১
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ(১৯২২_১৯৭১)।বাংলা ভাষাবিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উচ্চারণ।উপন্যাস,নাটক,ছোটগল্প নিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নুতন স্বর নিয়ে এসেছেন।যুক্ত থেকেছেন সাংবাদিকতায়। ইওরোপের অস্তিত্ববাদ,মগ্ন চৈতন্যপ্রবাহ তার লেখায় নুতন হয়ে ওঠে।জ্যা পল সাত্রে ওয়ালীউল্লাহ কে তাড়িত করে বারবার। তার লেখা উপন্যাস মাত্র তিনটি। লাল সালু, চাঁদের অমাবস্যা, কাঁদো নদী কাঁদো। আর এই উপন্যাসগুলো লিখেই তিনি তার জাত চিনিয়ে দিতে পেরেছেন।
২
বাবার চাকরিসূত্রে বাংলাদেশের নানান অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে তাকে।অর্জন করেছেন নানান অভিজ্ঞতা। নিবিড় ভাবে দেখেছেন জেনেছেন চিনেছেন বাংলাদেশের গ্রাম,গ্রামীণ জীবনের নানা স্তর ও স্তরান্তর। পরবর্তীতে নিজেও পৃথিবীর নানান দেশে ঘুরেছেন, থেকেছেন।স্থানিক পরিসর থেকে উড়াল দিয়েছেন আন্তর্জাতিকতার মহাবিশ্বে। গভীর জীবনবোধ,মানবতাবাদ, অস্তিবাদি চৈতন্য ওয়ালীউল্লাহ কে ক্রমে প্রখর করে তুলেছে। স্বল্প আয়ুষ্কাল তার। কিন্তু এর মধ্যেই বাংলা সাহিত্যকে উজাড় করে দিয়েছেন।
৩
দেশভাগ পরবর্তী সময়ে যখন পূর্ববঙ্গের লেখক সমাজ রাজনৈতিক ভাবে এক তীব্র আলোড়নের ভেতর তখন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তার লেখায় তুলে আনছেন বাংলাদেশের ধ্রুপদী গ্রাম্য সমাজজীবন। কুসংস্কার ধর্ম লোকাচার লোকজীবনের যৌথতার ভেতর প্রবাহিত আবহমান মানুষের জীবনযাপন কি নিবিড় মূর্ত হয়ে উঠছে ওয়ালীউল্লাহের জাদু কলমে। চেতনাপ্রবাহ রীতি, অস্তিত্ববাদ, রূপক আর প্রতীকের সফল ব্যবহার তার বয়নকে চিরায়ত ব্যাপ্ততায় পৌঁছে দিচ্ছে।
- লাল সালু (১৯৪৮)
- চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪)
- কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮)
এই তিনটি উপন্যাসের আকার ছোট হলেও জীবনের খুব অন্দরের পলিমাটিজলহাওয়া মূর্ত হয়ে ওঠে তার সাহসী ও সৎ কলমে। পাশাপাশি তার নাটক ‘বহিপীর’ চমৎকৃত করে আমাদেরকে। তার গল্পের চরিত্রগুলির মধ্য দিয়ে আমরা অস্তিবাদ আর চেতনার মগ্ন প্রবাহ কে কেবল রূপান্তরিত হতে দেখি। আসলে আন্তর্জাতিক মননের হয়েও তার সর্বশরীর জুড়ে বাংলার সতেজ কাদা জল মাটি ফসলের আঘ্রাণ। এখানেই তিনি স্বতন্ত্র।
৪
সামাজিক দর্শন ও বাঙালি চেতনায় তার উপন্যাস ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে।তিনি আন্তর্জাতিক মননের মানুষ হয়েও তীব্র ভাবে স্বাদেশিক। "লালসালু"র মজিদ, রহিমা,জমিলা আর তাদের কেন্দ্র করে গ্রাম্য সমাজের জীবন,ধর্ম ব্যবসা,ভন্ডামি, পিরতন্ত্র এক চিরকালের দেশ কাল সময়ের গল্প আমাদের আবিষ্ট করে তোলে। আবার "চাঁদের অমাবশ্যা" আখ্যানে দেখি বড়বাড়ির কাদের,২২/২৩ বছরের যুবক আরেফ আলী মাস্টার, বড়বাড়ির মুরুব্বী দাদাসাহেব এবং একটি যুবতী নারীর হত্যাকাণ্ড ঘিরে আরেফ আলী মাস্টারের অদ্ভুত বিপন্নতা। দাদাসাহেবের কাছে কাদের দরবেশ হয়ে ওঠেন। কিন্তু আরেফ আলী নিজেকে আত্মজিজ্ঞাসা,গ্লানিতে বিদ্ধ করে তুলতে থাকে। আরেফ সব খুলে বলতে চায়, কনফেস করতে চায়,কিন্তু তাকে বিপন্ন করে তুলতে থাকে নিরাশ্রয় হবার এক জীবন সংকট। "কাঁদো নদী কাঁদো" উপন্যাসের মুহম্মদ মোস্তফা এবং খোদেজা পাঠককে বারবার তাড়িত করতে থাকে। মানুষের চিরকালের এক বেঁচে থাকাকেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তার লেখায় অত্যন্ত বিশ্বস্তভাবে তুলে আনেন। তিনি আবহমানের। তিনি চিরকালীন।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ: একটানা লিখে গেলেন কাদা মাটি জলের আঘ্রাণ
সুবীর সরকার
সুবীর সরকার
ভালো লাগলো আপনার লেখা
উত্তরমুছুনসুবীর বাবুর লেখা টি পড়ে তাঁর ভাষাতে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কে জানলাম -সমিত মণ্ডল
মুছুনসুবীরদার লেখা বরাবরই ভালো লাগে। এই লেখাটিও যারপরনাই মন ছুঁয়েছে।
উত্তরমুছুন