.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

খয়েরি মেরুন প্রজাপতি

খয়েরি মেরুন প্রজাপতি
অমিতরূপ চক্রবর্তী

উড়ুক উড়ুক তা’রা হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভিতর
উপরের লাইনটি জীবনানন্দ দাশের বহুপঠিত বুনো হাঁস কবিতাটির শেষ লাইন। এই লাইনটি লেখার এমন কী প্রয়োজন হল এখানে? আমি নিজেকে এই প্রশ্ন করলে উত্তর একটা নিজের মতো করে পাই। সেটা এই যে, এই হৃদয়ের নিঃশব্দ জ্যোৎস্নার ভেতরে হাঁসেদের উড়ে চলা- এই-ই হয়তো প্রতিটি চিন্তাশীল সৃষ্টিশীল মানুষের প্রায় অনিবার্য এক স্থিতি। যাকে কোনোভাবে, কোনো বিকল্প দিয়ে এড়ানো যায় না। শুধু চিন্তাশীল বা সৃষ্টিশীল মানুষের কথাই বা বলব কেন, যারা এই তথাকথিত চিন্তাশীল বা সৃষ্টিশীল মানুষদের তালিকায় পড়েন না, তাদের ক্ষেত্রেও এই ইমেজারি কি প্রযোজ্য নয়? তাদেরও অন্তঃকরণ যখন ক্রিয়াশীল, তখনো কি হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভিতর হাঁস উড়ে যাচ্ছে না? 

কারও লেখা (এখানে পড়তে হবে কবিতা) নিয়ে আলোচনা লিখব- এ কথা আমার কাছে সবসময়ই অত্যন্ত ভয়ের এক জিনিস। একজনের লেখা পড়া, সেই লেখার সঙ্গে রিলেট করা, তার ঘোরের আস্বাদ নেওয়া এ এক জিনিস আর সেই অভিজ্ঞতাকে যথাযথভাবে লেখা আরেক জিনিস। আমার মনে হয় এই কাজটি (যেটা পাঠ-প্রতিক্রিয়ার নামে অহরহ চলে) পৃথিবীর সবচাইতে পবিত্র এক অসত্য। আমার মনে হয়, ভাষা যা আমরা ব্যবহার করি বা তা দিয়ে নিজের অনুভবকে যতটুকু ধরতে পারি, তা দিয়ে একটি লেখার পাঠের অভিজ্ঞতা, অনুভবকে ব্যক্ত করা অসম্ভব। ধরা যাক একটি লেখা পড়ে আমার মন হু হু করে উঠল, এই হু হু করাকে আমি আমার অস্থিমজ্জা-রক্তমাংস দিয়ে যেভাবে অনুভব করছি, সেই অনুভব বা সে হু হু করা-কে এই জানা শব্দসমষ্টি বা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব? এই বুনো হাঁস কবিতাটির কথাই ধরা যাক, এই কবিতা পড়ার পর ভেতরে যে আবেশ, যে মিশ্রিত এক দৃশ্য, যে গাঢ় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা তৈরি হয়- সম্ভব তা ভাষা দিয়ে, শব্দ দিয়ে লিখে বোঝানো? 

তবে পাশাপাশি এ কথাও ঠিক, পাঠের অভিজ্ঞতা লেখাই যেতে পারে। কোনো একটি লেখা বা শিল্পকর্ম আমার মনকে যেভাবে নাড়া দিচ্ছে, তা লেখাই যেতে পারে। যদিও তা সর্বাংশে বোঝানো হয়ে উঠল না, তবুও বোঝানোর চেষ্টা করাই যেতে পারে। 

আমার ভয়ের আরেকটি কারণ, আলোচনায় ব্যবহৃত সব পরিভাষা, কোটেশন। আমি তো অতশত জানিই না। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রশ্ন হত ‘রাস্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে?’ তার উত্তরে কত যে কোটেশন ব্যবহার হত! একসময় মনে হত, কোটেশনে কোটেশনে বোধহয় লড়াই লেগে গেছে। সেই কোটেশনে কোটেশনে ভরপুর উত্তরপত্র হয়তো উত্তরপত্র হিসেবে মোটা নাম্বারের দাবি রাখে, তবে কবিতাকেন্দ্রিক আলোচনা অত পরিভাষা, কোটেশনে ভরে গেলে সহজ বিচরণের জায়গাটা আর থাকে না। আমি জানিয়ে রাখি, এই মত একান্তই আমার। একে নস্যাৎ করার পূর্ণ অধিকার সকলের আছে। 
সৈয়দ সাখাওয়াতের কবিতা আমি আগে পড়িনি। এই ই-ম্যাগের দৌলতে ওঁর লেখা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সৌভাগ্যই বললাম, কারণ আমার মনে হয় সবরকম লেখা বা শিল্পকর্মের সঙ্গে পরিচিত হওয়া সৌভাগ্যেরই। যেমন প্রতিটি সকাল দেখা, রোদের ঝিলিক দেখা, প্রিয়জনের মুখ দেখা সৌভাগ্যের। 

সৈয়দ সাখাওয়াতের দুটি কবিতার বই। খণ্ড খণ্ড রাত্রির আলাপ (২০১৩), পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে (২০১৭)। পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে- এই কাব্যগ্রন্থে বিভিন্ন আঙ্গিকে লেখা সব কবিতা। ছন্দবদ্ধ বা গদ্যের চালে, কখনো দু-লাইনের সিরিজ, কখনো চার লাইনের। চারলাইনের সিরিজটির নাম জীবন, বিষণ্ণ রোদের ডানা। এই সিরিজের ১০ এবং ১১ নং কবিতাদুটি এইরকম- 
১০.
কতদূরে যাবো? কোথায় আর এসে দাঁড়াতে পারি পরস্পর?
মুখোশের ছায়ার ভেতর মুখগুলো কাঁপে ঈর্ষার আলোকে
একই বৃত্তের ভেতর-মুখোমুখি শুণ্যতা খেলা করে শুধু
অন্ধকার বীর্যাধার জানে না মৃত্যুর মর্মরধ্বনি, করুণ

১১.
কিছু নেই, ছিলো না কোনোকালে- থাকে শুধু কালের কণ্ঠ
আমাকে রক্ষা করো, নিয়ে যাও এই মৃত্যুনীল আতঙ্ক থেকে
যেখানে খেলা করে খেয়ালি পাখির দল, বিস্তৃত নদী বয়-
আমাকে গ্রহণ করো হে বিষণ্ণ সৌরভভরা চিরহরিৎ

(বানান, বইতে যেমন পেয়েছি)
জয় গোস্বামী তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি কবিতাপাঠের সময় লেখকমনটিকে চিনতে চান, ধরতে চান। কেন চান? না ধরলেই বা কী এমন পাঠের ক্ষতি হত? শুনেছি উৎপল কুমার বসুকে রেইনার মারিয়া রিলকের লেখা নিয়ে কিছু লিখতে বলায় উনি রিলকে কোথায় কোথায় যেতেন, কাদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছিলেন ইত্যাদি তাঁর লেখার মধ্যে এনেছিলেন। কেন? অসামান্য সব লেখা রিলকের, তথাপি সেগুলোর দিকে সরাসরি না গিয়ে এমন একটা ঘুরপথ, আপাতদৃষ্টে যা প্রাসঙ্গিকই নয়, এমন একটি পন্থায় গেলেন কেন? লেখার বদলে লেখককে চেনার অ্যাতো যুক্তি কীসের? উত্তর হয়তো এই-ই যে, যিনি লিখছেন তার চিন্তার অবস্থানটিকে ধরতে চাওয়া। 
লেখা যদি কবিতালেখকের অন্তর্গত সত্ত্বার সঙ্গে কথোপকথন, বেঁচে থাকা, বসবাস বা জীবন নির্বাহ করার নাম হয়, তাহলে ১০ সংখ্যক কবিতাটির প্রথম লাইনটিতে তার ব্যপ্তি কী শাশ্বত! এই লাইনটির পেছনে যে বিষাদ, যে আর্তি রাখা- এই আর্তি তো কোনো একার নয়, আমাদের সকলের প্রত্যক্ষ করা। ‘কতদূরে যাবো? কোথায় আর এসে দাঁড়াতে পারি পরস্পর?’- এমন কি কখনো আমরা ভাবিনি? বা ‘আমাকে রক্ষা করো, নিয়ে যাও এই মৃত্যুনীল আতঙ্ক থেকে’- এমন কখনো ভাবিনি? এই কবিতাগুলি অ্যাতোই আপাত জৌলুসহীন যে, কখন তা মনে ছাপ ফেলবে, বোঝা যাবে না। তা মনে, স্মৃতিতে আত্মগোপন করে থাকবে, কখনো হঠাৎ তেমন মুহূর্ত এলে আমার ভেতরটাই যেন বলে উঠবে ‘কতদূরে যাবো? কোথায় আর এসে দাঁড়াতে পারি পরস্পর? বা ‘আমাকে রক্ষা করো, নিয়ে যাও এই মৃত্যুনীল আতঙ্ক থেকে’। 

সৈয়দ সাখাওয়াত আমার মনে সংকেতধর্মিতা, রূপক বা ইমেজের বদলে কথার ব্যবহারে কবিতা লিখতে পছন্দ করেন। তাঁর বইদুটির কবিতাগুলিকে দেখলে এমন একটা মূলগত চরিত্র পাই আমি। যেমন খণ্ড খণ্ড রাত্রির আলাপ- এ ৪৭ নং পাতার এইসব কোলাহল শীর্ষক কবিতাটি। কথা ব্যবহার করে গাঢ় স্বরে কবিতাটি লেখা হয়েছে। 

কোনো কোনোদিন আসে, আসে মৃত্তিকার গন্ধ সাথে করে।
সেই দিনগুলোতে বৃষ্টিভেজা গন্ধ থাকে, থাকে নিয়ম
ভুলে যাওয়া সন্ন্যাসীর মনে পাহাড়ের গাঢ় মৌনতা।
তখন নত হয়ে দেখি, সবুজ ঘাসের ডগায় হেঁটে
যাওয়া পিঁপড়ের সার ছোটে, যেন এক যৌথ মুগ্ধতা।

এখানে দুটো ছবি আছে বা ইমেজ আছে। এক, মৌন পাহাড়। দুই, সবুজ ঘাসের ডগায় হেঁটে যাওয়া পিঁপড়ের সার। অথচ ছবিগুলি কথায় সংহত হয়ে আছে। কথার দ্যোতনাই বেশি করে পৌছায় পাঠকের কাছে। ইমেজ বা ছবিগুলি কথার বিস্তারকে ছাপিয়ে বড়ো হয়ে ওঠেনি। এই যে কথা ব্যবহার করে লেখা, সৈয়দ সাখাওয়াতের দুটো কবিতার বইয়ে সংকলিত কবিতাগুলি দেখলে আমার তেমনই মনে হয়। শঙ্খ ঘোষের একটি কবিতার লাইনে আছে ‘আমি এই রাত্রির ভিতর থেকে কথা বলি’। সৈয়দ সাখাওয়াতের কবিতা পড়ে মনে হয়, তিনিও অমন রাত্রির ভিতর থেকে কথা বলতে পছন্দ করেন। যদিও সৈয়দ সাখাওয়াতের ক্ষেত্রে আমি যে রাত্রির কথা বলছি আর শঙ্খ ঘোষ যে রাত্রির কথা বলছেন- এই দুই রাত্রি একেবারে আলাদা।    

আন্দ্রেই তারকোভস্কির এমন একটা উক্তি আছে যে, একটি বই যখন বহুবার বহু লোকে পড়ে, তাহলে সেই বইটি পাঠকের হাতে বহু হয়ে ওঠে। তার আবেদনও হয় বহু। সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোক কবিতাও নিশ্চয়ই পাঠকভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেবে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে তাঁর উচ্চকিত, রাগী রাগী ভাষ্যের থেকে বিষণ্ণ ও সংযত ভাষ্যটাই তার পছন্দের ভাষ্য হয়তো। আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। তবে কবিতার বইয়ের নামকরণে, কবিতার সিরিজের নামকরণে আমি একজন ক্লান্ত মানুষের মনকে টের পাই, যে হয়তো-বা একাকী মোমের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে ভালবাসে। যাকে হাজার গণ্ডা উপঢৌকন দিয়েও ব্যক্তিগত পরিসরে অন্য কাউকে থেৎলে দেবার কাজ করিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আবার হয়তো সম্ভবও। (হয়তো-বা এই অ্যাসেসমেন্ট শুধু সৈয়দ সাখাওয়াৎ-ই নন, সব কবিতালেখক বা শুধু লেখকদের বেলায়-ই খাটে)। 

‘খণ্ড খণ্ড রাত্রির আলাপ’-এ ৩৩ নং পৃষ্ঠায় একটি কবিতা পাচ্ছি ‘না লেখা চিঠি-২’। একটু আগে যে ক্লান্ত মনটার কথা বললাম, যে হয়তো-বা একাকী মোমের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে ভালবাসে, যাকে হাজার গণ্ডা উপঢৌকন দিয়েও ব্যক্তিগত পরিসরে অন্য কাউকে থেৎলে দেবার কাজ করিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়, আবার হয়তো সম্ভবও- সেই মনটির আরেকবার তেমনই ভেসে ওঠা এই কবিতাটিতে চোখে পড়ে। বিশেষত শেষ চার লাইনে। 

‘তুমি হয়তো জানবে না, কেননা জীবন এরকমই হেলা 
হেলায় হারিয়ে যায় কত কত নদীজল ভালবাসা নাম
জীবন পেরিয়ে গেলে থেকে যায় স্মৃতিময় সারাবেলা 
হৃদয়ে লেখা চিঠি আর থাকে অপ্রকাশিত বেদনার খাম!’

‘হাসপাতাল’ নামক কবিতাটির দু-পক্ষের মধ্যে সংলাপধর্মিতার আদল আছে। দ্বিতীয় স্তবক অর্থাৎ ‘রোগিনী’ নামক স্তবকে এই একটি ইমেজারি খুব স্মৃতিতে অজ্ঞাতে গেঁথে যাবার মতো। 

‘তোমার নির্বাক চোখজোড়া দেখি, নিয়ন্ত্রণহীন মণি
মাঝে মাঝে অবাক বিস্ময় জেলখানার গরাদের মতো
দেয়ালের দিকে তাকিয়ে, বালিকার সঙ্কোচ নিয়ে প্রশ্ন 
করেছ খেয়ালে. “আমার কী হয়েছে?’ 

মাঝে মাঝে অবাক বিস্ময় জেলখানার গরাদের মতো- এই উপমাকে আমি মনে করি যেন একজন উপন্যাসিকের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবহার করা উপমা। এ পড়ামাত্রই আপনাকে চমকে দেবে না। আপনিও মুগ্ধও হবেন না, তবে উপমার কথা আপনাকে ভাবাবে বা আবার হয়তো আপনাকে উপমাটিকে ফিরে পড়াবে। আবার এইরকম উপন্যাসিকের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা উপমাগুলোর মজা এই যে, এই উপমাগুলি কবিতার চলনে একটা আলস্য, একটা মন্থরতা এনে দেয়। ফলে কবিতাটির রেশ, অনভূতি যা-ই বলি না কেন, অন্যমাত্রিক হয়ে ওঠে। অন্য আরেকটি দিক খুলে যায়। কবিতার ভর স্থান বদলায়। 

না, দুর্দান্ত চমকপ্রদ কিছু নেই, শব্দের সঙ্গে শব্দের ওজনের প্রতিযোগিতা নেই, অভিনব সব সহাবস্থান নেই, অ্যানার্কিজম নেই- শুধু একটা গাঢ় স্বর যেন পর্দার ওপার থেকে কথা বলছে।l সৈয়দ সাখাওয়াতের দুটি কবিতার বইয়ে সংকলিত কবিতাগুলির মধ্যে এই গাঢ় স্বরটি খুব স্পষ্ট। আমি এটাকে মনে করছি তাঁর বডি অফ ওয়ার্ক বা কবিতা (যদি সব কবিতা একটিই কবিতা হয়) তার স্পাইন। আমি মনে করি, একজন কবিতালেখকের এই বডি অফ ওয়ার্ক বা স্পাইন থাকা খুব জরুরি। 

সৈয়দ সাখাওয়াতের কবিতার মূল সুরটি যেন এমনই- আমার তাই-ই মনে হয়। এমন একজন ক্লান্ত মানুষ, যে হয়তো-বা একাকী মোমের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে ভালবাসে। যাকে হাজার গণ্ডা উপঢৌকন দিয়েও ব্যক্তিগত পরিসরে অন্য কাউকে থেৎলে দেবার কাজ করিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আবার হয়তো সম্ভবও। 

তবে প্রকাশনাকে, বিশেষত দ্বিতীয় বইটির ক্ষেত্রে, আরো বেশি নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় বইটির বানান, স্পেসিং-এ এমন সব ভুল বা ত্রুটি থেকে গেছে, যা পীড়াদায়ক। এই বিষয়টি যদিও আসার কথা নয়, তবুও যেহেতু বইটিই মাধ্যমেই আমি কারও লেখা পড়ছি, তাই অনিবার্যভাবে এসেই যায়। ফলে ব্যাপারটি হয়ে ওঠে এমন যে, ব্যাটসম্যান শুধু রান করে, বোলার মার খেয়েই যায়- এতে মনে দ্বিধা আসে বৈ কি।   

এবার আমার একটি অনুমানের কথা বলি, সেখ সাখাওয়াতের কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ নিয়ে হঠাৎ যে একটা প্রশংসার গণ-অভ্যুথ্থান ঘটবে, এমন আমার মনে হয় না। তাঁর কবিতা পাঠক পড়বেন। বই বুজিয়ে রেখে দেবেন। আবার কখনো কোনো একদিন দেখা যাবে, পাঠক ফের তাঁর কবিতার বইটি কোলে খুলে বসেছেন। সৈয়দ সাখাওয়াতের কবিতা আমার মনে হয়, এইরকম। 

সবশেষে পূর্বের প্রসঙ্গেই ফিরি। একজনের লেখা পড়া, সেই লেখার সঙ্গে রিলেট করা, তার ঘোরের আস্বাদ নেওয়া এ এক জিনিস আর সেই অভিজ্ঞতাকে যথাযথভাবে লেখা আরেক জিনিস। আমার মনে হয় এই কাজটি (যেটা পাঠ-প্রতিক্রিয়ার নামে অহরহ চলে) পৃথিবীর সবচাইতে পবিত্র এক অসত্য। সুতরাং আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সত্য শুধু আমার মতে, জীবনানন্দ দাশের নিম্নোক্ত এই কয়টি লাইন- 

তারপর পড়ে থাকে, নক্ষত্রের বিশাল আকাশ,
হাঁসের গায়ের ঘ্রাণ-দু-একটা কল্পনার হাঁস;

মনে পড়ে কবেকার পাড়াগাঁর অরুণিমা স্যানালের মুখ;
উড়ুক উড়ুক তারা পউষের জ্যোৎস্নায় নীরবে উড়ুক
কল্পনার হাঁস সব — পৃথিবীর সব ধ্বনি সব রঙ মুছে গেল পর
উড়ুক উড়ুক তারা হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভিতর 

তাই আমার এই অল্পবুদ্ধির আলোচনার চেষ্টায় আবহমান কবিতা, কবি বা কবিতালেখক এবং তাঁর হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভিতর উড়ন্ত অসংখ্য কল্পনার হাঁসেদের কিছুমাত্র আসে-যায় না। তারা তাদের মতো হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভেতরে ওড়ে। শম্ভু রক্ষিতের একটি উক্তি এখানে বলতেই হবে। এই উক্তির চেয়ে যোগ্যতর কনক্লুশন আর বোধহয় হয় না। ‘আমরা সকলেই পরীক্ষা দিতে বসেছি, খাতা জমা রেখে যেতে হবে। মহাকাল কাকে কত নম্বর দেবে তার ওপরেই নির্ভর করছে কবি ও কবিতার ভবিষ্যৎ। খাতা জমা দিয়ে চলে যাবো। চল্লিশ পঞ্চাশ বছর পর খাতাগুলো দেখা হবে, যদি কিছু সারবস্তু থাকে, পাশ করবেন- না হলে গোল্লা।’

মন্তব্য

নাম

অনুবাদ,32,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,303,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,14,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,12,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,14,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,152,প্রিন্ট সংখ্যা,4,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভাষা-সিরিজ,5,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: খয়েরি মেরুন প্রজাপতি
খয়েরি মেরুন প্রজাপতি
বিন্দু। সৈয়দ সাখাওয়াৎ সংখ্যা। প্রবন্ধ: অমিতরূপ চক্রবর্তী
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiPsaor_Gea2s0NzGMUNxx-oIe91DSw8NqAc3s6kSopLSmyNAy2fXrPVYlsZZ3T5hOByUz7uTkUc0p363p9pupel41eIoxuSubzN-tbl67mXs01AB1542RFkMUIG7VjNVelKFQBnB5FGVJuPx6jY_88N4GUlZ8b0CBD72_em9YdW6H9CWQwtc6TP2mA/s320/%E0%A6%85%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%82%E0%A6%AA-%E0%A6%9A%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A7%88%E0%A7%9F%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%8E.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiPsaor_Gea2s0NzGMUNxx-oIe91DSw8NqAc3s6kSopLSmyNAy2fXrPVYlsZZ3T5hOByUz7uTkUc0p363p9pupel41eIoxuSubzN-tbl67mXs01AB1542RFkMUIG7VjNVelKFQBnB5FGVJuPx6jY_88N4GUlZ8b0CBD72_em9YdW6H9CWQwtc6TP2mA/s72-c/%E0%A6%85%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%82%E0%A6%AA-%E0%A6%9A%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A7%88%E0%A7%9F%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%8E.jpg
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2022/09/amitrup-chakraborty.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2022/09/amitrup-chakraborty.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy