ক্ষতের শূন্যতা প্রিয় হলো
হেমন্তের এইপথ মৃত্যু ছুঁয়ে আছে
মাথার উপর
ধূসর বিষের দেশ অন্ধকার ছিঁড়ে
বুকে এসে বসে
গৃহস্থ রোদ্দুর চলে গেছে বহুদূর
ছিন্নমূল জন্মের কোটরে
পোয়াতি পদ্মের গন্ধ তবু
জেগে আছে পুকুরের পাড়ে
বাঁশতলে ঘাসবীজের নিহিত ঘুম
অনাসক্ত কোণে পড়ে আছে
আকাশের ভাষা ভেসে আসে মধ্যরাতে
শুধু সেই মোহটুকু ছুঁয়ে
ক্ষতের শূন্যতা প্রিয় হয়
বয়সের দীর্ঘ ইতিহাসে
শুনিও না মৃত্যুরাগ
উন্মাদ রাখাল বৃষ্টিদেশ থেকে গরু নিয়ে ছুটে আসে আমাদের খামারে— নিষাদের প্রশান্ত গোয়ালঘর বুকের অতীত জলে ভাসে— মৃত্যুরাগ শুনিও না আমাকে গোধূলি ধুলোটে— মাধুকরী জীবন এখনো ভোরের আজান শোনে—প্রেমিকের সোনালী চুলের ছড়ানো প্রান্তরে অমোঘ প্রেমের রাগিণী হননের ছায়াদিনে বুকে বাজে — উদ্বাস্তু চিহ্নগুলি একমুঠো রোদের গন্ধে জন্মের ছবি এঁকে শালিনী নদীর বিশীর্ণ চরে আজও জন্মবীজ ছড়ায়—আর শরীরী গাছ হতে আদিম রাত্রির স্মৃতিকথা পাতার মতো ঝরে—দেহভাষা নূপুরের মতো বাজে বৈষ্টমির পায়ে
গোয়ালঘরের ভাঙা দেওয়াল
শীত সকালে গোয়ালঘরের ভাঙা দেওয়ালে চোখ পড়ে—কুয়াশা জন্মের জন্মান্ধ গৃহস্থের মা রান্নাঘরে স্নেহের হাত ছড়ায়—এখন শূন্য কানাপথে দহন বাজে—বিপন্ন উনুনে শালুকডাঁটা নেতিয়ে পড়ে না—দরাজ গলায় বলে উঠতো বৌমা ভাত বাড়ো—ছায়াকোণে কারা যেন বসে থাকতো—দেখি দীর্ঘদেহী শাল ভেঙে পড়লো ক্রমশ—চোখের কাছে দিনের ব্যস্ততা হিম হয়ে আসে—তেলচিটে প্রদীপের পোড়া গন্ধ শিশুবাতাসকে ঘন করেছিল একদিন। গোধূলি আলোর গভীরে প্রপিতামহের ডাক অজানা দিগন্তে মিলিয়ে যায়—
তারপর আবারও একদিন প্রবল বর্ষণ ।
নির্জন শ্মশানে মা কে স্পর্শ করে বসে থাকি—বিড়ির ধোঁয়া ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছিল পানাবন পেরিয়ে নদীর ওইপারে।
পুকুর পাড়ের শ্যাওলা গন্ধ ছুঁয়ে কুলকাঁটা অতিক্রম করি—ফিরে এসে দেখি ঘুঁটেতে মায়ের আঙ্গুলের ছাপ—স্পর্শ করি চাপা অন্ধকারের শব্দ—কবিতা তুই এখন আমার গোয়ালঘরের ভাঙা দেওয়াল
অজলা নদীর প্রত্নতীরে
অজলা নদীর
তীরে বসে আছি
একদিন জল
ছিল অবিরল
পিতৃপুরুষের
অস্থি, অন্ধকার আত্মকথা পুড়েছিল
ধূসর বিশীর্ণ এখানের বালুচরে
গোধূলির দুঃখমাখা সন্ধ্যা
ভেঙেচুরে মেঘপথে নামে
হিমশান্ত রাতে বসে আছি,
শত শত মৃত তারা হতে আলো আসে
ছুঁয়ে যায় মৃত্যু
জমে ওঠা দুঃখ
ঘুমের পিপাসা- ভাঙাঘর
শতচোখ শত স্বপ্নবিন্দু বহু অতৃপ্ত সঙ্গম
এখানে অস্ফুটে পুড়ে গেছে
দেখি, ক্ষীণতম স্মৃতিরেখা
আনমনে বয়ে যায় অজলা নদীর নাভিতলে
নির্বাক অন্তিম
সেই সুখটুকু
লেগে থাকে গূঢ় অস্তছায়ার জীবনে
বহুচেনা ছবিসুরে দেখেছি প্রাচীন অস্থিছাই
আত্মজের মাংস রক্তে ওড়ে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে
সুদূরের ছায়াপথে পিতৃপুরুষের
গোপন আত্মার কথা অপশ্রিয়মান
সন্ধ্যার মরমী আলোর আঁধারে একাকী আমার
ক্ষয়িষ্ণু নিবিড় বুকের অতলে ভাসে
অজলা নদীর প্রত্নতীরে
অশ্রুপতনের ছবি
পাথরের গায়ে এঁকেছিলে অশ্রুপতনের ছবি
সন্ধ্যার বাতাস ক্ষতজলে শত অনুভব ডাকে
বিপন্ন বৃষ্টির গান শোকতাপে ঢেকেছে মাটিকে
ক্লান্ত নদীতটে মুখোমুখি হিম জীবনের কবি
সাঁঝের নিস্তব্ধ দেহে রয়ে গেল দাহকাঠ সবই
দৃষ্টিরেখা বারবার মেঘ ছিঁড়ে জাগালো আমাকে
আজ মিছিলের মৌনমুখে তুমি আসো এঁকেবেঁকে
দীর্ঘরোদে কাঁচাপাতা শূন্যে ওড়ে সেই কথা ভাবি
স্মৃতিদগ্ধ ডাক– সাত্ত্বিক বিলীন পুড়েছে নিঃশেষ
শীর্ণ কুয়াশার জোনাকিরা দীর্ঘজনপদে ভাসে
রাখালের ঘুমচোখ দেখেছিল তোমাকে অশেষ
হলুদ দুপুর মায়াটুকু রেখে গেছে ভালোবেসে
বিষাদে বিশ্বাসে চেয়েছি তোমার অভিজ্ঞ করুণা
শরীরের অন্ধকার নির্মাণ করলো অশ্রুকণা
মন্তব্য