সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ ক্যারিয়ার সর্বস্ব জামানার প্রতিষ্ঠান বিমুখ লেখক। কোন ক্যারিয়ারিস্ট লেখকেরই কোন আইডিয়লজি থকে না। তাকে কোন না কোনভাবে আপোস করতেই হয়। লেখকের ইন্টেগ্রিটি প্রকাশ ভারি কসরতপূর্ণ হয়ে ওঠে। এহেন অবস্থায় তবু স্রেফ তর্কের আত্মীয়তায়, এ-জামানায় বক-আইডিয়ালজি অতি-তৎপর মুখে-মুখে। কেননা, একজন ক্যারিয়ারিস্টকে এভাবেই রুজি-রোজগার মায় বেঁচে থাকতে হয়। এবং হাড়ে হাড়ে তারই অনুভব দেখি, সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের লেখায়, লেখার মুন্সিয়ানায়। তাঁর প্রায় প্রতিটি গল্পেরই একটি চিরায়ত অভিমুখ অভিক্ষিত থাকে। মূলতঃ এ লক্ষেই সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের গল্প একটি কেন্দ্রাতিগ থিমকে ঘিরে আবর্তিত হয়। দেখা যাবে যে, থিমই তাঁর গল্পের ভাষা নির্বাচন করে নেয়। এটা অনেকখানি মহাত্মা ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের মতো তাঁর গল্প বয়ন হয় দৃশ্যতঃ একটি কেন্দ্রীয় থিম-এর নিরবচ্ছিন্ন ক্রম সম্প্রসারণ ও তার একটা সহজ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিতকরণের মধ্য দিয়ে। গল্পে তিনি সচরাচর উপদ্রুতকর বলিয়ে-কুশল বক্তারূপ পাঠকের অভিভাবক হয়ে নাজেল হন না। এক্ষেত্রে তিনি একইকালে তাঁর গল্পের রিডার ও রাইটার রূপেও উৎরে যান। কৈ অর্থাৎ থিম-এর প্রকৃতিই তার ভাষা প্রকৃতিনির্বাচন ও গতিমুখ বেছে নেয়। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ যখন গল্প বয়ন করে চলেন, মনে হবে, যেন তাঁর সে গল্পের প্রায় প্রাকৃতিক নির্বাচিত ভাষার প্রশ্রয়ে এক প্রগাঢ় থিমবাথ করে যাচ্ছেন। থিম তার ভাষাকে এমতভাবে নিরবচ্ছিন্ন ডমিনেট করে যে, সে গল্পের আর ক্ষমতাই থাকে না স্খলনদোষে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার। মার খায় না গল্পবয়নের অসহায়ত্বও। ফলে সহজ দৃষ্ট হয় তিনি তাঁর গল্প সমুদয়ে যে যৌনভাষা সংশ্লেষ ঘটান তাকে সলেখকি স্বমেহনপীড়িত ভাষারূপ মজ্জমানভাষা সঙ্গে পাঠ করতে হচ্ছে না, পাঠককে মোটেই। সেখানে যৌনভাষা উঠে আসে যৌনভাষা স্বভাবেই অথবা সে ভাষা ধারারই এক নিরবচ্ছিন্ন সাবলীলতায়। লেখক তাঁর এক হাত বেঘোরে সঞ্চালন করছেন আর অন্য হাত সপীড়ক পিষে চলছেন, এমত যৌন চিন্তার সমন্বয়ও নয় তার গল্পের সহজ যৌনভাষা। তবে তাঁর গল্পের ভাষা যখন কোথাও কোথাও পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের মতোই বন্ধুর হয়ে উঠে তখন গল্পের ক্রিয়েটরকে না হোক পাঠক পরিব্রাজককে সে থিমবাথ ক্ষণকাল হয়তো থামাতে হবে ক্লান্তিকরদোষে। এক্ষেত্রে মানতেই হচ্ছে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ অধিকতর থিম ঝোঁকবিশিষ্ট হওয়ায় তাঁর বিষয়ের অভ্যন্তরের প্রতি যতটা অভিনিবেশ তুলা-মূল্যে বহিরাঙ্গের প্রতি ঠিক ততটা নয়। এমনটিই তাঁর গল্পের মহলা। তবে কৈতে কি, বহুস্তরা, বহুরেখ, বহু বর্ণবিচ্ছুরিত এমত থিমবাথ যে ভাষা পরিবেশের এক মহৎ এপিকধর্মিতার উদ্ভাস ঘটায়, নিকট সময়ের গল্পে, এমত নিঃসঙ্গ, লা-শরিক ঝোঁকের জুড়ি মেলাই ভার।
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ প্রসঙ্গ
মাতিয়ার রাফায়েল
মাতিয়ার রাফায়েল
মন্তব্য