা হলেও ভূতের গলির সম্মানিত এলাকাবাসী জায়গার নাম পাল্টে বলে থাকে যে, নর্থ রোডে তাদের অধিবাস।
নর্থ-রোডের চেহারা হঠাৎ পাল্টাতে শুরু করলো। ডেভেলপারদের আনাগোনা দ্রুত এলাকার মানুষের মধ্যে ধনী হওয়ার স্বপ্ন-সাধ তৈরি করলো। ভূতের উৎপাত হয় কীনা এমন প্রশ্ন কেউ বেকুবের মতো জিজ্ঞসা না করলেও ধূমধাড়াক্কা শুরু হয়ে যায়।
একেকটা পুরানো দালান চুরমার করে নতুন সব দালান গিজগিজ করতে করতে এলাকার আবহাওয়া গরম করে তোলে।
ভূতের গলির যে মসজিদটা ছিল তাতে মাইকের দূরাবস্থার কারণে হুজুর সাহেবের নানা কথা, বয়ান, আজান কর্ণগোচরে এসে পৌঁছাতে কষ্ট হলেও এলাকার চাকচিক্য বাড়তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেনবা মাইকের ভাঙা কণ্ঠ জোরালো হয়ে উঠল।
মাইকের পাওয়ার বেড়েছে। নতুন শক্তি নিয়ে পুরানা মাইককে বিদায় করে পাড়া কাঁপিযে দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
তবে আরেক ঘটনা। ভূতের গলির মসজিদের হজুর সাহেব ভূতের কবল হতে মুক্তি লাভের জন্য যে তাবিজ-কবজ, ঝাড়ফুঁক করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর কর্তৃক স্বাক্ষরিত কাগুজে মুদ্রা পকেটস্থ করতো জাস্ট হাদিয়া হিসেবে– কিন্তু কী যে হলো বড় বড় অট্টালিকার কল্যাণে হোক আর দুষ্কর্মে হোক, অর্থ প্রবাহ কমে গেছে ব্যক্তি হুজুর সাহেবের তাবিজ প্রদান বাবদ খাতওয়ারি হিসাবে। পকেটে। এবং পেটে।
হজুর গোস্বা করলেও ভূত যদি কাউকে ভয় না-ই বা দেখাবে তো কেমন করে ভূত তাড়ানিয়া কালামের জরুরৎ দেখা দেবে। বোঝে হুজুর সাহেব। তবে বেধড়ক গালি তেমন দিতে পারে না, এই জন্য যে, মসজিদের উন্নয়ন কর্মে জনগণের অংশগ্রহণ বেড়েছে।
ডিশের ব্যবসায়ীদের রকমরমা। আগে বাড়ি প্রতি বড়জোর তিন/চারটা সংযোগ দিত আর এখন এক দালানে গাদায়-গাদায় সংযোগ দিতে দিতে, মাসিক চাঁদার পরিমাণ বাড়াতে বাড়াতে, থলথলে হয়ে উঠেছে ডিশ ব্যবসায়ী ভায়েরা।
পাড়ার আদি মুদীর দোকানদার চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। যে বাড়ির সামনের আঙিনার মধ্যে রাস্তার গা ঘেষে টং ঘর করে মুদী ব্যবসা চালাত- লামসাম ভাড়া দিত-এখন সেই বাড়িটায় ডেভেলপারের সাইনবোর্ড শিরদাঁড়া করার ফলে তার এতদিনের পুরানা দোকান উচ্ছেদের মুখোমুখি। সাজানো বাগান তছনছ হয়ে যাচ্ছে। আর জৌলুস নাই। মরা মাছের মতো চোখ মেলে তাকিয়ে থাকা কোনো কিছু করার নাই তার। পেছন থেকে ভাঙতে ভাঙতে দোকানটাও গুঁড়া হতে সময় নাই।
ফ্যাট বাড়ি হচ্ছে। এক দঙ্গল লোক মিলে একেক এপার্টমেন্ট ভবনের মালিক। মুদীর দোকানের কোনো কারবার নাই। দোকান করার স্পেস নাই।
মনে পড়লো, কয়দিন আগে ফ্রিজের মিস্ত্রী কামাল মিয়া দোকানসহ উৎপাটিত হয়ে পুরো এলাকা খুঁজেও আর কোনো দোকানের সম্ভাবনা না দেখে পাড়া ছাড়লো।
হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিল সে। একা একা কাঁদলো। মায়া কেবল তার-ই পড়ে রয়েছে– যা যা হয়ে থাকে আহম্মকদের ভেউ ভেউ করে কাঁদে– একক সংগীত। লোকজন ব্যান্ডের গান ছাড়া শোনে না এখন। তাই,তার কান্না রাস্তায় মারা যায়।
কেন বেদনা এমন হয়।
ভূতের গলিতে আরেক কিসিমের লোক আছে যারা সাউথ নর্থ মানে না।
তাদের কথা, ভূত আছে। ভূত থাকবে। তাদের কাছে অভূতপূর্ব নয় ভূতেরা।
এই লোকের দলের কাজ-কর্ম তেমন নাই তবে ভূত উপলক্ষে হরহামেশা কেউ শরণাপন্ন হলে তদবীর করে ছাড়িয়ে আনার কর্মটি বেদম উৎসাহে করে থাকে।
ভূতের দল ছেড়ে কথা কয় না। ডেভেলপার জমিতে পত্তন গাড়তেই ভূতের আছর টের পায়। তখন এতটাকা ঢেলেঢুলে এবার মাথায় হাত, নয় তো পাছায় হাত।
ভূতের তড়পানিতে চিল্লাপাল্লা করতে মানা আছে নইলে একদম কাঁচা খেয়ে ফেলবে। ফলে সহে না দিবস ও রজনী করতে করতে তদবীরকারীদের মন গলাতে পারলে তবে মুক্তি মেলে।
ভূতের গলিতে ভূত চটিয়ে দালান কোঠা বানানো মুল্লুকে, মগর নয়।
কাফফারা দিতে হয়; লাখ টাকা মিছে হয়ে যায়। নইলে দালান ওঠাতে যে মানুষের জান লাগে– তা প্রতিস্থাপনের হুমকি থাকে– জান দিয়ে, রক্ত ঢেলে নইলে দালানের ভিত্ তোলা দরকার পড়ে।
গর্দান বাঁচাতে ডেভেলপারগণ হাদিয়া দিয়ে প্রাণ রক্ষা করে দালান তুলে কোঠা বেঁচে রুটি রোজগার জুগিয়ে চলেছে এন্তার মাুনষের।
ভূত বশীকরণে মন্ত্র জানে, এমন লোকদের কদর বেশ রকম চলমান।
কিন্তু লন্ড্রীওয়ালা স্বপন মিয়ার কী হবে! তার চালাঘরে যে ড্রাইওয়াশ করার ব্যবস্থা ছিল তা ডেভেলপারের কোপে পড়ে উৎখাত হয়ে গেছে। পাড়ার লোকেরা ভাঁজওয়ালা জামা কাপড় পরে অফিস আদালত যাবে এ জন্য যেমন মরা কান্নার অন্ত নাই হৃদয়ে মম তেমনি হাহাকারও বাড়-বাড়ন্ত যে, যে পুকুর ডোবা ছিল; দিব্যি ওয়াটার ওয়াশ করতো জামা কাপড়; মানুষেরা অসভ্যের মতো মলত্যাগ কিংবা হা-টা- পানিতে নিক্ষেপ করতো বলে পাহারা দিতে হলেও সাবান ঘষে এলাকার গ্র্যাজুয়েট চাকুরেদের পকেট সাফ করতো।
এসব ডোবা নালাও ভরাট হয়ে গেছে দিব্যি; ওখানে মাটি ভরাট করে দালান তুললে ভূমিকম্পনে ধ্বসে পড়ার প্রচার চালাতে গিয়ে হাড় হাড্ডি তার গুড়াগুড়া করে দিল ছায়ায় ছায়ায় কতগুলো লোক; গলির ভূতেরা হতে পারে, বিদায়কালে পুরানা বান্দার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চলে গেল।
স্বপন মিয়ার নানা ফ্যান্টাসী ছিল লন্ড্রীতে। নারী-পুরুষের কাপড় জমা পড়তো, একদিনে কিংবা কয়দিনে ধোলাইয়ের জন্য।
ইস্তিরি করতো জামা কাপড়; ধোয়াও চলতো।
এইসব করে স্বপনের রুটি রোজগার।
শাড়ি-পেটিকোট-ব্লাউজ, শার্ট-প্যান্ট, সালোয়ার-কামিজ-ওড়না তার কাছে এসে জমা হতো ধোলাইয়ের জন্য, কড়কড়ে ইস্ত্রিরি হওয়ার জন্য।
সালোয়ার কিংবা ব্লাউজ হাতে নিয়ে নাকের কাছে এনে নারীদের শরীরে লুকানো সুবাস মন-প্রাণ ভরিয়ে দিত।
মাতাল হতো গন্ধে গন্ধে। তারপর গরম ইস্তিরি দিয়ে কাপড় পরিপাট্য করতে করতে কতদিন অনুভব করে এক আশ্চর্য সংগমের স্মৃতি। সংগম সে করে নাই, সংগম করতে পারত নারীদের, তাদের লুকানো উজ্জ্বলতায় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারত নিজেকে কিন্তু কোনোটা নয় অথচ সংগমের পর তৃপ্তি ও সঘন নিঃশ্বাস শরীরময় এক কুয়াশার মতো ঘিরে রাখে তাকে।
ব্লাউজের সুডৌল বুক স্পর্শ করে ঠিকঠাক নিতে পারত, কুমারী-যুবতী-না স্তন্যদায়ী কোন রমনী এই বক্ষবন্ধনকে শরীরের সঙ্গে জুড়ে রাখে।
স্তন ভার বহন করে, ব্রা; ব্রা কেউ লন্ড্রীতে দেয়না কিন্তু ব্লাউজ স্পর্শ করে সে অনুভব করে স্তনের ভরকেন্দ্র। চোখে চোখে মুখস্থ বলে দিতে পারে কত মাপের কোন ব্লাউজে স্তনকে ধরে রাখতে মোলায়েম সব ব্লাউজ সে দেখেছে।
নতুন-নতুন দালান উঠতেই একটার পর একটা আদি দোকান হারিয়ে যেতে থাকল। তার দোকানটাও অনবরত উচ্ছেদের মধ্যে পড়ে গেল।
দোকানহারা স্বপ্ন মিয়া পথহারা। রুটি-রুজি তো গেছে; যাচ্ছে; তার চেয়েও ঘটনা আরেকটা হলো নানা প্রকার স্তন, যোনী সংযোগ স্পর্শের অনির্ধারিত পথ বিমুখ পরিস্থিতি। পরোক্ষ স্পর্শ সুখ হারিয়ে জীবনটা তার তেজপাতা হয়ে গেল, পোকায় খাওয়া তেজপাতা, মচমচ্ শব্দে গন্ধহীন এইসব তেজপাতার মতো জীবন, পানিতে ভাসে না; সৌরভও ছড়ায় না।
স্বপ্ন মিয়া স্মৃতিহীন হস্তমৈথুন করে। স্বপ্নহীন, দৃষ্টিহীন এখন সময় তার খেলা করছেÑ পড়ন্ত সূর্যের নিচে। অনেক বাক্য রচনা যেমন কোনো অর্থ ঘোষণা করতে পারে না, তেমনি, অহেতুক বীর্যপাত, কেবলই প্রপাত, কেবলই জরায়ুর শুষ্কতা।
স্বপ্ন মিয়ার শরীর অচিরেই বক্রাকার হয়ে ওঠে, তো, রোদকে আড়াল করতে দেহ থেকে উৎপাদিত হয় ভাঙাচোরা এক প্রকার অস্থির ছায়া যেন, বিলুপ্ত কোনো প্রাণী সহস্র বৎসর পরে ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে এসে হাজির।
এমনই ভূতের দেখা পায় হাতকাটা রজব। রজবকে নিয়ে আরেক কেচ্ছা। সে সৌদি আরবে কর্ম নিয়ে গিয়েছিল এবং অচিরেই ফিরে আসে; চুরির দায়ে ডান হাত কর্তিত হয়েছে এমন রটনা শোনা গেলেও রজবের কথা অন্য রকম। সৌদিঅলাদের তরবারির কোপে নয় বরং গাড়ির চাকায় হাতটা বিসর্জন গেছে বলে দাবী করে চলে।
সৌদি রিয়ালের তাগদে ভূতের গলিতে জমি কিনে ঘর তুলেছিল। টিনের চালাঘর পাকা বাড়ি হয়েছে।
ডেভেলপারের সঙ্গে কথা চলছে; কথাবার্তা পাকাপাকি হলে রজ্জব প্যারাডাইস নামে এপার্টমেন্ট বিল্ডিং তৈরি হবে এই দৃশ্য নাকডাকা বাদ দিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে দিব্যি চোখের সামনে দেখে আর ফিক্ ফিক্ করে হাসে।
রজবের যৌনকীর্তি ভয়াবহ; তার বউয়ের ডিম্বাণু ফুটাতে না পারলেও নিজ শিশ্নের কল্যাণে নানা প্রকার মাতারির গর্ভে বীর্য নিষিক্ত হয়েছে এবং এসব কারণে ভূতের গলিতে কোনো কোনো অমাবশ্যা রাতে অথবা জ্যোৎস্নায় রূপালি স্রোতে ভাসতে ভাসতে সাদা-কালো নারী-পুরুষ ঠোঁটে ঠোঁট রাখে, যোনি মধু ক্ষরিত হয়তখন এবং তখনই সুদূর থেকে বাবা, বাবা মা মা ডাক শোনা গেলে চমকে উঠে ছিটকে যায় উত্তপ্ত শরীর–পরস্পর হতে বিচ্ছিন্নতা, ছিন্নতা আর ক্ষুণ্নতা।
লীলায় ঠিক মতো তান উঠলে ভূতের মুখে পিতৃডাক শোনা যায় না।
যে পতিত বীর্য বিফলে যায় তা কাকে খেলে ফর্সা এক কন্যা জন্ম নিলে সত্যি ভূত, মিথ্যা হয়ে যায়।
চুপে নিঝুমে সকলের অজান্তে নিষিদ্ধ জীবনে শিশ্ন, যোনিতে দ্রুত স্থিত করতেই উচ্ছৃত লিঙ্গ অকালে বীর্যপাত ঘটালে কামুকী ভাতারখাকী নারীর যোনির প্রক্ষেপ থামে না যেহেতু রাগ মোচন হয় না; রাগে কামড়ে দেয় আর চতুর নাগর ভূতের দোহাই দিয়ে সিক্ত লিঙ্গে প্রস্থান করে। ভূতের গলিতে কনডম বেচাকেনা কম। তবু বালক-বালিকাদের হাতে হাতে লাল-নীল বেলুন শোভা পায়—শুকিয়ে আঠার মতো বীর্য কাক ঠুকরে খায়–কাকের কোল হতে প্যারাসুটের মতো বেলুন হাতে ভাসতে ভাসতে নামে, নামতে থাকে, তখন বেলুন হাতে রঙিন শিশুর দল কলকল করে হাসলে ভূতরা হো হো করে যদিবা হাসলো তো ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে বৃদ্ধ দাদাজান ভূত দেখে খিল খেয়ে রাস্তায় লুটিয়ে থাকত। এরকম নানাজনের নানা রকম ফের হলেও ফজর বেলায় মসজিদে মানুষের উপস্থিতি কমে কিন্তু ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমায় ভূতের দল।
অনুসরণ করে ভূতের দল। বিড় বিড় করে দোয়া পড়ে হুজুর। এক সময় নিজের কানে কোনো প্রকার উচ্চারণ পৌঁছায় না।
চোখে দেখে, কাফন পরে হেঁটে যাচ্ছে কেউ হয়তো; আবার দেখে মরার খাটিয়া থেকে উঠে মর্নিং ওয়াক করতে চলে গেল কিংবা জানাজার মধ্যে কফিন থেকে উঠে বসে তাড়াতাড়ি করার জন্য তাগাদা দেয়।
ইমাম সাহেবের মুখে শব্দ-বাক্য সব উল্টে যেতে থাকে আর এই মানুষটা হাত নাই পা নাই সাদা কাপড়ে মুখ ঢেকে আলো ফোটার আগে বাতাসের ডগায় দুলতে থাকে।
শরীর দেহাতীত হয়ে উড়ে গেল যেন উড়ন্ত চুম্বন গিয়ে স্থাপিত হয় মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় যে তরুণী মা সাজিয়ে গুছিয়ে চলমান।
যে চুম্বন উড়ে আসে তা শিশুটিও চিনে ফেলবে একদিন।
জন্ম থেকে বিচ্ছেদ; রোদ হতে উত্তাপ, কোলাহল হতে শব্দ ক্রমাগত স্মৃতি হয়ে যেতে থাকে। পুরানা বেদনা আসে ফিরে।
চায়ের দোকানে চুলায় আগুন জ্বালালে ভূতের গুষ্ঠি গালাগাল দিতে দিতে পর্দানসীন, আড়ালে আসীন হয়। তারপর আগের দিনের খবরাখবর জানা যায়।
পেপারঅলা দোরে দোরে খবর ফেরি করে; সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ; বাতাস কেটে আঁকাবাঁকা খবর দৌড়ায়; হিংস্রতা-খুন, রক্তের গন্ধ ঘোরাফেরা করে আকাশে বাতাসে; দিকে দিকে ঘটিত হিংসায় ঝলসে ওঠে খবরের পাতা; ভোরের বাতাসে পাতা ওড়ে, পোড়ার পর ছাই ওড়ে এলোপাথারি।
এইভাবে ভূতের গলিতে কখন যেন রাত্রি থেকে ছিটকে আসে সময়ের কংকাল। কংকালের কঠিন শরীর হাড্ডি ছাড়া আর কোনো কথা নাই। বেজে ওঠে হাড্ডির খটখটাখট; হাড্ডির হাত লম্বা হয়ে গলা টিপে ধরলে লেবু-গন্ধমাখা আঙুল নাকের কাছে বিলি কাটে যেন। দম বন্ধ হয়ে যায় চাপে ও গন্ধে। মাছের আঁশটে গন্ধ হামলে এসে তছনছ করে দিল লেবুর গন্ধ– অমর হয়েও খবর গেল গন্ধ।
ঝনঝনাৎ করে উল্টে যায় সাইকেল; শূন্যে ঘোরে চাকা; খসে পড়ে সংবাদ ও ছবি, কাগজ ও কালি। আগুনের পোড়া মরা শরীর–মা ও মেয়ের, খিলখিল করে হাসতে হাসতে মুক্তি পেয়ে ছুটে গেল; ধর্ষিতা নারী অশ্রু ও রক্তমাখা শরীর থেকে আপদ খসাতে লাগলো; নিহত কাশেম, ক্রস ফায়ারিংয়ের পর গালাগালি দিতে দিতে পশ্চিম দিকে রওনা দিল; বিল্ডার্স কোম্পানি নতুন বাড়ির স্বপ্ন দেখাতে ফেরিঅলার চিৎকার দিতে লাগলো; মোবাইল অপারেটর বোনাস হিসেবে ভূতের সঙ্গে কানেক্টিং করে দিল।
যে যুবক একটু আগে মাস্টারবেশন করেছে; সারারাত জুড়ে কানের কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল নারী বন্ধুর ক্রমাগত শীৎকার,--মদ্যপ স্বামীর শিশ্ন প্রহারের ঝংকার–ঘুম হয় নাই সারারাত–লাল চোখ নিয়ে দশ টাকার ডাল পুরি কিনতে বেরিয়ে এসে দেখে নিজের ছায়া নাই কেবল রোদের টাটকা আলো শুয়ে আছে সামনে।
যে মেয়ে মরা বাচ্চা প্রসব করে আর ইঁদুরের গর্তে শুইয়ে দিয়ে আসে শিশুর লাশ; সেই মেয়ে একদা খোলা চুলে ছাদে দাঁড়িয়ে পাশের জমিতে গড়ে ওঠা দালান দেখছিল এমনি এক নিরালা মুহূর্তে কামোত্তেজিত সে একাকী অগার্জম ঘটিয়েছিল; দৃশ্যহীন সীমানায় তুঙ্গ স্পর্শ ও ভেতরে প্রবেশে এক প্রধান উষ্ণ সঞ্চালন শরীরের ভেতর ভূতের নামতা পড়া অস্পষ্ট থেকে স্পষ্ট করে শুনিয়েছিল।
আয়নায় মা ও মেয়ে চেহারা দেখছিল, দেখতে দেখতে বোধ হয় যে তাদের আয়নাটা নষ্ট– ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে মুখচ্ছবি।
ভূত তাড়াতে মিলাদ। খাস করে দোয়া। একের পর এক। মিলাদ দিয়ে মেঠাই বিলি করতেই ভূতের তেরাবেকা কা-। চনমন করে রোদ। কোথাও কোনো বিপদ সংকেত নাই। তবুও মেঠাইয়ে টান পড়ে।
নতুন একটা থানা গড়ে উঠেছে ভূতের গলিতে। থানার বাইরে পুলিশের চোটপাট আবার সেই সব চুপচাপ থানার ভেতরে।
ভূতের গলিতে কলাবাগান থানা চালু হলে সকলেই হতবাক। কলাবাগানের থানা কোন সুবাদে ভূতের গলিতে জমিয়ে বসলো– তা ভূতেরই কীর্তি বলে মালুম হলো।
থানা-পুলিশ-থানাদার-কয়েদ-ডান্ডা-মিলিটারি-বন্দুক-পাগলা গারদ নিয়েই রাষ্ট্র।
তাই খোদ রাষ্ট্রের দেখা মেলে যেন। বারান্দা হতে, শোবার ঘর হতে, পায়খানার জানালা হতে রাষ্ট্রের সঙ্গ দেখা যায়।
রাষ্ট্র সার্বভৌম এবং তাই সার্বভৌম ক্ষমতাবলে জীবন হরণ করতে পারে।
ভয় পায় মানুষ তবে কোনো ভয়ডর নাই ভূতের। ভূতের সুবিধা এই যে, কখনো জীব কখনো নির্জীব। যখন সে জীব–তখন রাষ্ট্রের নাগরিক আর নির্জীব সে হয়ে ওঠে আতংকবাজ। মানুষ যখন নাগরিক তখন সে রাজনৈতিক জীব হয়ে উঠলেও ভূতদের এসবের বালাই নাই। লুকোচুরি খেলে পুলিশের সঙ্গে কখনো ভূতের দলবল; ধরা পড়ে না ভূত; কিন্তু মরে ভূত হয় টার্গেট যথা।
ভূতেরা জেনে গেছে, পুলিশের দল কোনো দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না কারণ জৈব প্রহরা ছাড়া তাদের কোনো কাজ নাই। লাঠি পেটা ছাড়া কাজ-কর্ম হয় না। ভূতবাজি করতে করতে–ভূতেরা শুধু এই গলিতে থেমে নাই; ভূতেরা এক্সপোর্ট হতে লাগলো। ভুতেরা আয় করে বলেই ভূতুরে কারণ বলা হোক যত খুশী, স্টক মার্কেটে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ার মূল্য লাফ দিয়ে বেড়ে চলে।
ভূতেরা আয় করে; কেবল ভূত যখন জীব হয়ে ছায়াহীন পথে হাঁটে : করে রঙ্গ, দ্যায় সঙ্গ।
ভূতের চোটপাট বেড়ে যাওয়ার কারণে কিনা কুচকুচে কালো পোশাকঅলা–চোখে কালো চশমায় চোখ ঢেকে– ঝকঝকে অস্ত্র হাতে– ব্যাটেলিয়নের আবির্ভাব। অথচ ভয়হীন ভূতের দল গভীর আগ্রহে দেখে কিভাবে ভূত মারতে মানুষ সাবাড়। অতঃপর ভূতেরা কালো পোশাকের আড়ালে ঠাঁই করে নিলে ভূত ফায়ার আর হয় না। ফায়ার করার নিশানা অন্যত্র। অটুট;ভৌতিক জীবন। কেবল তেমন তেমন সময় এলে দাঁত-নখ বেরিয়ে আসে।
ভূতদের দার্শনিক তত্ত্ব দিয়েছিল : একজন ভূত হয়ে জন্মায় না; সে হয়ে ওঠে ভূত।
ভূতের গলির ওসি সাহেব বলেন, ভূত একটা ধারণা। মসজিদ-মন্দির-গির্জায় মনপ্রাণ ঢেলে দিন, সামনে আসছে শুভদিন।
ভূতের সমাজেও কান পাতলে, জে-ার লেন্সিং তাকালে পুত্রধন বড়ো ধন অনস্বীকার্য। নারী ভূত এখানে ভূতরসের কাছে ব্রাত্য। নারী ভূত রান্নাঘরের কড়াই থেকে মাছ তুলে নিয়ে এসে রান্না করে আর পুরুষ যে ভূত পা দোলাচ্ছিল এতক্ষণ; মাছ রান্না হলে কাটা বেছে মাছ খায় পুরুষ ভূত। গান গায়, তোমার মতো এমন টান কেউ তো মারে না। শিক্ষা মানে শান্তি; ভূতের শিক্ষা হয় না।
কিন্তু কাউকে তো শিক্ষা পেতে হবে।
School is Dead.
এইবার Normalization Process বুঝতে হবে। Normal হওয়ার আগে, আপাতত আনন্দিত ও সুরভিত হওয়ার আগে ডিমভূতের প্রতি অবিচার না করে দেখে নেয়া যেতে পারে ভূতুড়ে কাজ কারবার।
আরেক নাটক; মালবিকা কাননের কাছে প্রেমে পোড়া খেয়ে বাবুল মোল্লা বাবুল বেদম হিন্দু হিংস্র হয়ে গেল। Face book-এ Status দিতে থাকল।
আর, মালবিকা কানন বাবুল মিয়া বাবুলকে প্রেমের ছ্যাকা জারী করার পর বঙ্গে হিন্দু বিজয় করল। ভূতের গলিতে ধর্ম নিরপেক্ষতার আওতায় মুসলমান সমাজে দারুন ক্রাইসিস।
হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ নিপীড়ণে সোচ্চার হলে তাদের চলে যায় কিন্তু কোনো সময় পতিত ও জর্জরিত মুসলমানের কান্নায় ভারাক্রান্ত হলে ধর্ম নিয়ে নিরপেক্ষ অঞ্চলে মন-শরীরের অবস্থান বেদম রকম টাল খায়।
ভূতের তখন ইশ্বরের অবয়ব দেখা দেয় :The History of the Political.
বাবুল মোল্লার গন্ডদেশে প্রেমে ছ্যাকাজনিত ছাপ মূর্ত হয়ে উঠলে শক্তিধর মুসলিম হিসাবে নিজ দেশে বৃহৎ গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়ে বিজিতের অভিজ্ঞতায় বিচূর্ণ দর্পনে নিজের চেহারা দেখে পেটে কামড় দিল ই-কোলাই জীবাণু।
এই বিষয়ে মালবিকা কাননের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংখ্যালঘু ক্ষমতায়নকে উঁচুতে তুলে ধরে খোলা ছাদে শ্রাবণের পর আশ্বিনে-হুদহুদ- আক্রমণের জটিলতায় আকাশ ভেঙে নামা ঝমঝম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ময়ুরের মতো নাচে, নাচতে থাকে, গাইতে থাকে গান What did you learn in school today?আমি কান পেতে রই... গোপনবাসীর কান্নাহাসির গোপন কথা শুনিবারে... আমি কান পেতে রই... কিছু তার দেখি আভা... কিছু পাই অনুমানে... কিছু তার বুঝি না বা...
সন্ধ্যা অনেক দেরিতে নামে; বৃষ্টি শেষে রামধনু আকাশ জুড়ে; রামধনু হতে রাম নাম যথা হিন্দুয়ানি বিচ্যুত করে রংধনু বলে আখ্যায়িত করলে বাবুল মোল্লা ধর্ম নিরপেক্ষতা ভেঙে ধর্মের ষাড়ে রূপান্তরিত হলে ষোলকলা পূর্ণ।
ষোলকলার মধ্যে কামগন্ধ–বাবুল মোল্লা কাননের শরীর জড়ানো ভেজা ভেজা গন্ধ শোকার স্মৃতিতে অস্থির হয়ে উঠলো। কবে, এই নারী মা হয়ে ফিরে আসবে ফুলের শয্যায় পুনরায়।
উত্তর-পাণ্ডুলিপি
না কোনো দুর্ঘটনা না।
হয়তো মানবাধিকার লঙ্ঘন
কিংবা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ।
নিজের দু-কামরার ফ্ল্যাটে মৃত্যু ঘটলো কামরুজ্জামানের। একা ঘরে মরার পর জানাজানি না হওয়া পর্যন্ত অনেকটা সময় মৃতদেহ পঁচছিল।
এখন ঠাঁই নিয়েছে মর্গে। কালু ডোমের সামনে নীথর পড়ে আছে ময়না তদন্তে অভিপ্রায়ে।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৪।
কেউ একজন বললো যে, ভূতের গলি নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন ধারাবাহিক তৈরির মালমশলা যোগাড় করে সঙ্গে ক্যামেরা পার্সন নিয়ে ফুটেজ : সিংক, বাইট নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
কাজ আর শেষ হলো না করা কামরুজ্জামানের। এবং এই মরার বাড়ি হতে কোনো ডকুমেন্ট-ও খুঁজে পাওয়া গেল না। ভূতের গলি অবিকল রয়ে গেল। জ্বীন-পরী, ভূত-পেত্নী, দৈত্য-দানবের দেশ এই বাংলা নামের দেশ।
এখানে ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার বেশে–
দিতির গর্ভে দৈত্য আর দনুর গর্ভে দানব অজস্র উৎপাদিত হয়, হতে থাকে। বাজে পিশাচ বাজনা–
মন্তব্য