হোক তবে তাই হোকস্তব্ধ হোক সমস্ত শোকবেলা কিংবা অবেলাসাঙ্গ যবে হবে খেলাযেন পারি মেনে নিতেযেন পারি উত্তরিতেঅচেনা অনির্বচনেশান্ত তৃপ্ত মুক্ত মনেযেন বলি তাই হোক।
লেখাটি আমার নয়, কবি শাহেদ শাফায়েত হতে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত একটি বইয়ে কোনো এক কবির লেখা কবিতা। আজ এই মুহূর্তে চরণগুলো আমাকে তাঁর সেই স্মৃতিগুলো স্মরণ করিয়ে দিলো। তখন ১৯৯০ সাল। আমি কলেজে পড়ি। দেখতাম- কবিতার ফেরিওয়ালা কবি শাহেদ শাফায়েত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কোরপাটেলিক’ হাতে নিয়ে পাঠক খুঁজে বেড়াতেন। বই নিয়ে আমাদের কলেজেও আসতেন। আমি একটি বই সংগ্রহ করলাম। কবিতার শব্দচয়ন কঠিন, ভাব সমৃদ্ধ তবে চমৎকার। নিমিষেই তাঁর কবিতার প্রতি কঠিনভাবে আকৃষ্ট হয়ে গেলাম। কোরপাটেলিক বইয়ের কবিতাগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য ছিলো-তিনি কোনো লেখাতেই বিরামচিহ্ন ব্যবহার করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবি বললেন, এটা তার লেখার একটি স্টাইল।
কবিতার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে তিনি মাঝে মাঝে আমাকে বেশ কিছু বইপত্র দিতেন। সেগুলোর মধ্যে ‘চালচিত্র’ নামে সাহিত্যের একটি ছোটকাগজ ছিলো। সে সময়ে আমি বেশ লেখালেখি করতাম। যে কারোর লেখা পড়তেই ভালো লাগতো। তবে তাঁর দেয়া প্রতিটি বই, প্রতিটি লেখা আমার কাছে ব্যতিক্রম এবং অনন্য মনে হতো। আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম। শাফায়েত ভাইয়ের কবিতা এবং তাঁর কাছ থেকে পাওয়া বইয়ের সব লেখাগুলোই মূলত আমার লেখার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
কলেজের পাঠ শেষ হবার পর তার সাথে আর তেমন দেখা হতো না। আমার চাকরি হওয়ার পর কর্মস্থলে যাতায়াতের পথে কয়েকবার দেখেছিলাম। দু/তিন দিন কথা হয়েছিল, তখন তাঁকে বেশ অস্বাভাবিক মনে হতো, কী কারণে জানি না তিনি তাঁর স্বাভাবিক সুন্দর জীবন থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন। এরপর অনেক বছর তাঁর সাথে দেখা হয়নি, তাঁর লেখাও আর পড়া হয়নি।
কয়েক বছর আগে হঠাৎ একদিন ফেসবুকে তাঁকে নিয়ে মূল্যবান একটা পোস্ট দেখি। ঠিক মনে করতে পারছি না পোস্টটি কে দিয়েছিলেন। আমি অভিভূত হলাম। তখন থেকে কবি শাফায়েতকে আমাদের সকল কবিরাই তাদের হৃদয়ে বিশেষভাবে লালন করেছেন। যিনি বা যারা তাঁকে যথাযথ মূল্যায়ন করার জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। অনেক বছর পর তাঁর দেখা পেলাম, প্রয়াত কবি দুলাল রায়ের স্মরণসভা উপলক্ষে আহ্বান করা এক স্মরণসভায়। তারপর আর দেখা হয়নি। কাব্যজগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা রেখে তিনি পরপারে চলে গেলেন, বড় অসময়েই চলেন গেলেন কবি। চলে গেলেন একজন শাহেদ শাফায়েত। তাঁর জাগতিক প্রস্থান ঘটেছে কিন্তু বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টিতে, তাঁর কীর্তিতে।
মন্তব্য