কথাশিল্পী সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের লেখনীর সাথে আমার পরিচয় দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে। তাঁর প্রথম যে লেখাটি আমি পড়ি তা ছিল একটি গদ্য, 'আক্রন্দন হৃদ-যাত্রা'। এটা ছিল খুব সম্ভব ১৯৮৫-৮৬ সাল। গদ্যে কাব্যিক ঢং ছিল, বিষয়বস্তুর সাথে যা মানিয়ে গিয়েছিল। তবে তাঁর লেখায় যে বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছিলাম, তা ছিল– তাঁর চিন্তন-পদ্ধতি, লেখার পদ্ধতি ও ভাষা - সবকটিই ছিল জটিল। গতানুগতিক পদ্ধতিতে যে তাঁর চিন্তা এগোয় না এটি যেমন সত্য, পাশাপাশি এটিও সত্য – তাঁর নিজস্ব চিন্তন-ধারায় লেখনি পদ্ধতিতে তাঁর ভাষা ঠিকই বাক্যে এসে একটি সম্পূর্ণতা অর্জন করে। কিন্তু যিনি এটাকে গ্রহণ করেন অর্থাৎ তাঁর যে পাঠক তাঁদের চিন্তার পদ্ধতি ভিন্ন। অর্থাৎ লেখক-পাঠকের চিন্তার পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় তাঁদের অবস্থানও অনেকখানি দূরত্বের । তাঁর লেখা হয়ে ওঠে তুলনামূলকভাবে কম যোগাযোগ সম্পন্ন। যে কারণেই তার লেখা জটিল হয়ে উঠে। এটি আমি প্রায় ২৫ বছর আগের কথা বলছি। এই সময়ের মধ্যে লেখক এবং ব্যক্তি সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের যে দীর্ঘ পথ পরিক্রমা, তাঁর পঠন- পাঠন, জীবন-দর্শন, তা পেরিয়ে এসেছে দীর্ঘ পথ। এই সময়ের ব্যবধানে তার চিন্তন/লেখন পদ্ধতি ও ভাষা তিনটিরই বিশেষ পরিবর্তন, পরিমার্জন ও বিবর্তন লক্ষণীয়। তাঁর ভাষা তথা বাক্য গঠন আগের তুলনায় অনেকখানিই পরিণত, তুলনামূলক যোগাযোগ সক্ষম ।
বিগত সময়গুলোতে তাঁর যে বিশেষ অর্জন, তা হলো তাঁর ব্যাপক পঠন-পাঠন ও গবেষণাকর্ম। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে তার প্রতিটি লেখাই বলতে গেলে এক একটি গবেষণা কর্ম হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। কেননা তাঁর বর্তমান লেখনীর পেছনে যে ব্যাপক অনুসন্ধানী ও বিশ্লেষণী ধারা তাঁকে পরিচালিত করে, তাঁর প্রতিটি লেখাই ফলে একেকটি গবেষণার ফল বলে মনে করি; তার লেখনি তুলনামূলক যোগাযোগক্ষম হয়ে ওঠার বিশেষ কারণ হিসেবে আমি তাঁর ব্যাপক অনুসন্ধানমূলক পঠন-পাঠন ও জিজ্ঞাসা বলেও মনে করি। আর ভাষার এ তুলনামূলক পরিণত হয়ে ওঠার কারণও তাই। পাঠক একটু সচেতন ভাবে তাঁর লেখা পড়লেই বুঝতে পারবেন, এর পেছনে একটি ব্যাপক প্রস্তুতি, অনুসন্ধিৎসা ও গবেষণার একটি বিশাল অংশ রয়ে গিয়েছে। ফলে তার বর্তমান লেখনীর অধিকাংশই একেকটি গবেষণার ফলাফল হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। সর্বশেষে বলতে হয়, তাঁর এই দীর্ঘ অন্বেষণ তাঁর চিন্তন, লিখন ও ভাষার আঙ্গিকের ওপর বড় একটি প্রভাব ফেলেছে, তারই ধারাবাহিকতায় তাঁর লেখনী ক্রমে একটি নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে, যা কি-না নতুন প্রজন্মের লেখকদেরকেও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নতুন চিন্তার খোরাক যোগানোসহ একটি ভাষাকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এটা মনে রাখা জরুরী যে, একটি ভাষার জীবন-প্রবাহ কোনো ব্যক্তি বিশেষের চেষ্টা কিংবা কৃতিত্ব নয়, নির্ভর করে বিশেষ ভাষাভাষির গোষ্ঠি-চর্চার ওপরে।
২৫.০১.০৯
পরিক্রমণ: কথাশিল্পী সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ ও তাঁর ভাষা
ফরিদা হাফিজ
ফরিদা হাফিজ
মন্তব্য