বিষক্রিয়া
প্রত্যহ একজন লোক ঊষে ভিজে দোয়েলের মতো। হয়তো দোয়েলই, মানুষের ছ্দ্মবেশে থাকে। ভোরে সেই দোয়েল মানুষ তার সোজা শক্ত কাঁধে স্প্রে মেশিন বহন করে বাড়ন্ত ধানের ক্ষেতে চলে যায় আর কী অভিনিবেশ সহকারে কীটনাশক ছড়াতে ছিটাতে থাকে। দশটা পর্যন্ত চলে তার এই বিপদকর কাজ: ক্ষতিকর পোকা পতঙ্গ দমন, মাকড়ের বংশ রোধ। লোকটি পৃথিবীর সবচে’ আত্মঘাতী প্রান্তিক মানুষ। কোনোদিন তাকে মাস্ক পড়ে কাজ করতে দেখিনা, এমনকি ওয়েটিং পিরিয়ড চলাকালীন হাঁসের মতো ক্ষেতে নেমে যায়, আগাছা নিড়ায়। কীটনাশক ছড়াতে ছড়াতে বিড়ি খায় ও নিশ্বাস টেনে নেয় শ্লেষ্মাজমা বুক ভরে। সে কি জানে, কত ধীরে সে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে?
ভিরতাকো, সাইকন, বোল্ডআউট হাতে নিয়ে তার কি কখনো দুর্দমনীয় বাসনা জেগে উঠেনি মনের মধ্যে, লোভ হয়নি? আমার যেমন হচ্ছে তাকে দেখে একটা ভয়ংকর লোভ।
গ্লাভস ছাড়া ফলে ফরমালিন মেশানো লোকের মতো ধীরে অজান্তেই আমরা বিষাদে, বিষে প্রচুর আক্রান্ত হয়ে যাই।
জিন স্থানান্তর
যদি ভালোবেসে থাকো, আমাকে তোমার গর্ভে নাও,
আমাকে বাহিত করো পরবর্তীকালে।
সফল সঙ্গম শেষে আমি কোনো পুং মাকড়শার মতো
বিছানায় মরে পড়ে থাকতে চাই। যাকে তার স্ত্রীই
খুন করে ফেলেছে বিকেলে, রাগ অনুরাগে মত্ত অবস্থায়
কখন যে সে খুন করে ফেলল!
আছে তার পেটে মৃতের কার্বন স্মৃতি , একদিন বিয়োবে।
কে সে কুঁড়িয়ে পাওয়া আয়নায় নিজের মুখ দেখে
ভেবেছিলো, বাবা! সে কি আমি নই?
ম্যাট্রিক্স
কোড ভেঙে ভেঙে ধ্বংস হবে এই দৃশ্যপট, অনন্ত আকাশ। কোড ভেঙে ভেঙে মুছে যাবে একটি রঙের রংধনু। ঘুরে এসেছি আশ্চর্য সেই ইচ্ছেপূরণের দেশ কাল রাতে, স্বপ্নে, আধোজাগরণে নিজের ভেতর । নিমজ্জিত হতে হতে যেখানে সূর্যের আলো নেই, অক্সিজেন অপর্যাপ্ত গভীর বেসিন সেখানে দেখেছি জেলিফিশের আলোক উৎসব অক্সিজেন কমে গেলে নিউরনে নিউরনে। এখন দিনের আলো, ব্লাড প্রেশার ঠিকাছে- চোখ মেলে আছি তাও ভ্রম দেখছিনা কি করে বলি! দৃষ্টিশক্তিটুকু খুঁইয়ে আমি যদি গাধার উপর চড়ে বসি পথ চলতে আর সেই গাধা আমায় মরুতে, নো ম্যানস ল্যান্ডে নো ম্যাটার শূন্যতায় যদি ফেলে আসে-
বহু পথ পাড়ি দিয়ে প্রোগ্রামিং করা সুউচ্চ দেয়াল, তরঙ্গ বিক্ষুব্দ স্টিক্স নদী, মাকড়শাবহুল সবুজ পর্বত, পাতালপুরী পার হলে শুধু অন্ধকার ধূ ধূ শূন্য , শূন্যগর্ভ প্রহেলিকা!
মৃত দেহ জীবিত অনুজীব
ঝড়ে মৃত পাখির ছানার দেহে ব্যাকটেরিয়ার বাইনারি ফিউশন প্রত্যক্ষ করি। ভাবি আমারও সর্বশেষ পরিণতি এইসব মা মাইক্রোস্কোপিক জীবানুর খাদ্য হওয়া। আমি মারা গেলে আমার দেহের কোষ জলে -স্থলে -অন্তরীক্ষে অবমুক্ত হয়ে পড়বে। আমার দেহের কোষ অনেকে এককোষী ব্যাকটেরিয়া। আমি পঁচে গেলে এরাই একদিন সর্বভূতে সর্বত্র বেড়াবে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে তোমাদের গেলাসের জলে ভাসবে, তোমাদের শরীরের ভেতর, হাতের তালু, নাকের ডগায় বসবাস করতে থাকবে। আমি মারা গেলেও আমার দেহের সব ব্যাকটেরিয়া মারা যাবেনা। সেদিন তোমাদের চোখ, চোখের পাতার নাড়াচাড়া, রেটিনাকে সার্ভে করে বলে দেয়া যাবে মৃত আমাকে স্বীকার করছো কি করছো না।
[লেখক পরিচিতি: খান আলাউদ্দিন। জন্ম: ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, রবিবার। কাপাসিয়া, গাজীপুর। পড়াশোনা: বিজ্ঞান, মানবিক, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য। প্রকাশিত কবিতার বই: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিসঅর্ডার। চৈতন্য, বইমেলা ২০২১]
ম্যাট্রিক্স ও অন্যান্য কবিতা
খান আলাউদ্দিন
খান আলাউদ্দিন
মন্তব্য