চলমান জনপদে ছোপ ছোপ দাগ। জীবন দাগ হয়ে পড়ে আছে। পিছনের ঠ্যাং ভেঙে গেছে, তাই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। যেন ট্রেনে ওঠা-নামার কিউ। অসাড়ে উঠে যায়, যায় নেমে। শুধু ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করতে পারলেই হলো। রাষ্ট্র সিচুয়েশন রুমে বসে নজর রাখে কিন্তু উপায়ের খসড়া আনসিন অবস্থায় থেকে যায়। অথচ ধুলোময় জীবনকে দেখতে সাহায্য করে পিছনের চোকলা ওঠা ভাঙা আয়না। কার ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া বস্তু, অসময়কে বাইপাস করে দুঃসময়ের ঘরে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। দাঁড়ানোর পা নেই। অগত্যা ঘরহীন ঘরের পাঁচিল বলতে মেট্রোরেলের দেওয়াল। ওপারে সভ্যতার আধুনিক চাকচিক্য, এধারে ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া সংবিধানের প্রস্তাবনা। এক অদম্য হার্ডকোর লড়াই। চোখের প্রাচীনত্ব যেন এটা বলতে চায়, ‘ঝুঁকে গা নেহি শালা!’ কেউ কি এখানে থামে না? থামে না কেউ কি তার বিচারবুদ্ধির উপর আস্থা রেখে। কাছাকাছি আসলে বোঝা যায় এই মিলমিশের সীমানা ৩৮ প্যারালালের চেয়ে কম কিছু নয়। আশঙ্কা, সংশয় বোধ হয় দু-পক্ষের। কিন্তু কে দায়ী? যে দায়ী তাকে কি 'স্ট্যান্ড রিলিজ' দেওয়া যাবে। যাবে না বলেই হয়তো টালা টু টালিগঞ্জ, নোয়াপাড়া টু মেটিয়াবুরুজ, সর্বত্র একই অবস্থা। জীবন চলছে তাই ট্রামের ঝাকুনি নিয়ে। অ্যান্টেনায় স্পার্ক হলে তিন ইটের উঠোনে আগুন জ্বলে। আগুনের লেলিহান শিখা শরীরে ট্যাটু হয়ে ফোটে। রক্তের সঙ্গে যতটুকু তাদের কথোপকথন হয় তাতে বোঝা যায় এই যাপনচিত্র এমন এক জেনারেশন নেক্সট যা সকলের নজর এড়িয়ে কবেই মায়া সভ্যতার পথ ধরে অবলুপ্তির দিকে হেঁটে গেছে। তবুও টিকে আছে কিছু সত্তা বাঁ-হাতের অভ্যাস মতো কিংবা ছায়া সরে যায় যেভাবে কম্পিত প্রচ্ছায়ার হালকা দাগ রেখে। এখানে কোনো হিপোক্রেটিক ওথের দরকার পড়ে না। ওই ভাঙা আয়নার গায়ে লেগে থাকা প্রায় আঠা ওঠা টিপ দেখে সূর্য লজ্জা পায়। তার ডুবে যাওয়ার অভিপ্রায় থাকে ছেঁড়া কাঁচুলির গন্ধময় স্তনের ভাঁজে যেখানে অন্যধরণের গণতন্ত্র প্রতিপালিত হতে চায় ‘দ্য কমেডি অব এররস’-এর মেজাজে...
ভাঙা আয়না ও মেট্রোরেলের দেওয়াল
সোমনাথ বেনিয়া
সোমনাথ বেনিয়া
মন্তব্য