একটা সাদা শীট সাদা কাপড় হয়ে ধূধু করছে বহুদূর। বার বার মনে আসছে শাহেদের স্টাই সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরা একটা ছবি। তুলেছিল আমার সাথে।
‘শাহেদ ভাল থাইকো’
‘শামীমফারুক ভাল থাকবেন’
২০১৯ এ ওর সাথে শেষ দেখা দেবীগঞ্জ রাস্তার মোড়ে এক চায়ের দোকানে। দোকানের গ্যাঞ্জাম ঠেলে সদ্য লেখা একটা কবিতা শোনালো। তারপর যাবার আগে আমরা ছবি তুললাম। কবিতার বই হাতে নিয়ে। দেবীগঞ্জের করতোয়া ব্রীজ পার হয়ে আর পাওয়া যাবেনা কবিকে। তারও অনেক আগে সম্ভবত ৯৪-তে ও একবার পার্বতীপুরে আমার ব্যাচেলর হাউজে এসেছিল জংশনের রেল লাইনে আত্মহত্যা করতে। আমি বললাম, শাহেদ আজকে থাক একদিন পরে করো। রাতে ভাত ও পর্যাপ্ত গোল্ডলিফ সিগারেট খেয়ে সে যাত্রায় তার আর আত্মহত্যা হলো না। ও দেবীগঞ্জ চলে গেল। একবার ওর গ্রামের বাড়ি ঘুরলাম আমি রাজা ভাই। এখন আর শাহেদকে পাওয়া যাবে না। দেবীগঞ্জ স্কুল মাঠে, ঠাকুরগাঁয়ের টাঙ্গন ব্রীজে। আজিজ মার্কেটে, পিজিতে বা গ্রীনরোডে আহমেদ নকীবের বাসায় (সেই পূর্ণদৈর্ঘ রচনা কালে)।
তবে পাওয়া যাবে হিমালয়ের পাদদেশে গহীন দেবীগঞ্জের মুখের মতো শাহেদের এক খনিজ-মৌলিক কাব্যরস। ওর লেখা অনর্গল, শব্দে একটু ভারী। যেমন ও এক মুঠো ধূলো না বলে বলবে ‘এক মুষ্ঠি ধূলী’ ‘সমস্ত কিছুই আমার স্মৃতিপূঞ্জ’। কবি শাহেদ শাফায়েত ‘ছায়ার দোলক হয়ে আড়াল করে মুখ’ (ঈভের সিঁড়ি, কোরপাটেলিক)। ও বলতে পেরেছিল ‘এক একটি শঙ্খের আত্মায় এক একটি সূর্য পতনের কথা’ (পতনের সুর, কোরপাটেলিক)। ও বর্ণনাত্মক, প্রাকৃতিক তবে জীবন দাশের মতো না। প্রাথমিক লেখাগুলিতে ধ্বনির খেলা থাকলেও গদ্য প্রবণতাই বেশী। দৃশ্যঘন চাপ চাপ এক ধরণের জৈব ভাষা অলৌকিক নয়। আবেগ প্রখর তবে অস্পষ্ট নয়। ভেতর থেকে নির্গত দৃশ্য শব্দের দ্রবণ। আছে দহন আলোর অন্বেষায়। আপনারা শাহেদ শাফায়েতের কবিতা পড়ে দেখবেন। আবার পড়বেন। ভাল লাগবে। ওর কবিতা বেঁচে থাক বহুকাল।
দৃশ্যঘন চাপ চাপ এক ধরণের জৈব কাব্যভাষা
শামীমফারুক
শামীমফারুক
মন্তব্য