.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

সংক্ষিপ্ত জীবনী : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ১৯২২ সালের ১৫ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। পিতা সৈয়দ আহমদুল্লাহ্ ব্রিটিশ শাসনামলে ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিভিল সার্ভিসে নিযুক্ত হন। মা নাসিম আরা খাতুন লেখকের মাত্র বারো বছর বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন। দুই শিশুপুত্র সৈয়দ নসরুল্লাহ (লেখকের বড়ো ভাই) এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে রেখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁদের পিতা জোহরা খাতুন নামে আর এক নারীকে বিয়ে করেন এবং পরে আরো তিন ভাই-বোন জন্মগ্রহণ করেন। বড়ো দুই ভাই হিসেবে নসরুল্লাহ্ ও ওয়ালীউল্লাহ্ ছোটভাই-বোনদের দায়িত্ব পালন করেছেন।

শিক্ষা

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র পিতা সিভিল সার্ভেন্ট ছিলেন বলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সুযোগ হয়েছিল গোটা অবিভক্ত বাংলা ঘুরে বেড়ানোর। এভাবেই বাংলার নানা এলাকার স্থানীয় সংস্কৃতির স্পর্শে আসেন তিনি এবং বাংলা ভাষার নানা কথ্য-উপভাষার সাথে পরিচিত হন। বর্তমান বাংলাদেশের নানা জায়গায় তাঁর স্কুলজীবন কেটেছে। যেমন: মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, ঢাকা, কুড়িগ্রাম এবং ময়মনসিংহের কথা বলা যায়।

কুড়িগ্রাম হাই স্কুল থেকে ১৯৩৯ সালে তিনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশ করেন এবং ঢাকা কলেজ থেকে হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর তিনি ১৯৪৩ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে পড়া শুরু করলেও পিতার মৃত্যুর কারণে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আর এখানে পাঠ সমাপ্ত করতে পারেননি। তারপর তিনি দ্রুতই জীবিকা অন্বেষণে বাড়ি ছাড়েন।

কর্ম ও ব্যক্তিজীবন

১৯৪৫ সালে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ দুই বছরের জন্য দৈনিক স্টেটসম্যানে যোগ দেন। তিনি সেই বিখ্যাত পত্রিকার প্রথম মুসলিম স্টাফ ছিলেন। এরপর মাঝে তিনি ‘কমরেড’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা খোলেন।

১৯৪৭-এর আগস্টে দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় পত্রিকার কাজে ইস্তফা দিয়ে ‘রেডিও পাকিস্তান’-এ যোগদান করেন এবং ঢাকায় ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর আঞ্চলিক দপ্তরে ‘সহকারী পরিচালক’ হিসেবে কাজ করতে থাকেন।  ১৯৪৯ সালে করাচি রেডিও স্টেশনে তাঁকে নিউজ-এডিটর হিসেবে বদলী করা হয়। ১৯৫১ থেকে ১৯৫২ সাল নাগাদ পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের হয়ে নয়াদিল্লিতে প্রসে এ্যাটাশে হিসেবে তিনি যোগদান করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে তাঁর পোস্টিং হয় এবং সেখানে তিনি পাকিস্তান দূতাবাসে কাজ করেন। সেখানেই তাঁর ফরাসী স্ত্রী আন মারি থিবোউয়ের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। আন মারি ফরাসি সিডনিতে দূতাবাসে কাজ করতেন। তিনি করাচিতে ফিরে যান এবং সেখানে আন মারিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর এই দম্পতির দুই সন্তান হয়। সিমিন এবং ইরাজ। ঢাকায় ‘তথ্য কর্মকর্তা’ হিসেবে দু’বছর কাজ করার পর আবার ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় চলে যান। সেখানে পাকিস্তান দূতাবাসে কাজ করেন।

১৯৫৮ সালে তিনি করাচিতে পুনরায় ফিরে আসেন যেখানে তিনি ‘তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়ে’র বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি লন্ডনের পথে পাড়ি জমান। জার্মানির বনে বদলি হন এবং সেখানে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত থেকে শেষমেশ ফ্রান্সের প্যারিসে রওনা করেন। সেখানে তিনি পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৭ সালে তিনি ইউনাইটেড নেশনস্ এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেস্কো, প্যারিস হেডকোয়ার্টার, ফ্রান্স)-এ ‘প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট’ হিসেবে যোগ দেন। 

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর তিনি বাংলাদেশের পক্ষে ফরাসি বুদ্ধিজীবী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে সক্রিয় সমর্থন আদায় করেন। তিনি এমনকি ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে গঠিত মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে লন্ডন গিয়েছিলেন।  

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ: একজন ধ্রুপদী, আধুনিক লেখক

শৈশব থেকে ওয়ালীউল্লাহর শিল্পী হবার স্বপ্ন ছিল; তিনি চিত্রশিল্পী বা লেখক হতে চেয়েছিলেন। শুরুতে ছবি আঁকা ও লেখা দু’দিকে মন দিলেও পরে তিনি লেখাতেই স্থির হন।  বেছে নেন কথাসাহিত্যিকে। জীবনের শুরুর দিকে তিনি ছোটগল্প লেখায় হাত দেন। যেমন ‘নয়নচারা’ (১৯৪৫) গল্পটি যখন প্রকাশিত হয় তখন তিনি কলকাতায় ছাত্র ছিলেন।  তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বই ‘লাল সালু’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। তাঁর বয়স তখন মাত্র ২৭।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তাঁর একাধিক রচনাকর্মের জন্য বেশ কয়েকবার পুরস্কৃত এবং স্বীকৃত হয়েছেন।

১৯৫৫     পেন পুরস্কার (বহিপীর)

১৯৬১    উপন্যাসের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার (লাল সালু)

১৯৬৫    আদমজী পুরস্কার (চাঁদের অমাবস্যা)

১৯৮৩   একুশে পদক (মরণোত্তর)

মৃত্যু

১৯৭১ সালের ১০ই অক্টোবর তিনি প্রয়াত হন, তিনি মাত্রই মুক্তিযুদ্ধে প্রবাস থেকে আরো প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় হতে চাচ্ছিলেন। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় তিনি দেখে যেতে পারেননি এবং ফলে বৈধ জাতীয়তা তিনি নিতে পারেননি। তাঁর স্ত্রী আন-মারি ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। 

মরণোত্তর পুরস্কারসমূহ

বাংলাদেশের সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর বইগুলো সেই ১৯৮২ সাল থেকেই টেক্সটবুক কারিকুলাম বা পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কাজগুলো বাংলাদেশে বহুলভাবে পঠিত এবং জনপ্রিয়। এমনকি প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভেতরেও তাঁর লেখা পঠিত হয়। বাংলা সাহিত্যে তাঁকে অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল আধুনিকধারার লেখক হিসেবে গন্য করা হয়।

২০১৪ সালে দেশের বাইরে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কাটানো জীবনের প্রায় অর্ধেক সময়ের কথা মনে করে বাংলা একাডেমি ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্যপুরস্কার’ প্রবর্তন করে। বাংলাদেশের বাইরে বসবাসরত যে সকল বাঙালি-বাংলাদেশি লেখক বাংলা ভাষা চর্চা করছেন তাদের ভেতর থেকে নির্বাচিত কাউকে প্রতিবছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়।




মন্তব্য

BLOGGER: 1
  1. খুব সুন্দর হইছে কবি পরিচিতি টা,কোন স্টুডেন্ট একবার মনোযোগসহ কারে পড়লে ভালোভাবে মনে রাখতে পারবে।

    উত্তরমুছুন
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,303,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,15,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,12,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,14,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,151,প্রিন্ট সংখ্যা,4,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভাষা-সিরিজ,5,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: সংক্ষিপ্ত জীবনী : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
সংক্ষিপ্ত জীবনী : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
জন্মশতবর্ষে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। জীবনী
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgCXVAoLCZJ9Mn-jeee6-OFAGHcb1S2smH6gyMtye_dV2Ma88evadXLqnT_N19fdT12bn6zRxQlNQY-RataIKzsrQJVuGh4Hny1QR2W_uC5X5_tdvtUgAzet8i6grT17qrOmzsmAiK3Ch-O4dS0NZr-UJgVJ58dUC2FJ4r4T4r1MphKGPc94LfLcVdy/s320/syed-waliullah(bindu).png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgCXVAoLCZJ9Mn-jeee6-OFAGHcb1S2smH6gyMtye_dV2Ma88evadXLqnT_N19fdT12bn6zRxQlNQY-RataIKzsrQJVuGh4Hny1QR2W_uC5X5_tdvtUgAzet8i6grT17qrOmzsmAiK3Ch-O4dS0NZr-UJgVJ58dUC2FJ4r4T4r1MphKGPc94LfLcVdy/s72-c/syed-waliullah(bindu).png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2023/01/syed-waliullah-biography.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2023/01/syed-waliullah-biography.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy