কবিতার চর্চা, সুন্দরের চর্চা যে করে গেছেন তাঁকে ছুঁই— বিস্ময় ও মুগ্ধতাকে পাঠ করি— পাঠ করি তোমাকে হে প্রিয় শামশের।
যার অপূর্ব কবিতারা যেন জগতের নানান রকম ঘোড়া কিংবা ঘোড়াদের প্রকারভেদ : তেজি-ক্ষিপ্র অথবা শান্ত-মায়াবী— বুনো-মুক্ত ঘোড়া, পোষ্য ক্রীতদাস কিংবা কাঠের তৈরি শখের ঘোড়া, আবার হতেও পারে স্বপ্নের কোনও পঙ্খিরাজ এক!
আদতে কবিতা এসব ঘোড়াটোড়া কিছু নয়— সব আমার ভ্রান্ত মনের কল্পনা কল্পনা খেলা— যাকে বলে কবিতা কল্পনা; নিজে কবিতা না লিখে গদ্যের দহন কথা আরকি!
কিছুকাল আগে যখন আমার আনন্দিত হৃদয়, ছুটতে থাকা চোখ ও মগজ কবিতার মতো কবিতা খুঁজে বেড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই এত কবি ও কবিতার ভিড়ে বন্ধু কবি সাকিব শাকিল এর মাধ্যমে কবি শামশের আনোয়ারকে পাঠ করা। তার ‘স্তন’ কবিতার কাছে নিজের হৃদয়কে বিক্রি করা!
আর এই পাঠে কত যে শান্তি, তা যে পাঠ করল কেবল সে-ই অনুধবন করল। যেন কোনও শিশু পরম আনন্দে, তৃপ্তি সহকারে মাতৃস্তন মুখে পুরে দুগ্ধ ধারা পান করছে... অথবা কোনও প্রেমিক প্রেমিকাকে পরম মমতায়, আদর করছে— শান্ত, আরামদায়ক মর্দনে-চোষনে, কামে-ঘামে, বেদনা ও আনন্দের এক ভীষণ অন্যরকম স্বর্গসুখে ভাসছে সমস্ত দিক...
স্তনতোমার স্তনে হাত রাখলে মনে হয় যে একটাছোট্ট পাখি চেপে ধরেছি মুঠোর ভিতর;জোরে চেপে ধরলেই ম’রে যাবে—আঙুলের ডগা বুলিয়ে বুলিয়ে আমি তোমারস্তনের পালকগুলো খাড়া ক’রে তুলি।স্তনের ঠোঁটের মুখে গুঁজে দিই মমতার ক্ষুদ এবং কুঁড়ো,তখন খুশিতে ডাকতে শুরু করে তোমার স্তনদুটো—ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়ায় আমার মুখ, কপাল, বুকএবং ঘাড়ের ওপর।
এই কবিতা হৃদয়কে কোত্থেকে যে কোথায় নিয়ে যায়! আহা! জানিনা সে কোন গহীনে, কোন শান্তিতে...
আর যখন আমার এই আনন্দ কবি বন্ধুদের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ে, তখন এমন কবিতায় বুঁদ হয়ে ওরাও মন্তব্য করেন:
“এটা পড়ার পর স্তন নিয়ে আর কোনও কবিতা ভালো লাগেনা।" —জাকারিয়া প্রীণন।
“এই কবিতার পর স্তন নিয়ে বাকি জীবন যত কবিতা লেখা হবে সব এটার ল্যাঞ্জা কবিতা, ওইসব পড়ার দরকার নেই।” —আবির আবরাজ।
“কবি শামশের আনোয়ারের এই কবিতা পড়ার অজুহাতে স্তন নিয়ে আর কবিতা লিখতে পারিনা।” —দিপংকর মারডুক।
“স্তন কবিতাটি উপমার ভেতর ঝুলে আছে চমৎকার রূপে। আসলে স্তন নিয়ে এমন ভাবনা আমাদের কল্পনাকেও হার মানিয়ে অন্য রকম জায়গায় নিয়ে গেছে।” —আব্দুল আজিজ।
ইত্যাদি ইত্যাদি...
আর কবির এমন মমতা, এমন শান্তির কথা— প্রেমকে প্রেমের স্থানে বসানো। শরীর পেরিয়ে, ছিঁড়েখুঁড়ে খাওয়া ও দুমড়ানো-মুচড়ানোকে আবর্জনায় ফেলে— প্রকৃত মিলনে-আদরে-প্রেমে-লীলায় রয়েছে যে সুখ, প্রাণের সাথে প্রাণের, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের গভীর সংযোগ, দুজনে এক হবার শাশ্বত মন্ত্র ও উপায় ; তারই প্রকাশ যেন এই কবিতার সুন্দর স্বর্গীয় শান্তি রূপে প্রকাশে।
আর শামসের আনোয়ারের ভেতর গভীর বুঁদ হয়ে জানা যায় প্রকৃত কবিকে— কবিতাকে। যেন এক না ফুরানো প্রদীপ, যার কবিতার সলতেরা জ্বলছে অনবরত। আমরা আলো পাচ্ছি— সেই আলোয় কাগজে, স্ক্রিনে দৃশ্যমান কবির— কবিতার শারীরিক সুবাস, হৃদয়ের হেঁয়ালি-খেয়ালি ঘ্রাণের সুর! আহা! সেই ঘ্রাণে নাক ডোবানো, মাথা চোবানো, মন দোলানো— শান্তি... আহ শান্তি...
প্রিয় স্তন অথবা শামশের আনোয়ার
হিম ঋতব্রত
হিম ঋতব্রত
আর শামসের আনোয়ারের ভেতর গভীর বুঁদ হয়ে জানা যায় প্রকৃত কবিকে— কবিতাকে। যেন এক না ফুরানো প্রদীপ, যার কবিতার সলতেরা জ্বলছে অনবরত। আমরা আলো পাচ্ছি— সেই আলোয় কাগজে, স্ক্রিনে দৃশ্যমান কবির— কবিতার শারীরিক সুবাস, হৃদয়ের হেঁয়ালি-খেয়ালি ঘ্রাণের সুর!
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানবেন।
মুছুনশামসের আনোয়ারের কবিতা আমার ভীষণ প্রিয়। তাঁকে নিয়ে সেরকম লেখা চোখে পড়ে না। লেখক হিম ঋতব্রতকে অশেষ ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনশ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানবেন। আপনার এ মন্তব্যে আমি আনন্দিত।
মুছুনশামশের আনোয়ার আমার বড় প্রিয়।
উত্তরমুছুনআদতেই স্তন নিয়ে এর চে ভালো লেখা হয় না।
উত্তরমুছুনস্তন/ ব্রাত্য রাইসু
উত্তরমুছুনস্তন । এই নারীবাক্য অধিক বিশেষ্য। মহাপ্রাণ ধ্বনিতে নির্মিত মাত্রা -জ্ঞান -শূন্য গোলক। অদৃশ্য বলয়যুক্ত যাদুঘর। ক্রমস্ফীতি। মেটাফিজিক্স। গোলক–যা বর্তুল, প্রাণময় । এই স্তন ধর্মসংক্রান্ত।
প্রিয় স্তন, খুলে বক্ষবন্ধনী আজ আব্রু রক্ষা করো ।
ঐ স্তন দ্যাখো লাফিয়ে উঠেছে শূন্যে — মহাশূন্য: বিপরীতে সামান্য শূন্যের। ওই ভীত শিশুদের জন্ম হচ্ছে যত্রতত্র –তারা গান গাইছে জ্যামিতির–করুণামিতির। হেসে উঠছে বর্তুলজাতক। কী যেন বাঁশির ডাকে জগতের প্রেমে, বাহিরিয়া আসিতেছে সলাজ হৃদয়।
কেন এই স্তন বার বার! বাৎসল্যবিহীন যারা, লক্ষ করো, কীভাবে ব্যক্ত হয়ে উঠছে বাহুল্য; ওই ব্যক্তি হয়ে ওঠে স্তন–নারীবাদিনীর, ছুঁড়ে ফেলা ছিন্ন স্তন ফুঁসে উঠছে স্বীকৃতিসংক্রান্ত। তাকে দাও অধিকার– বিন্যস্ত হবার; তাকে শিশুদের হাত থেকে রক্ষা করা হোক!
ঐ স্তন ঘিরে ঘুরে আসছে মারাত্মক ভাবুক প্রজাতি। ভয়ে ও বিনয়ে, নুয়ে পড়ছেন অধ্যাপক–বিশুদ্ধ জ্যামিতি। ঐ স্তন ঘিরে উঠেছে সংক্রামক নগরসভ্যতা; ফেটে পড়ছে ত্রিকোণ-গোলক–
ঐ স্তন জেগে উঠেছে চূড়ান্ত —
ডাকো স্তন, হীনম্মন্যদের!
১৯৯২