অনাত্মীয় দ্রষ্টব্য
সম্প্রসারিত ব্রহ্মাণ্ডে
যেন অনাত্মীয় স্বভাবে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে একেকটা নক্ষত্র।
পিছে পড়ে থাকছে ধূধূ পথ;
আমরাও কেবল হেঁটে চলি গন্তব্যহীন গন্তব্যে--
আমাদের তো হওয়ার কথা ছিল নিকটবর্তী প্রেম;
অথচ মানুষ আবিষ্কার করে ফেললো- ইঞ্চি,গজ,মিটার-------
দূরত্ব নির্ণয় বাদে এর-তো কোনো ব্যবহার দেখি না।
স্বীয় অনুভব
ক্যান্সার সনাক্ত হতে-হতে বেশিরভাগ রোগী
পৌঁছে যায় শেষ ধাপে।
শীতের লেপ-ওমে কী-আর বোঝা যায়,
অগ্নিপরীক্ষায় সীতার কতোটা দহনজ্বালা!
বেতঝোপে জড়িয়ে যাওয়া প্রাণীগুলো বোঝে;
কাচভাঙ্গা জলসায় নর্তকী নাচের ইতিবৃত্ত।
আফিমবাদ
বানর চিনতে কি লেজের দৈর্ঘ্যর পরিমাপ জানা খুব জরুরি?
হাতের কৌশল জানা থাকলেই-তো, ম্যাজিকে আর বিস্ময় থাকে না।
যতই শোনাও কুমারী মেরীর গান
মানুষ জেনে গেছে,
সন্তানের শেকড়ে-শেকড়ে অনিবার্য পিতার বাস।
নড়বড়ে দাঁতে শক্তহাড় চিবোনোর দৃশ্য দেখে অনেকেই হাসে,
আসলে অভিনেতার চেয়ে প্রমটরের স্বর উঁচু হলে, নির্ঘাত যাত্রাপালার ভরাডুবি।
রক্ষণশীল
রক্ষণশীল বলে কথা;
'তোমরা সবাই সাইট দাও, আমাগো- বৌ বাজারে যাইবো!'
নিয়ম আর নিষ্ঠাবান একটা নৌকার কাহিনি প্রায়ই বলতো নিজাম কাকা;
যার পেশাই ছিলো খেয়া পারাপার।
গোপনীয় বলে আমারে যে দ্বিতীয় কান পৌঁছাতে নিষেধ করেছিলো;
বিবিসি নিউজে তিনিই সে-খবরের সংবাদদাতা।
শার্ট
যদি অতিশ্রেণি বাদ দিই, তো
শার্ট মানে
গায়ের ওপর একটা আলগা কাপড়ের আস্তরণ,
চেনা ঘামের ঘ্রাণ,
কিছু টুকরো কাপড়ের সম্মিলিত কারুকাজ -----
যার পকেটে লুকোচুরি খেলে একেকটা সংসারি গল্প।
আর হাত থেকে পকেট-তো কারো কাছে, মহাকাশ সমান দূরত্ব---
বোতাম আর বোতামঘর?
সে-তো, পোস্টমর্টেম শেষে জুড়ে দেয়া একেকটা দরকারি সেলাই।
আমরা ঘাড় পাল্টাতে পারি-না বলেই;
দুরারোগ্য দাগের ক্ষত নিয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে কোনো-কোনো শার্টের কলার।
বিশুদ্ধ নির্বোধ
কাঠ জলে ভাসে, ভাসে লোহাও;
এমন কথায় আঁতকে ওঠেন বহু আঁতেল
অসম্ভব-অসম্ভব শোরগোল।
এখানে সবুজ ক্ষেতের বুক জুড়ে ছাগল জিভের স্পষ্ট ক্ষত, চোখগুলোও বর্গাদেয়া আড়ালে জানায় কাপ্তানের ভৃত্য,
আড্ডাটা হচ্ছিল জাহাজের কেবিনেই।
ফাঁকি
রোজকার স্নানেও থাকে সাঁতারের নামতা,
কেউ-কেউ দক্ষ হয়ে ওঠে,
কেউ-কেউ না-শিখেই দিব্যি চালিয়ে নেয় জলাতঙ্ক জীবন।
ভূ-মূলে প্রোথিত গাছই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে,
টবের বৃক্ষেরা একদিন ঠিক টের পায় শেকড়ের অস্তিত্ব সংকট।
রাষ্ট্রসঙ
হাতিম তায়ির প্রসঙ্গে লিখতে গিয়েও;
লিখে ফেলছে আলিবাবা সমগ্র
আর, স্বভাবের ইরেজারে মুছে দিচ্ছে আদর্শিক মুখ।
এবার;
পার্লামেন্টের মতো শোরগোল পাকিয়ে,
হোহো করে হেসে উঠছে চল্লিশ চোর।
যথারীতি ওদিকটায় চলছে মর্জিনার নাচগান,
শুধু বুঝতে পারছি না সে ডাকাত না মালিকের পক্ষে।
উৎসব মঞ্চায়ন
অনুষ্ঠানটা বিয়ের হলেও; কারো-কারো দৃষ্টি কিন্তু খাবারের দিকে।
নির্দিষ্ট দূরত্বে নাচে যুবতীউচ্ছ্বাস।
লোডশেডিংয়ের পলকে কোথাও ছোঁ-মারে নগ্নহাত।
সিনেমা নাটকে এমনও হয়, কনের কবুল ছাড়াই শুরু হয় দোয়াপর্ব!
পাগড়ি ঝালরের নিচে হাসে ভিলেনের মুখ;
প্রেমিকেরা হয়ে যায় খানসামা।
ইনবক্স সমাচার
সব দোষ বুঝি সুন্দরবনের মৌয়ালগো?
মধু আনতে গিয়া বাঘের থাবা খাইলে কও ঠিকই আছে।
এমনিতে-তো বই পড়ার নামগন্ধও নাইক্যা,
তাও দেহি রসময়গুপ্ত সমগ্র এক্কেরে মুখস্থ;
আগে বালিশের নিচে থাকতো এহন মোবাইলে।
বর্ষাকাল বুঝি শ্যাষ অই গ্যাচে,
বৌ-রে ভাবো ভাঙ্গানৌকা,?
সংসার জীবন বন্দি লাগে?
নতুন ওয়াজ করো বিয়া প্রথাটাই হালার ভালা না----
আবার এইদিক অইদিক কইয়া বেড়াও;
বড়ইগাছ থাকলে ঢিল তে মারবোই!
রাইতবির্যাত অইন্য জানালায় উঁক্কি মারো, আর কেউ জিগাইলে কও-- খলশির মায়েরে একখান খবর দিওনের ছিলো,
মহল্লার পুলাপাইনও বহুত সেয়ানা;
কী-ভাবে য্যেন জাইন্যা গেছে তুমি যে খলশির ভেতর জামার মাপও জানো।
পাণ্ডুলিপি: ‘অলক্ষে মুদ্রিত কাচঘর’
লেখক: বিনয় কর্মকার
প্রচ্ছদঃ আইয়ুব আল আমিন
প্রকাশকঃ অনুপ্রাণন প্রকাশন
অন্যস্বাদ, অন্যভঙ্গি, অনবদ্য, অসাধারণ
উত্তরমুছুন