এমন দূর্ভেদ্য আলোয় হাওয়ার সংলাপ শুনে শুনে একদিন নির্ঘাত শিশু পাতার মতো থমথমে হবো। রাত পোড়ানোর প্রতি ভোরে তোমার রক্তের চলাচল দেখতে পাই আমার চোখের ভিতর আরও অসংখ্য চোখে। তোমাকে পাই না। কোথায় থাকো ব্যক্তি অলৌকিক, আমার এ ঘুম কেড়ে নেওয়া? পৃথিবীতে রাত্রির চেয়ে ভয়ঙ্কর কোনো অস্ত্র নেই। কি একটা আছে তার অনন্ত শরীরে, মোর দ্যান বিষন্নতা। শিরা-উপশিরা, ফুসফুস কাটে। ব্যক্তিগত শব্দের নিচে সহস্র খণ্ডের স্বয়ং আমি এক উত্তম পুরুষ। লেনাদেনা শোধ হয়ে যায়– আবার হয় না কিছুই। মীমাংসার সমস্ত উপকরণ দূরে ভাটার চুল্লিতে পুড়ে যাচ্ছে। শরীরের মেধাবী উপাংশ, যে শুনেছিল কারো অশ্রু পতনের আওয়াজ, কেবল আবর্তনে বিশ্বাসী সে'ই একটা বিদ্যুৎশূন্য মুহূর্তকে গিলে শিখে নেয় অনন্তভেদী গান। সুর নেই, পদাকার-কদাকার কিছু নয়। স্বরতন্ত্রে ষড়যন্ত্র থাকে, বাচ্য অবাচ্যের বাইরে তাই এ গান কেবলই নিঃশব্দের স্রোত। চাইলে ভাসতে পারি, ডুবতে পারি। নক্ষত্রের ইশারা, বাজারের ব্যাকুলতা, আর বোধের ব্যাপ্তিতে জানালার বাইরে ছুঁড়ে ফেলা কাগজের বল– তার সে গতির রহস্যের মতো জটিলতা নেই। এ স্রোতে ভাসতে ডুবতে সান্দ্রতা, কৈশিকতা, ফ্লুইড মেকানিক্স জানতে হয় না। অভিজ্ঞ এ স্রোত অনভিজ্ঞ আমাকেও খুব সহজেই নিরাকার করে দেয়। তখন আমাকে ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান তিন কন্যার কোমরের অলঙ্কারে খুঁজে পাই। ক্যারোলিন বলে, অত্যাচারী মনের কোণে এঁকে নাও সুঠাম দেবমূর্তি। অনুজ্ঞায় ক্রিয়াধীন হই এবং স্বীয় মূর্তিকে দেখি, এই রাসায়নিক হিংস্রতার যুগেও ভীতিহীন ছুটছে; অস্থিরতার অন্তড়ালে তার আকণ্ঠ স্থির কালো চাঁদে– দেবী মনসা ফণা তুলে আছে।
আনত অন্ধকার আজ কিছুটাকে তাড়িয়ে দিলাম। গৃহান্তরে প্রবেশের পর আমার প্রাদি পরাজয়। এইবার পৃথিবীতে ভেসে ওঠে প্রবীণ নগরী। আনন্দনগর, একটুও আনন্দ নেই। ফরবিডেন ট্রুথ। বিশ্বাস করতে পারি, নাও পারি। যেমন স্টিফেন নিকোলাস একদিন চন্দ্রনাথে দাঁড়িয়ে দেখেছিল দূর সাগরের উত্তাল ঢেউ! আমি দেখি নিরানন্দ নগরীর ক্রিং ক্রিং ঘন্টাধ্বনি থেকে জন্ম নেয়া একঝাঁক বিবর্ণ বলাকা। যেন সব দেখতে পাই। মিথ্যুকের ম্রিয়মাণ মুখ, হৃতসর্বস্ব মানুষের সহাস্য রোদন, ক্লোরিনেশনের বিড়ম্বনায় প্যালাটেবল ওয়াটার। সেও কি আমি নই? নিকটবর্তী স্মৃতি শ্রুতিধরা সঙ্গী'তে গাঢ়। তার জীবনের শ্লোকগুলো মগজের ভারকেন্দ্রে মুগ্ধতা ঢেলে দিতো বেশ। আমি তাকেও নিঃসঙ্গ করে দিয়ে গুড এ্যাট ম্যাথমেটিক্স হয়ে উঠলাম। তবু কোথায় কোন হিশাবের ভুল– যেন একটা অশান্ত কাঠঠোকরা মগজে বাসা বেঁধে আছে।
দৌঁড়াই। ভুল মোচনের পথ– একটা বিন্দুকে পরিভ্রমণ করি। এরপর কিছুটা, কিছুদূর ডট ডট...
ঢেউ ওঠে। কেউ ওঠে। কিছু ওঠে। যখন ইনভিজিবল কিছু একটা প্রতি রক্তকণায় ঢেলে দেয় 'শিরশির', তখন বুঝতে পারি, আর কারো নয়– আমারই রক্তের চলাচল টের পাই। বেঁচে আছি। অদ্ভুতভাবে বেঁচে আছি।
নোটবুকে অন্ধকার : একটি বেআইনি সত্য
হোসাইন মাইকেল
হোসাইন মাইকেল
অসাধারণ গদ্য পড়লাম
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন