কবিতা এক ধরনের হৃদয় মনোরঞ্জনের নির্যাস কিম্বা অনুভূতি শৈলীর শিল্পায়িত রূপ। প্রত্যেক কবির অর্ন্তগত দৃষ্টিশৈলীর নৈপুণ্যে কবিতার অবয়ব দক্ষতার পরিচয় বহন করে। কিন্তু কাব্যরস সংগ্রহে শিল্পমানের সাথে সাথে কবিতার যাত্রাভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। কেননা কবিতা কবির স্বাধীন সত্তা হিসাবে আলোচিত, যেন তা প্রকাশের পর পূর্ণতা পায়। তবে কবিতা লেখা শুরু দিকে বিভিন্ন সময়ে, কবিতার নানা আড্ডায় কারো-কারো নিকট শুনি, কবিতা হয়ে ওঠার বিষয়।একেকজন কবির কাছে কবিতা উপস্থিত হয় একেক রকমের কল্পনাশক্তির বিন্যাস ও সমসাময়িক ধারাবাহিকতায় ভাষা-সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যের সংযোগ। তবে কবিতা কী সমসাময়িক পরিস্থিতির নতুন আঙ্গিক বা বিচিত্র বিষয়বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত কালোত্তীর্ণ চৈতন্যের উদ্ভব? এমনকি সময়ের অভিজ্ঞতায় গতিশীল সত্তা পরিবর্তনে সাহিত্যের নানা গন্তব্যের সন্ধান কবির চেতনা-জিজ্ঞাসায় আসে, কিন্তু এই গন্তব্য স্বাধীন।অধিকৃত ভাষা-সংস্কৃতি সাহিত্যের নানা রকম সংযোগ-সম্পর্কের সমন্বয়ে বিচিত্রভাবে কবির মনোজগতে প্রভাব বিস্তার করে।প্রশ্ন আর প্রশ্নোত্তরে সাজানোর প্রকরণও না-কি সময়ের দর্শনে, সামষ্টিক ব্যাঞ্জনায় নতুন কবিতা? শব্দের গন্তব্য চেতনায় কবিতা কি দাবি করে? কবিতার শরীরে কি কবির চৈতন্যের বিষণ্ন দৃশ্যপট থাকে? যা কবিতার মেদ বলা যায়! এমনকি যার জন্য কবিতাকে ভারি মনে হতে পারে কিম্বা কবিতা-চেতনার উপলব্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে। তবু যেন কবিতার শব্দ, বিষয় প্রকরণ, নানা বোধ, নানান ভাব-বৈচিত্র কবির জার্নিতে সঙ্গ দেয়। কবিতা কি সেই রকম কিছু? সময়ে সময়ে এরকম নানা ধরনের বিতর্ক যোগাযোগে আসে। এই সকল প্রশ্নের উত্তরপত্র খুঁজি কবিতার ইতিহাস থেকে। আর খুঁজতে থাকি কবিতার পরিমিতিবোধে সক্রিয় অন্তর্ভুক্ত দৃশ্যপট। এতো সব খোঁজ-খবর শেষে বুঝি কবিতার শেষ কথা কিম্বা স্বতঃস্ফূর্ত বিবেচনায় সীমারেখা নির্দিষ্ট করে কিছু নেই। কিন্তু কালপরম্পরায় কবিতার ঢঙ পাল্টায়। কবিতাতে নতুন নতুন উপাদান যুক্ত হয়। সেইহেতু, ৪৭ পরবর্তী বাঙালির কবিতায় দেশভাগের অভিঘাত, পীড়া, বিষাদ সবকিছুই যেন সময়ে সময়ে এসেছে। তার সাথেও কবিতার নানা প্রাসঙ্গিক আঙ্গিকের পরিবর্তন ঘটেছে। ফলত, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এতো সব জিজ্ঞাসা ওমর আলীর কবিতায় কি আছে? কেনবা ওমর আলীকে নিয়ে লিখতে বসলাম? তাঁর কবিতা কী এই সময়ে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্ন করা যেতে পারে। তবে কবিতা নিয়ে ওমর আলী দাম্ভিকতা দেখে, সেহেতু তাঁর কবিতায় একটা ভ্রমণ শুরু। কিন্তু এখনো নিজস্ব স্ফূর্তিতে প্রকৃতি-সৌন্দর্য, নারী, প্রেম ও গ্রামীণ পটভূমি সম্প্রসারণে স্বমহিমায় কিছুটা প্রোজ্জ্বল থাকলেও তাঁর কবিতা পুরোপুরি ভালো লেগেছে তাও ঠিক বলা যাবে না। তবে মনে সামান্য অনুরণ রেখে গ্যাছে। তবে মনে রাখা ভালো, আবহমান বাংলার রমণীর সুনাম শুধুমাত্র ওমর আলীর নিকট থেকেই আমরা শুনেছি।
ওমর আলী ষাটের দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি ও সাহিত্যিক। তিনি ১৯৩৯ সালের ২০ অক্টোবর, পাবনা শহরের দক্ষিণের দুর্গম চরশিবরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর, প্রাণ ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত পাবনায় বসবাস করতেন। গ্রামীণ প্রকৃতি, নারীর রূপ ও সৌন্দর্যের কবিতা-সমূহের জন্য সকালের নিকট অধিক পরিচিত। তাঁর ৪১টি গ্রন্থের মধ্যে ৩৮টি কাব্য গ্রন্থ, একটি ছড়ার বই ও দুটি উপন্যাস। ওমর আলীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ’এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’ ১৯৬০ সালে প্রকাশিত, কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের পর পাঠকের কাছে খুব পরিচিতি পেয়েছিলেন। এই বইয়ের তথ্য ছাড়া আর অন্য কোনো বইয়ের তথ্য পাঠকের নিকট খুব কমই আছে। আজও অধিকাংশ মানুষ তাকে চেনেন ’এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’ কাব্যগ্রন্থের কবি হিসেবে। এছাড়াও তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে 'আত্মার দিকে', 'সোনালি বিকেল', 'নদী', 'নরকে বা স্বর্গে', 'বিয়েতে অনিচ্ছুক একজন', 'প্রস্তর যুগ তাম্র যুগ', 'স্থায়ী দুর্ভিক্ষ সম্ভাব্য প্লাবন', 'তেমাথার শেষে নদী', 'নিঃশব্দ বাড়ি', 'কিছুদিন', 'ডাকছে সংসার', 'যে তুমি আড়ালে', 'ফুল পাখিদের দেশ', 'ফেরার সময়' ইত্যাদি কবিতার বই সমূহ ও বিস্তৃত অভিজ্ঞতার অনুভূতিতে দৃশ্যমান। প্রচলিত প্রকরণের রূপকল্প পেড়িয়ে অতিচেনা সাধারণ মানুষের জীবনের সমীকরণে প্রেম ও প্রকৃতি-সৌন্দর্যকে চোখ ও মনের অদ্ভুত দৃষ্টিতে বাস্তবতার রূপ স্থিরচিত্রে কবিতায় প্রকাশ করেন। শূন্যতার বিস্তারে নানা বিষয় বৈশিষ্ট্যে তাঁর কবিতার শব্দ-নিঃশব্দে আলো আঁধারে চলাচল করে। প্রসঙ্গক্রমে, উঠে আসে জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ ও ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ দু’টির কথা। এই কাব্যগ্রন্থ দু’টিতে জীবনানন্দ দাশ নারী ও প্রকৃতি সৌন্দর্যকেই বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে ওমর আলীর কবিতা-সম্ভার তারই ধারাবাহিকতার অংশ। কিন্তু কবিতাই যেন ওমর আলীর মনোজগতের সহজ আরাধনা। তাই স্বাভাবিকভাবেই শব্দযোগে ক্ষয়ে-ক্ষয়ে যাওয়া চিরন্তন নিদ্রাহীন কবিতাচিন্তা। অবলীলায় গভীর ভাবে লেখেন গ্রামীণ পটভূমিতে কবিতার প্রায়োগিক হৃদ সংযোগ এবং তাঁর কবিতার আত্মায় ব্যবহারিক প্রশ্ন-উপমা, যা কবিতাবিষয়ক আলোচনা সম্প্রসারণে নানা মাত্রিক দৃশ্যকল্প আলোড়িত করে। তাঁর কবিতার কিছু পঙক্তি হয়ে ওঠে অনুভবে নম্র রূপ-রস ও প্রকৃতি পোয়েট্রি। তাই খুব স্বভাবসূলভ ভাবে প্রকৃতির নিকটে যাওয়ার কথা বলেন-
আমাকেও ফিরে যেতে হবে বহুদূরেযেখানে ফেরার গান নেই। এই নীলআঁধার রাত্রির দীপ নিভে যাবে। সুরেআসবে অনন্ত যতি। এই অনাবিলবিচিত্র ফুলের মাঠ, স্নিগ্ধ নদীতীর,ঝুমকোলতার বন, পিয়ালের শাখা,আমের নতুন পাতা, মুখের পাখিরশত কন্ঠ, আর এই প্রিয় দেশ আঁকা[দূরের গান]
ওমর আলী কবিতায় জীবন-বাস্তবতার ছোঁয়া কিছুটা দৃশ্যমান। তিনি জীবনের সকল ঘটনা প্রবাহ মেনে নিয়ে অবলীলায় মৃত্যুর গান সহজেই গাইতেন। তাঁরই কন্ঠে প্রতিধ্বনিত যেন অনন্তকাল সুদূর। সেই সুদূর থেকে ফেরার কোন তাড়াহুড়ো নেই। না থাকে কোন মায়াবিনী সুর। অনুক্ষণে, স্মৃতিতে আসে অন্ধকারে মানুষের জীবনের পরস্পর। আর যে জীবন দেখা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়। তবে সেটাও স্বচ্ছ না, আবেগ তাড়িত একধরণের সুদূর মগ্নতা, দূর। তাই যেন মৃত্যু। ওমর আলীর চিন্তার মধ্যে সময়ের আবরণে মৃত্যুর যন্ত্রণা প্রকটভাবে দেখা যায়। সকল কিছুর সীমাবদ্ধতা ভেঙে যায়। আর চুপচাপ মৃত্যুর রহস্যে ধাবিত হয়। তবে ওমর আলীর থেকে আবুল হাসান প্রায় আট বছরে ছোট হলেও কিন্তু দু’জনেই সমসাময়িক সময়ের কাব্য-বন্দনায় আলোচিত, তাইতো দু’জনের ভেতরই মৃত্যুচিন্তা প্রকটভাবে নাড়া দিয়েছে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত আবুল হাসানের ‘রাজা যায় রাজা আসে’ প্রথম কাব্যগ্রন্থের ‘জন্মমৃত্যু জীবনযাপন’ শিরোনামের কবিতাটি মৃত্যুবোধ নিয়ে স্মরণে আসে। তবে আবুল হাসান তাঁর এই কবিতায় সোজাসাপটা মৃত্যুর কথা বলেন। কিন্তু ওমর আলী নানা অন্তর্গত অবয়বের ইঙ্গিতে মৃত্যুর প্রসঙ্গ বর্ণনা করেন।তবে সরল বাক্যে নিজের জীবনের আর্তকথাগুলো চেতনায় তুলে ধরেন-
এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছিআইভি লতার মতো সে নাকি সরল, হাসি মাখা;সে নাকি স্নানের পরে ভিজে চুল শুকায় রোদ্দুরে,রূপ তার এদেশের মাটি দিয়ে যেন পটে আঁকা।সে শুধু অবাক হয়ে চেয়ে থাকে হরিণীর মতোমায়াবী উচ্ছ্বাস দুটি চোখ, তার সমস্ত শরীরেএদেশেরই কোনও এক নদীর জোয়ার বাঁধভাঙা;হালকা লতার মতো শাড়ি তার দেহ থাকে ঘিরে।[এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি]
ওমর আলীর কবিতা পড়ে অবাক হয়ে বহুমাত্রিক চরিত্রে তাকে দেখি।বিচিত্র কারণে, তাঁর কবিতায় প্রেম ও রোমান্টিকতার প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ হয়, কখনোবা প্রকৃতির রূপ দর্শনের মধ্যেই নিজেকে বিনিময় করেন। আবার কখনোবা রমণীর স্নান দেখে হরিণ শিকারীর মতো, লাজ-লজ্জ্বা খেয়ে বন্দুকের নলের বেশে দু'চোখ তাক করে চেয়ে থাকেন নারীর শরীরের দিকে, ভিজে চুলের দিকে। ঠিক এইভাবেই ওমর আলী চেতনার চতুর্পাশে কামনার উপহার প্রকাশ পেতে থাকে।গোপন ভালোবাসার প্রণালীতে পছন্দের উনুনের স্বাদ নিতে নিজের চারিত্রিক অবয়র খুলে ধরেন। জীবনকে নানা আশ্রয়ে গতিশীল করেন নিজের সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা। তাই তার কবিতার অনুসঙ্গে নারী বারবার আসে। ওমর আলী বলেই সরল ভাবে বলতে পারেন- ’তুমি মোর ভালোবাসা তুলে নাও, নারী, /তোমার শরীরে, মনে,’ অকাতরে নারীর ভালোবাসার অনুভবে কাছে নিজেকে সহজেই সমর্পণ করেন। প্রিয়তমার শরীরের ইন্দ্রিয়ের সমস্ত মধুর অনুভূতি গ্রহণের জন্য নিজের হৃদয়ে ধ্যান-জ্ঞান করেন। বস্তুত, মনে হয় প্রকৃতি ও নারীকে ছাড়া যেন তিনি চলতেই পারেন না।
ওমর আলীর কবিতার পথ চলাচলের সাথে জসীম উদদীনের কবিতায় চলার ঢঙ কিছুটা মিল পায়। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অথবা কবিতার আবহ বোঝার জন্য নিচে জসীম উদদীরের একটি কবিতার কিছু পঙক্তি দেওয়া হলো- ’পল্লীবধূরা উদাস নয়নে চেয়ে থাকে তটপানে,/বাপের বাড়ির মমতায় আজ পরাণ কেন যে টানে।/বাঙড়ের খালে সিনান করিতে কলসী ধরিয়া টানি,/মায়েরে কহিছে মেয়ের কথাটি নয়া-জোয়ারের পানি!’[জলের কন্যা/জসীম উদদীন]। জসীম উদদীন গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, লোক সংস্কৃতি নিয়ে অহরহ কবিতা লিখে গেছেন। ওমর আলীর কবিতার বিষয় উপকরণে খানিকটা জসীম উদদীনের কাছাকাছি, তবে নিজের মতো করে কবিতার শব্দ বুনেছেন। রাগ-ঢাক না রেখে কবিতায় অভিমান ছুড়ে দিয়েছেন-
আমি কিন্তু যামুগা। আমারে যদি বেশি ঠাট্টা করো।হুঁ, আমারে চেতাইলে তোমার লগে আমি থাকমু না।আমারে যতই কও তোতাপাখি, চান, মণি, সোনা।আমারে খারাপ কথা কও ক্যান, চুল টেনে ধরো।আমারে ভ্যাংচাও ক্যান, আমি বুঝি কথা জানি না কো।আমার একটি কথা নিয়ে তুমি অনেক বানাও।তুমি বড় দুষ্টু, তুমি আমারে চেতায়ে সুখ পাও,অভিমানে কাঁদি, তুমি তখন আনন্দে হাসতে থাকো।[আমি কিন্তু যামুগা]
ভালোবাসার অভিজ্ঞান ওমর আলীকে যেন পিছু ছাড়েনি। তাই তো ছোট ছোট ঠাট্টাও যেন তাঁর অভিমানের কারণ হয়ে ওঠে। আর সাহসের সাথে দুঃখকে পরস্পর আহ্বান করেন। চিরায়ত জীবন-যাপন ভেঙে ফ্যালেন। আনন্দে হুঙ্কার করেন। আর নীরবে নিজের ভেতর কাঁদেন। এটাই হলো ওমর আলীর স্বভাবজাত কবিতা।সহজেই কবিতার বিষয়কে নানা রূপ দিতে পারেন।বলা যেতে পারে, শামসুর রাহমান, সিকদার আমিনুল হক বা আরো অনেকেই হয়তো কবিতার বিষয়বস্তুকে নিজের মতো করে ভেঙে ভেঙে ডিলিংস করতে পেরেছেন। তবে কবিকে তার সমকাল ধরে চলতে হয় কিম্বা ভবিষ্যতের কবিতার প্রতিচ্ছবি আঁকতে হয়, পুরোপুরি প্রকাশিত না হলেও নিজের লেখার মধ্যে দিয়ে, বিভিন্ন আঙ্গিকে অদৃশ্য থাকলেও পাঠককে কিছুটা হলেও আভাস দিতে হয়। ওমর আলী তাঁর কবিতায় সহজ-সরল ভাবে সেই রকম কিছু দৃষ্টান্ত দিয়েছেন-
এখন পালাও দেখি! বন্ধ করে দিয়েছি দরোজা!এ রাত্রিতে, আমার দু’হাত থেকে পারো না পালাতে।বরং সেটাই মেনে নেওয়া ভালো, যা নির্ঘাত সোজা।আমার আলিঙ্গনে বেঁধে থাকো এ সুন্দর রাতে।[এখন পালাও দেখি]
ওমর আলী জীবন বাস্তবতা মেনে নিয়ে প্রত্যাশার কথা বলেন। বারবার যৌনতা, নিবিড় সম্পর্ক কবিতার উপকরণ করে নিজের সক্রিয়তার পরিচয় দেন। যৌনতার আকাক্ষার বীজ নিজ প্রত্যাশায় বপন করেন।প্রতিটি মুহূর্তে বাক্যে-বাক্যে শোনা যায় আলিঙ্গন আকুতির আর্তচিৎকার। কবিতা নিয়ে ওমর আলীর দাম্ভিকতাও কম ছিল না, তার প্রকৃত উদাহরণ হল নিম্নের কবিতার পঙক্তিসমূহ-
কবিতা ঝর ঝর করে ঝরে, সাদা নুড়ির মতো ঝর্ণাটিএস এলিয়ট, মালার্মে, রবীন্দ্রাথ, ওমর আলীর হাতের ওপরে কবিতা ঝরে বৃষ্টি ঝরেকবিতা মনের মধ্যে এক খ- সীমানা চৌহদ্দির জমির ওপরেঝরে যায় বহুক্ষণ ঝরে যায় বৃষ্টিওপরে মেঘ বিজলির চমক বজ্রপাত হতে থাকেবিরহী যক্ষ কৈলাসগিরি থেকে মেঘদূত প্রেরণ করেন প্রিয়ার উদ্দেশেআষাঢ়স্য প্রথম দিবসেকবিতা ঝর ঝর করে ঝরে শিশির মুক্তা হোমারের মনের ওপরঅন্ধ হোমার গেয়ে যান ইলিয়াড ও ওডিসিসুন্দরী হেলেনকে নিয়ে যান প্যারিস প্রিয়ামের পুত্রট্রয়ের যুদ্ধ হয় কাঠের ঘোড়া তৈরি হয় হেক্টর মারা যানঅ্যাকিলিস মারা যানপৃথিবী কোটি কোটি বছর ঘুরতে থাকে নিয়মমতোএক মুহূর্তের জন্যও থামে না।[কবিতা ঝরে বৃষ্টি ঝরে]
ওমর আলী নিকটে যেন নানা বিষয়ের কবিতা-সমূহ ঝরঝর ঝরে । মনে হয়, তিনি ইতিহাস সচেতন হয়ে ওঠেন। তাঁর কবিতা পড়ে প্রাচীন ট্রয় নগরীতে চলে যায়, সুন্দরী হেলেনের জন্য সমগ্র ট্রয় যুদ্ধে পরিণত, ট্রয় যুদ্ধে হেক্টরের মৃত্যু, হেলেনের জন্য বীর যোদ্ধা অ্যাকিলিসের মৃত্যু, রক্তে একাকার ট্রয় নগরী। প্রসঙ্গত, তিনি এই সকল উপলব্ধির ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণে ইতিহাসের সময়কে গতিশীল করেন। ওমর আলী তাঁর কবিতার দাম্ভিকতা কালিদাসের মেঘদূত প্রেরণ করেন। খুবই দম্ভের সাথে নিজেকে উপস্থাপন করেন, যেন রবীন্দ্রনাথের পরে একমাত্র তিনিই কবি। সমসাময়িক কেউ হয়তো তাঁর চিন্তার আশপাশে নাই। এমনকি নজরুল কিম্বা জীবনানন্দকেও স্মরনে রাখেননি। কিন্তু কালের বিচারে নজরুল কিম্বা জীবনানন্দও এখনো উজ্জ্বল। তাইতো এমন অনুভূতির মৌন নিঃসঙ্গতায় কবিতা লিখেন একাকী দৃঢ় হৃদয়ে। ওমর আলীর অধিকাংশ কবিতা আত্ম-প্রেম চিত্রিত জীবনের নিঃসঙ্গতার যোগসূত্রে দেখা যায়।
ওমর আলীর কবিতায় অন্তর্লীন ভালোবাসার প্রবণতা, স্বতঃস্ফূর্ত বাক্য গঠন লক্ষণীয়। তবে, প্রকৃতির সক্রিয় পরিচয়ের বর্ণনা পাশাপাশি পাঠককে নিরন্তর আকর্ষণ করে। তাই, তাঁর কবিতা সমূহ এমনভাবেই সম্পর্ক-সৌন্দর্যে মননচিন্তাকে প্রোজ্জ্বল করে।
ওমর আলী: প্রেম নৈশব্দের মায়াবী উচ্ছ্বাস
চঞ্চল নাঈম
চঞ্চল নাঈম
মাহবুবুর রহমান / আপনার লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো। ওমর আলী সম্পর্কে অনেক ইনফরমেশন আছে ।
উত্তরমুছুনআহা! প্রিয় কবি ওমর আলী নিয়ে লেখাটি খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন