পতনের সুর
হাজার জন্ম শেষে তবে এই বৃক্ষকে পেয়েছি।
পতঙ্গের বুকের মতোই শীতল ও ছোট্ট প্রাণ
যদিও পাথর তাকে দিয়েছে আশ্রয়, গতি ও বিশ্রাম
আর অফুরন্ত সূর্যের বয়স ভেঙে ভেঙে
বীর্য থেকে বানিয়েছে তার ডানা হলুদ ও উজ্জ্বল
এক হাড়ভাঙা ব্রিজের নিচে, দিনান্তের জলে
ভাসাই তোমাকে যদি নৌকা বানিয়ে, কালো কারুকাজে
অথবা পুড়িয়ে বানাই কারো চিতাছাই, জন্ম তবুও ঘটে
কৃষকের চন্দ্র সূর্য নিয়ে জীবনের ঘাই;
কোনো এক ভোরবেলা; স্বচ্ছ এক মাছের উদ্ভবে!
ঘটছে জন্ম তোমার নীরব পাহাড় ঘেরা এই সমতলে
ভূতলে অনেক আলো, সুষুপ্ত নদী, তারও নিচে
হরপ্পার নথি; পত্রাবলি কালো যুবকের।
আমাদের জন্মগুলো লোমশব্দে ঢাকা
দূরের বন্দরে; জাহাজডুবির মতোই ঘটে যায়
যার সমাপ্তি নেই সমুদ্রতরঙ্গের ভেতর
এক-একটি শঙ্খের আত্মায় এক-একটি সূর্যপতনের কথা।
আয়না
দেখা হয়েছিল শুকনো গাছের সাথে
গাছেরা কেবলি ঝরায় তাদের পাতা
কথা হয়েছিল নগ্ননারীর সাথে
গাছেরা খাদ্য চেয়েছে পদক্ষেপে
ভোজনবিলাসী পুরুষ খেয়েছে পাতা
অগ্নিদ্রবণ, নির্বাপনের স্বাদ-
আমাদের পিঠে কালো মোহরের ছাপ
আমাদের ঘরে ঘুণপোকাদের ঘর;
ঢেকে রাখা ছিল দেয়ালের কালো ফাঁদে
মর্মরধ্বনি, লালচিত্রের আভা
সুদূরে পৃথিবী জন্ম নিয়েছে নিজে
নিজের ভিতর একাকী নিমজ্জনে
আমাদের মতে, বেড়ালের থাবাগুলো
বেড়াল জেনেছে সামান্য লাভক্ষতি
থাবায় তাহার পশমি রুমাল ওড়ে
রুমালে মৃত্যু! রুমালে যাদুর পাখি!
এক-একটি দিন পিনপতনের শুরু
প্রতিধ্বনিত প্রতিটি রাতের শরীর;
তর্জনী তুলে ভাসছে চতুর্দিকে
ডানা ছিল তার ভাঙা ভাঙা ঢেউগুলো
চোখ বিধে ছিল লালবাড়িটার আলোয়
আমরা হলুদ পাতারা জেগেই ছিলাম
আমরা চেয়েছি বহুবর্ণিল আলো
তাপ ও কাঁচের গলিত পুষ্প মেলে;
গাছেরা খাদ্য চেয়েছে পদক্ষেপে
গাছেরা কেবলি ঝরায় তাদের পাতা।
আবহমান
১.
আগাছার ভিড়ে বেড়ে ওঠা আগাছাগুলি
সে আগাছা তবে,
গাছ শীর্ষে উঠে গিয়ে
গাই ভোর বন্দনা গানগুলো
আমি এক আরক্ত সূর্যলাল লাল মোরগ।
২.
দশদিগন্তে উদ্বেলিত বাহু তোলা
আদিগন্ত ঝলকিত হয় দু'চোখ
না যাব না, যাব না তাদের তাদের সাথে নেচে
যেখানে আমার জলকেলি পাখি ওড়ে,
সেখানে জল, জলে চরগুলি
গেছে ভেসে ভেসে দূরে,
নৌকা, গলুই হালট ছেড়ে তার
অজানা সেই তেপান্তরে
গেরিলা
রহস্যময় মানুষ কোথায়, কোনখানে
হারালে তুমি বসন্ত বাগানে
শত শত স্ফুরিত হিরে খুবলানো দেখে
ফিরে ফিরে গিয়েছিলে তুমি
রৌদ্রতাপ বালুকাবেলা দগ্ধ মরুভূমি,
ভেসে চলা নৌপথ খুঁজে খুঁজে বহর কঠিন
সমুদ্র পথ ঢাকা ভাঙা ঢেউয়ে ঢেউয়ে।
রহস্যময় সুর যাও মিলিয়ে,
কোনখানে দাঁড়ালে তুমি, স্ফুলিংগ জ্বলে
নিয়ে তোমার অন্ধসন্ধানব্রতী আমি আজ,
পথে পথে গান গেয়ে চলি?
সপ্তর্ষি, কালপুরুষ, ধ্রুবতারা
নির্নিমেষ পরিধির যত ছবি আঁকি,
জঙ্গলে জল, স্থল সজ্জিত গেরিলাযোদ্ধা
শিরস্ত্রাণ গলিত সবুজপাখা, পাতাগুলি!
রহস্যময় মানুষ এসো এবার ফিরে
স্বদেশভূমি গর্জিত মারণাস্ত্র লড়ে দ্রুত,
বনভূমিতে তাক কর ভীষণ নিশানা
হায়েনা ঘায়েল হোক তোমার বেয়নেটবিদ্ধ...।
শহর
মন্ত্রিত মুদ্রায় নিদ্রিত শহর
উড়ছে সেখানে তবু অই শাদা কবুতরগুলি
বাহারী ডানায় আর বজ্রপতন, শস্যপতন শুরু থেকে ফল্গুনাচন,
আবার জন্ম তাতে লবে হাড় ও খনিজ লাভা চুনসুড়কি কত
একখণ্ড আলো জ্বলা ভূমি।
জলপথে ভাসাবো বজরা, শবগাড়ি পণ্য পদাঘাত
তুলবো টেনে কঠিন পামর দোলা।
নিশিকান্ত রাজপুত্র ওরা বিপরীত মেরু
অনেক বন্যতা নিয়ে উঁচিয়ে তরবারি,
কোন মুখ খোঁজ তুমি অন্ধকার কেটে মৃত্তিকা জঠর?
কোন কন্যা তুমি পাহাড় ফটক খুলে নেবে জল,
দিতে শিকার সমান উলুধ্বনি, নবান্ন দেবে!
এই জলস্রোত রাতবিভোর
খুলে ফেলে গেরুয়া বসন,
আমার পাশে তোমার দাস-দাসীরাও
আজ সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি
নাড়ুক দু'বাহুর মণিকোঠায়,
জড়িয়ে কিংখাব পিচপথ দিয়ে!
নিঃস্তব্ধ ধ্বনিসংকেত ভেসে ভেসে যায়
ট্রাফিক আইল্যান্ড আমাদের পরিচিত আয়না,
খণ্ড-বিখণ্ড নিথরতা যেন চমকে ওঠে, দ্যাখো
রাজমুকুট পড়ে নেই কোন রক্তমাখা কেদারায়
দ্যাখো আমরা বারবার ফিরে ফিরে আসি, আর আগুন ঝলক খাই।
পার্শ্ব
করো না ভঙ্গ এমন অন্ধকার
তারাহীন জ্বলা প্রতিটি চমৎকার
ভোরপূর্ব চৌদিক মায়াময়
আকাশ ঝরানো নীলাভসবুজ ছায়াময়
জানি ফোটে ফুল ঝরার বাসনাহীন
কঠিন প্রাণে তবু তারা দিশাহারা
হয় না গতি ও কালের চাকায় চাকায়
ঠিক জেনে যায় জাগতিক ওরা কারা
এসে যায় দিনে রাত্রি যে করে পার
সূর্য ঘনায় অথৈ জলের তলে
ওই সুগভীর কেন্দ্রাচারের গান
চৈ চৈ ডাকে উঁচু উঁচু দুইপাড়
ভঙ্গ করো না এমতো অঙ্গীকার
প্রসারিত হোক উজ্জ্বলতর ভোর
প্রতিটি সকাল তোমার উপমা
উপভোগ করি তোমার সৌন্দর্য চেতনা
অনাবৃত স্তন পেরিয়ে সামগ্রিক ভাবে
ছাতার ছায়াবৃত তোমার মন ও মুখ
উজ্জ্বল আলোকসম্পাতে ভেসে ওঠ
সাবলীল সকল শব্দ কী সহজ ভঙ্গি
চূড়া থেকে ধেয়ে আসা সলাজ প্রস্রবণ
সকল প্রবাহ পেরিয়ে ছোটে স্বপ্নস্রোতে
তোমার অনাবিল ভালোবাসা সমুদ্র দেখে
ভেসে ওঠা উন্মিলিত কথা কলকণ্ঠময়
পাখির পাখসাটে দূরদিগন্তচারী হাওয়ায়
নির্ভীক অক্ষরমালা যখন সজ্জিত সবখানে
বেজে ওঠে অপার হৃদয়তন্ত্র হতে এই বাগান
বহুযুগ ব্যেপে সংক্ষিপ্ত স্বর চরাচরে
মেলে ধীর চোখ যুগল প্রতিমাস্থানে
ঝরে যাওয়া নক্ষত্রের ফুল দ্বিধাহীন বেগে
জীবন্ত পাপড়ির ভাঁজে ভাঁজে উলঙ্গ প্রাণ
তোমার জৌলুসমাখা প্রতিটি ভোরের গান
চারাগাছটি দেখছো
রেখো না এই শিকলঝংকার ও দেবদ্যুতি
ছড়াক কুন্তল ঝলক ঝলসিত নূতন
মর্ম উত্থিত দেখাও আকাশটি কেন
কতটুকু আন্তরিক কতটা-বা বাকি
পায়ের তলার দলা মাটিময়
মরুর অরূপ সুন্দর ছবি যত হাড়
মাংসমণ্ডলী কাঁপা বর্ধিত চেতা
বিরুদ্ধ স্রোতে পথ চলা পথ চলা
ডাকি জোছনাতাড়িত যা কিছু
লুকিয়ে গুটিয়ে ছিল স্বপ্নবাস্তব
ওংকারঝংকারহীন ধূধূ এক মাঠের প্রতীক
সেজে পূজারি সতীর্থ এই শিকলশিকড়
গাছটি বেজে ওঠে
চালদুলকি চালে দেখি তোমাকে
অভিন্ন ছন্দদোলায়িত পথে পথে চলা
ধুলায় ধূসর হ'ল গাছ জাগলো শিশুরা
না কোনো কান্না নেই হৃদয়ে আমার
চোখ রেখে চোখ থেকে দূর আকাশে
ফোটা ঝাঁকে ঝাঁক তারার ভিড়ে এক
কবিতার দেহাবয়ব ধীরে মেলে ডানা
অপার হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে
আবার দেখা তুমি পাবে এই চূড়ায়
উঠে মেঘ ভেসে আসে অসংখ্য অনেক
দিনভর উঠানে মেঘের ছায়া ফালি ফালি
খেলে যে কোন্ খেলা পাতায় পাতায়।
অন্ধপ্রেমিকেরা
জন্মাবধি অন্ধ দুই চোখ অক্ষিতারাযুগল
তিরতির করে কম্পিত পলকে পল্লবে
উদ্ভাসিত ফুল নিথর হাওয়ায় দোদুল
থমকায় হঠাৎ দেখার জন্য উদগ্রীব
মৌবনে গুঞ্জন শনশন অধীর প্রতীক্ষারত
গাছে গাছে পাতাপত্রাবলি সামান্য ক্ষণ
দেখা হোক এইখানে নির্নিমেষ ও
ফুলপরী ব্যাকুল হৃদয়সন্ধ্যায়
কিছুটা অভিমান কিছুটা উপেক্ষা ঘৃণা
ওই চোখে জ্বলন্ত ঢেউ সাগরের ফেনা
পাঁকে পাঁকে ঘূর্ণিঝড়ের গ্রীবা উঁচু
দেখেনি এইখানে কেউ চিরভাব জাগ্রত
তড়িৎ
হাত রাখি জলে,—জলজ অবতলে
অবতল নেই। শুধু বালিরাশি—
কাঁকরের ফাঁকে ফাঁকে
কয়েকটি কাঁকড়ার নাচ;
নেচে ওঠা আঙুলের ফাঁকে
সম্পর্ক গড়ে তোলে তারা।
টুকরা পাথর সব বালির ঘর্ষণে
স্রোতের ভিতর ভাসে
নূতন নূতন ফুল ও ফুলকি।
শস্য
ভেসে উঠি তোমার আশ্রয় ছেড়ে,
নীরবে নিথর। অদূরের উঁচু মিনার
তুলেছে মাথা; তারই খোঁজে—
ভাঁজে ভাঁজে আমার উপর হলো, আংশিক
প্রগাঢ় লাল বহনের পর পুনর্বার ফিরে চলি
ভূমিতলে রশ্মিগর্ভে।
কাকতাড়ুয়া
চাষের যন্ত্র নেই। তবু
তার ক্ষেত ভরেছে শস্যে
সামান্য বৃষ্টির পরে
পাখিগুলো ফিরে এলে
আমিই প্রথম মাথা নেড়ে
জানাই অভিবাদন! অদূরে দাঁড়িয়ে থেকে
মাথা নেড়ে নেড়ে।
পরিচয়
পরিচয় শেষে ফিরে ফিরে এসো
পিছনের দরোজাটা খোলা থাক
সংশয়লিপ্ত পথে পথে, দোলাচল
পিছে ভারি সবজির বোঝা নিয়ে কারও সুখ আড়াল হল যেন-বা
রন্ধনশালায়। কাটা মাছ ছাপ ছাপ
অবশেষে একাকী একটি রঙধনু কাটে।
নদী
যখন আমরা একটি নিবিড় রাত নৌকা বেয়ে বেয়ে
প্রথম ভোরের কমলা রঙ তটভূমিতে অতি প্রশান্ত গতিতে
এগোচ্ছিলাম অতি ধীর গতি
ঠিক সে সময় বসন্তের বিচ্ছেদময় জারুলের পাতার মতো
একটি ফ্যাকাশে নক্ষত্র ততোধিক বিয়োগান্তক শূন্যতায়
ঝরে পড়ছিল পৃথিবীময় মৃত্তিকায়
এ সময় তোমার একরাশ হাস্যময় চুড়ির মদমত্ততায়
জলমগ্ন কম্পিত বুনো হাওয়ায়, হাওয়ায়
টুপটাপ করে ঝরে পড়ছিল আমারও,
একান্ত গভীর শব্দগঙ্গার মতো একগুচ্ছ শব্দতরঙ্গ আর...
হায়! তুমি তখন বৃষ্টির ছাট হয়ে হয়ে শুধু
ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলছিলে আমার বোধাতীত মন।
ক্ষরণ
ছেড়ে লোকালয়গুলি ধু ধু মাঠ
কুয়াশার ভেতর হিমেল হয়ে ওঠো।
ভারী শীত শরীর উঠিয়ে নিয়ে নিজ
সে সূর্য গিয়েছে রৌদ্র ছড়িয়ে দিয়ে
উড়ে উড়ে উড়ন্ত তার ডানা
খসিয়েছে শাদা হাওয়ায় সব পালক
বকগুলি ঠোঁট গোঁজা যেন শীতার্ত ধূসর।
যখন গোধূলি বেলা
আলো নিয়ে গুমোট গোটান ছোয়া
খোলা প্রান্তর হতে ছাড়াও তোমার ছায়া,
পাখ-পাখালিরা সেই জলপথ বেয়ে
সন্ধ্যাঘন ঝোপঝাড়, বুনো জঙ্গল শেষে
ফেরা, দিকচিহ্ন তবু কোটরাগত ঘাট।
আইভিলতার পাশে শঙ্খচূড় নারী
চূর্ণ কাঁচের ভেতর ভাসছে মুখ
রোদ এসে একটুকরো ভাসালো মেঝে
মুখ তবু ধরে আছে প্রিজম চাতুরি
অজানা নারীর একরাশ খোলাচুল
পৃথিবী কাঁপিয়ে ছাদের বাগানে উড়ে
ঘরের ভেতর ঘুমের দু'চোখ দেখে
আইভিলতার পাশে শঙ্খচূড় নারী
ছাই
এতোটা স্পর্শের কাছে রেখো না তাকে
ওখানে তৃতীয় যুদ্ধের প্রতিশ্রুতি আছে
ঐশ্বর্য আছে, একুশ প্রজাত রমণীর কাম নিয়ে
একবিন্দু সিলিকা আছে, ভবিষ্যতের ঘোড়া
এবং ভিমরুল আছে
ওখানে ঈশ্বর আছে, অণুবীক্ষণ আছে
এতোটা স্পর্শের কাছে রেখো না তাকে
ওখানে সমস্ত আত্মার জন্মদিন জ্বেলে
আছে অনার্য মহাকাশ...
ওখানে ঈশ্বর আছে, অণুবীক্ষণ আছে
ঈভের সিঁড়ি
ছায়ার দোলক হয়ে আড়াল করো মুখ
পানগেলাশের বৃত্তে আঙুল কাঁপে
জলকোরাসের দৃশ্যে তোমার পীঠ।
ফোটাও সবুজ আলোর দ্রোহে খই
নেচে নেচে যায় উপছায়া উপবন
সেখানে তোমার সিঁড়িগুলো ঘুমিয়েছে
সেখানে তোমার সিঁড়িগুলো দাঁড়িয়েছে
জন্মান্তরের পাঠ
নম্র পাখির ছানা
তোমার জলবিন্দু চোখে আমাকে গ্রহণ করো
এই মর্মমূল ছিঁড়ে খুঁড়ে চৈত্রে ঘষছি মুখ
ঠুক ঠুক খোদাইয়ের শব্দস্রোতে অন্ধ কুঠুরি
প্রিয়তম চোখ, নম্র পাখির ছানা
আমাকে গ্রহণ করো লিবিডো প্রমাণে
এখানে অধিক শিশুতোষ যৌনতা, বিরুদ্ধ সঞ্চার
পিতৃকণ্ঠের মতো নিচু ছাদ, তীব্রতা
খোদাইয়ের প্রহসন গাঁথা গৃহগামী ঋণ
নম্র পাখির ছানা, প্রিয়তম চোখ
আমাকে গ্রহণ করো লিবিডো ঘামে
আমাকে জড়িয়ে রাখো
খাদ্য-বিকাশ-স্মৃতি ঋতুতে ঋতুতে
পানশি
শৃঙ্খল নেই, মাছের ডানায় ডানায় কাঁপে নীল জল
গূঢ় পিদিম জ্বলে পরীনাচ জলের বিন্যাসে
ধ্বনিপ্রাণ শেকড়ের টানে
নেমে আসে বালিস্রোত, ঋতুমতী চাঁদের প্রবাহ
ঐ জলে শ্যাওলাঘাট প্রাচীন খুরের আওয়াজ
ঐ জলে কুয়াশা চুমু
ভেঙে ভেঙে কাঠিজাল উত্তরণের রেখা
ঐ জলে দাঁড় টানে নিদ্রাতুর বাতাসের জলমগ্ন বালক
দুলে ওঠে মধ্যরাতের নদী
শব্দে শব্দে হিম...
ঐ পানশির ভেতর চাঁদসওদাগরের কুমারী
রুপালি মুদ্রা ছিটায় দু'হাতের অন্তহীন ক্রীড়ায়... ক্রীড়ায়...
শব্দে শব্দে নাচে জল...
মধ্যরাতের নদী ফুঁসে ওঠে
মাছের ডানায় ডানায় কাঁপে নীল জল
গূঢ় পিদিম জ্বলে পরীনাচ জলের বিন্যাসে
ঐ পানশির ভেতর চাঁদসওদাগরের কুমারী
দেহের প্রখর ভাঁজে রেখেছে জড়িয়ে
একফালি গাঢ় লাল স্রোতের চিঠি...
ঘোর
নুয়ে আসা এক বিদ্ঘুটে শীতকাল
ঝরায় ভাঙচুর; ত্রিধার বৈকালে, সাতটি কিশোরের ছুটে পাঠশালা
শ্রেণীর ম্রিয়মাণ হলুদ অধ্যায়
ঝুলিয়ে রাখে তার স্খলিত কাঠামো
সাতটি লাটিমের ঘনিত লাল চোখ
ট্রাফিক কৌশলে উজানে সাঁতরায়
ভোরের ডান গালে জেব্রা চুমু খেলে
বাতাস ঘিরে রাখে ক্লান্ত মগডাল
সাতটি কিশোরের ভ্রমণ ঘরে এলে
নগর পান করে তীব্র হাড়িয়া
বজ্রপাত
পর্যটনের চিত্র হরণ শেষে
ফিরে গেল যেন সমুদ্র যুবরাজ
মাঠ মাঠ ব্যেপে ফুটে থাকে তার ত্রাসে
অঘ্রাণ অটোগ্রাফ...
দূরের চূড়ায় ঝলমল উত্থিত
যুদ্ধবাজের ফেনাময় তরবারি
প্রাচীন শহরে ভীষণ ঝঞ্ঝা-পাতে
চিতপাত যায় বিকল্প ঘর-বাড়ি
এখানে মিশেছে বিষণ্ণ ভালোবাসা
কালো কালো গ্রাম, দস্যুর কালো হাত
হঠাৎ বাজলো অসংখ্য ভুল ড্রাম
গর্জিত ড্রামে খান খান কাঁপে রাত
তরবারি ভেঙে আরও জাগে কালোরাত
রাত্রিতে ভাঙে গৃহযুদ্ধের দীর্ঘ রক্তপাত
কোরপাটেলিক
পরাধীনতার মেঘে
তোমার নখের শব্দ, উদগ্রীব পালক
স্বপ্নচারী জুতোর খোড়ল খুঁচিয়ে
তোলো বিদ্যুতের সিঁড়ি
পথ এবং সামন্ত বৃষ্টির ভেতরে
ঘেমে ওঠা রাঙা চাকু তোমার প্রতিভা
যন্ত্র
আগুনের যিশুপুত্র
তার কপালের চাঁদ থেকে ঝরে গিয়ে
নেমেছি জনান্তিকে, সাথে আছে কাঠ ও কুঠার
দেখো, নীলাকাশ নামিয়ে নিয়ে বলি
শূন্য হয়ে চল। মাছ আর মানুষের ভাঁড়ার থেকে
জন্ম নেবে হাঁস
হাঁসেরা আহার নেবে, দেহ নেবে কয়লা-বিদ্যুৎ
আর পাখার বদলে পাবে ভারী দরজা-জানালা।
এত ক্ষুধা নিয়ে কী বেচতে যাবি মেয়ে?
তার চেয়ে আমার আঙুল গুণে গুণে—
নাটবল্টু গুণে নিয়ে ভুলে থাক পিতার আদেশ।
এই দেখ, তোর সন্তানগুলি
বন থেকে ফিরে এসে কী যাদুবিদ্যা শিখেছে!
খাদ্য-বস্তু-রঙে তার ছড়াছড়ি
ধ্বংসযজ্ঞের আগে এখানে খামার ছিল
তারপর মাটি বিক্রি করে হয়েছে শহর
এত ক্ষুধা নিয়ে আর কী বেচবি মেয়ে
ওরা তোকে খেয়ে নেবে,
ওপরে টাঙানো বাঘ, জ্যান্ত শৃগাল
কাঁচা রঙ, বিকেলে ফিরেছে তারা
ছুটি হয়ে গেছে
প্রদর্শনীর শেষ ঘণ্টাধ্বনি
যা আছে বাকি আমাকে দিয়ে যা সব
আমি ভালোবাসি শিকল ভাঙার শিকড় তোয়া গান
নির্বাচিত কবিতা
শাহেদ শাফায়েত
শাহেদ শাফায়েত
কবিতাগুলো ছুঁইয়ে গেলো।
উত্তরমুছুনবাহহ! দারুণ সব কবিতা। - অমিতরূপ চক্রবর্তী।
উত্তরমুছুনকবিতাগুলো অসাধারণ।
উত্তরমুছুন