কোরাকাগজের খেরোখাতা-২৫
জিললুর রহমান
জিললুর রহমান
এদিকে শুরু হয়েছে নবীন বরণের তোড়জোড়। আমাদের বলা হলো ছাত্র সংসদের সাথে কমনরুম এলাকায় রাতের খাবারের পরে জড়ো হবার জন্য। সারাদিন ক্লাস ও ওয়ার্ড ডিউটির কারণে সিনিয়র ছাত্রদের রাতের বেলা রিহার্সাল করা ছাড়া উপায় ছিল না। আর, আমাদের মধ্যে একটা এডভেন্চারের গন্ধ নাকে এলো, আমরা রাতের খাবার হোস্টেলে খেয়ে ক্যাম্পাসের দিকে গান গাইতে গাইতে রওনা দিলাম। মেয়েরাও বেশ কয়েকজন রিহার্সাল দিতে এলো। নাসরীন এরই মধ্যে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মন্চে অরিন্দমের বাসন নাটকে অভিনয় করে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু আমাদের ছেলেদের মঞ্চনাটক করা দূরে থাকুক দেখার অভিজ্ঞতাও খুব একটা নেই। আমরা হোস্টেল থেকে হাসপাতাল যাবার পথের ঘুটঘুটে অন্ধকারের উৎস থেকে বের হয়ে কমনরুমের টিমটিমে আলোয় দেখলাম পরিচালক বেশ গম্ভীর হয়ে অবলোকন করছেন। একসময় আমাদের জানানো হলো, নাটকের নাম আবদুল্লাহ আল মামুনের “এখন দুঃসময়”। যা বিটিভির মাধ্যমে তখন আমাদের সবার কাছে খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় নাটক। সেলিম ভাই একজন একজন করে কাছে ডাকছেন এবংএকটা ডায়ালগ বলতে দিচ্ছেন। কারোরই হচ্ছে না। কিন্তু তিনি শিখিয়ে দিচ্ছেন। আবার বলতে বলছেন। এভাবে চলতে থাকলো। আমি দেখলাম, পরের নির্দেশে বডি মুভমেন্ট থেকে গলার টোন সব করে এভাবে অভিনয় করতে হয়। অমি টের পেলাম, এ আমার কম্মো নয়। আমার ডাক আসার আগেই আমি আস্তে আস্তে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলাম। সেই যাওয়া আমার জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। সেদিন থেকে আমি জেনে গেলাম, অন্যের নির্দেশে পুতুলের মতো সঙ সেজে শিল্পসংস্কৃতির জগতে কোন কাজ করা আমাকে দিয়ে চলবে না। আর সেই সিদ্ধান্তই আমাকে স্থির নিশ্চিতভাবে লেখালেখির পথে নিয়ে গেল। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত নাটকের চরিত্রাভিনেতাদের নির্বাচন ২/৩ রাতের রিহার্সালেই ঠিক হয়ে গেল। নাসরিন নায়িকা এবং সাহেদ নায়কের ভূমিকা পেল। সিনিয়রদেরও দুয়েকজন মনে হয় অভিনয়ে যোগ দিয়েছিল। নাসরিনের কল্যাণে চট্টগ্রাম শহরের নামকরা নাট্যগোষ্ঠী “অরিন্দম” এ খবর শুনে চমকে উঠল। মাত্র একমাসে এ নাটক মঞ্চস্থ করা তাদের ভাষ্যে অসম্ভব। দারাশিকোর ছোট-ভাই আমাদের নাটকের পরিচালক ডা. সেলিম ভাই তাদের চ্যালেন্জ জানিয়ে নাটক দেখতে আসার আমন্ত্রণ জানালেন। আমি দুয়েকদিন রিহার্সাল দেখতে গিয়েছিলাম। সাহেদসহ সকলের প্রতিটি রাত্রির অনেক অনেক পরিশ্রমে নাটকটি ধীরে ধীরে একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়ে গেল। তবে, অভিনয়ে যুক্ত না হওয়ায় আমার কোন আফসোস ছিল না, বরং প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছিলাম অন্যের কথা মতো আরেক ব্যক্তির ভূমিকায় নিজের হাঁটা চলা কথা বলা সব করা মারাত্মক রকম দুরূহ। নবীন বরণে এই নাটক অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। নাসরিনের নাম তো সবার মুখে মুখে কইতরি হয়ে যায়। এই অনুষ্ঠানে তরুণ রক্তে বান ডাকার জন্য সে সময়ের বিখ্যাত ব্যান্ড সংগীতের দল সোলসকে আনা হয়েছিল। সবাই অনেক হৈচৈ ও নাচানাচি করে সে উৎসবে সাফল্য আনে। কিছুদিন পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নবীন বরণ হয়। এতে আসে মাইলস। এভাবে ধীরে ধীরে টের পাই, এই কলেজে ছাত্ররা কেবল পড়ালেখাই করে না, সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও মশগুল থাকে। ছাত্রলীগের একটি ছোট ভাঁজপত্র প্রকাশিত হলো আমাদের নবীন বরণ উপলক্ষ করে। আমার কবিতা সেখানে ছাপা হলে অগ্রজদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। বর্তিকা দেওয়াল পত্রিকা আকারেও প্রকাশ হতো। বরকত বক্তৃতা কক্ষের সামনের করিডরে বিভিন্ন গ্রুপের বোর্ড থাকতো যাতে কয়েক মাস পর পর নতুন দেয়ালিকা টাঙানো হতো। দেয়ালিকার আঙ্গিকে বৈচিত্র্য আনা হতো নানাভাবে। শোলা ব্যবহার করে দেয়ালিকাকে দ্বিমাত্রিক থেকে ত্রিমাত্রিক রূপে সাজিয়েও প্রকাশ করা হতো। দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল এভাবেই।
এদিকে বছর ঘুরতেই আমরা পুরনো হয়ে উঠলাম। নতুন ব্যাচ আসার সময় ঘনিয়ে এসেছে। সে যুগে তখনও কোচিং ব্যবসা জমজমাট হয়নি। কেবল ছাত্রশিবির রেটিনা নামে একটি কোচিং কেন্দ্র চালু এবং গাইড বই প্রকাশ করেছে, এবং তার পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থই প্রধান চালিকা শক্তি। দেখাদেখি অন্য দলগুলি ওয়ার্ডে এবং ছাত্র সংসদ এলাকায় কোচিং করার ব্যবস্থা চালু করলো। আমরা যারা সবে প্রথম বর্ষ শেষ করেছি, তারা বিকেলে সেজেগুজে ক্যাম্পাসে এসে রাস্তাবিভাজক লোহার শিকের ওপর বসে পড়ি। কি করে যেন ভর্তিচ্ছু তরুণেরা এখবর পেয়ে গিয়েছে। ছেলে মেয়ে যাদের দেখে ভর্তিচ্ছু মনে হলো, তাদের আমরা মাছ বা ফিস নাম দিলাম। আর তাদের শিকার করে যার যার দলীয় সিনিয়রদের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো। ওদিকে সিনিয়ররা তখন কেউ ওয়ার্ডের বারান্দায় আবার কেউ ছাত্র সংসদ কার্যালয়েই পালা করে ক্লাস নিয়ে যাচ্ছে। আমরা গিয়ে নতুন নতুন ফিশিং করা ছাত্রদের সেখানে বসিয়ে দিতাম। আর এসব ছাত্ররা ভাবতে থাকতো মেডিকেলের বড় ভাইয়েরা কত ভাল! এরা রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পড়ায়। মজার ঘটনা হলো আগের দিন কেউ এদলের ক্লাশে গেলে পরেরদিন আবার আরেক দলের ক্লাসে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাই হোক, ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেলে নতুন ব্যাচের ছেলেমেয়েরা এসে ভর্তি হতে শুরু করে। এরপর আবার শুরু হয় তাদের নবীন বরণের প্রস্তুতি। এবার কিন্তু কলেজের পরিবেশ থমথমে। দুই দলের ছাত্রদের মধ্যে একটা শত্রুভাবাপন্ন অবস্থা। অন্যদিকে সেই ১৯৮৬ সালে দেশের রাজনীতিও তখন অস্থির। একদল নির্বাচনে গেল, একদল গেল না। তার জের ধরে কলেজে হাতাহাতি মারামারি থেকে রাতের বেলা গান পাউডার ছিটিয়ে রুম পোড়ানো এক ভয়াবহ কর্মকাণ্ড চলতে লাগলো। ভাগ্যিস, এসব হাতাহাতি মারপিট দেখে আমি ২৫ মার্চ দুপুরে বাসায় চলে গিয়েছিলাম। পরেরদিন দুপুরে ২৬ মার্চ হোস্টেলের মেসে ফিস্ট খাবো বলে একটু আগে ভাগে সকাল এগারটা নাগাদ হেঁটে হেঁটে চট্টেশ্বরী রোড দিয়ে হোস্টেলের দিকে এগিয়ে যাই। কিন্তু হোস্টেলের আশেপাশে অনেক পুলিশ এবং থমথমে পরিবেশ দেখে ঘাবড়াও যাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিগত রাত্রে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে এবং হোস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে শুনেছি, আমাদের সহপাঠী বিভুকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আঘাত করে। তারপর একপক্ষ আরেক পক্ষকে তাড়া করে। প্রিন্সিপাল ঘটনাস্থলে এসে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাহাড়ের দিক থেকে জানালা গলে ঢোকে বহিরাগতরা এবং প্রিন্সিপালকে তারা ফ্লোরে শুইয়ে দেয়। এরপর একের পর এক রুমে আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করে আসবাব এবং বইপত্র।
এরপর থেকে দীর্ঘ ২/৩ মাস কলেজ বন্ধ ছিল। সব ছাত্রছাত্রী বাড়ি চলে গিয়েছে। কিন্তু আমরা যারা চট্টগ্রাম শহরে থাকি, আমরা ২/১ জন করে ক্যাম্পাসে আসা শুরু করি, মেজাম্মেল চত্বরে শিকের ওপর বসে আড্ডা দিকে থাকি। কলেজ ক্যান্টিনও বন্ধ থাকায় বাইরের হোটেলে বসে চা-নাস্তাও খেয়েছি। একসময় পরিবেশ সহনীয় হয়ে উঠেছে ভেবে কর্তৃপক্ষ কলেজ খুলে দিলে ক্যাম্পাস আবার শোরগোলে ভরে ওঠে। একটা গুনগত পরিবর্তন দেখা গেল। তা হচ্ছে আ স ম রব সমর্থক জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতি চমেক ক্যাম্পাসে সমাপ্ত হয়ে গেল। আমাদের যেসব সবপাঠী বন্ধু সক্রিয়ভাবে জাসদ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের পাঁচজন ছাত্রলীগে যোগ দিল। আমাদের পরের ব্যাচের সব ছাত্র ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে দেওয়ায় স্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হলেও একটা থমথমে খাপছাড়া অবস্থা ঠিকই ছিল।
আমি এবং আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে ভাবলাম, ক্যাম্পাসে একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আমাদের সহপাঠীদের মধ্যে ছাত্রশিবির ব্যতীত অন্যান্য সব সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতিবান বন্ধুদের নিয়ে আমরা একটা বহুদলীয় অরাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন করলাম। সংগঠনের নাম রেখেছিলাম ‘ধ্বনি’। আমরা এর পরিচালনা করেছিলাম বটে, কিন্তু পদাধিকারী হইনি। সবে মিলে করি কাজে বিশ্বাসী হয়ে আমরা কাজ শুরু করি। ভাঁজপত্র বের করি কবিতার। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের স্মরণকালের সেরা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজনের পাশাপাশি পোড়া মরিচ সহকারে পান্তাইলিশের ব্যবস্থাও ছিল ১৯৮৭ সালে। রাগীব মনজুরের কন্ঠে অসামান্য আবৃত্তি, হিউবার্ট ডিক্রজের গলায় ভূপেন হাজারিকার গান যেন শুদ্ধতম সংস্কৃতির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই আমাদের বোধোদয় হলো যে প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষা মে মাসে। হাতে সময় নেই। আমাদের পড়তে বসতে হবে। সব কাজ বাদ দিয়ে আমরা পড়তে বসে পড়লাম।
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গন কিন্তু বসে ছিল না। যে বহিরাগতের হামলায় হোস্টেল পুড়ে ছারখার হয়েছিল, তারা যার মদদে এসেছিল, তিনি তখন পুরনো দলের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে তার স্বরূপ প্রকাশ করলেন। মূলত তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ইশারায় তিনি এরশাদের জাতীয় পার্টির সমর্থক ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ গঠন করেন এবং ভেঙে যাওয়া ছাত্র সংগঠনের প্রায় সব কর্মীকে তার দলভুক্ত করেন। আমাদের যেসব বন্ধুরা এই সংগঠনে যুক্ত হলো সহসা তাদের চেহারা পাল্টে যেতে থাকলো। এরা হাতে কোমরে এবং পকেটে অস্ত্র ও গুলিগোলা নিয়ে ঘুরতে লাগলো, তার সাথে নেশাদ্রব্য সহজলভ্য হয়ে উঠলো তাদের কাছে। আমি শুনেছি, কেউ কেউ এমনকি ভ্যারাইটি শো প্রহরায়ও কাজ করেছিল। একদিকে আমরা ‘ধ্বনি’র মাধ্যমে সংস্কৃতি সুরক্ষার চেষ্টা করছি, অন্য দিকে অশুভ শক্তি ক্রমশ বিকাশমান। এসময় এক বন্ধু এসে আমার পাঠসঙ্গী হতে আগ্রহ প্রকাশ করলো এবং নাসিরাবাদে অবস্থিত ২ নং হোস্টেলে একটা রুমের ব্যবস্থাও করলো। একসময় এই রুমে জাসদ ছাত্রলীগ কর্মী সহপাঠীরা থাকতেন, তাঁদেরই একজন আমার সাথে ধ্বনি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। সে জাতীয় ছাত্র সমাজের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হবে বলে মেইন হোস্টেলে চলে যায় এবং রুমটিতে আমাদের থাকতে দেয়। কিন্তু কিছুদিন পরে আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ আসতে থাকে তাদের দলে তাদের সাথে সামিল হয়ে মিছিল মিটিংয়ে যুক্ত হবার জন্য। চট্টগ্রাম কলেজ জীবন থেকে আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধুদের একজন আমার রুমে এসে আমাকে কিছু বুলেট দেখিয়ে গেল, কোথায় নাকি অপারেশনে যাচ্ছে। এটা যে একটা হুমকি, তা টের পেতে দেরী হয়নি। কিন্তু ভয় পাওয়ার চেয়ে মর্মাহত হয়েছিলাম বেশি। একদিন আমাকে তারা ধরে নিয়ে গেল স্টুডেন্ট ওয়ার্ডে। এখানে অসুস্থ মেডিকেল ছাত্রদের ভর্তি থাকার কথা। কিন্তু, আমি গিয়ে দেখলাম, নবাবের মতো কাত হয়ে অর্ধশোয়া অবস্থায় নেতা বিরাজমান, যাঁর সঙ্গীরা চিকিৎসক হয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে গিয়েছেন ঢের আগে। তিনি বছরের পর বছর ক্লাস না করে ছাত্রনেতা। তাঁর শিষ্যরা তাঁকে ঘিরে রেখেছে। আমাকে দেখিয়ে দিল একজন, বললো, “জিললুর এসেছে, ঐ যে…”। তিনি আমাকে দেখলেন। সম্ভবত চিনলেনও। তাঁর ছোট-বোন আবার আমাদের সহপাঠী। নেতা বললেন, তুমি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করো, ভাল কথা, তোমার বিশ্বাস নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। তবে, ক্যাম্পাসে তোমার বন্ধুদের সাথে থেকো, মাঝেমধ্যে ডাকলে এসো”। এতো নরম নম্র স্বরে আদেশ দিলেন, শুনে আমি কোন রকমে মাথা নেড়ে বিদায় নিলাম। তবে অবশ্য তিনি কোনোদিন ডাকেননি, ডিসটার্বও করেননি। বরং আমাদের যে বন্ধুরা জ্বালাচ্ছিল, তাদের সর্বোচ্চ নেতার সাথে কথা হবার পরে দেখলাম তারাও জ্বালাতন বন্ধ করেছে। আমরা পড়ায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু মে মাস যতো এগিয়ে এলো, আমাদের মাথা ততো খারাপ হতে লাগলো। এতবড় গ্রে’র এনাটমি, গ্যানং ও গাইটনের ফিজিওলজি, হারপারের বায়োকেমিস্ট্রি - এত কিছু কি একসাথে পড়ে মনে রাখা যায়! একরাতে আমরা দুই রুমমেট ঠিক করলাম পরীক্ষা পেছাতে হবে। না হলে নির্ঘাত ফেল। এর আগে ছিল স্টারমার্ক পাবো কিনা, ফার্স্ট ডিভিশন পাবো কিনা, এসব ব্যাপার। আর মেডিকেলে কিনা সব মেধাবী ছাত্র এসে বছরের পর বছর ফেল করছে! যেই ভাবা, সেই কাজ। পরদিন লেকচার ক্লাসে আমরা স্বাক্ষর সংগ্রহে নেমে পড়লাম। সাধারণ ছাত্রদের মনোভাব আমাদেরই মতো। তাই দ্রুত পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে মত বাড়তে থাকে। এদিকে আমরা আশা করেছিলাম, বিভিন্ন দলের নেতারা একত্র হয়ে আমাদেরকে অনুরোধ করলো পরীক্ষা না পেছাতে। আমরা তো অবাক! তোদের কি প্রিপারেশন ভাল?! তাদের উত্তর শুনে আমাদের তো আক্কেল গুড়ুম। তারা বললো, “তোরা তো প্রথম বারেই পাশ করে যাবি। আমরা করবো ২য় বার। তাই তোরা আগে পরীক্ষা দিলে আমরা ৪ মাস এগিয়ে থাকবো।” কিন্তু তাদের এসব ভেজা কথায় চিড়ে ভিজলো না। আমাদের ইচ্ছা বেশি মত পেয়ে জিতে গেল। তখন প্রশ্ন এলো, সিলেট মেডিকেল পরীক্ষা দিয়ে দিলে তো আমরা ফেল হিসেবেই গণ্য হবো। তখন প্রস্তাব এলো, সিলেট যাত্রার।
পূর্বাহ্ন ১২:০৩
৩০ আগস্ট ২০২৩, বাংলামোটর
মন্তব্য