স্বদেশ বন্ধু সরকার— পুনর্জন্মে আপনার কবিতার খাতা হব...
হিম ঋতব্রত
শীতখেলাপাখির পালক ছিঁড়ে ছিঁড়ে ব্যাডমিন্টনের শাটল-কক্’স্ তৈরি হয়সূর্যোদয়... আর... সূর্যাস্তের আকাশ আজও তাই রক্তময়।
আহা এমন উচ্চারণে বুকের ভেতর পালকের ছটফটানি আর কিচিরমিচির আর্তনাদে ভরে ওঠে চারপাশ! কী ব্যথা! কী ব্যথা! কেমন প্রবল স্রোতের মতো শান্ত হৃদয়ে বেদনা ঢুকে পড়ে, আর কবিতার এই বেদনায় ডুবে যেতে যেতে হেমন্ত পেরিয়ে আরও শীত আসে, আবারও অজস্র পাখির পালক ছেঁড়া হয়, পাড়ার ছেলেপেলে ব্যাডমিন্টন খেলার তুমুল নেশায় মেতে ওঠে, আর বাইরে যেকোনও পাখির ডাক শুনলেই আমার মনে হয় যেন কেউ অত্যাচারে অবহেলায় খুব কাঁদছে !
আর যখন খেলার বয়সে আমার কাছে এমন কবিতা চলে আসে তখন তা বারবার পড়ি। কাগজে লিখে বুকপকেটে রেখে দিই। লোকজনকে শুনিয়ে বেড়াই। আর দলবল মিলে মুখস্ত করি কবির নাম— স্বদেশ বন্ধু সরকার— স্বদেশ বন্ধু সরকার...
তারপর তাঁর কবিতা, জীবন-যাপন, প্রতিষ্ঠান অপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি, শিল্প শিল্প খেলার সংকল্পে আমরাও মেতে উঠি, বিভিন্ন বইপত্তর ঘেঁটে বেড়াই। আবার যখন দেখি কথাকার মামুন হুসাইন স্মৃতি আওড়ে লেখেন, 'বাবা টাকা পাঠায় ফর্ম পূরণের। স্বদেশ বন্ধু টাকা জব্দ করে, চাল বিক্রি করে কবিতার কাগজ তৈরির জন্য অনশনে মাতে।' তখন আমরা কবির এই স্পর্ধায় নতুন করে জেগে উঠি, মাথা না নোয়ানোর বল বুকে চলে আসে! বুঝতে শুরু করি কবিতার জন্য নিজেকে এভাবে না বিলোলে— সরস্বতীর আরাধনা না করলে কবিতা কী এত সহজেই আপন হয়! আর তাই তো কবির এই সংগ্রাম, তপস্যা, অনশন, নিজেকে ছারখার করে শিল্পের সাথে গভীর সঙ্গমে মেতে ওঠার জন্য ভয়ংকর কণ্টকপথ পাড়ি দেওয়া... আরও গভীরে ডুবে যাওয়া... ডুবে যেতে যেতে মরে যাওয়া... ইত্যাদি সব ব্যাপার-স্যাপার আমাদের আরও টেনে নিয়ে যায় কবিতার দিকে...
কেঁচোর কবিতাকেঁচোই প্রথম শুঁকেছিল মাটির পবিত্র ঘ্রাণপ্রথম প্রেমিকপুরুষ যেন—মর্তধামে মানুষ পুঁতেছিল তাই প্রেমের একক বীজগুহার মানুষ যেমন পাথরে পাথরে ঘষে শুরু করেআগুনের প্রাথমিক চাষাবাদ।কেঁচোর মতোন তেমন মৃত্তিকাপ্রেমিক দেখি না আরত্বকের খয়েরি লাবণ্য ঢালে এই নষ্ট মাটিতেমুখ বুজে সয়ে যায় দহন... দারুণ দহনকেঁচোর গাত্রে মিশে থাকে আর এক কেঁচোভুলে থাকে হিংসে বড়াই দুঃখ ও তাপতবুও কি মানুষের মতো দু'হাতে ছিঁড়ে খায়স্বজাতি ও স্বর্গের নাভিমূল?এখনো বড়শিতে ঝুলে থাকে কেঁচোর নরম দেহাংশজলের তলদেশে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মতোনীল মাছেরা ঠুকরে খায় যিশুর লাশ।এখানে কেউ প্রেম দিলে পাবে খোলামকুচিসমস্ত সৃজন ব্যর্থ হবে বাসি ফুলের মতোদোহাই মৃত্তিকা দোহাই মৎস্যশিকারির উল্লাসপ্রেমিকের রক্তে কতদিনে শোধ হবে পূর্বপুরুষের ঋণ... পাপ।কেঁচোর আর্তনাদ জমে আছে মৃত্তিকায় মৃত্তিকায়কেঁচোর ইতিহাস জানে না কেউ, বোঝে না কেউ!কেঁচোই প্রথম শুঁকেছিল মাটির পবিত্র ঘ্রাণ
কবির এই অনুভূতি, উপলব্ধি— কত চেনা জানা ব্যাপার অথবা চেনার ভেতরই খুব অজানা অচেনা নতুনকে আবিষ্কার। আহা কবির চমৎকার গভীর বোধের ভেতর কী সহজ আমাদের ভাসমান হৃদয়! কেঁচো ও কবির জীবনের প্রেম— মৃত্তিকার প্রতি, মায়ের প্রতি নাড়ির টানে— কবিতার টানে, কবি নিজেই যেন এক কেঁচো! আজীবন তাঁর এ-ই কবিতা খোঁড়ার কাজ— কেঁচো যেমন মাটি খুঁড়ে উর্বর করে তেমনই কবিতাকে খুঁড়ে খুঁড়ে উর্বর করার কাজ কবিরও। তাই কবির এই যাত্রা ও জীবন— প্রকৃত কে আরও প্রকৃত করে তোলা, কবিতাকে আরও কবিতা করে তোলা।
আর কবিদের এই প্রকৃত'র দিকে : বিষের যাত্রা— প্রেমের, অমৃতের, কবিতার খোঁজে মৃত্যুর যাত্রা দেখলে কেন জানি না আমার মনে হয়, অতীতের অবতার কিংবা আজকের কবি— যেন একই মুখ, একই আকৃতি, একই লড়াই, জীবনের একই ব্রত, ব্রত পালনের যন্ত্রণা— কেবল সময়ের ফেরে তাঁদের এই নামের পরিবর্তন।
তবুও এতকিছুর পরও কবির পরিচয় কেবলই কবিতায় আর কিছু নয়। কারণ কবির আগে, কবিতাই আমাদের মাতাল করে, সামনের পথ দেখায়; তারপর আমরা কবিকে চিনি—পড়তে পড়তে—দেখতে দেখতে— কবির যাপন ও অভ্যন্তরীণ অন্তহীন বিষয়াদি অনুধাবনে— তাঁর ভেতরে যেতে যেতে ভাবতে ভাবতে নিজের ভেতরও হয়তো জারিত হতে থাকে গোপন এক কবিতা, তারপর বেরিয়ে আসে—
ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনশীতখেলা ভালো লাগলো খুব।
উত্তরমুছুনকেঁচোর কবিতাটি চমৎকার।
উত্তরমুছুন