দুঃস্বপ্নের হাত ধরে হেঁটে যাই
সারারাত চোখের ভেতর নিঃসঙ্গ কাঁটাতার
আগুনের শিখা
মেইল ট্রেনের মতো লম্বা ঝাঁকুনি
কোথাও শঙ্কাপূর্ণ কণ্ঠস্বর, থেকে থেকে বাজে
সেসব শব্দ শুনি আর ভাবি- পৃথিবীর কোথায় কোথায়—
মানুষের পা পড়েছে...কত দগ্ধ হয়েছে বনাঞ্চল,
কত শীর্ণ হয়েছে নদী....
বাতাসহীন, নিঃশ্বাসহীন এসব কণ্ঠে যেন
মৃত্যুর দীর্ঘ শব্দজ্বরাক্রান্ত ভাষা
যেন মেঝেতে শুইয়ে রাখা নির্মেদ কাঠ
থেকে থেকে শব্দ করে উঠে, দুঃসহ--
পতনের মতো ভয় নিয়ে
সেসব রাতে শুনি পাতাদের ফিসফাস
শেষরাতে মুয়াজ্জিনের ডাক,
ফজরের আহ্বান
“ আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউ”
তবুও কারা যেন শষ্যের ভেতর জ্বালিয়ে দেয় আগুন
মাংসের তীব্র গন্ধের ভেতর কেঁদে ওঠে শিশুরা.....
কারা যেন মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে ছুটে যাচ্ছে
সন্ধ্যা নেমেছে বলে
শুকনো পাতার মতো পড়ে আছে শরীরের ঘ্রাণ
বিছানা-বালিশ ছুঁয়ে আরো কিছু স্বপ্নের আবাদে
যেন বহুযুগ ধরে, নিরপেক্ষ পাখিদের গান-
শুনে শুনে ঘুমিয়েছে বৃক্ষ ও জলের সঙবেদে।
ওই যে পথের মোড়, শরীরের মতো দ্যায় উঁকি
যেনবা পাহাড়সারি কাঙালের মতো চোখে চোখে
ধরেছে সুরের স্বর, আরো কিছু শব্দ মুখোমুখি
কথা বলে পার করে, পৃথিবীর আনকোরা শোকে।
তবে কি ঘ্রাণের নামে, জুড়ে গ্যাছে মদিরা আলাপ?
নাকি ঝুলে থাকা ব্রীজে ফুরিয়েছে রাত্রির প্রমাদ
জানে মেহেরুন শুধু, লালচোখ রাত্রি সংলাপ
আরো বেদনার নামে- রুহ খুঁজেছে মাগফেরাত!
তারপর কারা থাকে, হাতে নিয়ে তারাদের কথা?
শুকনো পাতার ভাঁজে সেইসব বিকেলের নাম
ভুলে থাকা দেহস্বর অথবা প্রেমের যথার্থতা
সন্ধ্যার আঁধারে থাকা নোনাস্বাদ শরীরের ঘাম।
প্রসঙ্গ চলেছে দূরে, সিলিঙের ঝুলে থাকা শার্টে
সফলতম পা থেকে নিরবিচ্ছিন্ন স্পর্শের গ্রাফ
সঙকেত জানিয়েছে মর্মছেঁড়া শতাব্দীর ঘাটে
তৃষ্ণা ও বিমুঢ়তা দূরতম ব্যথার প্রলাপ!
হাওয়ার রাতে, খুব সশস্ত্র হতে ইচ্ছে করে
জানো মেহেরুন, এরকম ক্ষয়ে যাওয়া সময়ে কীভাবে বেঁচে আছি তা বিস্ময়ের লাগে।
যদিও সকল বৃষ্টিতে একইরকম সুগন্ধ থাকে, তবুও অনাদিকালের মতো এই বৃষ্টি-
আমাদের ধুয়ে-মুছে করে দেয় না পরিষ্কার। আমরা দাঁড়িয়ে আছি একটা গভীর সময়ে।
এই যে দ্যাখো, এরকম দুপুর বেলায়, হঠাৎ বৃষ্টি নেমে এলো বলে-
আমি শুনছি, ইয়ান্নি-দ্য রেইন মাস্ট ফল। অথচ আমাদের শহরে
না চাইতেই কতবার বৃষ্টি এসে ভাসিয়ে দিয়ে গেলো…
আমরা চাদর মুড়ি দিয়ে দ্যাখি ঘরের বাইরে কোমর সমান জল।
জানো মেহেরুন, মাঝে মাঝে আমার গডফাদার হতে ইচ্ছে হয়
কিন্তু ওদের মৃত্যুদৃশ্য দ্যাখে নিজেকে অসহায় মনে হয়-
কেননা, মনে মনে আমি একটা স্বাভাবিক মৃত্যুই কামনা করি।
কখনো ঘুমের ভেতর আগ্রাবাদ যদি হয়ে ওঠে ওয়াসিপুর, ভয় পেও না…
দূর কোন কণ্ঠস্বরে আমি শুনতে পাই-
“নেভার হেইট ইওর এনিমি. ইটস এফেক্টস ইওর জাজমেন্ট”
তবুও মাঝে মাঝে রিভেঞ্জ নিতে ইচ্ছে হয়-যদিও কোমল আঁধারে ডুবে থাকে সব আর শুনি-
“রিভেঞ্জ ইজ আ ডিস দ্যাট টেস্টেস বেস্ট হোয়েন সার্ভড কোল্ড”।
এরকম ক্ষয়ে যাওয়া সময়ে, মুখে থুথু জমে।যদিও-
উৎকৃষ্ট ঘ্রাণের ভেতর ডুবে যেতে ইচ্ছে হয়
কিঙবা উৎকৃষ্ট পানীয়ে।
নিয়মিত ঘরের ভেতর ফিরে এসে মনে হয়, শিকারীর তাড়া খেয়ে ফিরছি ব্ল্যাক ফরেস্টে।
পুরো শহর কিঙবা দেশটাকেই অন্ধকার গুহার মতো মনে হয়,
যে গুহা থেকে মাঝে মাঝেই বের হয়ে আসে মৃত্যু!
তবুও যে কথা হয়নি বলা কিংবা বলার অনুরাগে হারিয়ে গ্যাছে যেসব শব্দ-
মাঝে মাঝে আমার গডফাদার হতে ইচ্ছে জাগে,
হাওয়ার রাতে, খুব সশস্ত্র হতে ইচ্ছে করে!
প্রশ্ন
প্রতিটি হত্যার নিচে
কোন এক ধাবমান ট্রেন
চলে যায় শূন্য করে,মৃতদের দেহগুলো নিয়ে
তাদের শরীরজুড়ে ঝরে পড়ে সমান ঔজ্জ্বল্য
আমাদের নিঃসঙ্গ শোকবার্তার নিচে ঝড়ছে
ব্যথাহীন মরফিন।আমরা ঘুমিয়ে যেতে পারি।
মৃত্যুর কাছে নিয়ত হেঁটে চলে যাওয়া চোখেরা
মধ্যবর্তী প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে...
জন্মদাগ থেকে দূরে দাঁড়িয়ে
জন্মদাগ থেকে দূরে দাঁড়িয়ে দ্যাখেছি কতটুকু
সরলতা নিয়ে ডুবে গ্যাছে মাসিকের দীর্ঘ ঋতু
তাদের মুখের দিকে, ছুটে যাচ্ছে আলোর বিভ্রম
যেন জলাধার থেকে উঠে আসে মৃতের সঙ্গম
পদচিহ্ন শুঁকে শুঁকে, যেন শিকার সন্ধানী কেউ
রক্ত ও বীর্যের গন্ধ ছুঁয়ে আছে সন্ধ্যেবেলাতেও
সেইসব দাগ দ্যাখে মাতাল রোদে পোড়ে শতাব্দী
ঘুম ছিনিয়ে নিয়েছে তার স্রোতস্বিনী মননদী
কোন এক সন্ধ্যাগান থেমে গ্যাছে সিথানের কোনে
সেই থেকে উড়ালের দেহছবি থেমেছে উঠানে
বস্তুত মানুষ থেকে
নিঃসঙ্গ শিস যেন, পাতার মুকুল থেকে ঝরে
দূর কোনো ছায়াদল, মেঘের আড়ালে থাকা মেঘ
উদ্বাস্তু হাওয়াবনে-ঝরে পড়ে সব নৈঃশব্দ্য
শেষ গুঙিয়ে ওঠার আগে যেভাবে নড়ে শরীর
তারা যেন সেইসব গল্পের ভেতর হারিয়েছে।
বস্তুত মানুষ স্বপ্ন থেকে দূরমেঘে করে যাত্রা।
আরো গভীর ছায়ায় সহসা ডুব দেয় মীনেরা
আরো গভীর অরণ্যে পালাতে চায় উদ্বাস্তু মহিষ
আরো ঘন ঘাসবনে পাড়ার ফেরারি কিশোরেরা
বস্তুত মানুষ থেকে-ফেরার অগস্ত্য যাত্রাপথে-
ডুব দেয় না-ফেরার দেশে, ঘুমন্ত শবের পাশে!
ক্ষমতা-স্থিতিস্থাপকতা
শরীরে মোমের আলো, চকচকে মুখের ছায়ায়
কে তুমি আঁকো নতুন ছবি, ব্যথা ও বৃক্ষের রাগ
—সন্ধ্যা নয় যেন রূক্ষ দিন
গ্রন্থে নেই, আরশিতে পাবে না খুঁজে নিজের ছবি।
যে তুমি সাজাও ঘর, নিজস্ব ছবি দেয়ালজুড়ে
পেছনে লোক হাসছে, সে তুমি জানো কী নাই জানো
পতাকাবাহী শরীরে লক্ষ রক্তের দাগ লেগেছে!
প্রকৃত নির্ভার হলে—
আরো কয়েক শতাব্দী লিখে রাখে যদি কারো নাম
বৃক্ষ ও পাতার মতো, সে যাবে সম্পর্কের উজানে।
তুমি তো মৃতের মতো, নিঃসঙ্গ শিষ যেন এক
এই আপদের কালে, লালাময় হিংস্রতা নিয়ে!
এসো সুসময়
চল রাস্তায় নামি শীত বর্ষায়
হাত বাড়াতে খোলা শরীরে
আজ আমার-তোমার মন্ত্র
ভুল জোছনার শোক বাড়াবে।
আজ সস্তায় যত ভাতঘুম
ওই উৎপীড়নের সব শর্ত
মন মহুয়ার সাথে সাইক্লোন
আর মুখোমুখি হোক সংঘর্ষ।
কেন ছুটে যায় এক মেইল ট্রেন
ক্ষুদ বাসনার এই সন্ধ্যায়
বসে আঁধারের চির বাগানে
কেউ পা রাঙাবে লাল আলতায়।
যারা চলে যায় চির ঘুমদেশ
পাথরের বুকে ফুল ফোঁটাতে
বলি তাদেরই বুকে লাল ক্রোধ
জ্বলে ধিকিধিকি লহু ধারাতে।
এসো একদিন, এসো সুসময়
সরলার মতো নদীতে
তোমার হাত ভরে রবে হাতটুকু
আর চোখভরা নীল তারাতে।
মর্গ আর শহর এখন আর আলাদা মনে হয় না
এ’শহরে বাসাবাড়ি থেকে নেমে আসবে চড়ুই
ঝরে যাওয়া পাতার মতো সমূহ গৌরবগাথা
তুমি পুরনো সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুঁজবে উড়োচুল
কোথাও কম্পিত কণ্ঠে গেয়ে উঠবে গান শিশুরা
তখোন এসেম্বলিতে চিরচেনা পতাকা উড়বে
নিরাপদে খুন হয়ে যাবে বেদনাবহুল চোখ
নিঃশব্দ হাতগুলো মরে যাবে সরল নদীতে
দয়িতার ঠোঁট খুঁজে পুড়ে যাবে নির্বাচনকলা
বৃষ্টি নামবে, শীতের আগে শহরে বৃষ্টি নামবে
এ’দৃশ্য ভেবে অপেক্ষা করবে কবি-শিল্পী, বেদেরা
শহরে উত্তরকাল, সকলে ভেসে যাবে বর্ষণে
আর আমরা দেখবো, কী করে বন্ধ হয় দরজা!
সাধু
উত্তরমুছুন