আমাদের মফস্বলি রাস্তা দিয়ে মন্ত্রীর গাড়ি বরকন্দাজ সহ শব্দ করতে করতে ছুটে যেতে লাগ্লো! এই দৃশ্য দেখার ভিড়ে গিয়ে আমাদের গরিব এক ছাগল পুলিশি হল্লা কিংবা জনতার ঠেলাঠেলি অথবা শব্দের চাপে ভড়কে গিয়ে, কিংবা পিছন থেকে কৌতুহলী কারোর ধাক্কায় মন্ত্রীর গাড়ির সামনে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে খিচ মেরে গেলো! দক্ষ ড্রাইভারের কসরতে মন্ত্রীর গাড়িচাপা পড়ার হাত থেকে বাঁচলেও একটা মাঝারি সাইজের ধাক্কা খেয়ে আমাদের গরিব কৌতুহলী ছাগলটা ছিটকে গিয়ে তড়পাতে লাগ্লো! রাস্তার পাশে বসে বেহুদা ঘাসের ডগা চাবাতে থাকা এক মুচি তাকে জাপ্টে ধরে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দিকে উদোম দৌড় দিলো!! ফলে বিক্ষুব্ধ আমরা জড়ো হয়ে গাড়ির কাঁচের ফাঁক দিয়ে কান ধরে মন্ত্রীকে টেনে হিঁচড়ে বের করে একটা কাঁচের বয়ামের মধ্যে পুরে হাটের মাঝখানে রেখে দিলাম, আর পুলিশ গুলোকে থাপড়াতে থাপড়াতে কলাবাগানের দিকে চালান করে দিলাম! হাটবার হওয়ায় চারদিকের লোকেরা হুমড়ি খেয়ে কাঁচের বয়মে বন্দি মন্ত্রী দেখতে লাগ্লো আর দানাপানির জন্য এক টাকা দুই টাকার কয়েন ছুড়ে দিতে লাগ্লো! একজন একটা একটাকা ছুড়ে দিয়ে খলবলিয়ে বল্ল, খয়রাত নালি চান্দা খায়েই তো বাঁচে ইরা!! খ্যাকখ্যাক..! হতভম্ব মন্ত্রী ভয়াবহ টাস্কি কাটিয়ে উঠে প্রথম বাক্য বল্ল, আমারে চিনো?এক ময়রা দোকানের পিচ্চি কেলিয়ে বলে উঠলো, হ চিনি টিপিতে দেখিছি! ফলে চারদিকের লোকেরা মাথা নাড়ে! অর্থাৎ সাবাই তাকে টিপিতে দেখিছে! মন্ত্রী রসগোল্লা সাইজের চোখ করে বলে ওঠে, আমারে জলদি ছাড়ো নাইলে কলাম পুলিশ আসপে নে! ময়রা দোকানের চ্যাংড়া বলে ওঠে, লাভ নেই কাকু! বিচি এহন হালুয়া কলে! তুমার সাথির পুলিশ গুলোন রে কলাবাগানে কলা গাছার সাথে বাইন্ধে থুইছে! মন্ত্রী খেঁকিয়ে বলে ওঠে, হাজার হাজার পুলিশ আস্পেনে কলাম এহন! আমারে ছাড়ো! এর মধ্যে ভিড় ঠেলে গরিব ছাগলটার স্ত্রী ম্যা ম্যা করতে করতে এগিয়ে এসে ভৎসনার সুরে বলে, লক্ষ লক্ষ পুলিশ আসুক গে.. কোটি কোটি র্যাপ! বন্দুকযুদ্ধের গজব নামুক তোর উপরে ঠাপ!! আগে আমার স্বামী ফেরবে কোমার থে তারপর তুমারে ছাড়াছাড়ি! ফলে ম্যান্দা মেরে যাওয়া মন্ত্রীকে দেখে কামারের ছেলেটা কয়েকটা ছ্যাঁদা করে দেয় বয়মের টিনের মুক্টিতে! আর চা দোকানদার আধা চামচ চিনি ঢুকিয়ে দেয় বয়মে! মন্ত্রী রেগে বলে, এসব কি? চা দোকানী বলে, ফোঁসফোঁস না কইরে ওগুলোন চাটো! নালি বাঁচপানানে! বিকেল হয়ে গেইছে, হাট ভাঙলি কেউ খোঁজ নেবে নানে! ফলে ভিড়ের মধ্যে একজন বলে, মন্ত্রীডা বেজার মুখো! ওরে সুড়সুড়ি দেও দিনি! ফলে কয়েকটা কালো পিঁপড়ে ছেড়ে দেয়া হয় বয়মের মধ্যে! আর পিঁপড়ের কাতুকুতুতে হাসতে হাসতে অচেতন হয়ে যায় মন্ত্রী! ক্রমে সন্ধ্যা নামে আর হাটের ভীড় উবে যায়! ওদিকে সার্কিট হাউজে মন্ত্রীর শালা শালিরা অপেক্ষায় অধীর দুলাভাই স্থানীয় উন্নয়ন উদ্বোধন সেরে ফিরলে প্রচুর ফান হবে সেই পিপাসায়! সেদিন সার্কিট হাউজে রাতের মেনুতে খাসির রেজালা ছিলো। শোনা যায় আহত গরিব ছাগলটাকে হাঁসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বেভুল মুচিটা সস্তায় বেচে দিয়ে যায় সার্কিটহাউজের বাবুর্চির কাছে! এই ঘটনা ভোররাতে ছড়িয়ে যায় আমাদের মফস্বলে! ফলে, গরিব ছাগলটার স্ত্রী রাগে দুঃখ বয়মবন্দী মন্ত্রীর বয়মটাকে লাথিয়ে নদীতে ফেলে দেয়! ফলে টুমটুম করতে করতে জলে ভেসে যায় মন্ত্রী!! আর বেলা উঠলে মন্ত্রীর স্ত্রী হাউমাউ করতে করতে কলাবাগানে এসে কলা গাছ কেটে সব পিছমোড়া বান্ধা পুলিশ অবমুক্ত করে জমিনে! এবং সে নির্দেশ দেয় কাটা কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে দিতে, কেননা, বেহুলা পদ্ধতি ব্যতীত স্বামী ফেরানোর আপাতত আর উপায় নেই! কিন্তু পুলিশরা ভেলা বানাতে রাজি হয়না! তারা বলে, কলি জামানায় এসব কাজে আসে না, স্পিডবোর্ট ডাকেন! তাছাড়া আমাদের হাত ব্যথা সারা নিশি পিছমোড়া থাকায়! তখন মন্ত্রী শ্যালিকা বোনের কানে ফিস্ফিসিয়ে বলে, দুলাভাইর এখন যা সাইজ, এইটা তো মান সাইজ না, তারে দিয়া কি করবা আর? তার থিকা চলো জানে বাইচ্যা ফিরা যাই আর চল্লিশা করি ধুমধামে! মন্ত্রী গেলে মন্ত্রী পাবা জান গেলে পাবা না! তখন গরিব ছাগলের বিধবা স্ত্রী উচ্চাঙ্গে ম্যা ম্যা করতে করতে এগিয়ে এসে বলে, এহন আমার কি হবে? জলে ভেসে যাওয়া মন্ত্রী পত্নী তাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে বোন ডেকে গাড়িতে তোলেন! কেননা একজন বিধবাই আরেকজন বিধবার বেদনা বুঝতে পারেন বলে আমাদের মনে হয়! কিন্তু আমাদের মধ্যে দুষ্ট মস্তিষ্কের কেউ কেউ বলে, আশা করা যায় মন্ত্রীর চেহলামের খানাদানার মাংসের মধ্যে গরিব ছাগলের এই বিধবা স্ত্রীকেও পাওয়া যাবে! কিন্তু আমাদের মফস্বলি আহম্মকেরা এইসব বিশ্বাস করে না! তারা বিশ্বাস করে— ঐ গরিব ছাগলের বিধব স্ত্রী জলে ভেসে যাওয়া মন্ত্রীর বউকে গাড়িতে উঠেই চিবিয়ে খেয়ে ফেলে! কেননা ফাজিল লোকেরা কয়, পাগলে কি-না লেখে, ছাগলে কি-না খায়? ফলে আমাদের গর্ব হয় গরিব ছাগলের সাহসী বিধবা স্ত্রীর জন্যে, কিন্তু তাকে আমরা কোনদিন টিপিতে দেখি না! ফলে আমাদের মনে সামান্য সন্দেহ জন্মায় তার জলে ভেসে যাওয়া মন্ত্রী পত্নী থেকে রাজধানী চিবিয়ে খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা নিয়ে,কেননা রাজধানীতে বিদ্রোহীদের মাংস কাবাব হয়ে বিক্রি হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে!
০৩ জুন ২০২২
জলে ভেসে যাওয়া মন্ত্রী কিংবা গরীব ছাগলের বিধবা বউ
রোমেল রহমান
রোমেল রহমান
এই গল্পটি পড়ে আমি আপ্লুত। সূক্ষ্ম হিউমার ও অনবদ্য সমাজবোধ সম্বলিত একটি গল্প। বহুদিন পরে এমন একটি গল্প পড়লাম। গ্রেট!
উত্তরমুছুনবেশ মজার।
উত্তরমুছুন