নিয়ত নবান্ন ভোর
সন্ধের তারাটি কাঁপে রাত্রি-কালো জুজুভয়ে
শিশু-শিশু তারা মুখ উগলায় আলো বমি
সাগরের ভরাপেটে সূর্যের গলিত ভ্রূণ
শতাব্দী প্রাচীন ক্ষোভে ভাগাভাগি জলাভূমি।
আকাশের নীচে পাতা গালিচা সবুজ মন
বসন্তে উত্তুঙ্গু জৌশ হেমন্তে বিষাদ জাগে
ষড়রিপু ষড়ঋতু মায়ামৃগ চাটে ঘাস
ক্ষুধার শৃঙ্খল মালা দিবানিশি শিরোভাগে।
অনিঃশেষ বাসনার জটাধারী বটগাছ
মহাকাল সাধকের উইঢিবি হাড়গোর
জড়িয়ে নিয়েছে বুকে ছড়িয়ে দিয়েছে রোদ
জরাশোক উৎসবে নিয়ত নবান্ন ভোর।
ডাক
কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত কিছু কিছু মানুষের শরীর থেকে
হঠাৎ হঠাৎ বুনো পশুর উটকো গন্ধ পাই
আমার সংবেদনশীল নাক পৃথিবীতে বিদ্যমান কয়েক লক্ষ
সেন্টের লক্ষ সুবাসের সবটা জানে না বলে
এ অপারগ আমিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিই
পাড়ার তাসখোর কাকুদের মধ্যে খুব ভাল এক কাকু
আমার হাতে দশটাকা দিয়ে পাশের দোকান থেকে
সল্ট-বাদাম কিনে আনতে বললে আমার খুব আহ্লাদ হত
আমি স্যান্ডোগেঞ্জি সাইকেলে হাফপ্যাডেল তড়পাতে তড়পাতে
এনে দিতাম – একজন কর্মিসফল জুলফি চুয়ে নেমে আসা
নায়ক নায়ক ঘাম আমাকেও তখন পেত।
সেই কাকুর ডাক পাব জেনে কাকুদের কাছাকাছি
কঞ্চির ডগায় কাঁঠালের আঠা লাগানো দন্ড হাতে বসন্ত বিকেলে
প্রজাপতি খুঁজে বেড়াতাম।
কাকু এখন আর ডাকে না— কিন্তু ডাকটা আমি মাঝে মাঝেই শুনতে পাই।
পত্রবিমোচন
কুয়াশার গাঢ় হিমে কপোত কপোতী
গা ফুলিয়ে মুখোমুখি বসে—কাছাকাছি কেউ নেই
সবটুকু তৃপ্ততা বোজা চোখের অক্ষিগোলকে
ঝলমলে রোদ্দুরে চঞ্চু ডুবিয়ে ডানায় সুদূর স্নান
চোখের ওপারের অন্ধকারে আলোর ইশারা
আসক্তিঘোর প্রত্যূষ গোধূলি সাপ-লুডো-মই
সন্ধের আকাশে দোদুল্যমান স্খলিত পালক
শালিক-সেজদায় মতলবি দিন ক্রমশ গুজরান
মা বিড়ালের চোয়ালেবেঁধা সদ্যজাত ছানাদুটোর
চোখে পৃথিবীর আলো পড়েনি তখন
আলো অন্ধকার আর অন্ধকার আলোর সন্ধিস্থলে
আমাদের বোধিবৃক্ষে নিঃশব্দ পত্রবিমোচন
নিয়ত নবান্ন ভোর ও অন্যান্য
আশুতোষ বিশ্বাস
আশুতোষ বিশ্বাস
ধন্যবাদ বিন্দু সম্পাদককে। বসন্ত সংখ্যার সমস্ত কবিতাগুলোই বসন্তের পরাগরেণু ছড়িয়ে দিল।
উত্তরমুছুন