রাত্রি একটা অনাহুত বেদনার নাম
সাম্য রাইয়ান
সাম্য রাইয়ান
১.
ঘুম ভেঙে গেলে বুঝি কান্না পায়! না হলে জন্মক্ষণে তুমি কেঁদেছিলে কেনো? ইচ্ছে জানাবার মতো সময় আমাদের হাতে ছিলো না কখনো; মতামতের ঊর্ধ্বে ছিলো জন্মগ্রহণপ্রক্রিয়া। তাই অনিচ্ছুক ছেলেগুলো শুধু থামিয়ে দিতে চায় জীবনমেশিন। অনিচ্ছুক হলে কাজে উপদ্রবহীনতাকেও মনে হতে পারে অসহ্য উপদ্রব; নিরাময় পাই না তখন কাছেকূলে। চোখের সীমায় শুধু দেবদূতের হাতল হয়ে ঝুলতে থাকে একান্ত রেললাইন; হাতল টানলে দুইশ’ টাকা জরিমানা...
পাতার শরীর থেকে জল গড়িয়ে পড়া দেখতে দেখতেকোনো একদিন আমিও হয়ে যাই জল, গড়িয়ে পড়েছিপাতার শরীর থেকে, মাতৃগর্ভ ছেড়েছি দারুণ একাকী!(পাতার শরীর থেকে জল গড়িয়ে পড়া দেখতে দেখতে)
২.
মধ্যরাতে জগতবিদীর্ণ ডাক শুধু শেয়ালই জন্ম দিতে পারে; এমন ধারনা করতাম একসময়। সময় আর আমি পরস্পর দুই পায়ের মতো পাশাপাশি চলতে চলতে জেনেছি, প্রকৃত বিচারে-- কিছুই এখনো জানা হয় নাই। শুধু রূপবতী খণ্ড বৈচিত্র্যের প্রেম জিইয়ে রেখেছে; সত্যি বলছি-- অকারণ। শৈশবে বইতে ভালোবাসা আর মমতার কথা জেনেছি। সেইসব পাক-পবিত্র ট্যাবুকে খুঁজতে অনেকটা দিন বৃথা হয়রানি শেষে জানলাম, এখন হৃদয়পুরে মমতা নেই কোনো। প্রকৃতপ্রস্তাবে, মমতা একটি পেত্মীর নাম।
এখন নতুন ভয় নিয়ে ঘুমাতে যাই প্রতি রাতেশিকারী প্রাণীর মতো তাড়া করে, ঘুমাতে পারি না।একেকটা দিনের সম্ভাবনা নিমেষে উড়িয়ে দ্যায়অজস্র সশস্ত্র ভূত... মানুষ ভূত হিংস্রতা নিয়ে।আমি রাত্রি ভয় পেতাম, মানুষ পাশে থাকলে ভয়কেটে যেতো, ঘুমাতে পারতাম নিশ্চিন্তে, নির্ভার হয়ে।এখন আমি মানুষ ভয় পাই! এই ভয় নিয়েপালিয়ে বেড়াই ঘরময়, সারা শহরে দিনরাত্রি!(রাত্রির সাথে সখ্যতা ছিলো না আমার কোনোকালে)
৩.
পরবর্তী জীবনের জন্য অনাড়ম্বর নির্জনতাটুকুই শুধু জমা আছে। উত্তরের পথ ধরে শীতের আসা-যাওয়া জমা আছে। জমা খরচের খাতা মনে আছে একবার দেখতে গিয়েছিলাম। নিদারুণ সেই জামরুল বন, শুকনো পায়ের হাওয়া, বুকের ভেতরে নদী; অগণন স্রোতচিহ্নে নদীতীর ভরে আছে। জলের শব্দে শরীর ভেজানোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাবৎ রূপের দেশে এই কথা শুধু কবি বলে এক লোক বিড়বিড় করেন। জল হামিংবার্ড নয়, ওরকম ডানাধিক প্রেম নিয়ে উড়ে যাবে গাইতে গাইতে।
জানি সবাই, জল ছাড়া ভেঙে পড়ার আর কোনো শব্দ শোনা যায় না।গোপন ক্ষয়, ঘুম থেকে জেগে ওঠার মতো নিস্তরঙ্গ; অবধারিত।কেবল জানালায় দেখা দৃশ্যগুলো চলে যায় সশব্দে; জানিয়ে দ্যায়দৃশ্যের বাইরে কোনো জগৎ নাই। ভেঙে পড়া যাবতীয় রূপ থেকেদূরে কোথাও-- গোপন ক্ষরণে, চিরাচরিত নির্জনতায় ঝরে পড়েবৃক্ষের পাতা...সোনালি সোনালি রোদ ছুঁয়ে অবাক শীতের রোদ হয়ে।(জল ছাড়া ভেঙে পড়ার আর কোনো শব্দ শোনা যায় না)
৪.
বিন্যস্ত ফুলবাগানের পাশে বিশ্বাশ বাবু থাকতেন। পুরোনো দালান। বিকেলে খেলার মাঝে বল ছুটে গেলে চিৎকার করে উঠতেন। দালানের প্লাস্টার খসে খসে ঝরে ঝরে মরে মরে পড়ত। আশ্চর্য! কারও মধ্যে কোনো অনুতাপ নাই, অপরাধবোধও নাই। মৌসুমী বাতাসের মতো মৌসুমী কম্পনের খবর আসে পত্রিকার পাতায়। পুরোনো পাতা, খাবার বিছানো টেবিল। ভাবি কোনোদিন যদি সত্যি ভূমি কম্পিত হয় আবেগে, কী হবে কী হবে! চায়ের দোকান থেকে মায়ের রান্নাঘর আলোচিত। বিশ্বাশের বন্ধু প্রবীণ বাবু বলেন, ‘বিশ্বাশের পুরোনো দালান, ভেঙে পড়তেই পারে।’
অবশেষে ভেঙে পড়েছিলোবিশ্বাসের কঠিন দেয়াল।ঝরে পড়ে পাখির বাসাআর নিতান্তই অবহেলায়বেড়ে ওঠা বাহারিলতার ঝাড়।ভিনদেশি পাখি হয়ে উড়ে গেলোমৌসুমী বাতাসের আহ্বানে...(নিঃসঙ্গতা)
৫.
দাঁড়িয়ে থাকলেই বুঝি ঘোড়ারোগ থাকে! ঘোড়ারোগ নেই, ঘোরা রোগ আছে। পেছনে তাকানো নতুন অভ্যেস; প্রাণিজ ব্যাকরণ বলে, পেছনে তাকানো পাপ-- যেকোনোভাবে শুধু পেছনে ‘ফেলতে’ হয়। মাটির পাশে দাঁড়িয়ে আছি যদি বলি তবে বিশ্বাস হবে কি? একাকী জোনাকি আলো দিয়ে চলে গেলো আমার জামার ভেতরে, সজোরে।
ফয়েল প্যাকে বাতাস এসে শব্দ তোলে কর্কশ, কানে লাগেপরিবেশবাদীদের নিদ্রামগ্ন শরীর তখন আড়মোড় ভাঙেপ্লেজার ট্রিপের রোদ ফুরিয়ে বৃষ্টি নেমে এলে চারদিকেআমাদের তখন সাঁতার শেখার তীব্র বাসনা জেগে ওঠে।ছিপ দিয়ে মাছ শিকারের ধৈর্য্য আমরা হারিয়েছি আগেইখাদ্যজ্বর আমাদের পুড়িয়েছে বিকলাঙ্গ জিহ্বার ক্রন্দনেনেহায়েত মুগ্ধতা শোনায় গল্প, বলে কত ম্যানিফেস্টোআসলে এইসব ঢেকে রাখা মুখোশের কলকব্জা বিশেষ!(প্লেজার ট্রিপ/ সৈয়দ সাখাওয়াৎ)
মন্তব্য