অন্ধকারের স্মৃতি
ওভারডোজ ওষুধ সেবন করে দীর্ঘ বছর নিদ্রিত, অচেতন মানুষগুলো ইউক্যারিয়ট প্রাণী, হাইবারনেশনে সুষুপ্ত। কোথায় সে দাওয়াই, ইস্মার্ট ড্রাগ, যা খেলে নিজেই নিজের জিন এডিট করা যাবে, ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেয়া যাবে ডেথ হরমোন, নিউট্রালাইজ করা যাবে করোটিতে ঘুরতে থাকা অযাচিত চিন্তা? আপাদত পাগলা কুত্তাগুলো যাতে যত্রতত্র ঘেউ ঘেউ, দাঁত লালা প্রদর্শন না করে সেজন্য তাদের হিস্টোন এসিলাইটেশন এপিজেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে মৌসুমী পাগলামি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
আমি না হয় ওভার ডোজ ওষুধ সেবন করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ব্যাকটেরিয়াগুলো তিরিশ বছর আর ঝিঁঝিঁ পোকাগুলো কেন সতেরো বছর ধরে ঘুমিয়ে রয়েছে?
কোথায় সে দাওয়াই, ইস্মার্ট ড্রাগ যা খেলে সুপার কম্পিউটারের মতো গণনা সক্ষম হয়ে যাবে আমাদের নিউরন, অ্যাক্সন, শরীরের সব রিসেপ্টরের উপর ক্রিয়া করে মেটাবলিজম ড্র্রাগ উৎপন্ন করবে সকল ফ্লু, রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি, বৃক্ষদের মতো আজীবন গ্রোথ হরমোন বাড়ন্ত থাকবে, প্লাস্টিক পাচন সক্ষম পাচক রস বের হবে পাকস্থলীর গা থেকে, নিউরোট্রান্সমিশন ত্বরান্বিত হবে, মনে পড়ে যাবে জরায়ুর স্মৃতি।
অগ্নিনির্বাপক CO2
আগুনের আক্রমণে পুঁড়ে যাওয়া যতটা সহজ
আগুন নিভিয়ে দেয়া সে বড় সহজ নয়
সকরুণ মরণোন্মুখ জীবন শুকনো পাতা, শনে ছাওয়া ঘর, মৃতগাছ হয়ে থাকে
শুধু একটু দাবানল, দহন স্ফুলিঙ্গ ব্যস জ্বলে উঠবে এই দীর্ণ ম্যাচিস বাক্স, রক্তিম বারুদ
তবু কোথাও অযত্নে বেড়ে উঠে স্যাঁতস্যাঁতে আঁধারে, পঁচা খড়ের গাদায় কিছু বাড়ন্ত ছত্রাক যারা
দুপুরের রক্তবর্ণ রোদ গভীর আস্বাদে শুঁষে নিতে পারে
ফাঁপা কচুরিও বিকেলের তেজস্ক্রিয় রোদ, অত্যুজ্জ্বল গামা বিটা উদরস্ত করে ফেলে
অনেক দহন, কার্বন জারণ নিয়ে বুকে মানুষেরা পুঁড়ে পুঁড়ে ছাই-ভস্ম হতে চায়
শুধু কিছু ধূমরুর শিলাখন্ড বাতাসের বুক থেকে বিপদজনক কার্বন গলাধকরণ করে ফেলে
ফায়ার অ্যাসটিংগুইশার আগুন নিভিয়ে দেয়।
স্লিপ ওয়াকিং
চমৎকার যে গন্ধে বেঁহুশ হয়ে চোখ মেলে থাকতে পারছিনা নিদ্রায়
সে গন্ধ কীসের? মেঘমুক্ত শরতে ফুটে উঠছে শুভ্রশিউলি
এগুলো নিশ্চয় ঘুমপাড়ানি নয় তবে ঘুমজাগানি বকুল
দূরের বনে প্রস্ফুটিত লরেল ফুল থেকে ঘ্রাণ এসে আমাকে নিদ্রালু করে ফেলছে
আমার স্বপ্নের মধ্যে জমাটবদ্ধ হচ্ছে মেঘ
বৃষ্টি শুরু হলে স্লিপ্ওয়াক করে মাঠে চলে যাবো গ্রীষ্মকালীন শস্য রুয়ে দিতে
অ্যাকরডিং টু ফ্রয়েড, ঘুম একটা স্বাধীনভাবে বিচরণ ক্ষেত্র
আমার ভেতর যে ঈগলপ্রাণ টিয়াপাখির ভাই
শিকারবাসনা নিয়ে জেগে উঠে ঘুমে
ড. জেকিল আর মি. হাইড আমার ঘুমন্ত গোপন ইচ্ছা তারাও জাগে
ঘুম ভেঙে গেলে দেখি স্বপ্নে যেসব অচেনা ফুলের সান্নিধ্যে গিয়েছিলাম
তাদের পরাগরেণু লেগে আছে জামায়, শরীরে।
এলিয়েনহোস্ট
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ করেছো তো করে এসো এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফ,
ইনফ্রারেড যন্ত্রে পরিমাপ করো জরায়ুর প্রাণজাতীয়। সুনিশ্চিত হও,
দেহের ভেতর বাড়ন্ত যে সে কি হরিণশাবক, গাছ, গতিবান চিতা-বাঘ, মানব সন্তান নাকি এলিয়েন স্পেসিস?
কে জানে কখন জরায়ুর মধ্যে বেড়ে উঠবে মহাজাগতিক লোনা মাছ?
কার যেন মানবিক দেহের গভীরে জমাটবদ্ধ অন্ধকারে তিলে তিলে বড় হয়ে উঠছে ক্ষুদ্র ভ্রুণ
বড় হয়ে উঠা সেই ভ্রুণের ভেতর আরো এক ভ্রুণ, রক্তের স্পন্দন, ঢেউ বন্দি হয়ে আছে
হঠাৎ একদিন ঝিঁঝিদের অবিশ্রান্ত ক্রন্দনের মধ্যে দেহস্থিত দেহ মাতৃদেহ ছিঁড়ে ফুঁড়ে বের হয়ে আসে
যেভাবে শুঁয়াপোকার নিষ্প্রভ শরীর ফুঁড়ে ছোট ছোট বোলতাছানা জন্ম লাভ করে
মৃতপ্রায় পোষকপ্রাণী কি জানে এতোদিন তার দেহে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিলো পান্থজন,
মানুষের জরায়ুতে লোমশ, জান্তব কিছু প্রাণী ভূল করে এসে যায়?
কয়েকজন সুপার হিউম্যান
পায়ে হাঁটা পথ, সুনিবিড় পাঁড়াগাঁর শেষে বিল থেকে ভেসে আসছে চরতিতির রতিডাক। শোনো, কতটা গভীর তার স্বরপেশির তান যাতে স্ত্রী পাখি মিলনে আগ্রহ বোধ করে। সেই ডাক, পাতার মর্মর, শিশেরের শব্দ যতই মৃদু ফ্রিকোয়েন্সি হোক কয়েকজন সুপার হিউম্যান তা ঠিক ঠিক শুনতে পায়। অবিভক্ত আকাশের মিঘের উপর ভাসমান শঙ্খচিল, বৃষ্টিপ্রেমি চাতকবট, অরবিটাল বর্জ্য, মেঠোপথে বসেও সুপার মানুষেরা দেখে, এতোটাই দূরদর্শী, তীক্ষ্ন ট্যাপেটাম বিশিষ্ট তাদের চোখ। ঝড় আসার কিয়ৎ পূর্বে বাতাসে বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে পিঁপড়াদের আগে তারা বলে দিতে পারে। তারা তাদের ঘ্রাণশক্তি কাজে লাগিয়ে ভূ-মধ্য থেকে খুঁজে খুঁজে বের করতে পারে বিস্ফোরক দ্রব্য। বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল খাটিয়ে তাদের ভেতর যুক্ত করা হয়েছে ঈগল, তাদের ভেতর যুক্ত করা হয়েছে কুকুর, তাদের ভেতর যুক্ত করা হয়েছে নীলতিমি।
আঠারো মাসে বছর
রাতের উজানে নিরস ও জনবহুল জংশন নিস্তব্দ হলে আমি প্লাটফর্মে বসে থাকি উদাসীন হয়ে, কোনো গাণিতিক সমস্যায় মগ্ন গণিতবিদের মতোন। দীর্ঘ ভেঁপু বাজিয়ে একের পর এক ট্রেন অনিঃশেষ দিকে দিকে চলে যায়, যা কিছু যাবার সেতো অনেক আগেই চলে গেছে শূন্য করে জীবনের দৌড়। শেষ ট্রেন একটা ধারণা কেবল, শেষ বাস, লঞ্চ, শেষ মহাকাশযান বলে কিছু নেই, শেষ মৃত্যু বলেও কিছু নেই। অনন্ত প্রবাহ আছে বিনাশের, যন্ত্রণার। আমি এক অনুপযুক্ত কাফকার পোকা, আমার কোথাও যাবার নেই, দীর্ঘসূত্রীতা আছে, আঠারো মাসে বছর আমার।
উত্তরাধিকারসূত্রেপ্রাপ্ত স্মৃতি
কোথাও গভীর ভূল ঘটে গেছে, প্রাণীদের জিনোম সিকোয়েন্সে ভু ু ু ু ল। যেসব বিড়াল চাচ্চা কোনোদিন সাপ দেখেনি, তারা সাপের মতন ঈষ-বাঁকা বেগুন, তেঁতুল দেখলে ভয় পায় কেন? কেন শসা দেখলে ভাবে সাপ, ডেডলিয়েস্ট সরীসৃপ বিষে ভরা। তারা মা বাবার সাপ দেখা স্মৃতি জন্মসূত্রে পেয়ে গেছে নাকি? যেরকম জন্ম নিয়েই পেয়েছে নাইট ভিশন চোখ ঘন অন্ধকার কাটার, মানুষেরাও তো জন্মসূত্রে পেয়ে থাকে বংশগতি, কেউ কেউ ইদানীং লাভ করছে বংশগত স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমি জিরাত যেন, গভীর অসুখ। অনেক বিলুপ্ত ভাষা, পাখিদের ছবি, গান, নাচ কারো কারো মাঝে সুপ্ত হয়ে আছে, নিউরন খনিজ হয়ে আছে অতীত যুগের জীবাশ্মের মতো। হিপোক্যাম্পাস সার্জারি করে, লং-টার্ম স্মৃতি ঘেঁটে ঘেঁটে তাদের সারিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে।
ফুলের ছদ্মবেশ
ঝাঁক ঝাঁক শ্রমিক মৌমাছি আমাকে ভীষণ তাড়া করে ফিরছে মাইলের পর মাইল জলের গভীরে, যেখানে পথ এসে দিগন্তের সাথে মিতালি গড়েছে, আমি দেখেছি তাদের বিষগ্রন্থি টম্বুর হয়ে বিষ ঝরে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা পদ্মপাতার উপর। আপন বিষে মৌমাছি বৈরী। শ্রমিক মৌমাছিদের তাড়নায় আমি ব্যতিব্যস্ত। আমাকেই কেন তারা তাড়া করে ফিরছে? আমি কি আমার টেস্টোসটেরণক্ষরা রসালু গ্লান্ডের নিচে রাণী মৌমাছিকে লুকিয়ে রেখেছি?
পূবের আকাশ কালো করে যৌনোন্মাদ, নেশাগ্রস্ত পুংমৌমাছিরা উড়ে উড়ে আসছে, পুং মৌমাছিদের মাতালরুপ দেখে মনে পড়ছে মস্তিরত গুন্ডা হাতিদের কথা যারা হরিপোকা ডাকলে ফসলের ক্ষেত ভাঙে।
শ্রমিক মৌমাছিরা ছদ্মবেশী ফুলকে স্ত্রী মৌমাছি ভেবে বৃথা রতিচেষ্টা করতে করতে পাগলপ্রায়, ফুল কি জানে তারই পরাগরেণু, অ্যালকোহল নিতে নিতে মৌমাছির মতিভ্রম ঘটে, বিষ নিতে নিতে মৃত্যু?
তুষারপাতে বিকল মানবযন্ত্র
যথাসম্ভব নিজেকে স্টার্ট দিয়ে রাখো হাইড্রোজেন চালিত মোটরের মতো। দৌড়াও এবং কৃষিকাজ তদারকি করো, ফুলকপির গোঁড়ায় দোঁআশ মাটি ঝুর-ঝুর করে দাও। ধূলিসমাচ্ছন্ন গাছপালার ’পরে সাদা কুয়াশার ফাঁকে সূর্য দেখো কদাচিৎ। শিমুল তুলোর মতো তুষারপাত মেঘ ঝাকালেই হয়। মনে রেখো, এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে তো চিরদিনের জন্য মমি! সঙ্গমপ্রবণ কাঠবিড়ালীগুলো হেমন্তকালীন রতিকার্য বাদ দিয়ে মানুষের খাদ্যগুদামে বাড়িতে হানা দিচ্ছে, ভূ-মধ্য কলোনি থেকে লাখ লাখ পিঁপড়ে বের হয়ে খালি করে দিচ্ছে শস্যগোলা। প্রাণীকূল আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে একটা দীর্ঘ শীতকালের, উত্তর মেরুর মতো ছয়মাসী শীত, এক-দুই-তিন বছর মেয়াদী শীত। আরো বেশি দৈর্ঘ্যরে অকল্পনীয় লম্বা শীতকালও আসতে পারে। ইউরেনাসেতো শীতকাল শেষ হতে হতে একুশ বছর কেটে যায়। এবার নিশ্চয়ই নদী ও পুকুরে স্বাদু পানির মাছগুলো শিখে ফেলবে কিভাবে জৈবিক প্রক্রিয়া অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। নীরবতাপ্রিয় খেঁকশিয়াল, বন্য বিড়ালের দেহে অঙ্কুরোদগম হবে পুরু পশম, বিবর্তিত হয়ে আমরাও তুষার মানব ইয়েতির মতো পশমবহুল, লম্বা ঘুম জানা হবো, বরফের মাঝে বিশাল পায়ের চিহ্ণ এঁকে পৌঁছে যাবো সাহারায়, সবুজ দেশে।
ঘুরপথ
শুধু ছায়ার দৈর্ঘ্য মেপেই বলে দেয়া যায় পর্বতের কদ্দুর উচ্চতা
প্রতিধ্বনি মেপে গভীরতা সমুদ্রের
বস্তু, দৃশ্যাবলি না ছুঁয়েও তার অন্তসার অন্তঃপ্রবাহিত ইলক্ট্রন নিয়ে সংখ্যা বলা যায়
বুকের উপর বসে বসে একজন পোলম্যান গভীরতা মাপনি মেশিন দিয়ে সারাক্ষণ
কি যেন নির্ণয় করতে চায় আমার বুকের
অতলস্পর্শী হাহাকার, লাল সংকেত, প্রতিশ্রুতি?
যতই সচেষ্ট হোক সে যে কখনো পাবেনা ছুঁতে বহুবাক, অন্ধকার, রহস্য অপার
বিপদজনক বাঘের ট্রেইল ধরে ধরে রক্তাপ্লুত পথে বহুদূর অসীম দিগন্তে চলে গেছি
ক্ষয় হয়ে গেছি পুণঃনির্মানের বাইরে
যাদুমন্ত্রে আর এই জামার ভেতর থেকে উড়বেনা কইতর আছে এমনই শূন্যতা
কয়েকজন সুপার হিউম্যান
খান আলাউদ্দিন
খান আলাউদ্দিন
বাহ্
উত্তরমুছুননতুন স্বাদের কবিতা
উত্তরমুছুন