কোথায় পাব তারে
শহীদুল জহির
দক্ষিণ মৈশুন্দি, ভূতের গলির লোকেরা পুনরায় এক জটিলতার ভিতর পড়ে এবং জোড়পুল ও পদ্মনিধি লেনের, ওয়ারি ও বনগ্রামের, নারিন্দা ও দয়াগঞ্জের লোকেরা তাদের এই সঙ্কটের কথা শুনতে পায়; তারা, ভূতের গলির লোকেরা বলে:
আমরা পুনরায় আব্দুল করিমের কথায় ফিরে যেতে চাই, কারণ কয়েকদিন থেকে আমরা মহল্লায় শুনতে পাচ্ছিলাম যে, সে ময়মনসিং যাচ্ছে; কিন্তু আমরা তার এই কথাকে গুরুত্ব না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তখন একদিন বৃহস্পতিবার বিকালে আমাদের মহল্লা, ভূতের গলির ৬৪ নম্বর বাড়ির মালিক আব্দুল আজিজ ব্যাপারি ঠোঙ্গায় করে গরম ডালপুরি কিনে ফেরার পথে আব্দুল করিমের সঙ্গে তার দেখা হয় এবং সে বলে আহো মিঞা, ডাইলপুরি খায়া যাও।
আব্দুল করিমের হঠাৎ করে ডালপুরি খাওয়ার দাওয়াত গ্রহণ করতে লজ্জা লাগে এবং সে বলে যে, ডালপুরি খেলে তার বুক জ্বালা করে; কিন্তু আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে, আহো আহো, মজার জিনিস, তুমিতো খালি নিজেরে লয়া থাক!
তখন আব্দুল করিমকে মেনে নিতে হয়, সে আজিজ ব্যাপারির ঘরের ভিতরে ঢুকে ঘনায়মান অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে ডালপুরি খায় এবং বলে, ডাইলপুরির মইদ্দে ডাইল নাইকা, হুদা আলু!
আঃআঃব্যাপারি : হঁ। ডাইলের দাম বাইড়া যাইতাছে কেমুন, দেখ না!
আঃকঃ : আপনের লাইগা ডাইল লয়া আমুনে।
আঃআঃব্যাপারি : কইত্থন?
আঃকঃ : আমি মৈমনসিং যাইতাছি বেড়াইতে।
তারপর আব্দুল আজিজ ব্যাপারি যখন জিজ্ঞেস করে, ময়মনসিং তার কী কাজ, সে বলে যে, সে আসলে আকুয়া যাচ্ছে; এবং আব্দুল আজিজ ব্যাপারি যখন আকুয়া কোথায় তা বুঝতে পারে না, সে বলে যে, সে আসলে ফুলবাড়িয়া যাবে। তখন আব্দুল আজিজ ব্যাপারি যখন ফুলবাড়িয়া কোথায় তাও বুঝতে ব্যর্থ হয়, সে বলে যে, ময়মনসিংয়ের কাছেই একটা জায়গার নাম আকুয়া এবং আকুয়ার কাছেই ফুলবাড়িয়া। এই কথা শুনে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তাকে আর একটা ডালপুরি অথবা আলুপুরি দেয়, আব্দুল করিম দ্বিতীয় পুরিটা খায়, খেতে খেতে সে পুনরায় বলে, এই হালারা আলু দিয়া ডাইলপুরি বানায়, ডাইলের দাম বাইড়া যাইতাছে, আপনের লাইগা আমি ডাইল লয়া আমুনে।
আঃআঃব্যাপারি : মৈমনসিংথন?
আঃকঃ : হঁ, ক্যালা!
আঃআঃব্যাপারি : মৈমনসিং তুমার কী কাম?
আঃকঃ : আমার বন্দু আছে, বেড়াইবার যামু।
আঃআঃব্যাপারি : তুমার বন্দু মৈমনসিং!
আঃকঃ : ক্যালা, থাকা পারে না?
আব্দুল করিম তখন অবধারিত চক্করের মধ্যে পড়ে যায়, আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তাকে ছাড়ে না, সে তার হাতে ঠোঙ্গার শেষ পুরিটা তুলে দিয়ে বলে, কওতো ব্যাপারটা কী?
আঃকঃ : না, এমনেই। আমারে কইলো আমাগো বাইতে বেড়াইতে যাইয়েন; ভাবলাম কইছে যখন বেড়ায়া আহি গা।
আঃআঃব্যাপারি : মৈমনসিং তুমি বন্দু পাইলা কই?
আঃকঃ : পাইলাম, একদিন মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গেছিলাম, বাসস্ট্যান্ডে কথা হইলো, কইলো, মৈমনসিং বেড়াইতে আইসেন।
আমরা মহল্লার লোকেরা, সেদিন রাতে আমাদের দিবসে কর্ম শেষে ক্লান্ত-অবসরে আব্দুল করিমের ময়মনসিং যাওয়ার সর্বশেষ খবর শুনি এবং বলি, পোলাটা হালার ভোদাই, এবং আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, খোরশেদ আলমের এই বেকার ছেলেটার মানুষ হতে পারার আর সম্ভাবনা নাই। পরদিন শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর মহল্লায় আলি আকবরের সঙ্গে তার কথা হয় এবং আমরা তা জানতে পারি; আলি আকবর রহমতগঞ্জে আড়ৎদারি করে, জুম্মা নামাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় পথে আব্দুল করিমের সঙ্গে তার দেখা হয়, এবং সে বলে, কি মিঞা আব্দুল করিম, তুমি নিহি মৈমনসিং যাইতাছ?
আঃকঃ : হঁ, চাচা—আস সালামালেকুম।
আঃআঃ : ক্যালা, কী কাম তুমার মৈমনসিং, ধান্ধা কী?
আঃকঃ : না, এমনেই, কুনো কাম নাই, মনে করলাম ঘুইরা আহি।
আঃআঃ : হুদাহুদি ঘুরবার যাইবা!
আঃকঃ : হঁ। আপনে এইবার কী রাকবেন?
আঃআঃ : কী রাখুম?
আঃকঃ : না, কইতাছি আড়তে এইবার কী বান্ধাই করবেন?
আলি আকবরের মেজাজ খারাপ হয়, সে বলে যে, তার আড়তের কারবারে গণ্ডায় গণ্ডায় জিনিস বান্ধাই করা থাকে, এবং তখন আব্দুল করিম তাকে আখের গুড় বাঁধাই করার পরামর্শ দেয়। সে বলে, গুড় বান্ধাই করেন, আমি ফুলবাইড়া যাইতাছি, আপনের লাইগা আউখা গুড় লয়া আমুনে।
আঃআঃ : তুমি না কইলা মৈমনসিং যাইতাছ?
আঃকঃ : হঁ, মৈমনসিংথন যামু আকুয়া, আকুয়াত্থন ফুলবাইড়া। ফুলবাইড়ায় ভাল গেণ্ডারি হয়, গেণ্ডারিত্থন ভাল আউখা গুড় হয়; আপনের লাইগা গুড় লয়া আমুনে।
আমাদের মনে হয় যে, আইএ পাস বেকার এবং অলসের রাজা আব্দুল করিম আসলে মহল্লার লোকের সঙ্গে খেলা করে, সে তার পিতার ক্রমাগত অভিযোগ এবং গালমন্দের মুখে দিশাহারা হয়ে এই কায়দা বের করে; তার এই সব কথার কোন মানে নাই, সে জীবনে কোথাও যায় নাই এবং যাবে না। তখন আর এক বৃহস্পতিবারে সে পুনরায় আব্দুল আজিজ ব্যাপারির দেখা পায়। আব্দুল আজিজ ব্যাপারি সন্ধ্যায় পুনরায় ডালপুরি কিনে বাড়ি ফেরার সময় আব্দুল করিমকে দেখে।
আঃআঃব্যাপারি : কি তুমি অখনতরি মহল্লায় আছ?
আঃকঃ : থাকুম না ক্যালা!
আঃআঃব্যাপারি : তুমি না মৈমনসিং যাও!
আঃকঃ : যামু।
আঃআঃব্যাপারি : আমার লাইগা ডাইল আনবা?
আঃকঃ : আপনি কইলে আনুমনে।
আঃআঃব্যাপারি : আমিতো মিঞা আড়ৎদারি করি না, দুকানদারি করি।
আঃকঃ : আড়ৎদারিকরণ লাগে নিহি? খাটের নিচে ফালায়া থুইবেন, পরে বেচবেন।
তখন আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তাকে ডালপুরি খেয়ে যাওয়ার কথা বলে, কিন্তু আব্দুল করিমের পুনরায় লজ্জা করে এবং আব্দুল আজিজ ব্যাপারি সাধে, আহো আহো আলুপুরি হইলেও খাইতে ভাল। আব্দুল করিম তখন আব্দুল আজিজ ব্যাপারির বাসায় ঢুকে প্লাস্টিকের বেতের চেয়ারে বসে আলুপুরি খায় এবং কথা বলে।
আঃকঃ : আপনে কইলে আপনেরে ডাইল আইনা দিবার পারি, আমিতো যামুই বেড়াইবার লাইগা, আহনের সুময় লয়া আমুনে দুই/চাইর মণ।
আঃআঃব্যাপারি : তুমার বাপেরে কও না ক্যালা?
আঃকঃ : লাভ নাইকা।
আঃআঃব্যাপারি : ক্যালা?
আঃকঃ : মিল খায় না।
মহল্লায় তারপরেও আমাদের মনে হয় যে, আব্দুল করিম আসলে বদমায়েশি করছে; সে শেষ পর্যন্ত কাউকে ঠকাবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলতে না পারলেও আমাদের মনে হয় যে, তার আচরণের ভেতর চালাকি আছে এবং আব্দুল আজিজ ব্যাপারি যখন তার পিতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তখন চালাকির বিষয়টা মনে হয় পরিষ্কার হয়ে যায়, তার তখন আসলে জবাব দেয়ার মত কিছু থাকে না। কিন্তু তারপরেও আমরা সম্ভবত নিশ্চিত হতে পারি না, কারণ পরবর্তী শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রায়সা বাজারের হোটেল মালিক বাবুল মিঞার সঙ্গে তার কথা হয়, বাবুল মিঞাই তার সঙ্গে প্রথম কথা বলে ফাঁদে পড়ে। বাবুল মিঞা যখন তার ময়মনসিং যাওয়ার কথা জানতে চায়, সে বলে যে, সে দুই/চার দিনের মধ্যেই যাবে এবং তারপর আব্দুল করিম পুরাতন প্রসঙ্গে আসে।
আঃকঃ : হুনলাম ডাইলের দাম নিকি বাইড়া গেছে, আপনেরা অখনে আলু দিয়া ডাইলপুরি বানান!
বাঃমিঞা : হঁ, আলু দিয়াই বানাই, কিন্তু আলুর দামওতো হালায় কম না!
আঃকঃ : আমিতো মৈমনসিং যাইতাছি, আপনি কইলে আপনের লাইগা আলু লইয়া আমুনে দুই/চাইর/দছ মণ।
বাঃমিঞা : আরে না, এত আলু দিয়া কী করুম!
আঃকঃ : ক্যালা, আপনের হোটেলে আলু লাগে না?
বাঃমিঞা : লাগে, আমিতো পাইকারি কিনি পড়তা পইড়া যায়।
আঃকঃ : কিন্তু আমি ফুলবাইড়া যাইতাছি, ওইখানে ভাল আলু হয়, আপনে কইলে আপনের লাইগা আমি আদ্দেক দামে আলু আইনা দিমুনে।
তখন এই চাপের মুখে বাবুল মিঞা তার কৌশল বদল করে।
বাঃমিঞা : তুমি মৈমনসিং যাইতাছ ক্যালা?
আঃকঃ : কাম নাই, বয়া রইছি, ভাবলাম ঘুইরা আহি।
বাঃমিঞা : কাম নাই! বাপের লগে দুকানে বহ না ক্যালা?
আঃকঃ : নাটবল্টুর দুকানদারি করুম না। আমি অন্য ব্যবসা করবার চাই, কিন্তু আব্বায় রাজি না।
আমরা যখন বাবুল মিঞার সঙ্গে আব্দুল করিমের এই আলাপচারিতার কথা শুনি আমাদের এই প্রথমবারের মত মনে হয় যে, আব্দুল করিম হয়তো এক ধরনের জীবিকার কথা ভাবছে; আমরা অবশ্য একেবারে নিশ্চিত হতে পারি না, কারণ, খামখেয়ালি ও অকর্মণ্য আব্দুল করিমের কিছু করতে পারার বিষয় আমাদের একেবারেই বিশ্বাস হতে চায় না। এবং দশ/পনেরো/বিশ দিন পরেও আমরা যখন তাকে মহল্লায় দেখি আমাদের পুনরায় মনে হয় যে, এটা তার এক ধরনের খেলাই; অথবা হয়তো সে এই সবকিছুর দ্বারা তার পিতাকেও বোঝানোর চেষ্টা করে যে, সে নিষ্কর্মা হয়ে থাকতে চায় না। কিন্তু তার ময়মনসিং যাওয়ার খবর আসে না, সে মহল্লাতেই থেকে যায়; আমাদের মনে হয় যে, হয়তো আব্দুল আজিজ ব্যাপারি ডাল কিনতে না চাওয়ায় এবং আলি আকবর আখের গুড় কিনতে না চাওয়ায় অথবা বাবুল মিঞা আলু কিনতে না চাওয়ায় তার ময়মনসিং যাওয়া হয় না। তখন ৬৪ নম্বর বাড়ির আব্দুল আজিজ ব্যাপারির সঙ্গে তার পুনরায় দেখা হয় এবং আব্দুল আজিজ ব্যাপারি পুনরায় তাকে ডালপুরি খাওয়ার দাওয়াত দেয়।
আঃকঃ : আপনে এত ডাইলপুরি খান ক্যালা?
আঃআঃব্যাপারি : আর কী খামু? বাপ-দাদায় খায়া গেছে, আমিও খাই!
আঃকঃ : ডাইলপুরির মইদ্দে হুদা আলু, আপনেরে কইলাম ডাইল আইনা দেই!
আঃআঃব্যাপারি : মৈমনসিং থন?
আঃকঃ : হঁ।
আঃআঃব্যাপারি : তুমি যাইবা কবে?
আঃকঃ : যামু, দেখি।
আঃআঃব্যাপারি : কবে?
আঃকঃ : যামু, মনে করছিলাম আপনেগো লাইগা কিছু জিনিসপত্র লয়া আহি, কিন্তু আপনেগোতো দেখি কিছুই দরকার নাইকা!
আমরা পুনরায় এই সকল কথা শুনি এবং বলি, হালার বলদ; কারণ, আমরা জানতে পারি যে, এত কথার পরও আব্দুল আজিজ ব্যাপারি আব্দুল করিমের সঙ্গে ডালের ব্যবসা করতে রাজি হয় না। এভাবে কতদিন কাটে তার হিসাব আমরা ভুলে যাই, কিন্তু আব্দুল করিমের ময়মনসিং এবং ফুলবাড়িয়া যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিবৃত হয় না। তখন কোন এক শুক্রবারে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তৃতীয়বারের মত ঠোঙ্গায় করে ডালপুরি নিয়ে ফেরার সময় সন্ধ্যার মুখে আব্দুল করিমের সঙ্গে তার দেখা হয় এবং পুনরায় সে তাকে ডালপুরি খেয়ে যাওয়ার জন্য ডাকে।
আঃআঃব্যাপারি : আহো।
আঃকঃ : আলুপুরি?
আঃআঃব্যাপারি : আহো, খায়া যাও।
তখন আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তার ময়মনসিং যাওয়ার প্রসঙ্গ পুনরায় উত্থাপন করে, তুমার মৈমনসিং যাওয়ার কী হইল? আমরা মহল্লায় যখন এই কথা শুনি আমাদের সন্দেহ থাকে না যে, আব্দুল করিম আমাদের সঙ্গে মশকারিই করে এবং আমরা তার পাতা এই ইয়ার্কির ফাঁদে ক্রমাগত ফেঁসে যেতে থাকি; আমাদের মধ্যেও হয়তো ইতিমধ্যে এই খেলার প্রবৃত্তি জেগে উঠেছিল এবং এ রকম মনে হয়েছিল যে, আমাদের উচিত তাকে এখন পালাতে না দিয়ে চেপে ধরা এবং আমাদের সঙ্গে এই সব বাজে রসিকতা করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমাদের জন্য আরও বিস্ময় বাকি ছিল, তৃতীয় দিন আব্দুল করিমের হাতে হলুদ রঙের গরম এবং তেল জবজবে ডাল অথবা আলুপুরি তুলে দেয়ার পর আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তাকে যে প্রশ্নটি করে আমরা বুঝে পাই না এই প্রশ্ন তাকে কেন আগে করা হয় নাই, অথবা আমরাও কেন একবারও এই কথাটা ভাবি নাই! তৃতীয়বারের মতো ডালপুরি খাওয়ানোর পর আব্দুল আজিজ ব্যাপারির মাথায় প্রশ্নটি আসে কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর শুনে সে বিমূঢ় হয়ে পড়ে; কারণ, সে যখন বলে, তুমার বন্দুর নাম কি? আব্দুল করিম জানায় যে, তার বন্ধুর নাম, শেফালি।
আঃকঃ : আমি মৈমনসিং এইবার যামু। আপনে চাইলে আপনের লাইগা ডাইল আইনা দিবার পারি।
আঃআঃব্যাপারি : শেপালি কে? শেপালি তুমার বন্দু হইল কেমনে?
আঃকঃ : ক্যালা, হয়া পারে না?
আঃআঃব্যাপারি : অরে পাইলা কই?
আঃকঃ : পাইলাম।
আঃআঃব্যাপারি : কই পাইলা, মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে?
আঃকঃ : হঁ।
আঃআঃব্যাপারি : তুমারে কইলো বেড়াইতে যাওনের লাইগা!
আঃকঃ : হঁ।
আঃআঃব্যাপারি : তুমার বাপে তুমার উপরে এ্যার লাইগাই চেতে!
আঃকঃ : ক্যালা?
আঃআঃব্যাপারি : চেনা নাই জানা নাই একটা মাইয়া কইলো বেড়াইতে যাইয়েন, আর তুমি ফাল পাড়তাছ!
আঃকঃ : ক্যালা?
আঃআঃব্যাপারি : তুমি মিঞা আদতেই একটা ভোন্দা, তুমার বাপেরে এইসব কথা কইও না, কইলে তুমারে লৌড়াইবনে!
আমাদেরও মনে হয় যে, আসলেই আব্দুল করিম একটা গাধা! কিন্তু তারপর আমরা আব্দুল আজিজ ব্যাপারির মত পুনরায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, কারণ, আব্দুল করিম এসব কথা এবং তিরস্কার মেনে নিতে রাজি হয় না। আব্দুল আজিজ ব্যাপারির ডাল অথবা আলুপুরি খাওয়ার জন্য সে তার বকাঝকা করতে পারার অধিকার মেনে নেয় না।
আঃকঃ : আমি এই মাসেই যামু, আপনেরা যাই কন।
আঃআঃব্যাপারি : তুমি ক্যালা যাইবা, ওই মাইয়ারে দেখনের লাইগা?
আঃকঃ : হঁ, ক্যালা?
আঃআঃব্যাপারি : তুমি ঢাকার বাইরে গেছ কুনোদিন?
আঃকঃ : হের লাইগা যায়া পারুম না?—অসুবিধা নাইকা, যায়া পারুম, ঠিকানা লেইখা লইছি।
ভূতের গলির লোকদের কাছে তখন আব্দুল করিম এবং তার ময়মনসিং যাওয়ার প্রসঙ্গের চাইতে শেফালি প্রসঙ্গ বড় হয়ে ওঠে, দক্ষিণ মৈশুন্দি এবং ভূতের গলির এই মহল্লার লোকদের দিন উত্তেজনায় ভরে যায়, হালায় প্রেম করে নিহি, তারা বলে। তাদের মনে হয় যে, আব্দুল করিম বেকার বলেই তার পক্ষে এইসব করা সম্ভব; তখন মহল্লার লোকেরা বেকার থেকে প্রেম করাকে ঘৃণা করতে শেখে; তারা ভুলতে পারে না যে, শেফালি একটা মেয়ে এবং আব্দুল করিম বলে যে সে তার বন্ধু! ফলে মহল্লার লোকদের রাতের ঘুম বিঘি্নত হয়, সারাদিনের কর্মক্লান্ত দেহ নিয়ে তারা বিছানায় জেগে থাকে, জীবনের ব্যর্থতা এবং অপচয় বোধ তাদেরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয় এবং তারা কেমন বিষণ্ন হয়ে পড়ে; তাদের মনে হয় যে, বেকার থাকাইতো ভাল আব্দুল করিমের মত! আব্দুল করিম তার অলস সময় শুয়ে বসে কাটায় এবং দূরবর্তী শেফালির গল্প করে, তার ময়মনসিং যাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। আব্দুল আজিজ ব্যাপারি অথবা আলি আকবর অথবা বাবুল মিঞার সঙ্গে তার আবার দেখা হয়, তারা যখন বলে, তুমার যাওয়া হইল না? তখন সে তার এই ব্যর্থতার দায় তাদের ওপর চাপায়, বলে, যামু, কইলাম আপনেগো লাইগা কিছু লয়া আহি, আপনেরাতো রাজি হইলেন না! মহল্লার লোকেরা যখন এই কথা শোনে তারা খুব চমৎকৃত হয়, তারা বলে, খোরশেদ আলমের এই পোলাটা হালায় দেখছনি কেমুন সেয়ানা হয়া উঠছে! তখন একদিন আব্দুল আজিজ ব্যাপারি ডালপুরি কিনে বাড়ি ফেরে, পথে সে আব্দুল করিমকে খোঁজে তাকে চতুর্থ দিনের মত ডালপুরি খাওয়ানোর জন্য, কিন্তু তাকে দেখা যায় না।
মহল্লার লোকেরা যখন এই কথা শোনে এবার তারা আব্দুল আজিজ ব্যাপারিকে গাধা বলে গাল দেয়, তারা বলে, এই হালায় ব্যাপারির বাচ্চা খালি ডাইলপুরি খায়, আর এই বেকার বদমাইশ পোলাটারে লয়া নাচে! কিন্তু পরবর্তী সময়ে মহল্লার লোকেরা তাদের মত বদলায় এবং আব্দুল আজিজ ব্যাপারির বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে তাদের শ্রদ্ধা ফিরে আসে। কারণ, তারা আব্দুল আজিজ ব্যাপারির ডালপুরি খাওয়ার গল্প বিস্তারিতভাবে জানতে পারে এবং তাদের মনে হয় যে, আব্দুল করিমের চালাকির দিন এবার শেষ হবে। ভূতের গলির লোকেরা জানতে পারে যে, আব্দুল আজিজ ব্যাপারি ডালপুরি খাওয়ার জন্য আব্দুল করিমকে খোঁজে বটে তবে তাদের বাসায় গিয়ে ডেকে বের করে আনে না, তার বদলে সে প্রতীক্ষা করে; মনে হয় যেন আব্দুল আজিজ ব্যাপারি ছিপ ফেলে বসে থাকে, তবে তার প্রতীক্ষার কাল দীর্ঘ হয় না। তিন দিন পর কোন এক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, অথবা বুধবারও হতে পারে, সে আব্দুল করিমের দেখা পায় এবং উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, কি মিঞা তুমারে দেখি না ক্যালা? তখন আব্দুল আজিজ ব্যাপারির বোধহয় মনে হয় যে, আসল কথায় সরাসরি না গিয়ে একটু সময় নেয়া যাক; ফলে সে আব্দুল করিমকে একটু খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং বলে, তুমি তাইলে মৈমনসিং গেলা না? তবে সেদিন বৃহস্পতিবার কিংবা বুধবার সন্ধ্যায় ডালপুরির ঠোঙ্গা নিয়ে বসা আব্দুল আজিজ ব্যাপারি এবং আব্দুল করিমের মধ্যেকার খেলাটা হয়তো একতরফা ছিল না, পারস্পরিক ছিল। মহল্লার লোকেরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখে যে, আব্দুল করিমও খেলোয়াড় খারাপ না; কারণ, সেদিন আব্দুল আজিজ ব্যাপারির কথা শুনে সন্ধ্যার নরম অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে সে হাসে এবং বলে, আপনে যাইবার কন? তার এই কথা শুনে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি হকচকিয়ে যায়, কিন্তু বুদ্ধি হারায় না, সে দ্রুত চাল বদলায় এবং এতে আব্দুল করিম ফেঁসে যায়; আব্দুল আজিজ ব্যাপারির জেরার মুখে আব্দুল করিমকে তার ময়মনসিং ভ্রমণ এবং শেফালির বৃত্তান্ত ভেঙে বলতে হয়।
আব্দুল করিম বলে যে, কোন একদিন দুপুরে তার কোন এক বন্ধুর সঙ্গে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে বেড়াতে গেলে সেখানে তারা এই অল্প বয়স্ক গ্রামের মেয়েটিকে পায়, মেয়েটি একা এবং সম্ভবত অসুস্থ ছিল। তাদের সামনে গাড়িতে বসে মেয়েটি বাস ছাড়ার আগেই জানালা দিয়ে মুখ বের করে বমি করে, তারপর হয়তো কুলি করার জন্য অথবা পানি খাওয়ার জন্য সে যখন বাস থেকে নেমে আসে তার পা টলমল করে এবং আব্দুল করিম তা দেখে। তখন আব্দুল করিম তাকে তার বাহু ধরে নিয়ে এসে একটা কাঠের বেঞ্চে বসায়, হোটেল থেকে পানি এনে খাওয়ায় এবং তখন সে জানতে পারে যে, মেয়েটার নাম শেফালি; এবং তখন শেফালির সঙ্গে তার সব অলৌকিক কথাবার্তা হয়। আব্দুল আজিজ ব্যাপারির প্রশ্নের মুখে সে বলে যে, সে যখন দেখে বা বুঝতে পারে মেয়েটা একা বাড়ি ফিরছে এবং সে অসুস্থ তার বড় মায়া হয় এবং সে বলে, তুমি একলা যায়া পারবা? আব্দুল করিমের কথা শুনে হয়তো মেয়েটার মজা লাগে, সে বলে, কী কইন, পারতাম না ক্যারে, এল্কা কত্তো গেলাম! তখন, তারপর, বাস না ছাড়া পর্যন্ত তাদের দুজনের মধ্যে আলাপ হয় এবং তখন আব্দুল করিম জানতে পারে যে, ময়মনসিং ছাড়িয়ে আকুয়া যেতে হয়, তারপর আকুয়া থেকে ফুলবাড়িয়া; সেখানে কত চাল, কত ডাল, কত আখ এবং গুড় হয়, সেখানে কত আলু শিম এবং বেগুন জন্মে, এবং এসব জিনিস কত সস্তা দামে ফুলবাড়িয়া হাটে বিক্রি হয়।
তখন কোন এক সময় মেয়েটা হয়তো তাকে বলে, আমরার বাইত বেড়াইবার যাইন যে; এবং আব্দুল করিম একটা কাগজে মেয়েটার ঠিকানা লিখে নেয় এবং বলে, মৈমনসিং যাইনিকা কুনো দিন, যুদি যাইবার কও যামুনে একদিন, দেইখা আমুনে তুমারে! সেদিন এটুকু শোনার পর আব্দুল আজিজ ব্যাপারির কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তার মনে হয় যে, এটা আব্দুল করিমের একটা খেলাই, এবং সে হয়তো নিজের সঙ্গেই খেলে, শেফালি এবং ময়মনসিং বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে সে হয়তো তার জীবনের কর্মহীনতার ভেতর এই এক অবলম্বন গড়ে তোলে। তখন আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তার নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তটি নেয়, তার বোধহয় মনে হয় যে, চালাকি করার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে হয়তো তার চাপা মারার এই প্রবণতা দূর হবে; ফলে সে বলে, তুমি যাও, আমার লাইগা পাঁচ কেজি ডাইল লয়া আইয়ো, যুদি দেখি যে পড়তা ভালা পড়তাছে পরে বিশি কইরা আনামুনে। কিন্তু মহল্লার লোকেরা বলে যে, আব্দুল আজিজ ব্যাপারির মত তারাও আব্দুল করিমকে বুঝতে পারে নাই, কারণ, আব্দুল আজিজ ব্যাপারির কথা শুনে সে বলে যে, সে ডাল কিংবা আলু কিংবা গুড় এনে ব্যবসা করার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে, সে এখন এমনি বেড়াতে যাবে। তার এই কথা শুনে আব্দুল আজিজ ব্যাপারির হয়তো ভাল লাগে না, পরাজিত এবং অপমানিত লাগে, এবং তার আর কিছু বলার থাকে না; সে একটা ডালপুরি আব্দুল করিমের হাতে তুলে দিয়ে বলে, ঠিক আছে, লও খাও, এবং আব্দুল করিম শেষ পুরিটাও মজা করে খায়।
ভূতের গলির লোকদের কাছে তখন ব্যাপারটা রহস্যজনক হয়ে দাঁড়ায়, তাদের মনে হয় যে, আব্দুল করিম হয়তো মহল্লার মানুষদের এবং নিজেকেও বোকা বানায় মাত্র; তাদের সন্দেহ যায় না, ফলে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি পুনরায় ডালপুরি অথবা আলুপুরি কিনে আব্দুল করিমকে খোঁজে, তারপর তাকে যখন পুনরায় একদিন রাস্তায় পায় তাকে সে তার বাড়িতে নিয়ে যায়, বলে, আহো তুমিতো ডাইল আইনা দিবা না, আহো আলুপুরি খায়া যাও! সেদিন আব্দুল আজিজ ব্যাপারি তাকে বলে, তুমি তাইলে মৈমনসিং এমনেই বেড়াইবার লাইগা যাইতাছ? মহল্লার লোকেরা বলে যে, অবশেষে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি হয়তো বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল এবং আব্দুল করিম যখন নমুনা হিসাবে পাঁচ কেজি ডাল এনে দিতে পুনরায় অস্বীকার করে তখন সে খেলাটা জারি রাখার চেষ্টা করে, যাতে আব্দুল করিম এখন ভেগে যেতে না পারে। তার কথা শুনে আব্দুল করিম যখন ঘাড় নাড়ে এবং বলে, হঁ এমনেই যামু, তখন সে বলে, তুমি তুমার লগে আমার দুলাল মিঞারে লয়া যাও না ক্যালা, তুমি শেপালিরে দেইখা আইলা, অয় হাট বাজারে কী পাওন যায় দেইখা আইলো। আব্দুল আজিজ ব্যাপারির হয়তো মনে হয়েছিল যে, আব্দুল করিম তার এ প্রস্তাবে রাজি হবে না; কারণ, এত কথার পর তার হয়তো মনে হয়েছিল যে, আব্দুল করিমের ময়মনসিং যাওয়ার এসব কথাবার্তা তারপরেও হয়তো ভুয়া এবং শেফালিও কাল্পনিক। কিন্তু মনে হয় যে, তার ধারণা পুনরায় ভুল ছিল, আব্দুল করিম তার কথায় রাজি হয়ে যায় এবং বলে, তাইলেতো খুবই ভাল হয়, দুইজনে গপসপ মাইরা যাওন যায়—অসুবিধা হইব না, শেপালিগো বাইতে বড় টিনের ঘর আছে, আরামে থাকন যাইবনে; দুইজনে বেড়ায়া বুড়ায়া আমুনে।
ভূতের গলির লোকেরা এই গল্প করে :
আমরা তখন সব জানতে পারি, আব্দুল করিম ময়মনসিং রওনা হয়, সঙ্গে যায় আব্দুল আজিজ ব্যাপারির বড় ছেলে দুলাল মিঞা; ভূতের গলিতে একমাত্র আলি আকবর এবং বাবুল মিঞা ছাড়া আমরা সকলেই এই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হই—আব্দুল করিমের পিতা খোরশেদ আলমও অবশ্য খুশি হয় না। যাহোক আমরা খুশি হই, কারণ আমাদের মনে হয় যে, সঙ্গে দুলাল মিঞা থাকায় পরে আমরা সব ঘটনা বিশদ জানতে পারব, আব্দুল করিমের উপায় থাকবে না বানিয়ে মিথ্যা কথা বলে আমাদের ঠকানোর।
এভাবে আব্দুল করিম এবং দুলাল মিঞার যাত্রা শুরু হয়, আব্দুল আজিজ ব্যাপারির বাড়িতে শেষবার ডালপুরি খাওয়ার এক/দুই দিন পর, পরবর্তী মঙ্গলবার, দিনটা ভাল বলে, খুব সকালে তারা দুইজন সত্যি রওনা হয়; আমাদের বিশ্বাস হতে চায় না, কিন্তু তারা কাঁধে এয়ার ব্যাগ ঝুলিয়ে রিঙ্া চেপে মহল্লা থেকে বের হয়ে যায়, এবং যখন সত্যি তারা যায়, আমরা তিন/চার দিন পর তাদের প্রত্যাবর্তনের আশা করি, আমরা বলি, হয়তো পাঁচ/সাত দিনও লাগতে পারে,—কিন্তু সেদিন রাতেই তারা মহল্লায় ফিরে আসে। পরে আমরা আব্দুল করিম এবং দুলাল মিঞার কাছ থেকে এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত শুনি।
দুলাল মিঞা বলে যে, সেদিন সকালে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার পর, তারা প্রথমেই এক সমস্যার মধ্যে পড়ে; কারণ, তারা দেখে যে, ফুলবাড়িয়া যাওয়ার দুই রকমের বাস রয়েছে, তারা চাইলে ময়মনসিংয়ের বাসে করে ময়মনসিং যেতে পারে, সেখান থেকে ফুলবাড়িয়া; অথবা তারা সরাসরি ফুলবাড়িয়ার বাস ধরতে পারে। কিন্তু আমরা, মহল্লার লোকেরা, তাদের সঙ্কটের বিষয়টি বুঝতে পারি না, আমরা বলি, এইটা কুনো কথা, তরা ফুলবাইড়া যাবি, ফুলবাইড়ার ডাইরেক্ট বাসে যাবি। কিন্তু দুলাল মিঞা বলে, শেফালি আব্দুল করিমকে যে ঠিকানা দেয় তাতে বলা ছিল, ঢাকা মহাখালী থেইকা বাসে চইড়া মৈমনসিং, মৈমনসিং গাঙ্গিণার পাড় থেইকা ফুলবাইড়ার বাসে কইরা ফুলবাইড়া। এ কথা শুনে সমস্যার প্রকৃতিটা আমরা বুঝতে পারি, এবং দুলাল মিঞা বলে যে, আব্দুল করিম শেফালির দেয়া নির্দেশনা অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ময়মনসিংয়ের বাসে চেপে বেলা বারটার সময় ময়মনসিং পৌঁছায়; তারপর গাঙ্গিণার পাড়ে বাস বদল করে যখন ফুলবাইড়ার মুড়ির টিন বাসে চড়ে তাদের খুব খিদে পায় কিন্তু বাস ছেড়ে দেয়ার উপক্রম করায় তারা আপাতত ভাত খাওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করে ঝাল মুড়ি কিনে খায়। ময়মনসিং থেকে রওনা হওয়ার দুই ঘণ্টা পর তারা ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়, দুলাল মিঞা বলে যে, এর পর তাদের আসল সঙ্কট শুরু হয়, কারণ, তারা কিছুই খুঁজে বের করতে পারে না, কেবল একটি মেয়ের নাম ছাড়া মনে হয় আব্দুল করিমের আর কিছুই জানা ছিল না, কিন্তু কেবল একটি মেয়ের নাম কি কাউকে জিজ্ঞেস করা যায়? বলা যায়, আপনেরা শেপালিরে চিনেন, অগো বাড়ি কুন দিকে?—বলা যায় না, ফলে, দুলাল মিঞা তার উপর ক্ষেপে।
দুঃমিঞা : তুমার মত এমুন ভোদাইতো হালায় আমি জিন্দেগিতে দেখিনিকা!
আঃকঃ : ক্যালা, এই কতা কচ ক্যালা?
দুঃমিঞা : নাম ছাড়া আর কিচ্ছু জান না, তুমি খুঁইজা বাইর করবা কেমনে এই শেপালিরে?
আঃকঃ : তুই আইলি ক্যালা? তরে আমি আইবার কইছিলাম!
দুঃমিঞা : আমি কি জানি নিহি যে, তুমি এমুন কাম কইরা রাখচো, নাম ছাড়া কিচ্ছু জান না!
কিন্তু দুলাল মিঞা বলে যে, তার কথায় আব্দুল করিম বিচলিত হয় না; সে বলে, দেখ না কেমনে বাইর করি! তারা তখন বাসস্ট্যান্ডের একটা চায়ের দোকানে বসে চা খায়, হয়তো শিঙ্গাড়া বা নিমকিও, কারণ, আব্দুল করিম তাকে বোঝায় যে, শেফালিদের বাড়ি গিয়েই এখন তারা খেতে পারবে। তখন দুলাল মিঞা এই চায়ের দোকানে বসে শেফালির বাড়ির ঠিকানা লেখা কাগজটা প্রথম দেখে, সে আমাদেরকে বলে, এমুন ঠিকানা হালায় আমি বাপের জন্মে দেখিনিকা; তখন তার কথা শুনে আমাদের মনে হয় যে, এমন অদ্ভুত বিষয় আমরাও কখনো শুনি নাই। কিন্তু দুলাল মিঞা অনেক কথা ঠিকমত বলতে পারে না, তখন আমাদের মনে হয় যে, শেফালির ঠিকানা লেখা আব্দুল করিমের কাগজটা আমাদের দেখা দরকার; ফলে আমরা তখন আব্দুল আজিজ ব্যাপারির শরণাপন্ন হই এবং তাকে বলি, আমরা কইলে আমাগো কথা হুনবো না, আপনেতো অরে ডাইলপুরি খাওয়ান, অরে কন আমাগো কাগজটা দেখাইতে। আব্দুল আজিজ ব্যাপারি আমাদের দাবির যৌক্তিকতা সম্পর্কে একমত হন এবং জানান যে, এ রকম একটি কাগজ আমাদের অবশ্যই দেখতে পারা দরকার এবং তিনি তার ব্যবস্থা করবেন। পরে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি কাগজটা সংগ্রহ করে এবং আমরা সেটা দেখতে পাই; সে তখন আমাদেরকে বলে, পোলাটা খারাপ না, পরথম কইছিল যে কাগজটা নাইকা, ফালায়া দিছে, কিন্তু আমি যখন কইলাম, আমি তুমার বাপের বন্দু আমার কথা হুনবা না? তখন আয়া কাগজটা দিয়া গেল, কইলো, লন এইটা আপনেরে দিয়া দিলাম! তখন আমরা, ভূতের গলির লোকেরা কাগজটা দেখি।
একটা সাদা কাগজে প্রথমে ঠিকানা লেখা ছিল :
মোছাঃ শেপালি বেগম
ফুলবাইড়া
মৈমনসিং
এরপর ছিল পথের নির্দেশ :
ঢাকা মহাখালী বাসস্ট্যান
মৈমনসিং শহর, গাঙ্গিনার পাড়
গাঙ্গিনার পাড়—আকুয়া হয়া ফুলবাইড়া বাজার, থানার সামনে উল্টা দিকে হাঁটলে বড় এড়াইচ গাছের (কড়ই গাছ) সামনে টিএনউ অপিস টিএনউ অপিস সামনে রাইখা খাড়াইলে, বাম দিকের রাস্তা—নাক বরাবর হাই স্কুল ছাড়ায়া বরাবর সুজা, ধান ক্ষেত, কাঁটা গাছ, লাল মাটি, বামে মোচড় খায়া নদী
আহাইলা/আখাইলা/আখালিয়া নদী
নদী পার হয়া ব্রিজ পিছন দিয়া খাড়াইলে
দুপুর বেলা যেদিকে ছেওয়া পড়ে তার উল্টা দিকে,
ছেওয়া না থাকলে, যেদিকে হাঁটলে পায়ের তলায় আরাম লাগে সেই দিকে নদীর পাড় বরাবর এক মাইল হাঁটলে দুইটা নাইরকল গাছ দুই নাইরকল গাছের মইদ্দে খাড়ায়া গ্রামের দিকে তাকাইলে
তিনটা টিনের ঘর দেখা যাইব
তিনটা ঘরের একদম বাম দিকের ঘরের পাশ দিয়া যে রাস্তা গেছে সেই রাস্তা ধইরা
আগাইলে চাইর দিকে ধান ক্ষেত, পায়ে হাঁটা আইলের রাস্তা দূরে চাইর দিকে আরো গ্রাম
ক্ষেতে পাকা ধান যেদিকে কাইত হয়া আছে, সেই দিকে, অথবা, যুদি ধানের দিন না হয়,
যেদিকে বাতাস বয় সেই দিকে গেলে পাঁচটা বাড়ির ভিটা দেখা যাইব,
তিনটা ভিটা সামনে দুইটা পিছনে,
পিছনের দুইটা বাড়ির ডালিম গাছওয়ালা বাড়ি।
দুলাল মিঞা বলে, এই হালার মাতারি এত কথা কইছে, কিন্তু বাপের নাম, গ্রামের নাম, কিছু দেয় নাইকা; কিন্তু সে বলে যে, তারপরেও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে চায়ের দোকানে বসে যখন ঠিকানার এই বর্ণনা দেখে সে চমৎকৃত হয় এবং আব্দুল করিম তার দিকে তাকিয়ে বলে, ঠিকানা ঠিক আছে না? দুলাল মিঞা আমাদেরকে বলে, তার তখন মনে হয়, ঠিকানা হয়তো ঠিক আছে, হয়তো দুই নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে তাকালে শেফালি বেগমদের গ্রাম দেখা যাবে, হয়তো ডালিম গাছ তলায় শেফালি বেগম উদয় হবে এবং আব্দুল করিমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলবে, আইছুন, চিন্না আইবার পারলাইন, আহুইন! কিন্তু ধান গাছের শুয়ে থাকা এবং সূর্যের ছায়া দেখে পথ ঠিক করার প্রসঙ্গে সে বিভ্রান্ত বোধ করে, তার মনে হয় যে, এমন ঠিকানার কথা সে জীবনে শোনে নাই, তবে, তবু সে বুঝতে পারে যে, কিছুই না থাকার চাইতে হয়তো এ অনেক ভাল; এবং সে আব্দুল করিমের কথা শুনে বলে, হঁ ঠিক আছে, অখনে খুঁইজ্জা পাইলে হয়!
তখন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে তারা আর একবার শুরু করে, পাকা রাস্তা ধরে আলিয়া মাদ্রাসা পার হয়ে, কলেজের সামনে তারা ঝাঁকড়া প্রাচীন কড়ুই গাছের তলায় এসে হাজির হয়, এই গাছের সামনেই টিএনও-র অফিস বিল্ডিং; তারা পুরনো দিনের অভিযাত্রীদের মত কাগজে লেখা পথনির্দেশ অনুসরণ করে এগোয়; টিএনও-র অফিসের দিকে মুখ করে দাঁড়ালে তারা দেখে যে, একটি হেরিংবোন ইটের রাস্তা এই অফিসের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে বাঁ দিক দিয়ে চলে গেছে, দুই ধারে পাকা ধানের জমি, এই পথ ধরে এগিয়ে তারা এক চৌমাথায় পৌঁছায়, তখন ডান দিকে রোদের ভেতর কাত হয়ে থাকা সোনালী রঙের আমন ধানের বিস্তীর্ণ মাঠের পরে তারা একটা সাদা রঙের দালান দেখতে পায়, তাদের মনে হয় যে, এটা হয়তো হাইস্কুল হবে, কিন্তু এতদূর থেকে বুঝতে না পেরে তাদের মনে হয় যে, তারা কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারে, ভাই অইটা কি ইস্কুল? কিন্তু কোন লোক না পেয়ে তারা কাগজটা আবার পড়ে, হাইস্কুল ছাড়ায়া সুজা, এবং তারা বুঝতে পারে যে, তারা যে পথে এসেছে সে বরাবর সোজা হবে; তখন তারা চৌরাস্তা পার হয়ে মেঠো পথে পড়ে, এই রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ এগোনোর পর তারা দেখে যে, মাটির রঙ এখানে লাল হয়ে উঠেছে, রাস্তার দুই পাশ ফণিমনসার ঝোপে পূর্ণ হয়ে আছে এবং তারা বুঝতে পারে যে, তারা ঠিক পথেই আছে এবং সহসাই তারা এই পথের মোচড় পার হয়ে আখালিয়া নদীর পাড়ে গিয়ে হাজির হয়। আমরা দুলাল মিঞার কাছ থেকে জানতে পারি, তারা তাদের সামনে সংকীর্ণ কিন্তু খাড়া এবং গভীর একটি নদী খাত দেখতে পায়, নদীর তলদেশ তখন ছিল প্রায় শুকনো, পানির একটি ক্ষীণধারা অতিকষ্টে টিকে ছিল। দুলাল মিঞা বলে যে, নদী পেয়ে যাওয়ায় তার উৎসাহ বাড়ে, কারণ, সে বলে যে, নদী হচ্ছে এমন এক বস্তু যা দেখলে সব সময় মনে হয়, কোথাও এসে পৌঁছলাম।
আমরা জানতে পারি যে, গজারি গাছের খুঁটি এবং তক্তা দিয়ে তৈরি একটা চওড়া সাঁকো সমর্থ সম্ভোগরত প্রেমিকের পিঠেরমত ঈষৎ বাঁকা হয়ে নদীর দুই পাড়ের লাল মাটি স্পর্শ করে পড়ে ছিল; সেই দুপুরে অথবা দুপুরের পর দুলাল মিঞার পিছনে আব্দুল করিম আখালিয়া নদীর সাঁকোর ওপর উঠে আসে। দুলাল মিঞা বলে যে, নদীর অন্য প্রান্তে পৌঁছে তারা যখন পুনরায় পাড়ের ওপর অথবা সাঁকোর কিনারায় দাঁড়ায় তারা দেখে যে, তাদের ছায়া দেহের মায়া ত্যাগ করে দূরে যেতে চায় না, পায়ের নিচে পোষা কুকুরের মত শুয়ে থাকে। দুলাল মিঞা বলে, ছায়া দেখে যখন এগোনোর উপায় থাকে না, তারা দ্বিতীয় নিয়মটি অনুসরণ করতে চায়; তখন আব্দুল করিমের এই রকম মনে হয় যে, কোন দিকে হাঁটলে আরাম লাগবে সেটা বুঝতে হলে পায়ের জুতা খুলে ফেলা দরকার; সে দুলাল মিঞাকে বলে, খাড়া আমি খুলতাছি, তর খুলোন লাগব না। দুলাল মিঞা আমাদেরকে বলে যে, এই জুতা খুলতে গিয়েই সমস্যা দেখা দেয়, আব্দুল করিম সাঁকোর কাঠের রেলিঙের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একটু কুঁজো হয়ে ডান পায়ের হাঁটু ভেঙে পা উঁচু করে জুতার ফিতা খোলার চেষ্টা করে, এবং ভুল প্রান্ত ধরে টেনে ফিতায় গিঁট লাগিয়ে ফেলে; তারপর টানাটানি করার ফলে গেরোটা বিষ গেরো হয়ে দাঁড়ায়। সে এবার হাঁটু গেড়ে এক পায়ের উপর বসে কিছুক্ষণ ফিতা ধরে টানাটানি করে, নখ দিয়ে খুঁটে খোলার চেষ্টা করে, এবং অনেক পরিশ্রমের পর সে যখন ফিতার জট শেষ পর্যন্ত খুলতে পারে তখনই সমস্যাটা দেখা দেয়। সে ঘাড় তুলে দুলাল মিঞার দিকে তাকায়; দুলাল মিঞা আমাদেরকে বলে, আমি ভাবলাম যে বোধহয় ঘাড় সুজা করবার লাগাইছে। কিন্তু আমরা দুলাল মিঞার কাছ থেকে জানতে পারি যে, ব্যাপারটা আসলে তা ছিল না, আব্দুল করিম উপরের দিকে তাকিয়ে যা বলে তাতে দুলাল মিঞা প্রথমে বিভ্রান্ত বোধ করে তারপর তার মেজাজ খারাপ হয়, কারণ, আখালিয়া নদীর সাঁকোর কাঠের পাটাতনের উপর এক পায়ের উপর বসে থেকে দুলাল মিঞার মুখের দিকে তাকিয়ে সে বলে, ল দুলাইলা, যাইগা।
দুঃ মিঞা : কী কও!
আঃ কঃ : ল ফিরা যাই।
দুঃ মিঞা : ক্যালা?
আঃ কঃ : এমনেই, ল যাইগা।
দুঃ মিঞা : অহনে এই কথা কও, আইলা ক্যালা!
আঃ কঃ : আইলাম, ল অখন যাইগা।
দুঃ মিঞা : আমারে আনলা ক্যালা?
আঃ কঃ : তুই আইলি ক্যালা!
আমরা দুলাল মিঞার কাছ থেকে শুনি যে, এরপর আব্দুল করিম তার জুতার ফিতা পুনরায় বেঁধে উঠে দাঁড়ায় এবং দুলাল মিঞার সকল প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে ফিরতি পথ ধরে, বস্তুত তারা হয়তো কখনোই আখালিয়া নদী অতিক্রম করে নাই; এবং দুলাল মিঞাকে বাধ্য হয়ে তার পিছনে আসতে হয়। তখন দুলাল মিঞা ফিরে যাওয়ার আগে বাজারে গিয়ে জিনিসপত্রের দরদাম যাচাই করে দেখার কথা বলে, কিন্তু আব্দুল করিম কিছু শোনে না, নদীর সাঁকোর উপরে তার কী হয়, সে বলে যে, প্রথমে তারা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ফিরতি বাসের খোঁজ করবে, কারণ, তাদের ঢাকা যাওয়ার শেষ বাস ধরতে হবে, তারপর সময় পেলে তারা বাজার ঘুরে দেখতে পারে। কিন্তু সেদিন তাদের ফুলবাড়িয়া বাজার ঘুরে দেখা আর হয় না, হয়তো সব ডাল, সব চাল, আলু এবং গুড় নিয়ে দোকান অথবা হাটের লোকেরা প্রতীক্ষায় থাকে, কিন্তু আব্দুল করিম এবং দুলাল মিঞার সময় হয় না। তারা যখন টিএনও অফিসের সামনে পৌঁছায় তারা একটু দূরে কলেজের সামনে একটি বাস দেখতে পায়, বাসের হেলপার চিৎকার করে, ওই ঢাকা ঢাকা, লাস্ট বাস লাস্ট বাস, ছাইড়া গেল ছাইড়া গেল; দুলাল মিঞা বলে যে, তখন তাদের দৌড়ে গিয়ে এই বাস ধরা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
ভূতের গলির লোকেরা পরে বলে যে, তাদের জানা ছিল আব্দুল করিম এরকমই কিছু একটা করবে, তারপর তারা আব্দুল করিমের কথা পুনরায় ভুলে যায়; কিন্তু মহল্লায় আব্দুল আজিজ ব্যাপারি ডালপুরি খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে পারে না, সে কখন কখন ডাল অথবা আলুপুরি কিনে আনে, এবং যখন আব্দুল করিমকে দেখে তাকে কখনো পুরি খেয়ে যাওয়ার কথা বলে, আহো ডাইলপুরি খায়া যাও, তখন আব্দুল করিম তার বাড়ির বৈঠকখানায় বসে ডাল অথবা আলুপুরি খায়, এবং বলে, হালারা আলু দিয়া ডাইলপুরি বানায়!
শহীদুল জহির (১১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩ - ২৩ মার্চ ২০০৮) ছিলেন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং সরকারি আমলা। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে জাদুবাস্তবতার স্বাতন্ত্র্য চর্চার জন্য তিনি পরিচিত। নিত্যনতুন ভাষাবিন্যাস এবং রীতি-ব্যবহারে গল্প বলার কৌশলের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে তিনি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছেন। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি যোগ করেছেন স্বতন্ত্র রীতি পদ্ধতি, যা ‘শহীদুল জহিরীয়’ ধারা নামে পরিচিত। কোথায় পাবো তারে গল্পটি ‘ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প’ বই থেকে পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
তিনি চারটি উপন্যাস এবং তিনটি গল্প সংকলন প্রকাশ করেছেন। আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু (২০০৯) তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের একটি। এছাড়াও জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা (১৯৮৮), সে রাতে পূর্ণিমা ছিল (১৯৯৫) এবং মুখের দিকে দেখি (২০০৬) উপন্যাসগুলো বাংলা সাহিত্যে অনন্য সংযোজন বলে বিবেচিত হয়। বাংলা ছোটগল্পে তিনি যুক্ত করেছেন নতুন মাত্রা। পারাপার (১৯৮৫), ডুমুরখেকো মানুষ ও অন্যান্য গল্প (২০০০), এবং ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প (২০০৪) তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প সংকলন। তাঁর রচিত গল্পসমূহ ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং বিশ্লেষিত হয়েছে। ‘ভালবাসা’ (১৯৭৪), ‘পারাপার’ (১৯৭৫), ‘আগারগাঁও কলোনিতে নয়নতারা ফুল কেন নেই’ (১৯৯১), ‘কাঠুরে ও দাঁড়কাক’ (১৯৯২), ‘কাঁটা’ (১৯৯৫), ‘চতুর্থ মাত্রা’ (১৯৯৮), ‘কোথায় পাব তারে’ (১৯৯৯), ‘ডলু নদীর হাওয়া’ (২০০৩) প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প।
এই বিভাগটি আকর্ষণ তৈরি করছে৷ শহীদুল জহিরের একজন আলী কেনানের উত্থান পতন পড়েছিলাম৷ শক্তিমান লেখক৷ এই গল্পটি আগে পড়া হয়নি৷
উত্তরমুছুন