সৈয়দ সাখাওয়াৎ-এর কবিতা ও কিছু স্মৃতি
উপল বড়ুয়া
উপল বড়ুয়া
‘পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে’— প্রকাশ হইছিল ২০১৭ সালে। পেপারব্যাকের। সৈয়দ সাখাওয়াৎ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ সম্ভবত ওই বছর। বইটা নিয়েছিলাম চট্টগ্রামের চেরাগী মোড়ের একটা দোকান (স্মৃতিসমস্যার কারণে দোকানের নাম মনে পড়ছে না) থেকে। দুজনে দাঁড়িয়ে চা-ও খাওয়া হয়েছিল সেবার। চট্টগ্রাম ছাড়ার সময় অন্যান্য বইয়ের মতোন ওই বইটাও বস্তাবন্দী করে চলে আসছি। সাম্য রাইয়ান অবশ্য এই সমস্যার সমাধান করেছেন পিডিএফ পাঠিয়ে। সঙ্গে অনুরোধ সাখাওয়াৎ ভাইয়ের কবিতা নিয়ে কিছু লেখার। লিখতে গেলে ‘পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে’ নিয়েই লিখতে হবে। কারণ কবি সৈয়দ সাখাওয়াৎ আমার ওইটুকু স্মৃতিতেই জীবন্ত।
আলোচনা বিভিন্ন রকম হতে পারে। আমি বরং কিছু স্মৃতি উগরে দিলাম শুরুতে। কারণ স্মৃতিই তো শেষপর্যন্ত সত্য। রাইনের মারিয়া রিলকে যে ‘তরুণ কবির কাছে চিঠি’ লিখেছিলেন সেখানে ওই তরুণকে স্মৃতি থেকে লিখতে বলেছিলেন। সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলেও স্মৃতি কখনো বন্ধ হয় না। এমনকি যে অন্ধ সে-ও স্মৃতিতে দেখে। যে বোবা সে-ও স্মৃতির সঙ্গে কথা বলে।
কবিতা আমাদের কাছে একেকরকম। কেউ স্মৃতি থেকে লেখে। কেউ পরিপার্শ্বের দৃ্শ্যের বর্ণনা দেন। কেউ সমাজের বিভিন্ন ঘটনাকে বলতে চান। সৈয়দ সাখাওয়াৎ আত্মমগ্ন কবি। উনি জীবনের ভেতরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন উপলব্ধি, অভিজ্ঞতায় কথা বলতে ভালোবাসেন। ’স্বীকারোক্তি ১’ কবিতা থেকে এই মর্মে উদাহরণ দেওয়া যাক— ‘জন্মকাল থেকে শিখেছি কীভাবে আলাদা হতে হয়/নাভীমূল থেকে জঙ্ঘাস্থি জটিল চুলের মত করে/ নিয়মিত স্রাব ও মেহ করছে আলাদা তুমি-আমি/ আমাদের কাল, কলের হাওয়া মাথায় করে দোলে।’
মাঝখানে একটু সংযুক্তি। সাখাওয়াৎ ভাইয়ের সঙ্গে ২০২১ বইমেলাতেও একবার দেখা হয়েছিল। ক্ষণিকের জন্য। স্বীকারে আমার লজ্জা নেই যে, কবিতার আলোচনা খুব কঠিন এক বিষয়। বিশেষ করে আমার জন্য। অনেক কঠিন করে অনেক যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে বুঝাতে হয়, কবি কি বলতে চেয়েছেন তা। কিন্তু কবিতা তো প্রমাণসিদ্ধ ব্যাপার নয়! তাই শুরুতে আমি দুজনের সাক্ষাতের স্মৃতিকে বেছে নিয়েছি। কথা আগানোর জন্য। এটা ফাঁক মনে হতে পারে। নাখোশ হতে পারেন কবি ও সম্পাদক। কিন্তু স্মৃতি আমাকে আরও কাছে টেনেছে সৈয়দ সাখাওয়াৎ-এর কবিতার দিকে। এবং উনি নিজেও স্মৃতি আওড়াতে ভালোবাসেন—
লেমন ইয়েলো বলে তুমি হেসে উঠলেই আমার কেবল ঢোলপাপড়ি ফুলের কথা মনেপড়ে। ঢোলপাপড়ি ফুল বলে তোমাদের স্মৃতিতে কোনো শব্দ নেই, জানি; কেবল আমারস্মৃতিতে ঘুমায় গাঢ় সবুজাভ সরু পাতার কলেবরে একটি আধাভাঙা গাছ, মাঝে লেমনইয়েলো প্রেম নিয়ে।[লেমন ইয়েলো রঙে ডুবে যাচ্ছি]
‘আমাদের একাকী হবার দিন’ কবিতাখানিতেও কবির স্মৃতিকাতরতা স্পষ্ট—
আমাদের মাছগুলো সীমানা পেরিয়ে গেলে, জানিস আমার তখন তোর কথা মনে পড়ে। স্মৃতিতে তখন সরীসৃপ খেলা করে। পুরোটা শরীর কেমন কিলবিল অনুভূতিতে ছুটে যায়।
আমি চাই না, আলোচনা খুব দীর্ঘ না হোক। আমার এই ক্লান্তিকর লেখা দিযে পাঠককে বিনা কারণে শাস্তি দেওয়ার মানে হয় না। সামান্যটুকুনের আলোচনায় কোনো পাঠক যদি সৈয়দ সাখাওয়াৎ-এর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবেই আমার শান্তি। কারণ দারুণ প্রতিভাবান কবিকে আবিষ্কার করার মধ্যেও মানসিক শান্তি আছে।
শেষটা করি ‘পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে’ থেকের প্রথম ও আমার প্রিয় কবিতাখানার কয়েক পঙক্তি দিয়ে—
এই যে মানুষ, মুখ তুলে দ্যাখো-ওইখানে খেলা করে রোদের আঙুলতথাকত বেদনার মাছিদের অবিরাম ধ্বনি থেকে বের হয়ে এসোপোড়াও এ’দুঃখভার ইশকুল। আমি তোমাকে দু’পাত্র কবিতা শোনাবো।
স্মৃতি সুন্দর গদ্য
উত্তরমুছুন