প্রভু! রক্ষা করো মোরে
বঙ্গ রাখাল
বঙ্গ রাখাল
বন্ধুরা হারিয়ে গেলে, শীতরাতে জ্যাকেটের স্মৃতি মনে পড়েহারিয়ে গেলে সম্ভাব্য বন্ধুদের কাছে যেতে ভয় করে শুধুঠাণ্ডা খাবারের মতো স্মৃতির ভেতর খেলা করে যায়-মৃত্যু(বন্ধুরা হারিয়ে গেলে: সৈয়দ সাখাওয়াৎ)
কবিতা নিজের অজান্তেই জন্মে কবির অন্তরে। আমরা ইচ্ছে করলেই কবিতা লিখতে পারি না। হয়তো অনেকে পেরেও থাকতে পারেন। অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে কয়েক চরণ লিখে থাকেন। আবার তাকে কবিতাও বলে থাকেন। আসলে এই আবেগ আপ্লুত সময় কবিতা নাও হতে পারে। এই সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-- ‘কোন সদ্য আবেগে মন যখন কানায় কানায় ভরিয়া উঠিয়াছে তখন যে, লেখা ভাল হইবে এমন কোনো কথা নাই। তখন গদগদ বাক্যের পালা। ভাবের সঙ্গে ভাবুকের সম্পূর্ণ ব্যবধান ঘটিলেও যেমন চলে না, তেমনি একেবারে অব্যবধান ঘটিলেও কাব্য-রচনার পক্ষে তা অনুকূল হয় না। স্মরণের তুলিতেই কবিতার রং ফোটে ভাল। প্রত্যক্ষের একটা জবরদস্তি আছে-- কিছু পরিমাণে তাহার শাসন কাটাইতে না পারিলে কল্পনা আপনার জায়গাটি পায় না। শুধু কবিত্বে নয়, সকল প্রকার চারুকলাতেও কারুকরের চিত্তের একটা নির্লিপ্ততা থাকা চাই--মানুষের অন্তরের মধ্যে যে সৃষ্টিকর্তা আছে, কর্তৃত্ব তাহারি হাতে না থাকিলে চলে না। রচনার বিষয়টাই যদি তাহাকে ছাপাইয়া কর্তৃত্ব করিতে যায় তবে তাহা প্রতিবিম্ব হয় প্রতিমূর্তি হয় না’। আবার আমরা এটাও বলতে পারি না-- কোনটা কবিতা বা কবিতা নয়। ভাষাকে নতুনরূপ দান করাই তো কবির কাজ। কবি অনবরত নিজের কাজ করে চলেন। কয়েকদিন আগে কবিবন্ধু সাম্য রাইয়ান আমার কাছে একটা লেখা চাইলেন; কবি সৈয়দ সাখাওয়াতের উপর একটা সংখ্যা করবেন। আমি কবিকে লেখাটা দিতে চাইলাম কিন্তু মুস্কিলটা হল আমিতো সৈয়দ সাখাওয়াতের কোন কবিতা পড়িনি। বিচ্ছিন্নভাবে কোন কবিতা পড়লেও তা আমার মনে থাকার কথা নয়। সাম্যকে এসব কথা জানালাম। সাম্য তখন আমাকে কবির ‘পাতাপূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে’ কবিতা গ্রন্থের পিডিএফ ফাইল পাঠালেন। ফাইলটা পেয়েই পড়তে শুরু করলাম। সত্যি বলতে এটা আমার অজানা যে কবি সৈয়দ সাখাওয়াতের কবিতা পড়ার সুযোগ আজও হয়ে ওঠেনি কেনো? এভাবেই নিজের অক্ষমতাকে বার বার তিরস্কার করছিলাম। কি এমন কবিতা লেখে কবি সৈয়দ সাখাওয়াৎ পড়লেই আমরা অনুধাবন করতে পারব। আসুন আমরা কবির কিছু কবিতা পড়ে আসি--
১.এই যে মানুষ, মুখ তুলে দ্যাখো-ওইখানে খেলা করে রোদের আঙুলতথাকথা বেদনার মাছিদের অবিরাম ধ্বনি থেকে বের হয়ে এসোপোড়াও এ ‘দুঃখভার ইশকুল’। আমি তোমাকে দু’পাত্র কবিতা শোনাবো।এখানে অবিরাম রোদজ্বলা গাছেদের গায়ে ভেঙে পড়ছে শব্দবিন্দু...(পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে)২.পাখিদের শরীরে ক্ষত হলে ওরা শুকিয়ে যায়, নদীদের মত একাবুকে পাথরের শব্দ শুনে শুনে কেউ বুঝি উড়ে গ্যাছে মৃত্যুমুখী(আর সেইসব গল্প আমরা খোলস কানে এঁটে শুনতে থাকি)৩.মাঠে মাঠে অশান্ত পাখিসব, নুয়ে পড়া ধানগাছমৃত মাঠ, গল্পের নামহীন জল¯্রােত পাড়ি দিচ্ছেমাঝে মাঝে ক্রন্দন, স্মৃতিদের বাড়ী থেকে শোনা যায়এত এত বেদনা ও মাধুর্য্য দ্যাখি, তবু যেন অন্ধ!(অন্ধ)৪.পরিচয়ের সূত্রগুলো অদ্ভুত! নেহায়েত কাছে থাকার জন্য কতশত আয়োজন। পাশ ফিরেথাকা মানুষগুলো জানে না শোক ও প্রাপ্তির ইতিহাস সমান্তরাল। কাছে আসার মুহূর্ত থেকেজানা হয়ে যায়, কাছে থাকা আর হবে না।(ভুলে যাবো বলে সমর্পিত হই)
কবি এই গ্রন্থে নিজের নানা অভিজ্ঞতাকে পাঠকের সামনে হাজির করতে চেয়েছেন। নিজে সফলও বটে। তবে কবি শুধু অভিজ্ঞতায় না-- নিজের ভাবনা-চিন্তার এক মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়েছেন এই কবিতায়। স্মৃতি থেকে বলেছেন কথা--স্মৃতির ভেতর ঘুমিয়ে গেছে রাতের অশ্রুবিন্দু। এই স্মৃতিই তো আমাদের উন্নত করে তোলে। জাগিয়ে তোলে মন-মগজ। তার কবিতায় মিশেল ঘটেছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-অম্লতা, বিরহ-প্রেম, স্মৃতিকথা, প্রকৃতি, বিশ্বময় অশান্তি কিংবা নিজের অস্তিত্বহীনতার নানা প্রশ্নবোধকের স্মরক। এসব তার কবিতার একরৈখিকতার মধ্যে বহুরৈখিকতাও বটে। তাই তিনি তার কবিতায় বলেন--
১.আমাদের স্কুল, দেহ থেকে দূরে নিয়ে যায় মন; দূরালাপনেমাটিগন্ধ শরীরের কোলাহল ভুলে-আমরাও ব্যস্ত ভীষণ--শরীরে শরীরে। দেহগুলো জানে পরিচিত হতে জলের মতোকেননা জলের চোখে, আয়নার মতো ভেঙে পড়ে বিপন্ন স্কুল!...কেননা বন্ধ চোখে, স্কুলগুলো এঁকে যাচ্ছে মানচিত্র ও মুখোশ!(বাইনারি ডিসকাশন অ্যাবাউট স্কুল)২....কেননা আমাদের সভ্যতা খুব সীমানা পছন্দ করে। তারপরও আমরা...আমাদের ছায়ার ভেতর বেঁচে থাকি।(আমাদের একাকী হবার দিন)
এই কবির অন্তরে অনেক অজানা বা আমাদের না জানা কথা আছে। যা কবি কাউকে বলতে পারেন না। নিজের অজান্তেই তা পুষে রাখেন। আমরা জানি প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু কষ্ট আছে। কেউ বলে কেউ বলে না। তেমনি সৈয়দ সাখাওয়াৎ কবি হওয়ার কারণে কবিতায় মধ্যে তিনি তার দুঃখকেও নানাভাবে বলার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে আমরা কবির নিজস্ব দুঃখ বলে এইসব কবিতাকে চিহ্নিত করতে পারি না। তিনি অনেকটা অনুভূতি প্রবণ মানুষ। তিনি তার সমাজ-সংসার, সুখ-দুঃখ, রাজনৈতিক পারিপার্শি^কতাকে উপকরণ বানিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করেন এটুকু বলতেই হবে। কবির ঝরাপাতারা কথা বলে, নাম ধরে ডাকে আর ডেকে যায় রক্তের তুমুল আর্তনাদ! এই যে তাড়না এটাই তো পাঠককে ভাবিত করে নিয়ে যায় ভাবনার জগতে এবং সৈয়দের কবিতার সবচেয়ে বড়গুণ--এই কবিতাগুলো পাঠককে কিছু না কিছু ভাবনায় আচ্ছন্ন করবে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কবির কাছে এই দুরন্তবেলা বারবার ধরা দেয়-- যা কবি তার কবিতায় প্রকাশ করে নিজের ইচ্ছাকেই বিকশিত করতে চান। এই কবিতায় ছলনা থাকলেও তা বাস্তব সম্মত-এটা পাঠককে প্রতারিত করে না বরং পাঠকের চিন্তাকে শাণিত করে।
...রাতজাগা পাখিদের ঠোঁটে সেইসব স্মৃতি বেঁচে থাকে...বিস্তীর্ণ পথের ক্লান্তি ওদের চোখে-মুখে পালক ছুঁয়েঐশ্বর্যের রোদগুলো তবুও দুরন্ত।
সৈয়দ সাখাওয়াতের কবিতায় নড়াচড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মুত্যু। এই মৃত্যুই যেন কবিকে বার বার তাড়িত করে কবিতাগুলোকে লিখেয়ে নিয়েছে। কোন একদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় পড়েছিলাম--
রূপনারানের কূলেজেগে উঠিলাম,জানিলাম এ জগৎস্বপ্ন নয়।
এই যে স্বপ্ন বা বাস্তবতার মাঝে আমরা নানা কাজ-কর্মের মধ্যেই আমাদের জীবনকে অতিবাহিত করে চলেছি। যতকিছুই করি না কেনো--মৃত্যু যে আসবে এটার চেয়ে সত্য আর কিছু নেয়। বিকেলের মৃত্যু হলে, নিশাচর বাদুড়ের মতোন ঝুলে থাকি-ডালের সাথে করি বনাবনি। মৃত্যুকে মেনে নিয়েই কবি পথ চলেছেন। কবি নিজেও মৃত্যুকে ভয় পান না। তিনি জানেন দুঃখ বা ক্ষরণের জলে সৃষ্টি হয় অসংখ্য নদী! দুঃখই তো মানবজীবনকে মহৎ করে তোলে। এই কবি তার কবিতায় চিত্রকল্প তৈরিতেও মুন্সিয়ানার সাক্ষর রেখেছেন। যা তার কবিতায় লক্ষণীয়--
ক.... প্রেম, তারচেয়েও মোহনীয় শূন্যতার রোদ। তুমি-আমি...খ.... সেলাই করার কলে কত ঘাম জমে আছে, কত রক্ত নখে...
এখানে এই কথা প্রেম বিষয়ক হলেও প্রেম শুধু প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। প্রেমের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে বিষাদ। তখন কবির মতো বলতে হয়Ñপাতাঝরা দিন গুনছে কোন এক রাতজাগা পাখি। সবার জীবনে যেমন প্রেম আসে কবির জীবনেও তেমনি প্রেম এসেছিল। এই প্রেম আর পাঁচজন মানুষের মতো কামের প্রেম না আবার কামের মধ্য দিয়েই তো প্রেমিক প্রেমিকা লীন হয়। সেই কথায় কবি বলেছেন তার কবিতায়। রাত্রিযাপন করেন কবি সেই সুদূরে পড়ে থাকা মনের মানুষের জন্য। আবার অভিমান জড়ানো বুকে কবি বলেনÑ... ভোর ছুঁয়ে কথা বলি রাত্রির কাছে নত? তবু ... বালিকাদের চোখ তখন গভীর, দীর্ঘতম নদী। বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় প্রেমিকার পা আর পিছন ফিরে যেতে চাই না। এই পা ভারী হয়ে ওঠে।... খেয়ালের মানচিত্র ঠিক পাড়ি দিচ্ছে ক্লান্ত দুটি পায়ে। আমাদের দেখার দৃষ্টি তো এক না। এক এক জন এক এক রকম দৃষ্টি দিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। যে যেমন তেমন জিনিসই তো তার সামনে রাত্রি-দিন ঘোরা ফেরা করবে। যেখানে আমি দেখব আলো তুমি দেখবে অন্ধকার। এভাবেই নাটমঞ্চে আলো জ্বললে তুমি হয়তো দ্যাখবে খুনীর ভ্রুকুটি! জীবনে যতই আশা থাকুক না কেনো এক সময় সবকিছুর প্রয়োজনীয়তা নিঃশেষিত হবে। মানুষ ভুলতে থাকবে বঞ্চিতের ইতিহাস! তাদের হাতেই সৃষ্টি সভ্যতা। পৃথিবীতে যতকিছু তৈরি হয়েছে তা এই অবহেলিত মানুষের হাত ধরেই এসেছে। ধণিক শ্রেণির মানুষেরা ক্ষমা করতে শেখেনি। ক্ষমা যে মহৎ এটা আয়ত্ব করেছে গরিবেরা। তাইতো কবি বলতে পারেন--
ইতিহাস লেখে না যাদের কথা, সেইসব দূর্বল-ঘামসিক্তযারা পাহাড় কেটেছে নীলনদ-ভোলগা থেকে যমুনার তীরে,--করেছে বপন সুপ্তবীজ মাটির বুকে, খনিতে খনিতে রিক্তযাদের বুকের উপর লেখা-স্পার্টাকাস কিংবা বীরসা মুন্ডাকিংবা অন্ধ আবেগে ছোড়া বেদনার তীর সিধু-কানু অন্ত্যজপাহাড় থেকে বনে, সমুদ্রে সমুদ্রে ধূলোওড়া মরুতে মরুতেকত বেদুঈন ইতিহাস গড়েছে, কেবলি মিথ-গল্প-কথারা--উড়িয়েছে বহুল আয়োজনে, ভুলে গ্যাছে --দূর্বল করেছে ক্ষমা: কেননা ক্ষমাটাই ইতিহাস পৃথিবীর।
পৃথিবীর সবকিছু এই প্রান্তিক মানুষের হাতে সৃষ্টি হলেও তাদের না আছে দাম; না করা হয় মূল্যায়ন। তাদের লাশের উপর দাঁড়িয়ে আমরা আনন্দ করি। তাদের রক্তের সাগরে স্নান করে নিজেদের পবিত্র করে তুলি। এজন্যই কবি বলেন--
...ওরা কী জানে না বুলেটের নাম লেখা থাকে রক্তের সাথে, এটাই নিয়তি!
...একফোঁটা মেঘ সরে গেলে জানো না তো সূর্য আনে রোদমাখা নতুন দিন
কবিকে প্রেমিক কবি হিসেবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে। কেননা তিনি তার কবিতার পরতে পরতে অভিনব সব কথাবার্তা বলার প্রয়াস পেয়েছেন। যেখানে তিনি বলছেন--...একটা জ্বলন্ত আকাশ বুকে বৃষ্টির কথা ভাবি, বৃষ্টি অনেকটা রতিমগ্ন/দেহের উষ্ণতা নিয়ে ডুব দিয়েছি তাই-আমি এখন অনাবাদী জ্বরে পুড়ছি। প্রিয় মানুষের আলিঙ্গন মাখা শরীর কতদিন আলিঙ্গনহীন থাকতে পারে; পারলে ভাল কিন্তু লাগিয়ে শরীরে শরীরের স্পর্শ আর কি ভূমি আবাদহীন রাখা যায়। স্নিগ্ধ জোছনায় নিজেকে কবি সপেছেন মহুয়ার কাছে, আজ সব স্মৃতি। এই পাগলামীর মানে কি আছে--যে আচরণ দেখে সবাই পাগল ভাবে। নিজের দাবি বা অন্যের ন্যায্যতার কথাও সবার কাছে আজ পাগলের প্রলাপ বলে বিরক্ত মনে হয়।
....কোজাগরী পূর্ণিমা, শরীর যেভাবে শীতল হয়। মহুয়াস্মৃতি-মুছে যাচ্ছে। জানি--
...চোখে তবু বিষাদের সিন্ধু!
...ব্যক্তিগত ছায়া দ্যাখে কেউ ডেকে উঠতে পারো-পাগল! পাগল!
আমরা সবাই আজ নিজেদের মধ্যে এক ধরনের নিরবতার চাষ শুরু করেছি। কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করি না। যে কারণে আমরা দিনকে দিন নিজেকে ক্ষয়িত করে চলেছি। কবি এক ধরনের জোর প্রতিবাদ নিজের মধ্যে অনুভব করলেও তার বাহ্যিক কোন প্রয়োগ দেখতে পাই না। অভিমানে শুধু নিজেদের গোটাতে গোটাতে আজ আমরা সত্যিকার অর্থেই শামুক হয়ে উঠেছি।
১.কী নেই, কী নেই-এই শব্দের তীব্রতা বেজে ওঠে বুকের ভেতরসশব্দে সেসব পাখিদের আর্তনাদ, যারা উড়ে গ্যাছে আতঙ্কে-বেজে যায় কেবল। আর কোথাও পাগলাঘন্টি, নিয়মমাফিক।(জারিত শূন্যতার খোলস থেকে)২.কত অভিমান বুকে হেঁটে যাই, পেছনে রাশপ্রিন্ট ঝরে যাচ্ছেআমি জলছবি হই, মৃত হই; কুয়াশা ঝুলে থাকে তারজুড়েদ্যাখে দ্যাখে ক্লান্ত চোখ জানে শুধু পুড়তে কুয়াশার হিম নিয়েহিম কি কখনো পোড়ায়? প্রশেড়বর বিপ্রতীপ ইচ্ছেরা জানে নাতো।(রাশপ্রিন্ট ঝরে যাচ্ছে)
এই পৃথিবী আমাদের বসবাসের উপযোগী আছে বলে কবি মনে করেন না। কারণ ধরণী আজ বোমার ধূলিকণায় ভরে গেছে। চারিদিকে পাল্লা দিয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। চারিদিকে স্বার্থান্বেষী মানুষেরা যুদ্ধ-বিগ্রহ বাধিয়ে রেখেছে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ভীত-সন্ত্রত্ব হয়ে মানুষ জীবন-যাবন করছে বা প্রতিনিয়ত এমন শংকাময় জীবন নিয়ে ঘর হতে বের হচ্ছে। আসলে তারা কি সত্যিই জীবন নিয়ে ঘরে ফিরতে পারছে? হয়তো কেউ পারছে বা কেউ লাশ কিংবা গুম হয়ে মা-বাবা কিংবা প্রিয়তম স্ত্রীকে একা করে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এমনই এক ত্রাসের কথা বলা হয়েছে সৈয়দ শাখাওয়াতের শঙ্খচিল কবিতায়। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক যাতাকলে মানুষের জীবন আজ নিষ্পেশিতÑতাদের নিঃশব্দ কান্নার কথায় কবি তার কবিতায় ব্যক্ত করেছেন।
যে দিগন্ত ঢেকে যায় বোমার ধূলিকণায়, যে মানুষ ...শোভা পায় মত্যুচিহ্ন, বিশ্বের যে প্রান্তে পা রাখুক তার ভয়ক্লান্ত ছায়া-সেতো যুদ্ধ-বিগ্রহেপ্রতি পরতে পরতে দিশাহীন শঙ্খচিল-উড়ে যাচ্ছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে...
কবি সৈয়দ শাখাাওয়াতের কবিতা নিয়ে লিখতে এসে আমাদের পূর্বসূরি সৈয়দ শামসুল হকের একটা লেখার কয়েক লাইন মনে পড়ে গেল-- ‘আমি আমার সময়ের ও অস্তিত্বের বাস্তবতাকে দেখেছি, আমার কবিতার সেই সুর থেকেই, চূর্ণিত আকারে; বলেছি তা চূর্ণিত দর্পণ, বলেছি টুকরোগুলো কৌণিক ও তীক্ষèধার; আরো বলেছি, টুকরোগুলো অনবরত আমি মুঠোয় তুলে নিচ্ছি, মুঠোয় চেপে ধরছি, করতল রক্তাক্ত হচ্ছে, কিন্তু ফেলে দিচ্ছি না বা ফেলে দিতে পারছি না; যা বলিনি--আমার কবিতার ভেতর দিয়ে সেই রক্তধারার বয়ে যাওয়া, টসটস করে পড়তে থাকা, বাস্তবতার টুকরোগুলোকে এই রক্তের আঠায় স্থাপনায় আনা একটি মোজাইকে, এটি লক্ষ না করে বুঝি আমার কবিতা- চেষ্টাকে আবিষ্কার করা সম্ভব হবে না’। এই কবি সাখাওয়াতের কবিতার মধ্যে না ঢুকলে সত্যিই তার কবিতা বোঝা সম্ভব হবে না। কবিতার মধ্যে ঢুকেই অনুধাবন করতে হবে কবির কবিতা। কবি তার কবিতায় যে সব ম্যাটাফোর, ব্যবহার করেছেন এসব যেন প্রজাতি হিসেবে টিকে থাকার নানা কায়দা-কানুন। মেটাফোর কবির কল্পনাকে আরো শক্তিশালী করে। এই মেটাফোরের কারণেই কবি আরো কিছু উন্নত চিন্তা করার প্রয়াস পেয়ে থাকেন। কবিতার গতিও যায় বেড়ে। আবার কবিতার সবকিছু ডুবে থাকে সদানন্দ আয়ুর ভেতর। তবে মেটাফোরের কাজ সত্যকেই নতুনভাবে তুলে ধরা। এটাকেও অস্বীকার করার কোন কারণ দেখি না। তবু বলতে হয়-- আমাদের জীবন প্রঞ্চণার জালে আবিষ্ট আর কবি এই প্রঞ্চণাকে ঠেলে মহৎ জীবনের সন্ধান দেন তার কবিতায়। কবি সাখাওয়াতও তেমনি একজন বার্তাবাহক। আপাতত প্রভু রক্ষা করুক। চলুন কবিতা পড়িÑকবি তার তেজস্ক্রিয়াকেই প্রতীকরূপে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। যা আমাদের আক্রান্ত করে, ভাবিত করে দৃঢ় ও প্রত্যয়ী করতে ভূমিকা রাখে। এভাবেই কবি আমাদের মনে ছুঁড়ে দেন কবিতার পংক্তি--আপাতত মুখোমুখি, স্ট্রাকচার; পোস্ট-স্ট্রাকচার
কলোনিয়াল মার্তন্ডে সকলে ভুলে থাকি দরোজা
প্রভু! রক্ষা করো মোরে...
মন্তব্য