বিন্দুর বিশেষ সংখ্যার ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও থাকছে ‘পাঠকের মুখোমুখি’ বিভাগটি। আমরা চাই একজন লেখকের প্রতি পাঠকের নানান প্রশ্ন, কৌতুহল লেখকের কাছে পৌঁছে দিতে। এর ফলে লেখকও তার পাঠকদের জিজ্ঞাসা-মনোভাব সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। কবি সৈয়দ সাখাওয়াৎ সংখ্যার জন্য আমরা সেপ্টেম্বরের (২০২২) প্রথম সপ্তাহে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে পাঠকদের কাছে প্রশ্ন আহ্বান করেছিলাম। অনেক প্রশ্ন পেয়েছি, আমরা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কবি সৈয়দ সাখাওয়াৎ। জানিয়ে রাখি, প্রশ্নমালার বিন্যাস করা হয়েছে প্রশ্ন পাঠানোর তারিখের ভিত্তিতে। ধন্যবাদ।-সম্পাদক
নাজমুল ইসলাম: কবিতা কেন লেখেন? কবি না হলে কী হতেন?
উত্তর: মনে হয় মাটি কাটতাম। মানে কাজকর্ম যা করছি তাই-ই করতাম। কবিতা লেখা বা কবি হওয়া তো বাড়তি কোন মিশন নয়, এটা ব্যক্তির পছন্দের মতো। মানুষ যে অর্থে প্রশ্নটি তুলে ধরে তা ব্যক্তি মানুষটি- যে কবিতা লিখে বা লিখতে চায় তার জন্য সবসময় একরকম অর্থ বহন করে না। আমার কাছে কবিতা চর্চা বা লিখতে চাওয়া অনেকটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করার মতো। অর্থাৎ কবিতা আমি লিখতে চেয়েছি, আমি আমার ভাষায় আমার চিন্তা এবং দার্শনিক উপলব্ধি বলতে চেয়েছি। সেক্ষেত্রে কবিতা আমার মাধ্যম এবং এই মাধ্যমে আমি কিছুটা সাবলীল। তাই কবিতা লিখছি। মজা করে মাটি কাটার কথা বললেও, এই জীবন-জীবীকার যে বাস্তবতা তাতো আর ঝেরে ফেরা যায় না। তাই অবধারিতভাবে কোন না কোন কাজ বা যা করছি তাই-ই হয়তো করতাম।
নাজমুল ইসলাম: পত্রিকা সম্পাদনা করলেন না কেন?
উত্তর: জানি না কেন করিনি। ভাবিনি কোনদিন পত্রিকা সম্পাদনা করার বিষয়ে। তবে এখনো তো সময় চলে যায়নি।
শাওন মিনহাজ: বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই৷
উত্তর: মূল্যায়ন করার মতো আমার কোন বিশেষ যোগ্যতা নেই । এবিষয়ে যারা কাজ করেন তারা ভালো বলতে পারবেন।
জয়ন্তিকা: ‘নিহিলের বনে’ বইটির কথা যদি বলি, তবে আপনার বিশেষত্ব, আস্ত এক ন্যারেটিভ কবিতাকে একেবারে সুরের মধ্যে এনে ফেলা। আদতে একজন কবি কীভাবে সুরের ভেতর ঢুকে যায়, সেই অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাচ্ছি। আপনি হয়তো বলবেন, পাঠকই বিচার করবে। তবুও জানার ইচ্ছে, ‘নিহিলের বনে’ বাংলা কবিতায় কতটুকু প্রভাব বিস্তার করবে বলে মনে হয়?
উত্তর: এটা খুব জটিল একটা প্রশ্ন। সত্যি কথা বলতে কী, আমি যখন ”নিহিলের বনে” লেখা শুরু করি তখন আমি এর সাথে বসবাস করা শুরু করি। আমি টানা লিখছিলাম। এই যে টানা লিখছিলাম এটা যেদিন বন্ধ হযে গেলো সেদিন থেকে আমি আর একটা লাইনও এই সিরিজের জন্য লিখিনি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো এরপর সেই অর্থে আমি আর কোন লেখা লিখতে পারিনি। ধীরে ধীরে আমার লেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। আমি একটা ভয়াবহ রাইটার্স ব্লকের মধ্যে পড়ে গেলাম। আপনি যে বললেন সুরের মধ্যে থাকা, আমি ওরকম একটা ছন্দে ছিলাম লেখাটার সাথে। এই অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন অনুষঙ্গের। মনে হচ্ছিলো আমি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একটা দীর্ঘ সময় পার করেছি তার বিরাট একটা অংশ “নিহিলের বনে” সিরিজে একসাথে জায়গা করে নিয়েছে। লেখাগুলো আমার উপলব্ধি সাধ্য, একটা মরমবোধে তাড়িত।
এনামুল কবীর: বিষয়টা কাটখোট্টা যদিও। তবুও বলি, বর্তমান বাংলা কবিতার গতিপথ কোনদিকে বলে মনে হয়? নতুনত্ব… গত দশ বছরে কোন কোন বিষয়গুলো আপনার চোখে পড়েছে এ বিষয়ে?
উত্তর: এই উত্তরগুলো আমার জানা নেই। সাহিত্য বিশেষজ্ঞ বা সমালোচকদের মতো করে আমি ভাবতে পারি না। এটা আমার সীমাবদ্ধতা হয়তো। মানুষ এই আকালে সাহিত্য চর্চা করে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও সমাজে, বাজারের এত চটকদারিত্বের মধ্যে মানুষের শিল্পরুচি এবং জীবনকে উপলব্ধি করার যে রুচিবোধ তা খুব গুরুত্বপূর্ণ্। মানুষ লিখছে মানে সে তার চারপাশকে গভীরভাবে দেখছে. সে তার প্রশ্নগুলো জারি রাখছে। চিন্তা এবং দর্শনের নানামাত্রিক যোগ ঘটছে কোথাও না কোথাও। এটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এনামুল কবীর: আপনার তিনটি বইই প্রকাশ হয়েছে ছোট প্রকাশনা থেকে। এর কারণ কী?
উত্তর: এটার উত্তর প্রকাশকরাই দিতে পারবেন কিংবা বড় প্রকাশকরা; যারা আমার বই ছাপাননি…।
নবনীতা চৌধুরী: ‘জীবন, বিষণ্ন রোদের ডানা’ সিরিজ কবিতাটি সম্পর্কে জানতে চাই৷ এটি কীভাবে লিখেছিলেন? এই ফর্মটা আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন নাকি লিখতে লিখতে এমন হয়েছে?
উত্তর: হ্যাঁ, লিখতে লিখতে ওরকম ফর্মে লেখা হয়েছে। প্রথম কিছু লেখার পর, ধীরে ধীরে লেখাটা ওই ফর্মেই রিকতে থাকি। আগে থেকে ভেবে বা লক্ষ্য ঠিক করে লিখেছি এমন নয়। আমার ওরকম লেখা হয় না।
মুকুল রহমান: ধীরে ধীরে প্রিন্ট লিটলম্যাগ কমে যাচ্ছে। অনলাইন লিটলম্যাগের জোয়ার এলো। এখন ফেসবুক লাইভে/পোস্টে কবিতা প্রকাশ হয়। আসলে সোশাল সাইটগুলা সাহিত্য দুনিয়ায় পরিবর্তন আনছে বলে মনে হয় না?
উত্তর: আনছেতো বটেই। এখন তো এক ক্লিকে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার দিন। কাগজে ছাপা পত্রিকা তো অনেক কষ্টসাধ্যও বটে। প্রযুক্তির এই সুবিধাটা নিয়ে আরো বেশি কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো। অনেকবেশি পাঠকের কাছে লেখা পৌঁছে যাচ্ছে নিমিষেই। আগের সীমাবদ্ধতাগুলো কেটে গেছে। এটা একটা বড় পরিবর্তন।
আলম সিদ্দিক: আপনার কবিতা অবশ্য খুব কমই পড়েছি। তবে এই অল্প পড়ার মধ্যে আমার যেটা মনে হয়েছে, আপনার অ্যাপিয়ারেন্স বলি বা ফর্মে র দিক থেকে কখনও মনে হয়েছে জীবনানন্দ, বিনয়, শঙ্খ ঘোষের মতো। পূর্বসূরী হিসেবে তাদের কি ফলো করেন নাকি এটাই আপনার স্বাভাবিকতা?
উত্তর: জীবনানন্দ, বিনয় , শঙ্খ এঁরা আমার প্রিয় কবি। বহুবার পড়েছি তাঁদের লেখা। আপনার চোখে পড়লে সম্ভবত প্রভাব রয়েছে। প্রভাব খারাপ কিছু নয়। তবে আমি পুনরুৎপাদন করতে চাই না। সচেতনভাবেই তা এড়িয়ে নিজের উপলব্ধি ও চিন্তার উপস্থাপন করি।
উপল বড়ুয়া: ‘পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে’ বইতে আপনার কবিতায় এক ধরনের বিষণ্ন সুর ছিল। আর এখন ‘নিহিলের বনে’ তা আরও বেশি ও লাউড। এই দুই জার্নিতে আপনি আর কোন কোন ধরনের চেঞ্জের ভেতর দিয়ে গেছেন বলে মনে হয়?
উত্তর: হযতো এটাই আমার ধরন উপল। প্রতিটা লেখকের একটা স্কুল অফ থটস থাকে , এটা আমার মনে হয়। আমারটা মনে হয় এই জনরার। মানে বিষন্নতা। কিন্তু আমি নিজে বিষন্ন মানুষ নই। একটা বিষয আমাকে তাড়া করে, সেটা হলো আমার চারপাশ। আমার চারপাশে যে ভয়াবহ গিমিক, যে প্রচণ্ড সর্বগ্রাসী সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা, মানুষের স্বাধীনতার উপর অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ এগুলো আমার বিষন্নতাকে আরও লাউড করেছে নিশ্চয়ই। বিশেষ কোন পরিবর্তনের কথা আমি বলতে পারছি না, তবে ‘পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে” বইটিতে আমি যা লিখেছি তা ’নিহিলের বনে” নাই। দুটো আলাদা সত্ত্বা এটা বলতে পারি।
সাঈদ উজ্জামান: আপনার কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এর ভেতরেই সুর লুকিয়ে আছে৷ গান হিসেবে গাইলেও ভাল্লাগবে৷ এ ব্যাপারে কখনো ভেবেছেন?
উত্তর: ভাবিনি। তবে কিছু গান আমি লিখেছি।
শামীম সৈকত : আপনার কবিতায় প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান এর কাঠামোকে ভাঙ্গতে চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে নতুন বা ভিন্ন কেমন ধরনের কাঠামোর ভাবনা আপনি করেন?
উত্তর: আমি এমন সমাজ ব্যবস্থাই দেখতে চাই, যেটা হবে সত্যিকার অর্থে মুক্ত মানুষের, মুক্ত সমাজ। আমরা জানি রাষ্ট্র এবং অপরাপর প্রতিষ্ঠান মানুষের উপর শোষন ও নিপীড়ণকে প্রায় চিরস্থায়ী রূপ দিয়েছে। এরমধ্যে সামঞ্জস্য দরকার। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে এক ধরণের নিবিড় সংযোগ দরকার। মুনাফা এবং ভোগের বাইরে একটা মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ যেখানে মানুষ ও অপরাপর প্রজাতি একটি বৈচিত্র্যময় বাস্তুসংস্থান তৈরি করবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য মানুষ ও প্রকৃতির কল্যাণের জন্য ব্যবহৃত হবে। সর্বময় এক বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক ঐক্য যেখানে চিরস্থায়ী হবে।
শামীম সৈকত : আপনার কবিতায় যে শব্দগুলো ব্যবহার হয় তার কিছু জটিল, বিমূর্ত৷ সেক্ষেত্রে জনসাধারণের সাথে আপনার দর্শনগত আদান প্রদান কীভাবে চিন্তা করছেন?
উত্তর: সাহিত্যের সকল ফর্মের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে শামীম এবং তুমি জানো যে, সাহিত্যের সকল মাধ্যম সমানভাবে সকলের কাছে পৌঁছাতে পারে না। এটা সীমাবদ্ধতা নয়, এটা আসলে প্রয়োজন নেই। কিন্তু এর মর্মবস্তু বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে যায়। এর কতগুলো ভেহিকেল আছে। ভেহিকেলগুলো হলো শিক্ষা, রাজনীতি, অপরাপর দৃশ্যমাধ্যম যেমন সিনেমা, নাটক। এই ভেহিকেলগুলো সাহিত্যের চিন্তা বা দর্শনকে সকল মানুষের কাছে পৌঁছায়। আমি বলছি না একটি লেখা বা একজন কবির লেখা। এটা একটা কোহর্টকে বুঝাচ্ছি। দার্শনিক উপলব্ধটি হচ্ছে, দর্শনের আদান-প্রদান হবেই, শুধু ফর্ম ভিন্ন হতে পারে। জগতের বহু উপলব্ধি অনেক বিরাট দার্শনিক জ্ঞান-তর্ক-বিতর্ক-বই এগুলোর বাইরে থেকে তৈরি হয়েছে। যেমন, লালনের গান, সবাই গায়, উপলব্ধিও করে নানাজন নানাভাবে। তাই, আমার লেখা আমার লেখা আকারে সাধারণের উপলব্ধ নাও হতে পারে, কিন্তু আমার লেখার দার্শনিকতা অন্য কোন ফর্মে আদান-প্রদান হবেই।
নূর মোহাম্মদ: ‘নিহিলের বনে’ নামকরণের বিষয়ে জানতে চাচ্ছি৷
উত্তর: এটা কবিতার অন্তস্থ উপলব্ধি যা পুরো সিরিজটিজুড়ে রয়েছে। এটা দার্শনিক আদান-প্রদান, এবিষয়ে একদম শেষ প্রশ্নে বিষদভাবে বলবো।
সাগর মল্লিক: আপনার কবিতা আমার ভালো লাগে৷ আপনি কবিতা দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হতে আমি কোনোদিনই দেখিনি৷ ফেসবুকে আপনার কবিতা পড়ি৷ অবশ্য বিন্দুতে আপনার অনেক কবিতা পড়েছি৷ অন্যান্য ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ না করার কারণ কী?
উত্তর: সচেতনভাবে আমি কোন দৈনিক পত্রিকায় লেখা দেই না অনেক অনেক বছর। আমি লিটল ম্যাগাজিনেই লিখেছি, লিখছি। প্রথমদিকে পত্রিকায় লেখা দিয়েছি, কিছু ছাপা হয়েছে। পরবর্তীতে আমি লেখক হিসেবে আমার অবস্থান সম্পর্কে অনেক স্বচ্ছ্ব হয়ে উঠি এবং দৈনিকের সাহিত্য পাতা এড়িয়ে চলা শুরু করি। দৈনিকের পাতায় তাই লেখা দেওয়াটা আামর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। লিটল ম্যাগাজিকের জন্য কেউ যদি লেখা চায়, আমার মনে হলে আমি লেখা দেই। না হলে নয়। আর কোন কারণ নেই।
রমজান আলী: লেখালিখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? কথাসাহিত্য লিখবেন কি?
উত্তর: আমি পরিকল্পনাহীন মানুষ।
মৌসুমী আহম্মেদ: পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন?
উত্তর: না , করি না।
মৌসুমী আহম্মেদ: আপনার প্রিয় বন্ধুর নাম কী?
উত্তর: আমার প্রিয় বন্ধু একজন নয়।
সৈকত জাহিদ: জন্মের আগে যদি আপনার মতামত নেয়া হতো, পৃথিবীতে আসতে চাইতেন?
উত্তর: সম্ভবত চাইতাম। জীবনের উপলব্ধি সবসময়ই মধুরতর।
জাহিদুর রহিম: প্রেম আপনাকে বিষাদগ্রস্ত করেছে কখনো?
উত্তর: সবসময়ই করে।
অনিক মাহমুদ: এমন কোন লেখক আছেন, যার সাথে দেখা করতে চান?
উত্তর: না নেই।
মঈন হাসান: সৈয়দ সাখাওয়াৎ সবসময় স্বাধীন সত্তার কথা বলেন, মুক্তির কথা বলেন। ম্যাকিয়াভেলি নামে ইতালীয় একজন চিন্তক বলে গেছেন, মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই দুষ্ট, যার ফলে তার থেকে শক্তিশালী কোনো শক্তির দ্বারা বাধ্য না হলে সে ভালো কিছু করতে চায় না। সৈয়দ সাখাওয়াৎ-এর মতে স্বাধীন সত্তার সঙ্গাটি কেমন তাহলে? যেহেতু বাধ্য না হলে আমাদের দুষ্ট প্রবৃত্তির ব্যাপারটা রয়েই যায়।
উত্তর: আমার কাছে সামাজিক নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের নির্মাণ যদি সঠিক না হয় তবে সেখানে বাধ্য করে কোন কিছু করাতে হয়। পৃথিবীতে এমন অনেক সমাজ ও সংস্কৃতি রয়েছে যেখানে চুরি বা নিপীড়ণ এই শব্দগুলিই নেই। ওখানে বাধ্যবাধকতার প্রশ্নই আসে না।
Sohan Kabir: প্রায়ই শুনি যে মানুষ কষ্ট ব্যতীত কবিতা লিখতে পারেনা— তো সৈয়দ সাখাওয়াৎ ভাই এর দুঃখ কিংবা কষ্টটা কী?
উত্তর: এটা এক ধরণের ধারণা, বাস্তবতা নেই।
গুলশান ইকারুস: সৈয়দ সাখাওয়াৎকে যদি তিনটি কবিতার বইয়ের নাম নিতে বলা হয় তাহলে সেগুলো কি কি?
উত্তর: বলতে পারবো না, তালিকা ছোট করতে পারছি না।
রুবিনা আক্তার: বিন্দু আপনাকে নিয়ে সংখ্যা প্রকাশ করতেছে৷ যতটা জানি আপনিও লিটলম্যাগের লেখক৷ তো লিটলম্যাগের এই উদ্যোগকে কীভাবে দেখতেছেন?
উত্তর: কিছুটা সংশয়, কিছুটা কৌতুহল, কিছুটা ভালো লাগা আছে। এধরণের উদ্যোগ সম্ভবত অনেক অপঠিত লেখা ও লেখকের সাথে বৃহদংশের সংযোগ ঘটাতে পারে বলে মনে হয়। এতে করে অনেক শক্তিশঅলী লেখার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সুবীর সরকার: কবিতা আপনার কাছে এক পবিত্র জলাধার। তীব্র এক কনফেশন বক্স। আপনার কাছে কী? এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন।
উত্তর: কবিতা আমার নিজস্ব উপলব্ধি ও চিন্তার রিফ্লেকশন। আমি যা লিখি তা আমার চিন্তা ও উপলব্ধির বাইরে নয়। আমার অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষন লেখার মর্মবস্তু।
সুবীর সরকার: "নিহিলের বন" শব্দবন্ধটি আসলে কী? আমি আমার মতন বুঝেছি পাঠক হিসেবে। আপনার কথা এই নিয়ে জানতে আগ্রহী।
উত্তর: এই চরম লুন্ঠনবাদী, নিয়ন্ত্রণের সমাজে আমি যে হারিয়ে ফেললাম আমার স্বাধীনতা, আমার নিজস্ব সবকিছু সেকথাই “নিহিলের বনে”। নিহিল জায়মান আছে আমার নিজস্ব পৃথিবীতে যেখানে পূর্বাপর আমি, তুমি , সে পরস্পরের মুখের দিতে দেখি এবং আমাদের হা-হুতাশ এবং বেদনার আদান-প্রদান করি। এই যে আমরা হারিয়ে ফেললাম আমাদের রাজ্য , বেদখল হয়ে গেলো সব−এতো এতো রাজ্যের ভিড়ে আমরা হয়ে গেলাম নেই রাজ্যের বাসিন্দা। দাসত্বের, উৎপীড়ণের বিপরীতে “নিহিল” সেই একান্ত অনুভবের “বনে” নিয়ে যায়, আমাকে জীবীত করে, মৃত চোখগুলোর পাশে।
মন্তব্য