শীতের সূত্রে
শীত এলে, না গেলেও
যাওয়ার কথা ভাবা যায়
সমুদ্রে, সাজেকে,
গাজীপুরের বনে কিংবা
ইদানীংকার পঞ্চগড়ে, কাজী চা-বাগানে।
আর ব্যাটে-বলে
এসব কোনোটা না মিললেও
রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে তো থাকছেই
নিজস্ব একটা শীতকালীন জাহাঙ্গীরনগর।
ভাস্করের কবিতাতেও দেয়া যায় একচক্কর;
যদিও শীতের কবিতা লিখে লাভ নাই ভাই
শীত তো ভাস্করেরই সুপর্ণা-সম্পত্তি।
যাইহোক, আমাদের বসে বসে দেখা ভালো
ফেব্রুয়ারি আসতে আসতে ফুরিয়ে আসা
ক্রিসমাস, কুয়াশা, অতিব্যবহৃত কম্বলের কান্না।
চিরকাল নরম মাংস, গরম ভাত
আর শক্ত দেয়ালের পক্ষে থেকে
ঋতুনিরপেক্ষ আমরাও তো চেয়েই থাকি
সবসময় গায়ে এসে লাগুক
সহনীয় শীতের কোমল-হাল্কা হাওয়া।
ধমক
ছোটবেলায়
আব্বার ধমককে কী ভীষণ
ভয় করতাম!
এখন কেউ সামান্য একটু
ধমকের স্বরে কথা বললেও
কান্নাকাতর সন্তানের বলতে ইচ্ছা হয়,
আমার আব্বা বেঁচে থাকলে
আপনি পারতেন না এভাবে বলতে।
পথচলতি
পথ আছে খোলা
ঘোলা আর রঙিলা
অগস্ত্যের গন্তব্যে
বেলা থাকতে
পৌঁছুনোর আগে
দেখা যাবে
সড়ক-বিভাজক।
বিভাজকে বৃক্ষ;
(অথচ শুনেছি, বৃক্ষ নাকি সংযোগের সবুজ সর্বনাম)
তুমি হয়তো উঁচু দেবদারু
নয়তো নিচু লেমন গ্রাস।
অন্ধকার বিভাজিকায়
ধূলির দিপালি ঠেলে
মওতের মেট্রোপলিটনে
যে আমি তোমার কোল ভেবে
ঘামার্ত গণপরিবহনে
ঘুমাতে ঘুমাতে,
মলিন মহাশূন্যে
পড়ে যেতে যেতে
অলীক বসন্তবনে
পাতা ঝরার রূপকথা মনে রেখে
রাতকাবারি নির্ঘুম নাগরিকের
লালা ঝরাতে ঝরাতে
কন্ডাকটরের ডাক শুনে
সিপিং লেমন থেকে
ঝাঁপ দিয়ে নামি
মিষ্টি ময়লা জাগ্রত এই
মহানগরীর বুকে।
ঝিনেদায় পূর্ণিমা
আগুনের আস্তানা থেকে
পাগলা পানির ধারা
যেখানে যাওয়ার থাকে
সাধুর হাট কিংবা
ব্যাপারির বাজার;
সেখানে দাঁড়িয়ে
তোমার মুখে
ঝিনাইদহকে আদর করে
ডাকতে শুনলাম ঝিনেদা।
কখনও বর্ণের বিলুপ্তিও
বাড়াতে পারে তো
বর্ণমালার বৈভব।
যেমন নিচে নবগঙ্গা
ওপরে প্রাচীন আকাশ,
পুরনো চোখের উপকূলে
আছড়ে পড়া
কী নতুন চাঁদ!
জার্নি বাই নাইট
যেকোনো প্রলম্বিত রাতের যাত্রাই
গন্তব্যের আগে ভোর নামিয়ে ফেলে;
বাসের জানালায় জমাট ভৈঁরো’তে
কান পেতে ঘ্রাণ পাই।
তীব্রতুমুল গরমেও লোকালিটি
ঘুমের বৃষ্টিতে ভিজে হায়
যাত্রীর কাজ শুধু
নিদ্রানগরে কোনোমতে
জেগে থাকা বাঁচিয়ে রাখা।
অবশ্য জাগরণের অহেতু গানে
কী আর হয়?
চোরচোট্টারা সব সুর লুটে নিয়ে
ধুমধারাক্কা ড্যান্স দ্যায়!
যাত্রাবিরতিতে কেউ কেউ বাসেই ঘুমায়
অনেকে চোখের নবজাতক কেতুর মুছে
বিড়ি-সিগ্রেট টানে, চা-কফি খায়।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ০১টা গাড়ি
ক্রমশ রাজশাহী ঢুকে যায়।
আম-আপেলের গল্প
ভরা আমের মওসুমেও
কারও মনে হতে পারে
আপেলের কথা;
অন্যরকম মিষ্টি মহাদেশ
গার্ডেন,
তুমি শত ফুল না ফোটাও
০১মাত্র জিভেই বাঁচিয়ে রাখো
স্বাদের তারতম্য।
বিড়ালেও ভেদ আছে;
কোনোটা বঙ্কিমের
কোনোটায় ছাপ মারা
শ্রোয়েডিঙ্গার।
গার্লসের গা থেকে
যে মিউ মিউ ঝরে পড়ে,
তাকে বৃষ্টি ভাবলে
রাগ করবে নাকি
মল্লারের মালকিন?
প্রেতপ্রান্তরে বসে সুখী দম্পতিদের
আলাপের বিষয় আর কী হতে পারে
পরিদের পরকিয়া ছাড়া!
আসলি মোকামে অগ্রিম সব
সুবাস সাপ্লাই করে
যারা অপেক্ষায় থাকে
ফুটবে নিশ্চয়
অলীকের এক গায়েবি গোলাপ;
অবশ্যম্ভাবী তারা স্বর্গের সেন্ট্রি।
এই ঝড়বাদলার দিনে
বৃষ্টির বেদিতে দাঁড়ায়ে-বসে
বুঝতে পারি
আষাঢ়িয়া পানির ফোঁটা পেলে
শুরু হয়
আমার মতো সুবোধ শালাদের
মগজের মাস্তানি।
আম আর আপেলের স্বাদ ভুলে তখন
‘বেঁচে আছি’ বলে বোধ হওয়া আমার
প্রয়াত রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
হয়তো এইরকম
গরমে চর্বিবহুল গলে যায় যে গান
সুরের নালায় দীর্ঘজীবনের বাঁকগুলো
লিরিক্যাল বীর্যবান তোমার মক্কেল
তার তানহা ধরে রাখবে ওটিটির আত্মা
রক্তপাত ছাড়া এই তথৈবচ প্রেম
বৃষ্টি এলে যে ‘বৃষ্টি’ নামের হারানোদের মনেই পড়বে
এমন না যেহেতু,
চিকা-মারা দেয়ালের গা-গতর থেকে উদ্ধার করা
একাদশ পার্টি কংগ্রেস
বিপ্লব ভিজে যাচ্ছে আপাতত
যারেই পুড়তে দ্যাখো
শেষপর্যন্ত জ্বলে শুধু আগুনের অন্তর
‘১২ই মে’ শুনে
কাকে মার্ক দেবে বেশি
পিটার স্টারস্টেড নাকি অঞ্জন
যাকে তুমি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছ এ শহরে
সে আসলে তোমার কবর।
মিউজিক মাস্টার
যেকোনো হারানো নাম
একপ্রকার গান!
তাই তো আশায় থাকি
এখনও
কুমুর শরীরেমনে
যত মিউজিকের ক্লাস চলে;
তার ফেলে দেয়া বাজনাগুলো
জোড়া দিলে যা থাকে
বেসুরো হলেও
কিংবা
বেসুরো বলেই
তা তো ভুলে যাওয়া আমারই নাম
তোমার তীব্রতম গান।
সামিরার সহিত সন্ধ্যা
সামিরার সহিত
দেখা হয় নাই কোনোদিন
তবু ইরানি সামিরারে গভীর চিনি।
সামিরার সিনামা দেখবার পর
আপেলের বোবা-কালা বডিতে
কামড় দিলে খালি মনে হয়
চিবাইয়া খাইতেছি
দুনিয়ার তাবত মূক-বধির বিদ্যালয়।
সামিরা দেখায়,
ব্ল্যাকবোর্ডের শরীর বাইয়া ঝইরা পড়া
যাবতীয় রুপালি ময়লা;
যাহা কবুল তাহাই তালাক
বাঁইচা থাকবার বর্ডারে
পরিদের ডাস্টারেও না-মোছা
মাথাপিছু মৃত্যুর হিসাব!
বিকাল ৫টার পায়ে ২টা পা গছাইয়া
বাকি ২টা নিজের পা লইয়া
১টা ঘোড়া পোকায় খাওয়া ১০ দিগন্তে
কেমনে দেয় মানুষের মতো হিংস্র উড়াল,
সে-ই জাদু ডানা-ছাঁটা আমাদের
পঙ্গু চোখেদের দেখায় সামিরা,
মাখমালবাফের মাইয়া।
ভাদুর মাইসা প্রেম
ভাদুর মাইসা সকালে
মনে পড়ে সব
বিগত ভাদ্ররে।
তোমারও কি মনে পড়ে
নাকি ঘামের গোডাউন ০১টা বডি
স্মৃতিতে ভাসে শুধু?
স্মৃতি মানে ফুল না
ফুল তো ঝরে পড়ে
ঘামই মেমোরি মূলত।
ঝরে গিয়ে ঘাম আবার
ফুটে থাকে
আমারই বডিতে
তোমার ফুল হয়ে।
আমাদের কাঁচা-কাঁচা ব্যর্থতার
কত দূরে
কয়েকটা তাল পাকে?
এইবার পিঠা খাবে
নাকি
মুড়ি দিয়ে রস খাবে;
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে
আমেস টুটুওয়ালা
কবে যে ঘুমায় গেছে
তাড়িখোড় টাইমেরও
১০টা-১২টা বাজায়ে!
তোমার নন্দনের বনে
এভাবেই আমারে পাবে
এমন অনাহূত ভাদ্রে
কুত্তা-মরা জিন্দা সোহাগে।
পাণ্ডুলিপি : ভুলে যাওয়া স্কার্টের সিঁড়ি
লেখক : পিয়াস মজিদ
প্রকাশক : ঐতিহ্য
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৭২
মূল্য : ১৮০
মন্তব্য