১
কিছু রোদ এসে আছড়ে পড়ছে মাঠে, মেয়েদের মতো। পৃথিবী এক ঢেউ ভুলে যাওয়া নদী! বেহায়া কুকুরদল— সস্নেহে তোমার সাথে। যতোটা দেখে তুমি পৃথিবীকে ভাবো, পৃথিবী আসলে তার পর থেকে শুরু! পাখি নেই তবু ডানা ঝাপটানো আছে। দূরের আকাশে তার উথাল পাথাল শব্দ— হাসিঠাট্টায়, লুকানো জীবাশ্মের মতো! জীবন বলপয়েন্ট, আপনি ফুরিয়ে যায়। আরও কিছু ফুল তোলা কাজ— নকশিকাঁথা, কোথায় হারায়?
২
ডানা আঁকো—সশব্দে ঝাপটাও। ডাকছে ব্যাকুল নদী৷ শিহরিত। হেঁটে হেঁটে আমি পৌঁছলাম নদীর কাছে। অনেক মানুষ— যারা হৃদয় ফেলে এসেছে ধরলার জলে, সকলে একত্রিত আজ। হারানো হৃদয়ের গান শুনছে মেয়েটি, ছেলেটিও। হাটু মুড়ে ওর পাশে বসি। আমি তো যাবো না কারো সাথে! তোমার উপশিরা যেদিকে এঁকেছে পথ, শুধু সেই দিকে যাবো। অন্য কোনো জলে— যাবো না।
৩
বর্ষা জাগে, একেকটি গানের ভেতর। সমূহ আলিঙ্গনের ভেতর। কতিপয় সুর— থেমে থেমে জেগে ওঠে। বর্ষা জাগে। রুটির বক্রহাসি আর মাংসে লুকিয়ে থাকা শীর্ণকায় হাড়— আমি খুঁজে পাই কান্নার পাশে। আলিঙ্গনরত ঠোঁট— আমার আত্মকথা যেন! ব্যাকুল পিয়ানো বাজে দাঁতের ছদ্মবেশে। ওকে শাস্তি দাও। ওকে শাস্তি দাও শুধুই অবসর। ঘুমের ভেতরে যা তাকে হরণ করে— অশান্তিতে। জেগে উঠে সে মেলে ধরে তুমুল বর্ষাতি। বেরিয়ে পড়ে বৃষ্টির ভেতর।
৮
মিছেমিছে। খেলনা বাড়ির গ্রাম। বৃহৎ পরিখা ঘিরে সুরভর্তি গাছ। যেটুকু বিকেল, সেটুকুই ঘুম। ফিরে আসা সকলের নয়। তবুও সন্ধ্যা-ভোরে তৈরি হচ্ছে বাড়ি। ধর্মচ্যুত নুড়িপাথর একের পর এক, সারিবদ্ধ— বেলোয়ারি জীবনের পরে নতুন আশ্রয়ে বাঁচে বিপুল সঙ্গমে। শস্যহীন ময়দান চাপা পড়ে মহাজীবনের ভারে। প্রার্থনায় উর্দ্ধমুখী হাতে হেমন্তের দাগ। ডালিম ফোটার মৌসুমে হারিয়ে ফেলা দুপুর ভীষণ যৌনকাতর।
১৩
অসমাপ্ত বর্ষামুখর দিন। পুরনো ছাতার স্মৃতিরা একে একে ভীড় করে এই ঋতুর ধারে। বৃত্তাকার চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। এইবার ছিলো ডোরাকাটা, লাল-শাদা ছাতা, গৃহস্থ করেছি তাকে বামালসমেত। হারাবে কোথায়, কোন গৃহপাশে! জ্যান্ত আসামি ধরে গুম করে দেব পুলিশের মতো। আটকা পড়ে যাবে দুরূহ শোকবার্তায়। একে একে অজস্র দুপুর পেরিয়ে জমা হবে মকরবাগানে। খুঁজে পাবে সেলাইমেশিন, আবর্জনা ঘেটে। বাড়ি ফিরো আপন উদ্যমে, কেউ তোমাকে ডাকতে আসবে না। প্রবীন পঙ্গপাল কিংবা মৃত শিশুদের অমরত্ব নেই। চলে যাও সুসংবাদ পেরিয়ে শ্রাবণের মাঠে।
১৬
উড়ছে শ্যামশোভা। সূর্য তাকে খুঁড়ে খুঁড়ে জাগিয়ে তুলেছে। ভ্রমনবিলাসীর সাথে, তুমি নাও স্নেহের পোশাক। অধিক আনন্দে প্রকৃতিপুরুষ— ফুটে আছে বাগানের গাছে গাছে। সকল সঙ্গে, ব্যক্তিগত দিনে দেখেছি চিত্ররথ। ব্যাকুল, বধির সুরগুলি দেয়ালে আটকে আছে স্তব্ধ সবুজ! তারও পরে দেখি নীলকণ্ঠ নদীর ভ্রমণ। শুধু হাহাকার মনে পড়ে— প্রাচীন ছাগল, হাঁস-মুরগী, ধুলোর দুপুর। শরীর ঘুমায়, আমি জেগে দেখি মুমূর্ষ বিদিন-রাত, তোমার চোখে বেঁচে আছে অন্তিম উলুধ্বণি।
১৮
চনমনে রোদে সেলাই করছি জুতো। পুরনো মহিষের আহামরি চামড়া। মুছে যাচ্ছে নাম। একা ঝরে যাচ্ছে হালকা রোদের দুপুর। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে হোসেন খাঁ পাড়া গ্রাম। না গিয়েও মনে হয়, পৌঁছে গেলাম সূর্য মাথায় করে। নিবেদক কেউ ছিলো না, গানগুলো পোস্ট হয়ে গেছে। তুমি কিছু পোস্টকার্ড দিও জিপার ভাঙিয়ে। হারানো মেটাফোর খুঁজে ফিরিয়ে দিও ক্রুশবিদ্ধ নারীদের নামে।
২৪
বসন্তের কোকিলটা গেল কই? সময়ের প্রতি সে ব্যাপক শ্রদ্ধাশীল। পিরিয়ড ফুরাইলে তার যথাতথা ডাকাডাকি নাই। অদেখা বাগানের কোলঘেঁষে, আমি বিরক্ত বহুৎ, দেখি এপ্রিলের ঝড়! আগুনের সামান্য পুঁজি, অথচ অনেক সিগারেট। —চলে যাও শৌখিন শিকারীর সাথে, যদি কিছু বন্দোবস্ত হয় মৎস্যশিকারের। অথবা বাদ্যযন্ত্র আনো। সে-ও খানিক কাজ। ঝুমঝুমিয়ে আনন্দযজ্ঞ করো। একদিকে মন্দিরার কাম, অন্যদিকে ভীষণ উচ্ছাস। দমকা হাওয়া নেই। অনুশোচনায় ডুবে যাচ্ছে কোকিলের গান।
৩৫
যে রাস্তাটা চলে গেছে রিভার ভিউয়ের দিকে, আমি তার পাশে উবু হয়ে বসি। হাওয়ায় গল্প বলে সিগারেট ধরাই। মনে হয় রাত। জানি না, আসলে কি রাত? খোশগল্প করি বেহুদা কুকুরের সাথে। জ্যোৎস্নার দিকে তাক করা ল্যাম্পপোস্ট— থেকে থেকে জ্বলে। হঠাৎই জ্যান্ত হলো মন্দাক্রান্তা ফুল। কুকুর পেয়েছে পৃথিবীর ফৌজদারী ভালোবাসা। এমন আরো অনেকেই পুড়েছে রাজন্য চিতায়। পশু ছিলো, ভালো ছিলো; নিরুপায় মানুষ হয়েছে।
৩৭
আমাকে বহন করো নখের মতো, বেড়ে ওঠার যত্নে। উর্ধ্বশ্বাসে বেরিয়ে পড়া এই নভোযান, মেতে উঠেছিলো শব্দে। গন্তব্যের ছায়ায় পেয়েছিলো কোমল পানীয়, বিশুদ্ধ আহার। সবুজ পত্রালি, অপূর্ব ইচ্ছের দিগন্তে কারো খাদ্যকষ্ট নেই। নিবিড়তম গাছ উপচে পড়ছে ফলে। ফলাহার অনুভব করো মায়ের গল্পজুড়ে। অবশিষ্ট শরীরে বুনোফুল আর পাতার পোশাক। পাশ ফিরে আচানক গুলিয়ে যাচ্ছে সব। বিরতিদিনের ওঁম। জামার পকেটে ছিলো হিতাহিত জ্ঞান, বিরল পাখির মতো অপ্রকাশিত। তবুও গল্পগুলো, মেদহীন, নিটোল, বহন করো নখের মতো যত্নে।
৩৮
আপেল স্বাধীন নয়, যৌথভাবে একা। নিহত দুপুরের পরে নদী থেকে উঠে আসে বালু, অবৈধ উপায়ে। গান ছেড়ে নেমে আসে ফুল নয়নতারাবনে। ফুটে উঠেছিলো তারা ভুতুড়ে পাঁচিল ঘেষে, আগামী আশায়। আমার থেকে কিছু আলোবাতাশ হাতে তুলে নাও। হালকা রোদের কাছে বসো। এই পাতাঝরাশব্দ— সেও তো নিখুঁত জ্যামিতি। আমার রঙজ্বলা চুলের মতো ছন্দহীন নয়। সে অন্যরকম ভালো, আকর্ষণীয় ঘুমের ভেতর।
৪০
ব্যর্থ কামানদাগানোর মতো তুমিও চলে যাচ্ছো ক্রুর হাসির ভেতর। কখনো আহত শব্দ, এই ফিরে আসা কেবল নিজস্ব কল্পনা। লেপ্টে থাকা বিকেলে কেউ বুঝি গেয়ে ওঠে গান। দ্রিম দ্রিম ডাকে দূরের ড্রামার। তবুও কীভাবে ঘুম বিষাদবিকেলে? চলচ্চিত্র দ্যাখো নাগালের জানালায়, অনেক সবুজ আর নিশ্চুপ আকাশ। আনমনা দিগন্তে শুধু উজ্জল তোমার পত্রালি, চিরহরিৎ চোখের পালক। আগের দিনের মতোই, বিকেলকে গড়িয়ে যেতে দাও আরো কিছুদূর।
পাণ্ডুলিপি: হালকা রোদের দুপুর
লেখক: সাম্য রাইয়ান
প্রচ্ছদ: রোচিষ্ণু সান্যাল
দাম: ২০০ টাকা
প্রকাশক: ঘাসফুল, ঢাকা
নিহত দুপুরের পরে নদী থেকে উঠে আসে বালু, অবৈধ উপায়ে।
উত্তরমুছুনএই বই উইশলিস্টে আছে৷ গ্রেট
উত্তরমুছুনঅসাধারণ কবিতা পড়লাম
উত্তরমুছুনবইটা পড়লাম সাম্যদা
উত্তরমুছুনএটা আপনার অনন্য নজির হয়ে থাকবে শিওর
Great sammo
উত্তরমুছুন