.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

কবি সৈয়দ সাখাওয়াতের সঙ্গে অন্যকথা

কবি সৈয়দ সাখাওয়াতের সঙ্গে অন্যকথা  নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

কবি সৈয়দ সাখাওয়াতের সঙ্গে অন্যকথা 
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

কবি সৈয়দ সাখাওয়াৎ। আমি তাকে একুশ বছর ধরে জানি। এবং তাকে সাখাওয়াৎভাই বলেই ডাকি। তিনি আমার বন্ধু, বড়ো ভাই, একসময়ের কমরেড। আমরা একই ক্যাম্পাসে, একই রাজপথে দাবি আদায়ের মিছিল করেছি। একই সঙ্গে কবিতা লিখেছি, গান লিখেছি।

এইখানে তার সম্পর্কে আমি নতুন করে কিছু বলবো না। তার সম্পর্কে ‘বিন্দু’র এই সংখ্যাতেই বিস্তারিত রয়েছে পাঠকের জন্যে।

তার সঙ্গে তার লেখালেখি নিয়ে আগে অনেক কথা হয়েছে আমার। তার লেখালেখি নিয়ে একটা ইন্টারভিউও আমি করেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। তাই আর সেই বিষয়ে না গিয়ে তার সঙ্গে অন্য কিছু কথা বলেছি, জীবন, মৃত্যু, দর্শন, রাজনীতি ইত্যাকার বিষয়ে। সেইসব কথাই এইখানে রাখলাম। 

আমি: আপনি কি অপ্টিমিস্ট? হলে কেন বা না হলে কেন নন?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: বিষয়টা এমন না যে, হরহামেশাই আমি আশা বা নিরাশা নিয়ে ভাবতে থাকি। তবে কোন কোন সময় আসে যখন মানুষ হিসেবে আমার সকল দ্বিধা-জড় অনুভুতি কিংবা হতাশার গ্লানিবোধ চরমভাবে আক্রান্ত করে তখন আমি বিকল্প চিন্তা খুঁজি। জীবনের দিকে দেখি। এই যে মানুষ, নানারকম বৈচিত্য নিয়ে বেঁচে আছে, লড়াই করছে কিংবা প্রতিদিনকার জীবন-জীবীকার চেষ্টার মধ্য দিয়ে আরেকটা নতুন দিনের দিকে যাচ্ছে; এটা অনেক আনন্দের। আশাবাদ তৈরি করে। আমরা একটা স্ট্রাকচারাল ন্যারেটিভ-এর মধ্যে বাস করি, মানে হলো সবকিছুই চরমভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং আঁটসাঁট একটা পরিস্থিতি। বের হয়ে নতুনভাবে কিছু করার সময় এবং সুযোগ কম। কিন্তু তারপরও একটা মুহুর্তের জন্য মানুষ চেয়ে থাকে, আমিও থাকি। এটাই আমার কাছে আশাবাদ। এর মধ্য দিয়ে আরেকটা নতুনের দিকে আমি যেতে চাই। নতুন মানে সৃজনশীল, প্রগতির দিকে। রেমার্ক আমার প্রিয লেখক, তা৭র দুটো বইয়ের রেফারেন্স দিতে চাই; একটি হলো ‘স্পার্ক অফ লাইফ’ আরেকটি হলো ‘কোথায় স্বর্গ’। দুটি বই-ই অনেক অনুপ্রেরণা দায়ী। মানুষ এতটাই সৃজনশীল এবং আশাবাদ নিয়ে চলা প্রজাতি, সে শেষ পর্যন্ত লড়ে। কোন না কোন জায়গায় গিয়ে সে দাঁড়ায়। আমি এভাবেই ভাবি, আমার আশাবাদের শক্তিও এটাই। 

আমি: নিজের অস্তিত্ব টের পান? পেলে অস্তিত্বের যন্ত্রণাকে আপনি কীভাবে দেখেন আর মোকাবেলা করেন?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: অনুভব মানুষর সংবেদনের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অনুভূতি। মানুষ নিজের অস্তিত্ব আসলে কীভাবে বা কোন ফর্মে অনুভব করে? আমার ধারণা ব্যক্তি মানুষের অনেকগুলো বক্স থাকে। এই বক্সগুলো তার সকল সম্পর্ক এবং তার নিজের চরিত্রের বিবেচনায় তৈরি হয়। প্রতিটা সম্পর্ক আর চরিত্রের ক্ষেত্রে সে নিজেকে একেকভাবে অনুভব করে। এটাই তার অস্তিত্ব। এখানে মানুষ অবস্থান করে। আমাদের যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা, ভয় ও উৎকণ্ঠা কিংবা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দ্বন্দ্ব অথবা দায়িত্ব পালন ও পূরণের সকল সংকট ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব হয়। আবার মানুষ হিসেবে নিজের উদারতা, সততা,সমব্যথীতা, নিষ্ঠা এবং এর বিপরীতে সংকীর্ণতা, অসততা বা অন্যয্যতা এগুলো মুখোমুখি দাঁড় করায় আমাকে। আমি তাই নিজেকে মাপি কতটুকু মানবিক বোধসম্পন্ন হতে পারলাম সেই বোঝাপড়া দিয়ে। আমরা একটা জটিল পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় আছি। মানুষের মানবিক বোধগুলো এখান চরমভাবে অবহেলিত। মানুষ ভোগ এবং মুনাফার দাস এখানে। একটা দার্শনিক প্রশ্নও বটে আমরা কেন বেঁচে আছি এই অবস্থায়। আমি বলি এটাই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। এই অস্তিত্ববোধ আমাকে যন্ত্রণা দেয় বটে তবে বাঁচতেও শেখায়। এটা প্রথম প্রশ্নটার সাথে সংযুক্ত। বেঁচে থাকাটাই একটি বড় ঘটনা। বেঁচে থাকলেই আছে সম্ভাবনা, আছে মুক্তি!

আমি: আপনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কি এখনো মার্ক্সবাদী? হলে কেন? পৃথিবীতে এই প্রযুক্তিবিপ্লবের কালে মার্ক্সবাদের ভবিষ্যৎ কী?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: মার্ক্সবাদ একটা সৃজনশীল রাজনৈতিক মতাদর্শ। কার্ল মার্কস প্রকৃতঅর্থে সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের ধারাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করে এর সৃজনশীল বিকাশের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে। এটা তো সত্য যে জগত নিয়ত বদলাচ্ছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বে শেষ পর্যন্ত মানুষ একটা প্রতিক্রিয়াশীল, শোষণ-বঞ্চনামূলক সমাজে আদৗ থাকতে চায় কি? মানুষ নিজের সর্ব্বোচ্চ মুক্তি চায়। কিন্তু চলমান রাষ্ট্রীয় কাঠামো, আইন, বিচার ব্যবস্থা, বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা, উৎপাদন ব্যবস্থা এগুলো কি মানুষের বেঁচে থাকাকে স্বীকার করে? করে না, কারণ এই ব্যবস্থা চায় পৃথিবীতে দাসের রাজ্য, শুধুই ক্ষমতাবানদের তোষণ এবং পালন। পৃথিবীর পঁচানব্বই শতাংশ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে পাঁচ শতাংশ মানুষ বা কোম্পানি। এটা কি আদৌ মানবিক সমাজ? মানুষ কি সার্বিকভাবে মানুষ জীবন যাপন করে এখানে? করে না, আর করে না বলেই এই সমাজ বদলানো দরকার। সমাজ বদলানোর জন্য, সমাজকে আরো প্রগতিমূখী ও সৃজনশীল করার জন্য এখন পর্যন্ত মার্ক্সবাদ স্বচ্ছ্বভাবে বলতে পেরেছে। এটাই আমার আস্থার কারণ। আর প্রযুক্তি বিপ্লবের কথা- প্রযুক্তির পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কি মানুষের উপর শোষণ-নিপীড়ণ বন্ধ হয়ে গেছে? মানুষ কি আরো প্রান্তিক হয়ে পড়ছে না এই সমাজে। সমাজে কি শ্রেণী ও শ্রেণী শোষণ বন্ধ হয়ে গেছে? কোন কিছুই তো পাল্টায়নি, শুধু ফর্ম পাল্টেছে। বিশ্বের দেশে দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি আর বাজার নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ের ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। নতুন নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে, মানব ও সভ্যতা বিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবসা কিন্তু বাড়ছে। প্রাণ-প্রকৃতি উজাড় করে, প্রকৃতির উপর শাসন জারি রেখে এই পুঁজিবাদী বিশ্ব কীভাবে টিকবে। মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস আমরা জানি। ফলে আমি সুদূরের পানে দেখি-সমাজ বদলের আলো আমি দেখি। এটাই চিরন্তন।  

আমি: আপনার কাছে জীবনের অর্থ কী রূপ?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: জীবন তো একটা মোহময় রূপকথার মতই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রতিটা ঘটনার মধ্যেই আমি জীবনকে উপলব্ধি করি। শিশুর মুখের হাসি-কান্না থেকে ওই বৃদ্ধ মানুষটির আরেকটা দিন বাঁচার মধ্যেই জীবনের স্বরূপ। জীবন মানে আরো একটা সম্ভাবনা। আরেকটা সময়ের কাছে পৌঁছানো। আমরা শুধু কি প্রাত্যাহিকতার মধ্যে বাঁচি? বাঁচি না, ওটাকে আমরা জীবন বলি না।  জীবন তাই আমার কাছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয়। একটা সুন্দর অনুভূতি আমার মধ্যে যে তীব্র বাঁচার আনন্দ দেয় তা অবিশ্বাস্য। শুধু ওই মুহূর্তটার জন্যই আমার তীব্র বাঁচার আকাঙ্ক্ষা!

আমি: মৃত্যুচেতনা আছে আপনার মধ্যে? মৃত্যুচিন্তা আসে কখনো? মৃত্যুর রূপ কী?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: বেঁচে যখন আছি, মৃত্যু তো আসবেই। আমি খুব বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি দিয়েই এটা দেখতে চাই। কিন্তু সবসময় পারি না। অনেক রোমান্টিকতা ভিড় করে। কষ্ট হয়। থাকা-না-থাকার কষ্ট অনেক তীব্রভাবে ধরা দেয়। তুমুল  এক অন্ধকারবোধ গ্রাস করে। তখন গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে হয়। মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবিতা মেনে নিয়েই এই যে বেঁচে আছি তা অর্থবোধক করাটাই জরুরি বলে জেগে উঠি। 

আমি: প্রেম কী? নারী ও পুরুষের মধ্যকার প্রেম সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: প্রেম তো নানামাত্রিক। জাগতিক প্রেম আর অসীম, অরূপের প্রতি প্রেম এগুলো ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির জন্ম দেয়। নারী -পুরুষের প্রেম তো মানুষের যৌনতারই বহিঃপ্রকাশ। মানুষ সঙ্গপ্রিয়, তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই বন্ধু-স্বজন, প্রেমিক-প্রেমিকা, আত্মীয়-পরিজন এই সম্পর্কগুলোর প্রয়োজন। প্রতিটি সম্পর্কের আবার নারী-পুরুষভেদে আলাদা আলাদা মিথষ্ক্রিয়া আছে। সবগুলোই যৌন সংবেদনশীল সম্পর্ক নয়। আদর, ভালোবাসা, নিরাপত্তা, স্নেহ এই বিষয়গুলোও আলাদা আলাদাভাবে ধরা দেয়। প্রয়োজনও বটে। 

আমি: মানুষ অনায়াসে পিঁপড়া তথা অবয়বে ক্ষুদ্র আর ছোট প্রাণীদের হত্যা করে, তার জন্য কোনো অনুতাপ নাই, অথচ হাতি বা বৃহতাকৃতির কোনো প্রাণী মারা পড়লে তার জন্য কাঁদে, প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। কেন? এটা কী স্ববিরোধ, কিংবা ভান বলে আপনার মনে হয় না? নাকি প্রাণের মধ্যেও ক্লাস আছে? আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: আমার ধারণা এখানে প্রাণী হিসেবে বড় বা ক্ষুদ্রাকৃতির চেয়ে ইকো সিস্টেমে কার কী ভূমিকা তার উপর মূলত মানুষের আচরণ নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে উপস্থিতির প্রাবল্য বা কম থাকার বিষয়টিও সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন অনেক ক্ষুদ্র প্রাণী আছে যেগুলো ব্যাপকহারে জন্ম নেয় এবং বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। এই প্রাণী বা পতঙ্গগুলো মেরে ফেলা হয়, আবার কোন কোন প্রাণী বা পতঙ্গ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক বৃহত আকারের প্রাণী যেগুলো ইকো সিস্টেমের জন্য জুরি কিন্তু ক্রমহ্রাসমান সেগুলো বাঁচানোর জন্য নানা ধরণের বৈজ্ঞানিক প্রকল্প তৈরি করে কনজারভেশনের ব্যবস্থা হচ্ছে। মূলত মানুষের অর্জিত জ্ঞানের মধ্যে যা যা গুরুত্বপূর্ণ  তাই-ই প্রয়োজনীয় বিচার করা হয় বলে আমার ধারণা। 

আমি: আমার তো মনে হয় পৃথিবীর সকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী থেকে শুরু করে বৃহদাকৃতির প্রাণীসহ সকলেরই ইকো সিস্টেমে ভূমিকা রয়েছে। যাইহোক অন্য প্রসঙ্গে যাই এবার। বাঙলাদেশের নারীবাদীরা সবশ্রেণির নারীদের অধিকারের প্রশ্নে কেন সোচ্চার নয় বলে আপনার মনে হয়?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: এই প্রশ্নটা একটা নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে করা। আমি ধরে নিচ্ছি এটা তোমার মতামত। কিন্তু আমি একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করি। আমার কাছে নারীবাদ একটা আন্দোলন। এটা জরুরি কেননা সমাজে সমতা ও ন্যয্যতার প্রয়োজন। এখন যদি কেউ নিজেকে নারীবাদী মনে করেন তিনি আসলে একটা চরম প্রভাবশালী পুরুষতান্ত্রিক এবং ভোগবাদী সমাজে মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা এবং শ্রেণিশোষণের বিপরীতে একটা ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। এটা সকল নারী-পুরুষের জন্যই সমানভাবে প্রয়োজন। ক্ষমতার প্রশ্নে, পিতৃতন্ত্র একটা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, একটা আচরণগত বৈশিষ্ট্য যা সমাজের সকল নারী-পুরুষের মধ্যেই বিদ্যমান। ফলে নারীবাদ এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং ন্যয্যতার প্রশ্নে দাবি করে।  ফলে এটি সকল শ্রেণির নারীর পক্ষেই কথা বলতে বাধ্য। আর যদি ব্যক্তিগতভাবে কেউ এটি না করেন তবে তো তিনি নারীবাদী নন। তবে এটাও সত্য যে আমরা যদি নারীবাদকে সমাজ পরিবর্তনের প্রয়োজনের বাইরে রাখি তবে তা প্রকৃত অর্থে কোন প্রভাব ফেলবে না। আর তাই বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থাকে মেনে নেবো আবার পিতৃতন্ত্রের অবসান চাইবো এটা সোনার পাথর বাটি-ই বটে। 

আমি: ঠিক বলেছেন। আপনি কি জাতীয়তাবাদ মানেন?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: প্রবল জাতীয়তাবাদ আমার কাছে সংকীর্ণতা বলে মনে হয়। আমি প্লুরালিজমে বিশ্বাস করি। 

আমি: মানুষের সীমাবদ্ধতা কী বলে আপনার মনে হয়?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: নিজেকে স্বচ্ছভাবে বুঝতে না পারাটাই তো সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা বলে মনে হয়। 

আমি: আপনার সীমাবদ্ধতা কী?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: অনেক। সীমাবদ্ধতা ছাড়া তো মানুষ নয়। তবে চেষ্টা করি সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার।  

আমি: মানুষের দুঃখের কারণ কী?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: অতি আকাঙ্ক্ষা আর অতৃপ্তি।

আমি: সুখ, শান্তি আর আনন্দ, এই তিন এর সংজ্ঞা কী আপনার কাছে?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: এই সবগুলোই ব্যক্তি মানুষের নিজস্ব মূল্যবোধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেকারণে পৃথিবীব্যাপী প্রতিটি মানুষের সুখ, মান্তি ও আনন্দের প্রকাশ, তৃপ্তিলাভ এগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এমনকি এমন তুচ্ছ কারণে এটা ঘটতে পারে যা আমাদের চিন্তারও অতীত।

আমি: বাড়ির ভিতর ঘর কেন থাকে?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: মানুষের নিজস্ব বোধের সাথে এর সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয়। একদম ব্যক্তিগত কিছুর মধ্যে আমার একটা নিজস্ব ঘর আছে এটা এক ধরণের তৃপ্তির জন্ম দেয় বলে মনে হয়। 

আমি: ঘর আর বাহিরের সংজ্ঞা কী?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: ঘর হলো নিজের আর বাহির হলো অন্যদের সাথে আমার মিথষ্ক্রিয়া। আবার ঘরের দেয়ালগুলো না থাকলে আমরা সবাই এক। 

আমি: একজন বাবা হিশেবে আপনার উপলব্ধি কী? আপনার কন্যা সম্পর্কে বলুন
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: বাবা হিশেবে আমার সবচেয়ে বড় উপলব্ধি হলো, সন্তান জন্মদানে অংশ নিয়ে বাযোলজিক্যালি বাবা হলেও প্রকৃতঅর্থে বাবা হতে হয়। যা অত্যন্ত কঠিন। সন্তানের বেড়ে ওঠায় ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে না পারলে সন্তান কখনোই এ সমাজে বড় ভুমিকা রাখতে পারে না। বাবা হওয়া (এবং মা হওয়াও) তাই কতগুলো শর্ত তৈরি করে। সমাজে আরেকটা প্রাণি বাড়ানোর জন্য ভুমিকা রাখা তাই কোন অর্থেই বাবা হওয়া নয়। আমি দেখেছি মানুষের যৌন তৃপ্তির বাইরে সন্তান উৎপাদন একটা সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা পূরণ করে। সেই সন্তানকে ঘিরে মানুষ যা যা করে তা এক ধরণের নিজের ইচ্ছা পূরণের এক অসুস্থ কার্যক্রম। সন্তানকে তার মত করে বেড়ে ওঠার  কিংবা তার বেড়ে ওঠায় কতৃত্বশীল আচরণের বাইরে বন্ধুর মতো ক’জন বাবা-মা পাশে থাকে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এই যে আচ্ছা পূরণের এক তৎপরতা এটাকে আমি বাবা (বা মা ) হওয়া মনে করি না। 
কন্যার সাথে আমার বসবাস এক ধরণের পরম্পরমুখী অনুভূতির। আমার সাথে তার সকল আলাপ, আমিও অনেক আলাপ করি। কোন কোন আলাপ ওর বিবেচনার বাইরে থাকে। কিন্তু করি। ব্যক্তি হিসেবে ওর মর্যাদা আমার কাছে অনেক। এটা সে এই বয়সেই বুঝেছে। কোন শর্ত আরোপ করিনি আমরা। মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে নিজের বা অন্যের উপর এর প্রভাব কী ধরণের হয় এগুলো তাকে জানাই। সে প্রশ্ন করতে শিখেছে, এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ও এখন কিশোরী, এই বয়সের সকল বিষয় ও জেনেছে আমার কাছ থেকে। ওর স্বচ্ছন্দ্য আলাপ করার ভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করে। ওর মা’র ভূমিকাও অনেক বড়। এটা বোধ হয় বাবা হওয়ার আনন্দ, আমার একটা সন্তান আছে-আমি ওর কথা বলতে পারছি। কে জানে, হয়তো এমনটাই সত্য।

আমি: প্রিয় বই বলতে মুহূর্তেই মনে পড়ে এমন কোনো বইয়ের নাম বলুন। কেন প্রিয়?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: তোমার পশ্নটা পড়ে আমার চট করে “দ্য রোড ব্যাক” উপন্যাসটির কথা মনে পড়লো। এটা আমার প্রিয় একটা উপন্যাস। যুদ্ধফেরত সৈনিকের জীবন ও যন্ত্রণার উপর এই বই আমার কাছে অসামান্য বলে মনে হয়। রেমার্কের লেখা বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ের উপর সবচেয়ে সেরা বলে মনে করি আমি। এরকম গভীর উপলব্ধি নিয়ে যুদ্ধ পরবর্তী মানুষগুলোর জীবন নিয়ে এই লেখা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। মৌলিক প্রশ্নগুলো ফিরে ফিরে আসে-পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকা, এই যে সংঘর্ষ, দখল, ভোগ-বিলাস এগুলো প্রয়োজন কী। কেন মানুষ এই অসম্ভব লিপ্সা নিয়ে বেঁচে থাকে।  একেমন অদম্য ক্ষুধা! মানুষের আচরণের অনালোকিত জায়গাগুলো এই উপন্যাসে পাই, আমাকেও ভাবায়। 

আমি: আপনার শৈশবের সবচেয়ে তীব্র কোনো স্মৃতি বলুন।
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: কৈশোরে আমি একবার ডুবে যাচ্ছিলাম। আমার এক বন্ধু আমাকে উদ্ধার করে, ওর নাম তুষার। সেদিন জেনেছি এই প্রাণের দাবি কত! বন্ধুটির কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। কোথায় আছে এখন তা-ও জানি না। 

আমি: প্রিয় একটা সিনেমা নিয়ে বলুন।
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: এখন মনে পড়লো ‘আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’-এর কথা মনে পড়লো। স্ট্যানলি কুব্রিক-এর তৈরি সেরা একটা ছবি। এ-ছবিটা কুব্রিকের একটা মাস্টারপিস। মানুষের ভেতর যে স্যাডিস্ট মনোভাব, বিকৃত রুচির প্রচন্ড বহিঃপ্রকাশ- তা কিন্তু এই সময়ে মানে ২১ শতকে এসে আমাদের কাছে কাচের মতো পরিষ্কার। ১৯৭১-এ তৈরি করা ওই ছবিতে মানুষের বিকারগ্রস্ততা কী চরম হতে পারে তা দেখানো হয়েছে। আইন বা জেল সেই অর্থে কোনকিছু সঠিক বা যথার্থ করতে পারে। মূলত সমাজ যদি নেতিবাচক স্পিরিট দ্বারা পরিচালিত হয় তবে মানুষের মধ্যে অবচেতনে যে ভয়াবহ বিকৃতি জন্ম নেয় সেটাই এখানে দেখানো হয়েছে। অনেক ক্লাসিক বিষয়ও এখানে ব্যবহার হয়েছে, যেমন বেটোফেন-এর সংগীত বা অতি উচ্চমূল্যর আর্টওয়ার্ক। চূড়ান্ত বিচারে, মানষকে , মানুষ হতে হয়। সমাজের বিরাজমান ব্যবস্থা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে, সিনেমায় যে আলেক্স চরিত্রটি দেখানো হয়েছে সেই আলেক্স আমাদের ঘরে-বাইরে সার্বক্ষণিক চলাচল করছে। এই উপলব্ধি কুব্রিকের হয়েছিলো ৫০ বছর আগেই। 

আমি: ঠিক বলেছেন। ‘আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ আমারও প্রিয় সিনেমার একটা। এইবার  যেকোনো ক্ষেত্রে আপনার প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব-এর নাম বলুন। কেন প্রিয়?
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: প্রিয় মানুষ আছে, কিন্তু কোন প্রিয় ব্যক্তিত্ব নাই।

আমি: আচ্ছা। আপনাকে বহু ধন্যবাদ সৈয়দ সাখাওয়াৎভাই, আজকের মতো অধিবেশন শেষ। আবার কথা হবে।
সৈয়দ সাখাওয়াৎ: তোমাকেও ধন্যবাদ। 

মন্তব্য

BLOGGER: 3
  1. রাফাতুল আরাফাত৩ অক্টোবর, ২০২২ এ ১১:৪৮ AM

    সাক্ষাৎকারের প্রশ্নগুলো পরষ্পর বিচ্ছিন্ন মনে হয়েছে। পড়তে কষ্ট হচ্ছিলো। কিছু প্রশ্ন কাটকাট মনে হয়েছে। মনে হচ্ছিলো প্রশ্নকর্তা কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্ত হয়ে আছেন। প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করছেন- "একজন বাবা হিশেবে আপনার উপলব্ধি কী? আপনার কন্যা সম্পর্কে বলুন" একজন কবিকে অবশ্যই ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা যাবে, তবে জিজ্ঞাসাটা আরও সুন্দর হতে পারতো।

    সাক্ষাৎকারটা যখন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য নিচ্ছেন, তখন যে আশা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম, তাতে হতাশ হওয়া উপায় নেই। সত্যি বলতে, সাক্ষাৎকারটার প্রশ্নগুলো থেকে পাঠকের প্রশ্ন লেখকের উত্তর সেগমেন্টের প্রশ্নগুলো বেশি প্রাসঙ্গিক এবং গুছানো।

    উত্তরমুছুন
  2. রাফাতুল আরাফাত৩ অক্টোবর, ২০২২ এ ১১:৪৯ AM

    সাক্ষাৎকারের প্রশ্নগুলো পরষ্পর বিচ্ছিন্ন মনে হয়েছে। পড়তে কষ্ট হচ্ছিলো। কিছু প্রশ্ন কাটকাট মনে হয়েছে। মনে হচ্ছিলো প্রশ্নকর্তা কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্ত হয়ে আছেন। প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করছেন- "একজন বাবা হিশেবে আপনার উপলব্ধি কী? আপনার কন্যা সম্পর্কে বলুন" একজন কবিকে অবশ্যই ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা যাবে, তবে জিজ্ঞাসাটা আরও সুন্দর হতে পারতো।

    সাক্ষাৎকারটা যখন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য নিচ্ছেন, তখন যে আশা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম, তাতে হতাশ হওয়া উপায় নেই। সত্যি বলতে, সাক্ষাৎকারটার প্রশ্নগুলো থেকে পাঠকের প্রশ্ন লেখকের উত্তর সেগমেন্টের প্রশ্নগুলো বেশি প্রাসঙ্গিক এবং গুছানো।

    উত্তরমুছুন
  3. রাফাতুল আরাফাত৩ অক্টোবর, ২০২২ এ ১১:৪৯ AM

    সাক্ষাৎকারের প্রশ্নগুলো পরষ্পর বিচ্ছিন্ন মনে হয়েছে। পড়তে কষ্ট হচ্ছিলো। কিছু প্রশ্ন কাটকাট মনে হয়েছে। মনে হচ্ছিলো প্রশ্নকর্তা কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্ত হয়ে আছেন। প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করছেন- "একজন বাবা হিশেবে আপনার উপলব্ধি কী? আপনার কন্যা সম্পর্কে বলুন" একজন কবিকে অবশ্যই ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা যাবে, তবে জিজ্ঞাসাটা আরও সুন্দর হতে পারতো।

    সাক্ষাৎকারটা যখন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য নিচ্ছেন, তখন যে আশা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম, তাতে হতাশ হওয়া উপায় নেই। সত্যি বলতে, সাক্ষাৎকারটার প্রশ্নগুলো থেকে পাঠকের প্রশ্ন লেখকের উত্তর সেগমেন্টের প্রশ্নগুলো বেশি প্রাসঙ্গিক এবং গুছানো।

    উত্তরমুছুন
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,32,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,319,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,15,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,56,ছড়া,1,ছোটগল্প,12,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,15,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,152,প্রিন্ট সংখ্যা,4,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভাষা-সিরিজ,5,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,37,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: কবি সৈয়দ সাখাওয়াতের সঙ্গে অন্যকথা
কবি সৈয়দ সাখাওয়াতের সঙ্গে অন্যকথা
কবি সৈয়দ সাখাওয়াতের সঙ্গে নির্ঝর নৈঃশব্দ্য’র অন্যকথা
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhV3RYPeDVQDSjVCfXyO9Uk_LjWvszxEt0BiV7tT0ZFq3txXzITrJI6GsuA3sFRUbPqbCmHpYUptwrzdZfL27CcpLvIllY0qy04PGTHOD3_bSAcBQKo37M5qofzhx3eDy2OvoZsVKZagePuol-XwPXXiOArq6ddW8pnwuWIMQnEDNKfYdf0-CxqHflD/w320-h180/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9D%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%83%E0%A6%B6%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A7%88%E0%A7%9F%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%8E-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%8E%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhV3RYPeDVQDSjVCfXyO9Uk_LjWvszxEt0BiV7tT0ZFq3txXzITrJI6GsuA3sFRUbPqbCmHpYUptwrzdZfL27CcpLvIllY0qy04PGTHOD3_bSAcBQKo37M5qofzhx3eDy2OvoZsVKZagePuol-XwPXXiOArq6ddW8pnwuWIMQnEDNKfYdf0-CxqHflD/s72-w320-c-h180/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9D%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%83%E0%A6%B6%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A7%88%E0%A7%9F%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%8E-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%8E%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0.jpg
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2022/10/interview-by-Nirzhar-Noishabdya.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2022/10/interview-by-Nirzhar-Noishabdya.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy