বাংলা সাহিত্যে আজঅব্দি যেসব মাজারকেন্দ্রিক উপন্যাস রচিত হয়েছে তন্মধ্যে পাঠপ্রিয়তা, উপযোগিতা, সমাজবাস্তবতা, নান্দনিকতা ও উৎকর্ষতায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ অন্যসব উপাখ্যানকে অতিক্রমনের সক্ষমতা দেখিয়েছে। উপন্যাসটি বহুল পঠিত; পঠন-পাঠনের উপযোগিতার নিরিখে বাংলাদেশ সরকার গ্রন্থটিতে পাঠ্যতালিকায় অর্ন্তভূক্ত করেছে। ব্যতিক্রমী ও নেতিবাচক মজিদ চরিত্রের উত্থান, বিকাশ ও পতনধারা নায়কোচিত; একটি মাজারকে কেন্দ্র করে কাহিনী পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে। নোয়াখালী অঞ্চলের ছিন্নমুল মানুষ সে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে পথে নামে। পথজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে গারো পাহাড়ের পাদদেশে আস্তানা গাড়ে। কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে না পারায় ভিন্ন ঠিকানায় পাড়ি জমায়। ক্ষমতা, কপটতা, স্বার্থপরতা, মিথ্যাচার, ভন্ডামি মজিদ চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ঠ। বহুরুপি মানুষটি স্বার্থসিদ্ধির জন্য ক্ষণে-ক্ষণে রুপ বদলিয়েছে। ফুল-ফসলে পরিপূর্ণ মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশের পূর্বে তার দেখা মেলে মতিগঞ্জের সড়কের ওপরে। মানুষকে ধোকা দিতে লোকটি নাটকীয়তার আশ্রয় নেয়। আকাশের পানে দু’হাত উচিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে মোনাজাত করে। চোখের জলে বুক ভাসিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে এটাই বোঝাতে চায়, সে ধর্মভীরু এবঙ আল্লাওয়ালা। গ্রামের অদূরে অবস্থিত বাঁশঝাড়ের মধ্যে পরিত্যক্ত একটি কবরকে জনৈক মোদাচ্ছের পীরের মাজার হিসেবে আখ্যা দিলে তার উদ্দেশ্য পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্য করে মজিদ র্ভৎসনা করে- ‘আপনারা জাহেল, বে এলেম, আনকাড়াহ। মোদাচ্ছের পীরের মাজারকে আপনারা এমন করি ফেলি রাখছেন।’
এমন বক্তব্যের পরেও তার উপর রাগ করে না; গ্রামের সহজ-সরল মানুষ মজিদকে অবিশ^াস করতে পারে না। বরঙ একথা বিশ্বাস করে যে- গারো পাহাড়ের পাদদেশে লোকটি ভালোই ছিল। মোদাচ্ছের পীর যদি স্বপ্নের মাধ্যমে নির্দেশ না দিত তবে আব্দুল মজিদ গারো পাহাড়ের ওই সুখস্বর্গ ফেলে কিছুতেই মহব্বতনগরে আসতো না। অথচ তার আগমনী সম্পর্কে লেখকের জবানীতে জানতে পারি- ‘এরা তাই দেশ ত্যাগ করে। ত্যাগ করে সদলবলে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। নলি বানিয়ে জাহাজের খালাসি হয়ে ভেসে যায়, কারখানার শ্রমিক হয়, বাসাবাড়ির চাকর, দফতরির এটকিনি, ছাপাখানার মেশিনম্যান, টেনারিতে চামড়ার লোক। কেউ মসজিদের ইমাম হয়, কেউ মোয়াজ্জিন।’ আত্মীয়-স্বজন ফেলে এই নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ আর যা’ই হোক ধর্মপ্রচার হতে পারে না। শুধু ধর্ম নয় ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, বেদ-পূরাণ বা অন্য যে কোন জ্ঞাণ অন্যের মাঝে ছড়াতে চাওয়ার পুর্বশর্ত স্বাবলম্বীতা; অভাবের সাথে যুদ্ধ করে কেউ যদি স্বভাব হারিয়ে ফেলে তবে তার নিজস্বতা বলে কিছু রইলো কী! উপন্যাসে বর্ণিত এলাকার মানুষদের বেরিয়ে পড়ার মুল কারণ অভাব। মজিদ নিজেও অভাবের তাড়নায় বর্হিগামী হয়েছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে দুটি পক্ষ পরিলক্ষিত হয়- দায়মুক্তি কিংবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক গ্রামবাসী মজিদের অনুগামী হলেও পাঠককূল প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। ঘটনার ঘনঘটায় পাঠকের ভাবাবেগ আস্তে-ধীরে তাহেরের বাপ, আক্কাছ আলী, জমিলা এবঙ রহিমার মধ্যে অনূদিত হয়। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে মজিদ চরিত্রের মধ্যে নিম্নোক্ত পর্যায় লক্ষ্য করা যায়- অস্থিত্ববাদী, ক্ষমতালিপ্সা ও ভোগবাদিতা। সর্বাবস্থায় তার ক্ষমতার উৎস কেবলমাত্র ঝালরওয়ালা লাল সালুকাপড়ে আবৃত মাছের পিঠের আকৃতিবিশিষ্ঠ ওই বিশেষ মাজার। মাজারকেন্দ্রিক ঘনটাপ্রবাহ আপাত সরলরৈখিকভাবে সম্মুখে এগিয়েছে। জীবন, জন্ম ও নিয়তির প্রবঞ্চনা প্রাসঙ্গিক হিসেবে উল্লেখ হয়েছে। জন্মস্থানের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক মজিদের ক্ষেত্রে তা বস্তুত জন্মসূত্রে বিচ্ছিন্ন। এই বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বয়ান- ‘শস্যহীন জনবহুল এ-অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেরিয়ে পড়বার ব্যাকুলতা ধোঁয়াটে আকাশকে পর্যন্ত যেন সদাসন্ত্রস্ত করে রাখে। ঘরে কিছু নেই। ভাগাভাগি, লুটালুটি, আর স্থানবিশেষে খুনাখুনি করে সর্বপ্রচষ্টার শেষ। দৃষ্টি বাইরের পানে, মস্ত নদীটির ওপারে, জেলার বাইরে- প্রদেশেরও!’
তাইতো প্রচ্ছন্ন হতাশায় অস্তিত্ব সংকট দূর করা কিংবা ভিন্ন পরিসরে থিতু হওয়ার অভিপ্রায়ে তারা অজানার পথে পাড়ি জমায়। গ্রামবাসীর অশিক্ষা, ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি কিংবা গভীর ধর্মীয় অনুভূতির কারণে আব্দুল মজিদ মাজারকেন্দ্রিক আশ্রয় খুঁজে পায়। মাজারকে কেন্দ্র করেই তার জীবনে অর্থযোগ। অর্থের অবাধ প্রবাহ তাকে ক্ষমতালিপ্সু করে তোলে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে মজিদ কূটকৌশলী; মাতব্বর খালেক ব্যাপারীর সাথে গাটবদ্ধ হয়ে জিঘাংসা চরিতার্থ করে সে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক আক্কাছ আলীর স্কুল প্রতিষ্ঠার শুভ সম্ভাবনা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়। খালেক ব্যাপরীর নিসন্তান স্ত্রী আমেনা সন্তান কামনায় মজিদের প্রতিদ্বন্দী আওয়ালপরে আগত পীরের প্রতি আস্থাশীল হলে তাকেও শাস্তি দিতে পিছপা হয় না। তালাকের মাধ্যমে দীর্ঘ তেরো বছরের বৈবাহিক জীবনের নিদারুণ সমাপ্তি ঘটে। নিজের কন্যার গায়ে হাত তোলার অপরাধে তাহের-কাদেরর বৃদ্ধ বাপকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। বিষয়টি লজ্জার। লজ্জা-অপমান সাইতে না পেলে লোকটি শেষপর্যন্ত নিরুদ্দেশ হয়। লালসালু উপন্যাসে মজিদ ও খালেক ব্যাপারীর লক্ষ্য অভিন্ন হলেও ক্ষমতার উৎস ভিন্ন ভিন্ন। উৎস সম্পর্কে লেখকের অভিমত- ‘একজনের আছে মাজার, আরেক জনের জমি-জোতের প্রতিপত্তি। সজ্ঞানে না জানলেও তারা একাট্টা, পথ তাদের এক।’ মজিদ চরিত্রের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ঠ ভোগবাদিতা। আপাত দৃষ্টিতে ভোগের প্রধান উপকরণ নারী হলেও পশ্চাতে রয়েছে অর্থ এবং ক্ষমতার প্রভাব। মাজারের মাধ্যমে অর্থ এবঙ ক্ষমতা অর্জিত হলে মজিদ নারীর প্রতি আসক্ত হয়। ভোগের পণ্য হিসেবে প্রথমে রহিমা ও পরবর্তীতে জমিলাকে স্ত্রী রুপে গ্রহণ করে। সে পরনারীতেও আসক্ত; আসক্তির ইঙ্গিত সম্পর্কে লেখক উল্লেখ করেছেন- ‘শেষ রাতের দিকে মজিদ ঘর থেকে একবার বেরিয়ে আসে। খড়ের আগুনের উজ্জ্বল আলো লেপাজোকা সাদা উঠানটায় ঈষৎ লালচে হয়ে প্রতিফলিত হয়ে ঝকঝক করে। সে-ঈষৎ লালচে উঠানের পশ্চাতে দেখে হাসুনীর মাকে, তার পরনে বেগুনি শাড়িটা। যে-আলো সাদা মসৃণ উঠানটাকে শুভভ্রতায় উজ্জ্বল করে তুলেছে, সে-আলোই তেমনি তার উন্মুক্ত গলা-কাঁধের খানিকটা অংশ আর বাহু উজ্জ্বল করে তুলেছে। দেখে মজিদের চোখ এখানে অন্ধকারে চকচক করে।’
জমিলা চরিত্র সংক্ষিপ্ত হলেও প্রচন্ড প্রভাববিস্তারি। মেয়েটি অবাধ্য; মজিদের সমস্ত বিধি-বিধান তুচ্ছ জ্ঞাণ করে। মাজারের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। শায়েস্তা করা কিংবা অনুগত করতে ঝড়বৃষ্টির রাতে জমিলাকে মাজারের পাশে খুাঁটতে বেঁধে রাখে। কিন্তু সেখানেও দ্রোহের আগুন প্রজ¦লিত হয়। মাজারের উপর আলগোছে পা তুলে দেয় সে। শুধু কী তাই; যে মজিদকে দেখলে সকলেই সমীহ করে, ভয় পায়, সে’ই মজিদের মুখে থুঁতু ছিটাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। যে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে লেখকের উপন্যাসযাত্রা ওই যাত্রাপথের বাস্তব চিত্রায়ণ দৃশ্যমান করতে জমিলার ভূমিকা সিম্বোলিক। কেবল মজিদ নয় মেয়েটি মাজারেরও প্রবল প্রতিপক্ষ। একজন মাজারপন্থীর দৃষ্টিতে লালসালু উপন্যাসে বর্ণিত মাজারের স্বরুপকথা উন্মোচন করার পূর্বে এ-সম্পর্কিত শব্দসমূহের শাব্দিক অর্থ অবগত হওয়া জরুরি। ‘মাজার’ আরবী শব্দ যার ধাতুগত অর্থ জিয়ারত বা দর্শনের স্থান। ফার্সিতে বলা হয় ‘দরগাহ’। কোন মুসলমানের দাফনস্থলকে বলা হয় ‘কবর’। ইসলামী শরিয়তে কবরাস্থানে গমন করা বা জিয়ারত করার বৈধ্যতা রয়েছে। ইসলামের সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সা.) উহুদযুদ্ধে শাহাদাতপ্রাপ্ত সাহাবীদের কবরস্থান মদিনার জান্নাতুল বাকীতে গমন করতেন এবঙ মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে দোয়া করতেন। এ-প্রেক্ষিতে আমরা অনুধাবন করতে পারি কবর এবঙ মাজার ভাবার্থে খুব কাছাকাছি দুটি শব্দ। তবে ওলী-বুযুর্গদের কবরের জন্য কোরআন-হাদিসের কোথাও মাজার শব্দ ব্যাবহৃত হয়নি। এমনকি হাদিসে রাসুল (সা.)-এর কবরকেও কবর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে- ‘ইহুদী ও নাসারাদের প্রতি লা’নত, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে সিজদার স্থান বানিয়েছে।’ (সহীহ বুখারি, ১/১৮৬) অন্য এক হাদীসে তিনি নিজের সম্পর্কে জানিয়েছেন- ‘আমার কবরকে তোমরা উৎসবের স্থান বানিও না।’ (সুনানে আবু দাউদ, ১/২৭৯) নবীজির কবরকে আমরা রওজা মুবারক অভিধায় ভূষিত করি। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, মানুষের কবরটি হয়তো জান্নতের একটি বাগান হবে অথবা জাহান্নামের একটি গর্ত হবে। বাগানের আরবী শব্দ ‘রওজা’। অতএব আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সাহাবীরা যেহেতু জান্নাতি, তদ্রুপ নেককার মুমিনরাও ইনশাল্লাহ জান্নাতে যাবেন, তাই তাদের কবরকে সম্মানার্থে ‘রওজা’ নামে নামাঙ্কিত করা যায়। অবশ্য এ-কথা স্পষ্ট করা জরুরি যে ইসলামী শরিয়াতে ‘মাজারপন্থী’ বলে সুনিদৃষ্ট কোন দল, গোত্র বা শ্রেণি নেই। বরঙ যা আছে তা হলো- এমন কতিপয় দল আছে যারা মাজারকে ধর্মের বিরোধার্তক জ্ঞাণ করে। পক্ষান্তরে এমন কতিপয় দল বা গোত্র আছে যারা ধর্মের সুনিদিৃষ্ট বিধিবিধান পালনের পাশাপাশি কবর, মাজার, জিয়ারত, দরগাহ, খানকাহ, মিলাদ, জিকির-আজকার তথা ওলী-আওলীয়ার কারামত ও শক্তিমত্তায় শ্রদ্ধাশীল। এমনতর বিশ্বাসগোত্রীয় মানুষ আমাদের সমাজব্যবস্থায় ‘সুফি’ হিসেবে পরিগণিত। ইতিহাসবেত্তা কার্ল এর্নস্টের মতে সুফিবাদ শব্দটি কোন ইসলামী গ্রন্থ হতে আসেনি, শব্দটির উৎপত্তির সাথে প্রচ্যের ভাষা বিষয়ক বৃটিশ গবেষকদের নাম জড়িত। ইসলামিক আধ্যাতিকতায় এরা যে মনোমুগ্ধকর বিষয় উপলব্ধি করেন এবঙ তৎকালীন যুক্তরাজ্যে ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা বিরাজ করছিল তার মধ্যে কৃত্রিম পার্থক্য সৃষ্টি করতে সুফিবাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। সুফিগণ বিশ্বাস করে, প্রকৃত সুফি-শায়খের নিকট বায়াত বা শফত নেওয়ার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট আনুগত্যের শফত করে; প্রার্থী ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে সুফিগণ আল্লাহ সম্পর্কে জানে, আল্লাহকে বোঝে এবঙ আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করে। সাহাবাদের মধ্যে হযরত আলী (রা.) প্রথম ব্যক্তি যিনি সরাসরি মহানবী (সা.)-এর নিকট আনুগত্যের শফত পাঠ করেন এবঙ শফতকে বজায় রাখেন যাতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে জ্ঞাণার্জন ও সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়। একজন প্রকৃত সুফি বিশ্বাস করেন মাজারওয়ালাকে প্রভু মেনে সিজদা করা শিরক আর ওলী হিসেবে সম্মান করে সিজদা করা হারাম। আলোচ্য প্রবন্ধে মাজারপন্থী বলতে আমরা একজন প্রকৃত সুফিকে বুঝবো।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর 'লালসালু' উপন্যাসের সূচনায় জরাজীর্ণ একটি কবরকে মোদাচ্ছের পীরের মাজার হিসেবে উল্লেখ করার মাধ্যমে পাঠকের সম্মুখে মজিদ চরিত্রের শঠতা, কপটতা, ভন্ডামি, মিথ্যাচার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারো বুঝতে বাকী থাকে না যে লোকটি মিথ্যাকে আশ্রয় করে কিছু ঘটাতে চলেছে। ধর্মাচার নয় মাজারটি তার স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। মাজার ও মজিদ যদি আপাত সমার্থক হতো নিশ্চিতভাবে একজন মাজারপন্থ কখনোই মজিদের বিরুদ্ধাচারণ করতো না; বরঙ জোরালো সমর্থন থাকতো। উপন্যাসে মাজার আছে বটে কিন্তু মাজারকেন্দ্রিক রীতিনীতি খুব বেশি বর্ণিত হয়নি। বিশেষ-বিশেষ দিনে যে-সব অনুষ্ঠানের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে সে-সব অনুষ্ঠান আগরবাতি ধরানো, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, মিলাদ ও তবারক বিতরনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ধর্মীয় ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে জিকির-আজকার, নামায-কালাম, মিলাদ কিংবা তবারক বিতরন দোষণীয় নয়। পক্ষান্তরে প্রতিবাদী জমিলাকে মাজারের পাশে খুঁটিতে বেঁধে রাখা, আক্কাছের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ধূলিস্মাৎ করা, তাহের-কাদেরের বাপ ও আমেনার প্রতি অত্যাচার করা, আওয়ালপুর এবঙ মহব্বতনগরের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘাতের সুত্রপাত কোনক্রমেই মাজারকেন্দ্রিক ধর্মচর্চার বিধিবিধানের আওতায় পড়ে না। মজিদ যা করেছে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করেছে। আর কেউ না জানলেও মজিদ ঠিকই জানে অসুস্থ শরীরে মাজারের চারপাশে চক্কর দেওয়ার মধ্যে সন্তানজন্মের কোন যোগসূত্র নেই। কোনকিছু দেওয়ার মালিক কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তা। একজন পীর, ওলী-আওলীয়া যা পারেন তা ফরিয়াদ, ভক্তের মনের আশার পুরণের নিমিত্তে মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে কাকুতি-মিনতি করতে। ওই মিনতি রাখা না-রাখার এখতিয়ার কেবলমাত্র আল্লাহর।
আলোচ্য উপন্যাসে মাজার বিষয়ক লেখকের অজ্ঞতা এবঙ অসাবধানতা দৃষ্টিকটু। আমি বিশ্বাস করি, জনৈক মোদাচ্ছের পীরের নামটি তিনি সচেতনভাবে ঐশীগ্রস্থ কোরানুলকারীমের ৭৪ নম্বর সূরা ‘আল মুদাচ্ছের’ হতে চয়ন করা। মুজিযা এবঙ কারামতের মধ্যকার পার্থক্য বিষয়ে সম্ভবত তিনি পরিজ্ঞাত নন। শাব্দিকভাবে উভয়ের অর্থ অলৌকিক ঘটনা বা ক্ষমতা হলেও মুজিযা হয় নবী-রাসুলদের তরফে এবঙ কারামত প্রদর্শন করেন ওলী-আওলীয়াগণ। সূর্যকে আটকে রাখার বিষয়ে আওয়ালপুরে আগত পীরের যে কারামতের কথা বর্ননা করা হয়েছে তা আসলে মুজিযা; বনী ইস্রাইল বংশীয় নবী হযরত ইউশা বিন নুন (আ.) যুদ্ধের ময়দানে উপরোক্ত মুজিযা প্রদর্শন করেছিলেন। সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে- হযরত ইউশা বিন নুন (আ.) একবার যুদ্ধে গেলেন। তিনি অনুধাবন করলেন যে, শত্রুপক্ষের সাথে লড়াই আরম্ভ করলে আসরের নামায কাযা হয়ে যাবে। এ-কারণে তিনি সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন- ‘নিশ্চয় তুমি আদেশপ্রাপ্ত এবঙ আমিও আদেশপ্রাপ্ত। হে আল্লাহ, সূর্যকে আমাদের উপর থামিয়ে দিন। ফলে তাকে থামিয়ে রাখা হলো যতক্ষণ না আল্লাহ ইউশাকে বিজয় দান করলেন।’ (সহীহ বুখারি, হাদিস : ৩১২৪) অন্য বর্ননায় এসেছে- ‘মানুষের উপর সূর্যকে কখনো স্থির রাখা হয়নি, তবে ইউশা (আ.)-এর ক্ষেত্রে রাখা হয়; যে রাতে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে সফর করেন।’ (ইবনুল কায়িমি জাওজি, ফাদানিলুল কুস, পৃষ্ঠা: ১১৩) দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্বেও একজন নবীর ঐতিহাসিক মুজিযা বিতর্কিত পীরের জীবনে জুড়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিরুপণের দায়ভার আমার না, পাঠকের। পাঠকের দৃষ্টিতে লালসালু উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে অনন্য সংযোজন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ একদিকে যেমন ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, ভন্ডামির চিত্র তুলে ধরেছেন অন্যদিকে অত্র জনপদে মাজারপন্থার উৎপত্তিসূত্র চিহ্নিত করেছেন। জনৈক মোদাচ্ছের পীরের জরাজীর্ণ কবর আমাদের এ-কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, তৎকালীন পুর্ব-পাকিস্থান তথা অধুনা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য ওলী-আওলীয়ার মাজার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে- যাঁরা ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে ইরান-তুরান আরব-ইয়ামান হতে আগমন করেছিলেন। শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে মাজারকেন্দ্রিক ধর্মচর্চার সূদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বিখ্যাত সুফি-সাধক চিশতিয়া তরিকার প্রচারক হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (র.)-এর মাধ্যমে হিন্দুস্থানের মাটিতে ইসলামের বীজ বপন হয়। সিলেটের পূণ্যভূমিতে শুয়ে আছেন কুতুবে-আফতাব হযরত শাহজালাল ইয়েমেনী (র.) এবঙ হযরত শাহ পরাণ (র.) রাজশাহীতে হযরত শাহ মাখদুম রুপোস (র.) চট্টগ্রামে হযরত আমানত শাহ (র.) ঢাকায় হযরত শাহ আলী (র.) কুষ্টিয়ায় হযরত করম আলী শাহ (র.) ও হযরত আদাড়ি মিঞা চৌধুরি (র.) বগুড়ায় হযরত শাহ সুলতান মাহী সওয়ার বলখী (র.) নেত্রকোনায় হযরত শাহ সুলতান রুমী (র.) মুনিন্সগঞ্জে হযরত বাবা আদম শহীদ (র.) নোয়াখালীতে হযরত মিরান শাহ (র.) খুলনায় হযরত খানজাহান আলী (র.) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। উপরোক্ত ব্যক্তিগণ ওলীস্থানীয়। নিশ্চয় তারা আমাদের নিকট আল্লাহর মুমিন বান্দা হিসেবে পরিগণিত। ওলী-আওলীয়া সম্পর্কে আল্ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের না কোন ভয়-ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বীত হবে।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত : ৬২) অন্যত্র বর্ননা করা হয়েছে- ‘যারা আল্লাহর মহব্বতে জীবনকে উৎসর্গ করেছে, তাদেরকে মৃত মনে করো না, বরঙ তারা জীবিত, স্বীয় রবের নৈকট্যপ্রাপ্ত, স্বীয় রবের পক্ষ থেকে রিযিকপ্রাপ্ত।’ (সূরা : ইমরান, আয়াত : ১৬৯) এক হাদীসে ওলীর পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে- সাইদ ইবনে যুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর ওলী কারা? রাসুল (সা.) বললেন, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।’ (ইবনে মাজাহ ও ইবনে কাসির) এ-পর্যায়ে মাজারপন্থী বা সুফির মনের প্রশ্ন- আল্লাহ যাদেরকে সম্মানীত করেছেন, যাদের সান্নিধ্যে মনের সৃষ্টিকর্তার স্মরণ আসে তাদের কবর বা মাজার জিয়ারত করতে বাঁধা কোথায়! সালাম দেওয়াই বা ধর্মের পরিপন্থি হবে কেনো! সালাম প্রদান বিষয়ক এক হাদিসে উল্লেখ আছে- ‘হে কবরবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবঙ আমরা পরে আসছি।’ (সুনানে তিরমিজি; হাদিস : ১০৫৩) যুক্তিবিদ্যায় দার্শনিকরা যাকে কার্যকারণ সূত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন তা আরবীয় ‘উসিলা’ শব্দের সমার্থক অনুমেয়। উসিলা ব্যতিত জগতে কোনকিছুই সংঘটিত হয় না। ইসলাম ধর্মমতে বিশ^াসীরা মনে করেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি না করলে মহান সৃষ্টিকর্তা কোনকিছুই সৃষ্টি করতেন না। অর্থাৎ জগত সৃষ্টির উসিলা মহানবী (সা.)। তদ্রুপ হযরত আদম (আ.)-এর পৃথিবীতে আগমনের উসিলা গন্ধম ফল। আমরা যে পৃথিবীতে আর্বিভূত হয়েছি সেটাও মহান ¯্রষ্টার অসীম কৃপা এবঙ পিতামাতা উসিলা। উসিলা সম্পর্কিত একটি হাদিস বয়ান করি- ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা.) যখন অনাবৃষ্টির কবলে পতিত হতেন তখন হযরত আব্বাস (রা.)-কে দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু’আ করাতেন; অতপর বলতেন,‘হে আল্লাহ আমরা যখন রাসুল (সা.)-এর উসিলায় আপনার নিকট বৃষ্টির জন্য ফরিয়াদ করতাম, আপনি আমাদের দয়া করে বৃষ্টি দান করতেন। আমরা এখন রাসুল (সা.)-এর চাচার উসিলায় আপনার দরবারে বৃষ্টির জন্য ফরিয়াদ করছি, অতএব আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, তখন বৃষ্টিপাত হতো।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১০১০) সৃষ্টিকর্তা দয়াময়। পরম দয়ালু। নামহীন, গোত্রহীন, জনৈক মোদাচ্ছের পীর বা ভন্ড মজিদের ফরিয়াদ প্রত্যাখাত হলেও একজন আল্লাওয়ালার মিনতি কবুল করা আল্লাহর জন্য কঠিন কিছু নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় লালসালু উপন্যাসে প্রকৃত সত্যের কোনো উপস্থিতি নেই। ভন্ড পীর মজিদের বীপরীতে প্রকৃত শক্তির প্রকাশ নেই; যা আছে তাও অকিঞ্চিৎ। উপন্যাসে আওয়ালপুরে আগত পীর এবঙ মজিদের মধ্যে উদ্দেশ্যগত তেমন বৈপরিত্য নেই; উভয় চরিত্রই খন্ডিত- বিস্তিৃত পরিসরে তাদের নীরিক্ষণ করার প্রচেষ্টা নেই। পাঠক হিসেবেও আমরা গড়পড়তা। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মজিদ চরিত্রের মধ্যে যে মনস্তাত্বিক দ্বন্দ সৃষ্টি করেছেন তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়- এ দ্বন্দ সত্য-মিথ্যার, ন্যায়-অন্যায়, আলো-অন্ধকারের। অন্যায়ে লিপ্ত হওয়ার আগে-পরে তার মধ্যে প্রচ্ছন্ন অর্ন্তদ্বন্দ সৃষ্টি হয়, অনুশোচনায় দগ্ধ হতে দেখি। সন্তান লাভের প্রত্যাশায় খালেক ব্যাপারি ধলা মিঞার মাধ্যমে আওয়ালপুরে আগত পীরের নিকট পানিপড়া আনতে পাঠায়। কিন্তু ওই পানি নিয়ে ধলা মিঞা কৌশলে মজিদের নিকট উপস্থিত হয়ে ফুঁ দেওয়ার অনুরোধ করলে সে রাজি হয় না। বরঙ পানি নিয়ে আওয়ালপুরে আগত পীরের নিকট যাওয়ার পরামর্শ দেয়। বেশি জোরাজুরি করলে বলতে শুনি- ‘কী আর কমু। এই সব কাম কি চাপাচাপি দিয়া হয়। এ কি আইন-আদালত, না মামলা-মোকদ্দমা? দলিল-দস্তাবেজ জাল হয় কিন্ত খোদাতা’লার কালাম জাল হয় না। আপনে আওয়ালপুরেই যান।’
দু’দল গ্রামবাসীদের মধ্যকার সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার জন্য মজিদের মধ্যে দ্বিধার সৃষ্টি হয়। দ্বিধা সম্পর্কে লেখক উল্লেখ করেছেন- ‘কথাটা অবশ্য মিথ্যা; এবং সজ্ঞানে সুস্থ দেহে মিথ্যা কথা কয় বলে মনে-মনে তওবা কাটে। কিন্তু কী করা যায়। দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা। সময়-অসময়ে মিথ্যা কথা না বললে নয়।’ মজিদ আপাদমস্তক মিথ্যার গাঢ় অন্ধকারে আবৃত। দূর্বল মুহূর্তে ওই অন্ধকার ভেদ করে আবছা আলো পাঠকের সম্মুখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের সাথে মিথ্যাচার করার অনুভূতি লেখক এভাবেই বর্ননা করেছেন- ‘তথাকথিত মাজারের পানে চেয়ে ক্বচিৎ কখনো সে যে ভাবিত না হয় তা নয়। কিন্তু তারও যে বাঁচবার অধিকার আছে সে-কথাটা সে সাময়িক চিন্তার মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে। তাছাড়া গারো পাহাড়ের শ্রমক্লান্ত হাড়-বের-করা দিনের কথা স্মরণ হলে সে শিউরে ওঠে। ভাবে, খোদার বান্দা সে, নির্বোধ ও জীবনের জন্য অন্ধ। তার ভুলভ্রান্তি তিনি মাফ করে দেবেন। তাঁর করুণা অপার, সীমাহীন।’ মজিদ জীবনবিলাসী। তার যতো সব আয়োজন তা ধর্ম বা ধর্মাচার নয় জীবনকেন্দ্রিক। স্বর্গের কল্পিত সুখের চাইতে বাস্তব জীবনের সুখের প্রতি অধিক আস্থাশীল। বস্তুতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় লোকটি সামন্তবাদী প্রভু। সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে প্রজাদের উপর শোষণের ষ্ট্রিম-রোলার চালিয়েছেন। ক্রোধের চুড়ান্ত পর্যায়ে উপনিত হয়ে তার ভাবনা- ‘ঝালর-দেওয়া সালুকাপড়ে আবৃত নকল মাজারটিই এদের উপযুক্ত শিক্ষা, তাদের নিমকহারামির যথার্থ প্রতিদান। ভাবে, একদিন মাথায় খুন চড়ে গেলে সে তাদের বলেই দেবে আসল কথা। বলে দিয়ে হাসবে হা-হা করে গগন বিদীর্ণ করে। শুনে যদি তাদের বুক ভেঙে যায় তবেই তৃপ্ত হবে তার রিক্ত মন।’ মজিদ সম্পর্কে লেখকের উক্তি- ‘অন্যের আত্মার শক্তিতে মজিদের খাঁটি বিশ্বাস নেই।’ এই একটিমাত্র বাক্যে মাজার বা পীরকেন্দ্রিক আত্মদর্শন সস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে জানে, তার নিজের কোন ঐশ্বরিক শক্তি নেই, তাই অন্যের আত্মার শক্তির প্রতি অবিশ্বাস। জমিলার মতো অসহায় মানুষদের কাছে ধর্মের আরেক নাম বিশ্বাস। প্রকারান্তে মজিদও বিশ্বাসী; তার বিশ্বাস মাজারের উসিলায় জীবনে স্বচ্ছলতা আসবে, উন্নতির শিখরে পৌছাবে, ভোগবাদিতায় মগ্ন হবে। নারী ও ক্ষমতার প্রাবাল্যে ছিন্নমুল মানুষটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। বস্তুত লালসালু উপন্যাসে তৎকালীন পুঁজিবাদি সমাজ-ব্যবস্থার নিম্নতর তল স্পর্শ করার চেষ্টা লক্ষণীয়। কৌশলী মজিদ দক্ষ শিকারীর মতো জাল বিস্তার করেছিল; বিস্তর পথ অগ্রসর হয়েছিল। সুফিজমের আরাধ্য ফল- বিশ্বাস; ওই বিশ্বাসের বলে বলিয়ান হয়ে দৃশ্যপটে যদি জমিলা আর্বিভূত না হতো তবে মাজারের ধ্বংসস্তুপের উপর নির্মাণ হতো পুঁজিপতির আলোকোজ্জ্বল রঙমহল।
একজন মাজারপন্থীর দৃষ্টিতে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’
পিন্টু রহমান
পিন্টু রহমান
ওয়ালীউল্লাহকে আপনি চেনেন নাই জনাব৷ তিনি আসলে শরীয়াপন্থী, সুফিজমের উদারতায় তার আস্থা নেই৷ শরীয়ার হিংস্রতাই তার কাম্য৷ মজিদের মাজারনির্ভরতা তাই তার কাছে ব্যবসা, নিন্দনীয়৷
উত্তরমুছুন