.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

ছোটদের গল্প: কুফাভাই ছটফট

কুফাভাই ছটফট
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ


বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত অনেক। ঘড়ির কাটা দেখাচ্ছে পাঁচ মিনিট কম একটা। পাঁচ মিনিট সেভ হয়ে  কুফা ভাইয়ের তেরটা বেজে যায় নাই বলে নির্ভেজাল ধন্যবাদ পেতে পারে পাড়ায়  বিচরণশীল পারমানেন্ট প্রাণী পাগলা কুতুবাবু।

পাগলা কুকুরের সামনে পড়লে বা ওটা এসে যদি পেছনে ঘেউ করে ওঠে তবে ভয় ডর না পেলে মানুষের মনুষত্বের লক্ষণ যেমন থাকে না তেমনি পাগলা কুকুর মানুষ দেখে উল্টা ভয় পেয়ে গেলে পাগলা কুকুরের গুণাবলী হরণ হয় বইকি। 

কুতুবাবুকে বলা যায় জেনুইন পাগলা কুকুর। ফলে ভয় লাগে। জোর কদম হয়েছিল চলার গতি।
 ধরা যাক, মানুষের নর্মাল স্পিড : ১০০ কদম/মিনিট ; তাড়া খেলে গতিবেগ দাঁড়ায় : ১৪০ কদম/মিনিট।
 কিন্তু জেনুইন পাগলা কুকুর অনুসরন করলে  গতিবেগ উইথ লাফানি হয় : ২৩৫ কদম/মিনিট!। 
 বাটে পড়লে মানুষ সবই পারে।তাই কদম গুণতে গুণতে মাইল পার।

 কুফা ভাই বন্ধুর বাসায় গিয়েছিল সন্ধ্যায়। বন্ধু একটা তোতা পাখি কিনেছে, সেটার মুখে বুলি ফুটেছে অনেক। এমন কি বলতে পারে: কুফা ভাই। কুফা ভাই। জিন্দাবাদ। জিন্দাবাদ। নিজের কানকে বিশ্বাস করা যায় না তাজ্জব। 
এই তোতা পাখি দেখা ও কথা শোনার জন্য এসেছিল কুফা ভাই। কুফা ভাইয়ের এমনিতেই বড় নামডাক আর গল্পসল্প তাকে নিয়ে তো বাজারে চালু থাকলেও পাখিদের জগতেও এই নামটা চাউড় হয়ে গেছে পাখির মুখে তার নাম ফলে কুফা ভাইয়ের মহড়া  তখন অন্য রকম। তোতাপাখির তেলেসমাতি কারবারে কুফা  ভাই ছিল রীতিমত মুগ্ধ। তার নাম জানল কেমন করে ?  এই ব্যাপার তলিয়ে দেখারও ফুরসৎ নাই। খুশির চোটে বেশ ঘটা করে মিষ্টি চলে।
বন্ধু বলে : পাখিটাকে মিষ্টি খাওয়াতে। কুফা ভাই মহা উৎসাহে লেগে পড়ার পর নানা কসরৎযোগে খাওয়ানোর জন্য তোতা পাখিটাকে পীড়াপীড়ি করতে গিয়ে বেজায় যতসব ঠোক্কর খেয়ে ক্রমে পরাজয় না মেনে উপায় বের করা গেল না।ততক্ষণ বন্ধুবর
মহা উৎসাহে গপাগপ সব মিষ্টি পেটে চালান করে গুয়ামুড়ি হাসি দিতে থাকে।

বন্ধু বলে : ধর ঠাইস্যা।
কুফাভাই হঠাৎ আবিস্কার করতে পেরেছিল তাকে নিয়ে মশকরা চলছে।

বন্ধু উত্তেজনায় টানটান। কি হয়! কি হয়! উত্তেজনায় ভয়ঙ্করভাবে চেঁচিয়ে ওঠে : বেবী তোতা বেবী! দে ঠোক্কর। মার ঠোক্কর। বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত। মার জোরসে ঠোক্কর।
বন্ধুবর তোতাপাখিটাকে উদ্বুদ্ধ করছে তাকে ঠোকরাতে। অশেষ দুঃখ ছাড়া কপালে কিছু নাই।এমন সব বন্ধুদের নিয়ে চলাফেরা তার বুঝতে বাকি না থাকলেও চট করে প্রস্হান হওয়া চলে না।
 তোতা পাখিটার এন্টেনায় যেন ধরা পড়ে বন্ধুর কথাটা। জায়গামত পৌঁছে যায় মেসেজ। যেমন কথা তেমন কাজ। কটাস করে এক ঠোকড় দিল কুফা ভাইয়ের হাতে। আউ করে সশব্দে হাউমাউ করে ওঠে কুফা ভাই। হাত তালি দিয়ে ওঠে বন্ধু। 
হাততালি চলে রাত দশটা পর্যন্ত।এখন টিভিতে খবর হবে। 
টিভি অন করা হল।  পাখির খাঁচাটা একটা চেয়ারে বসিয়ে টিভির সামনে রাখা হল। প্যাটপ্যাট করে পাখিটা দেখতে থাকে। খুব মনোযোগ দিয়ে খবর শুনছে সে।
  
কুফা ভাই করুণ স্বরে বলে উঠতে পেরেছিল : খিদা লাগছে!। গলার পাওয়ার কমে গেছে।

কুফা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বন্ধুটি জানিয়ে দেয় : রান্না বসানো হয়েছে। খেয়ে যেতেই হবে।

কুফা ভাই পুলকিত হতে গিয়েও পারে না। 
তার অভিজ্ঞতা ভাল নয়।

বন্ধুটি মাঝেমাঝে আঙুল দিয়ে তুরুপ চিহ্ন ফুটিয়ে ঘোষণা দিচ্ছে : সুপার ডিশ! অপেক্ষমান। খেলে একবার।মনে পড়বে বারবার।


 কুফা ভাইয়ের ব্রেইনের তালা ঘট করে খুলে যায়। রিস্ক নেয়া ঠিক হবে না।মন বলছে,  ভাগ কুফা ভাগ।
প্রশ্ন করে : কি রান্না করিস, এতক্ষণ লাগে। কখন খাবে সে।
বন্ধু বলে : খাই খাই করিস না। অপেক্ষা কর। এক্সপেরিমেন্টাল রান্না। একবার খেলে কখনও ভুলবি না। এবার হিস্ট্রি তৈরি হবে। এমনই রান্না।
কুফাভাই ভূগোল থেকে হিস্ট্রিতে ফিরে এল।

কুফা ভাইয়ের পেটের মধ্যে ততক্ষণ একটা ইঁদুর ছিল। এবারে  অনেকগুলো বাচ্চা  দিয়ে ফেলেছে। সব মিলে শুরু করে দিয়েছে কিচির মিচির।
তাই মরিয়া হয়ে বলেঃ আর কতক্ষণ ?   
ধমক জোটে তখন। আর চলে বাণী প্রদান।ইতিহাস এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে যেন।
বন্ধু বলে : মাৎ ঘাবড়াও।চলছে চলবে জ্যোৎস্না টেকনিকে রান্না।আর তাতে সাকসেস হলে অমর লোকের তালিকায় প্রবেশে উমেদারির দরকার হবে না।  
অমরত্বের গোডাউন ম্যানেজারকে বলে দেয়া হবে কুফার নামটি যত্ন করে লেখা থাকে যেন।

 হঠাৎ মাথার মধ্যে একটা শর্টসার্কিট ঘটতেই ফটাস করে ছিড়লো তার। 
জবানে জুলুম চলছে কুফাভাইয়ের কর্ণপটাহে তখন... ওহো তুই না ফিজিক্সে স্কুলে গাড্ডা মেরেছিলি। আবার দর্শনও তো পড়িস নাই।  জ্যোৎস্না টেকনিকটা হচ্ছে একটা দর্শন।

তা বটে।জ্যোৎস্না দর্শনধারী সন্দেহ নাই।

সে জ্যোৎস্না দর্শন করার জন্য জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভূত দেখল।
 কুফা ভাইয়ের মাথার মধ্যে শর্টসার্কিটে ছেঁড়াতার দোল খেয়েছিল বাতাসে। মাথার ভেতর বাতাস থাকে না, ভ্যাকুয়াম থাকে বলে খালি বাতাস ছাড়াই দোলে আর দোলে।
কবির মত লেগেছিল তাকে।

(মেঝেতে থাকবে একটা মোমবাতি। পিটপিট করে জ্বলবে।আর প্রায় সাত/আট হাত ওপরে হাড়ি থাকবে ঝুলন্ত।
সব দেখে ছানাবড়া হলেও চোখ বন্ধ করা যাবে না) । 
রন্ধনতত্ত্ব টা এই রকম। 
বোঝান হচ্ছে জ্যোৎস্নার আলোতেও রান্না করা যায়।
 একবার প্রমাণ করতে পারলে নোবেল পুরস্কার সাইধ্যা আইস্যা পার্টিরা দিয়া যাইব। ডলার খালি ডলার।(আর্থিক দিক)

জ্যোৎস্নার আলোর সঙ্গে মোমবাতির আলোর হিট একেবারে এক। বন্ধুটি সাধারণ মরণশীল নয় বলে বুঝতে পারে।বাকিদের বোঝা অসম্ভব বলে অঙ্ক কষার মত “মনে করি ,  জ্যোৎস্নার আলো= মোমবাতির আলো” গণ্য করে রান্নায় নামতে হবে।(হাইপোথেসিস)


দেশের সম্পদ গ্যাস ফুরিয়ে যেতে বসেছে। এই নিয়ে চিন্তা -ভাবনা করার সময় এখনই। নইলে আবার সেই কেরোসিন যুগে প্রত্যাবর্তন। ২০ মিনিটে ভাত, ২৫ মিনিটে মাংশ, ১৫ মিনিটে ডাল রান্না করা আর যাবে না। সুতরাং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা জরুরি।
 বড় বড় সাইন্টিস্ট সাহেবরা বলেন সৌরচুলি­র কথা। বন্ধুটি তাদের সঙ্গে তর্কে যেতে রাজি না।সে প্রমাণ করতে চায়,  চাঁদের আলোতেও রান্না করা যাবে।
( সূর্যের কাছ থেকে আলো ধার করে চাঁদের আলো হয় বলেই চাঁদের আলোকে অল্প জ্ঞান করা যায় না।) 
চাঁদের আলোয় ভাত রান্না করতে কত যুগ লাগবে এই ভাবনাটা আসতেই  ছিটকে চলে গেল তো কুফাভাই যে ফিরবার দিশা নাই।

ঘরের বাইরে গিয়ে প্রথম ড্রপ খেল গলির মুখে এবং থামল রাস্তার মোড়ে এসে।
 সেখানে  পৌঁছে রিকসা ও চালক সাহেবের দেখা মিলেছিল তার। চালক সাহেবদের ইদানীং মুডমাড অন্যরকম, রিকসা এখন কোন প্রেসটিজ সিমবল হয়ে গেছে কিনা কে জানে! যারা চড়ে রিকসায় তারা আজকাল চালক সাহেবদের কাছে যেন প্রজার মতো। অচিরেই যে চালক সাহেবদের সঙ্গে  রিকসা যাত্রীদের দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগে যেতে সময় নেবে না এই ব্যাপারে কুফা ভাইয়ের ভাবনাটা একদম পাকা যে এভাবেই শ্রেণী সংগ্রাম স্টার্টস। 

কুফা ভাই অপরাধীর মত গিয়ে বলেছিল : যাবে ভাই।
তারপর হাত জোড় করার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
চালক সাহেব সিটে বসে হ্যান্ডেলে পা রেখে মশগুল হয়ে ম্যাচের কাঠি দিয়ে এন্টিক্লক ওয়াইজ কান চুলকে যাচ্ছিল। 
 কথা শুনে ব্যাঘাত ঘটল যেন। 
চোখ সরু করে আপাদমস্তক তাকে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করে বলল: রাইতের বেলায় ভদ্দরলোক কোন রিকশা চড়ে নাকি! আর অভদ্দর লোকজন আমার রিকসায় টানি না!। ভাল বংশ দেইখ্যা রিকসায় লোক উঠাই। আমিও ভাল বংশের লোক।
কুফাভাই, পালাই পালাই।

আরেকজন চালক সাহেব ও তার গাড়ির সাক্ষাত পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছিল।
 সার্থক জনম মাগো… বলতে বলতে লম্বা চওড়া এক সালাম দিল; আসসালামুআলাইকুম! ভাল আছেন? দয়া করে যাবেন কি? অশেষ উপকৃত হই। হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ।

রিকশাচালক সাহেব মাছি তাড়াবার ভঙ্গি করে স্লো মোশনে প্যাডেল মেরে কয়েকহাত নড়ে গিয়ে  সাফ জানিয়ে দিলনা  : জমানা ভি বহুৎ খারাপ। আইজকাল চোর ছ্যাচড়া বেবাক পাবলিক চুরি করবার লাইগ্যা ভি রিকসায় চইড়্যা যাইবার চায়! রিকসা চালাইয়া আর পেস্ট্রিজ রাখন যাইব না…

 কুফা ভাইয়ের বাঁচাবাঁচি নাই। এবার খপ্ করে ধরে ফেলল পুলিশ স্যারেরা।
কুফা ভাই ভয় খেয়ে চেঁচালো : পুলিশ! পুলিশ! এমনভাবে যেন চোর হাইজ্যাকার ধরেছে তাকে।আর তাই জন্য পুলিশ ডাকে নিজেকে বাঁচাতে।পুলিশ ধরলে কাকে ডাকতে হয় সেটা জানা ছিল না।
একজন পুলিশ বলল : ভাগ বেটা।
 অন্যজন লাঠি থাকতে মুখে কি, এই নিয়ত করে যেন গদাম করে লাঠি চালিয়ে দিল পশ্চাৎদেশে। 
তাতেই চাবি দেওয়া হয়ে গেল যেন।
এই চাবির জন্যই কুফা ভাই শেষতক পাড়ার মুখে এসে হাজির তখন।
 কুফা ভাইয়ের চাবির দম শেষ আর অমনি কুতুবাবুর সঙ্গে দেখা।
কুতুবাবু তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল।
কুফাভাইয়ের জানা  গুরুত্বপ র্ণ তথ্য কাজে লাগাল। 
(পাগলা কুকুর আর খ্যাপাটে মাস্টার যারা তাদের সামনে কান ধরে উঠবস করলে কাজ হয়।) অতপর কুফা ভাই তাই করল। কান পাকড়ে ওঠা আর বসা।
 কুতুবাবু নিজের চেয়েও বড় মাপের পাগল দেখেই বুঝি কুকুরজীবনে প্রথমবারের মতো ভড়কে গেল। সে তো আর মাস্টার মশাই না, এমন ঘটনা তার জীবদ্দশায় আর কখনও হয় নাই।
কানে ধরা ও ওঠা বসা এবং  দশ ক্রশ করা পর্যন্ত সময় লাগল ধাতস্থ করতে নিজেকে। তখন কুতু দিল এক ঘেউ।
 একটু বিরতি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার তারপর। ঘেউ ঘেউ ঘেউ ঘেউ ঘেউ ঘেউ...।

কুফা ভাই কান ছেড়ে নিচের লেভেল থেকে উপরে মাথাটা তুলেই খিঁচে মারল দৌড়। 

 দৌড়ের মধ্যে একসময় আবিস্কার করল কুতুবাবু তাকে পেছনে ফেলে সামনে ধাবমান। 
কুফাভাইয়ের অভিজ্ঞতার ঝুলি স্ফীত হতে লাগল আরো।
রাতকানা কুকুরও হয় বটে।তাদের জন্য ভিটামিন নাই, আহা।

বন্ধুর বাড়ি থেকে পাড়ার মুখ পর্যন্ত  দূরত্বকে ওখান থেকে বাড়ির পথ দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল মেলে তা দিয়ে বাড়ি মুখ ‘হইতে’ বন্ধুর বাড়ি অবধি যাওয়ার সময় দিয়ে ভাগ দিলে প্রাপ্ত সময় সেটাই লাগার কথা ছিল বাড়ি আসতে। কিন্তু পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে কর্ম কাবার।  তাই ঘড়িতে এক বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি।
দরজায় দশাসই তালা ঝুলে আছে গম্ভীর হয়ে।
বুক পকেটে হাত দিয়ে দেখে : নাই।
 প্যান্টের এ-পকেট ও-পকেট আঁতিপাঁতি করে খোঁজে সে।
 কোথাও নাই। 
শরীরে পকেট নাই আর পকেটে নাই চাবি।

এই জগৎ নাই!। সংসার নাই!। কেউ নাই।! সে নাই।
দুমপটালাস করে শোনে সে একটা আছাড় সঙ্গীত। 
ধপাস দিয়ে শুরু আর উহু দিয়ে শেষ। করতালিও শোনা যায় কোনও! অদৃশ্য বস্তুর!।
শিঁউড়ে ওঠে কুফাভাই।

কুফা ভাইয়ের মাথা এখনও উর্বর। ল্যাংড়া আমের আটি পুঁতলে হয়তো ভাল আম হবে। ফটাফট সব বুদ্ধি নাজেল হতে থাকে।
  নিজেকে বুদ্ধিমান মনে হয়। এরকম বুদ্ধিমান, মাস্টার মশাইরা হয়ে থাকে সাধারণত। এবং তারা পিটাপিটি করতে খুবই ভালবাসে। 
পেটানোর ব্যাপারটা তার মনে ধরে। এবার তালাকে পেটাতে হবে। একটা আধলা তুলে নিল। পিটিয়েই তবে তালা খুলবে এবার সে।
আধলা ইটের সঙ্গে তালাটির সংঘর্ষ ঘটতেই শব্দের কি শ্রী।
 তালাও তবে হাউমাউ করে ওঠে নাকি। মহাউল্লাসে  সে তালার সঙ্গে ইটের ব্যবহারে উঠে পড়ে লেগে যায়।
কয়েকবার ঝনাৎ হতেই ফটাশ করে পাশের বাড়ির দোতলার জানালা খুলে গেল, জ্বলে উঠল বাতি, বেরিয়ে এল টাক মাথা।
কি হচ্ছে , এসব এত রাতে! ?  উপর হতে প্রশ্নটা ছুটে আসল! । 
এই... তালা খুলতাছি।
ইট দিয়ে তালা খুলতে খুলতে বলল সে। 
এই রকম চাবি তো দেখি নাই। কি তালা এইটা ?
 কুফা ভাইয়ের হাতে ইটের টুকরার দিকে তাকিয়ে আবার জানতে চায় টাক্কু।
 ইটা দিয়ে খুলতে হয় এমন তালা আবার কি।

চাইনিজ অরিজিনাল! কুফা ভাই আধলা ইট হাতে করে বলে।
তাই নাকি !  অ! কিন্তু অখন তালা খুলবার লাগব না। ঘুমাবার টাইমে শব্দ করা কাজের কথা না। ঘুমের ডিস্টার্ব কইরেন না। টাক মাথার ছিলাছিলা জায়গায় নিয়নবাতির  আলো ঝকমকায়।
তাহলে ঘরে ঢুকব ক্যামনে  ?  কুফা ভাইয়ের সরল প্রশ্ন।
ঘরে ঢুকনের কাম নাই। আজকের রাইতটা বাইরে কাটায়া দ্যান। সকালে আইস্যা আবার তালাবাজি... ক্যামন।  একটা হাই তুলে টাকমাথা বলে।
বাইরে থাকার জায়গা নাই। ! কুফা ভাই গলা উঁচু করে বলে।

বলেন কি জায়গা নাই।  ঢাকা শহরে জানেন কত মাইল ফুটপাথ জানলে লজ্জা পাইতেন। এই কথা বলতেন না। যান ফুটপাথে যান ঘুমু করেন ঐখানে গিয়া। পার্কের ধারে ফুটপাথ পরিষ্কার আছে, মাথার নিচে দুইটা ইটা দিবেন আর ঘুমাবেন। নাক ডাকার অভ্যাস আছে ?
 থাকলে খেলায় খেলায় নাক ডাকবার পারবেন। 
ওকে, গুড নাইট, সুইট ড্রীম।
! টাক মাথার মুখ জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে লাইট, জানালা বন্ধ হয়ে গেল।

কুফা ভাইয়ের হাতের আধলাটা খসে পড়ল। পায়ের উপর সরাসরি ড্রপিং। ওরে বাপস! নিখাদ একটা আর্তনাদ।

ত্রিশ সেকেন্ড না যেতেই আবার জানালা খুলে বেরিয়ে আসে টাকমাথা ও তার জবান : ও মিয়া, আরেকটা কথা শোনেন! পয়সাপাত্তির অভাব থাকলে ইচ্ছা করলে পয়সা কামাইবার জন্য গুলিস্তানের ফুটপাথে যাইবার পারেন। 
পা ভাঁজ কইরা শুইয়া থাকলে নুলা ফকির মনে কইরা বেবাক পাট্টি পয়সা দিব।
 গুলিস্তানে এই কাম মার মার কাট কাট কইরা খুব চলে।
 বুঝছেন ?  সাজেশনটা মনে রাইখেন।

কুফা ভাই ঊর্ধ্বপানে একবার তাকালেন। চোখের দৃষ্টি হানলেএকটা কটমট করে শব্দ হলো।
 টাকমাথা ভদ্রলোক ততোধিক জোরে শব্দ করে জানালা বন্ধ করলেন। 
জানালার পাল্লা এত জোরে আছাড় খায় যে, ছত্রখান কাঁচ জানালার গা থেকে ঝমঝম করে খুলে পড়ে রাস্তায় ভেঙে চৌচির হয়ে গেল।
 কাঁচে খানখান কুফা ভাই চমৎকৃত
ঝিলিক করে একটা আইডিয়া  ব্রেইনে খেলে যায়। একটা চোর দরকার। রাতের বেলায় চোর পাওয়া দুর্লভ নয়। একটা চোরকে ধরে এনে নিজের ঘরে চুরি করিয়ে চাবি নিয়ে তালা খুলে তারপর... 
...  কিন্তু যখন যেটা দরকার কাজের সময় পাওয়া যায় না। চোরেরা সব ডিউটিতে চলে গেছে। সে রোস্টার খাতায় গিয়ে দেখে ফকিরাপুল এলাকায় কোন চোরের কারবার? কিন্তু না, আজকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য ঐ এলাকায় কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত চোর নাই।

এলেম দ্বারা চোর ধরা হয়।সাইনবোর্ড ঝুলছে।

অবশেষে এক ঘুঘু মার্কা এলেমদার কুফা ভাইয়ের ইন্টারভিউ নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে এলেম দ্বারা এক চোর এনে হাজির করল। মানুষের মতো দেখতে চোর পেয়ে কুফা ভাই তো হতাশ। তবে হতাশা কাটিয়ে নিজের বাড়িতে চোর নিয়ে চুরির উদ্দেশে যাত্রা করে।ঘরে যেতে হবে।তালা খুলতে হবে।অনেক কাজ।

ভাঙা কাচের টুকরা বিশেষ গুণ ধারণ করে। ব্যাস, এই মতো ... কুফা ভাইয়ের পদ-মোবারকে বিঁধে গেল। খুচ করে। বিধির বিধান কাটবে কীভাবে। কাচ দিয়ে কেটে পা হতে ঝরতে থাকে বিশুদ্ধ রক্ত।
রক্তের আর কী প্রবলেম। !  রক্তপাতের কমতি নাই। রক্ত রাঙা রাজপথে কুফা ভাই দাঁড়িয়ে থাকে জীবন্ত অথচ শহীদী অবস্থায়।

সেপটিক হতে ধনস্টংকার,  এরকম অনেক কিছু হতে পারে পঁচা কাচের পা কাঁটলে।
 ধনুষ্টংকার যেন তাকে ধনুকের মতো বাঁকা করে ফেলছে।
ভয়ে অজ্ঞান হলে কুফা ভাইয়ের এক রাত্রিতে ঘটমান যাবতীয় অঘটনের পরিধিতে প্রথা মাফিক একটি কারবার হলেও হত কিছু একটা।
 কিন্তু, আশ্চর্য এই যে ,  তেমন ঘটল না বরং সজীব প্রাণের বিনিময়ে কুফা ভাই আর্তনাদের প্রতিধ্বনি রটিয়ে দিল আকাশে বাতাসে।

কুফা ভাই লেংচে হাটে। রক্ত পড়ছে টুপুর টাপুর।
দিয়েছেন তো আরো দেবেন রক্ত আর তাই তো অবশিষ্ট  পা-টিও ঘ্যাচ করে কাচের আঁচড়ে ফালি হয়ে গেল। তড়পাতে কুফা ভাই গলা ছাড়ালো জোরে। আওয়াজের তোড়ে ধূলি উড়ল। চোখ আন্ধা হয়ে গেল কিচকিচ বালুর কণায়।
সিলকি! সিলিকা! বলে জপ করা আরম্ভ হলো কুফা ভাইয়ের।
যে বৈজ্ঞানিক ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠেছিল, কী যেন নাম তার, আর্কিমিডিস মামা বোধ হয় নাম ছিল; তাকে শুনিয়ে পাল্টা-পাল্টি সিলিকারে সিলিকা অথৈ আর্তনাদে অন্ধকারের নাগপাশ ছিন্ন হতে থাকে।

বাকিটা পূরণ করো বাচ্চারা।
আমি কি বলবো তা ছাড়া।।

ইতি।
অরিজিনাল কুফা ভাই

মন্তব্য

নাম

অনুবাদ,32,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,306,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,14,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,12,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,14,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,152,প্রিন্ট সংখ্যা,4,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভাষা-সিরিজ,5,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: ছোটদের গল্প: কুফাভাই ছটফট
ছোটদের গল্প: কুফাভাই ছটফট
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQ_SLPx8jtMMnOq8PGfHW9iOovZF4A35RxxmruUDS1YvWU-fBE9lMqJlVDUSqY-D2IQwblF4u8XiVziPfmbnW0jTqYviYVFbaqZWxpjaxh0axe4S0PuzuS6xH7aJZq-fz7dnqBsxpFJv2QsJTOogzvPKsv9KZ1mc94KA-V4sx2HeKvvQ7FrjGAbYY7M7Y/s16000/Syer%20Riazur%20Rashid%20bindumag.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQ_SLPx8jtMMnOq8PGfHW9iOovZF4A35RxxmruUDS1YvWU-fBE9lMqJlVDUSqY-D2IQwblF4u8XiVziPfmbnW0jTqYviYVFbaqZWxpjaxh0axe4S0PuzuS6xH7aJZq-fz7dnqBsxpFJv2QsJTOogzvPKsv9KZ1mc94KA-V4sx2HeKvvQ7FrjGAbYY7M7Y/s72-c/Syer%20Riazur%20Rashid%20bindumag.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2023/11/blog-post_379.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2023/11/blog-post_379.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy