কবি, কথাসাহিত্যিক, লিটলম্যাগ সম্পাদকের মুখোমুখি হবার বিশেষ বিভাগ ‘দশকথা’। দশটি প্রশ্ন বনাম দশটি উত্তর। আপাতভাবে সংক্ষিপ্ত এই সাক্ষাৎকার সিরিজ আশা করি পাঠকের ভালো লাগবে। আজ এই বিভাগে বিন্দুর মুখোমুখি হলেন কবি ও গদ্যকার নাজমুস সাকিব রহমান।
১. আপনার প্রথম লেখা কবে এবং কীভাবে?
নাজমুস সাকিব রহমান : প্রথম লেখার কথা আমার মনে নেই। সৈয়দ মুজতবা আলীকে নিয়ে কোনো একটা গদ্য হতে পারে। আমি সিউর না অবশ্য। কনফার্ম করতে পারছি না। তবে আমি যদি ওই সময় ভাবতে পারতাম, একদিন এইরকম একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, লেখাটার কথা অবশ্যই মনে রাখতাম।
২. কবিতা আপনার কাছে কী?
নাজমুস সাকিব রহমান : জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ‘কবিতা অনেকরকম’। কবিতা কিন্তু আসলেই অনেকরকম। আমার তো মাঝে মধ্যে ডিম ভাজাকেও কবিতা মনে হয়। একবার কাপ্তাই জুম রেস্তোরাঁয় ছোট মাছ ভাজা খাচ্ছি। এ সময় আমার এক বন্ধু বলল—কবিতার ভর্তা খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কবিতা তো ভর্তা করার সুযোগ নেই। তখন আরেক বন্ধু বলল—ঠিকই তো। থাকলে পুরান ঢাকার হোটেলগুলাতে থালাভরে কবিতার ভর্তা বিক্রি করত। কমপক্ষে পাঁচ পদের কবিতা ভর্তা পাওয়া যেত। এর মধ্যে একটা হত সনেটভর্তা। আমি দেখলাম—ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। অন্তত ফুড রিভিউয়ারদের জন্য তো বটেই। ভেবেও একটা মানসিক সুখ পাওয়া যায়।
৩. আপনার কবিতা লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি?
নাজমুস সাকিব রহমান : এটা আগেও একটা ইন্টারভিউতে বলেছি। বিষয় অনুযায়ী প্রস্তুতি পাল্টে যায়।
৪. আপনার লেখার অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
নাজমুস সাকিব রহমান : শামসুর রাহমানের একটা কবিতা এরকম—‘যদি বাঁচি চার দশকের বেশি, লিখব। যদি বাঁচি দুই দশকের কম, লিখব’। এটা দশক, বছর, মাস হয়ে দিন পর্যন্ত যাবে। তারপরেও তিনি বলবেন, ‘লিখব’। এই কবিতাটা আমাকে ইন্সপায়ার করে। আবার ধরেন, কুয়েন্টিন তারান্তিনোর সিনেমাগুলা। তার প্রতিটা সিনেমা চ্যাপ্টারে ভাগ করা থাকে। যেন উপন্যাসের ফর্ম। স্ক্রিনে উপন্যাস দেখছি। অনেক সময় মিউজিকও ইন্সপায়ার করে। লিওনার্দ কোহেন, কিশোর কুমার, মান্না দে, পিংক ফ্লয়েড, মার্ক নফলার বা এরিক ক্ল্যাপটন-এরা বিভিন্নভাবে আমার লেখায় এসেছেন।
৫. কবিতা মানুষকে কী দিতে পারে?
নাজমুস সাকিব রহমান : এই প্রশ্নের জনপ্রিয় একটা উত্তর আমি দিতে পারি। ইতোমধ্যে কবিতা মানুষকে অনেক কিছুই দিয়েছে। যেমন, পাবলো নেরুদাকে দিয়েছে। রবার্ট ফ্রস্ট, উইলিয়াম শেকসপিয়রকে দিয়েছে। মির্জা গালিব, মাইকেল মধুসূদন দত্তকে দিয়েছে। এতো বেশি কিছু দেয়ার পর কবিতা আর কি দিতে পারে সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। আমার মনে হয়, কবিতার কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা দেয়ার চাইতে বেশি। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর একটা কবিতা আছে এ বিষয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘কবিতার পা-ুলিপি ধীরে-ধীরে তৈরি হয়ে ওঠে। বন্ধু ও স্বজনবর্গ ক্রমে আরও দূরে সরে যায়। ক্রমশ অস্পষ্ট হয় যৌবনের আনন্দ-যন্ত্রণা। মনে হয়, যৎপরোনাস্তি যে-শব্দনিচয় একদা খুবই অর্থবহ ছিল, আজ তিলমাত্র অর্থ বহন করে না ...’।
৬. আপনার উত্থান সময়ের গল্প বলুন। সে সময়ের সমালোচকদের কীভাবে সামলেছিলেন?
নাজমুস সাকিব রহমান : উত্থানের সময়টা খুবই জোশ ছিল। দিনটার কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আবহাওয়া সংবাদ শুনছিলাম। সেদিন তাদের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস ছিল অনেকটা এরকম—
‘আগামীকাল দেশের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে’।
সত্যি বলতে ওটা ছিল সত্যিই একটা ভাল সময়। আমাকে কেউ চিনত না। আমি নিজের মত লিখতাম। কাজেই সমালোচকও ছিল না। এখন চাইলেও আমি সমালোচনাহীন জীবনে ফিরে যেতে পারব না।
৭. সাহিত্য দিয়ে কেউ দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চায়। কেউ স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে চায়, কেউ সন্ত্রাস-মৌলবাদ ঠেকাতে চায়। আপনি কী করতে চান?
নাজমুস সাকিব রহমান : আমি ব্রাড পিটের মত গদ্য লিখতে চাই।
৮. যে জীবন আপনি এত বছর যাপন করলেন, তা আপনাকে আলটিমেটলি কী শিক্ষা দিল?
নাজমুস সাকিব রহমান : আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা শিখেছি।
৯. করোনা তথা মহামারী আপনার লেখালিখিতে কোনো প্রভাব রেখেছে কি?
নাজমুস সাকিব রহমান : পৃথিবীতে অনেক মহামারী এসেছে। মহামারী এলেই তার প্রভাব লেখায় নিয়ে আসতে হবে—এই ভাবনাটা এখন বোরিং লাগে। মহামারী মানে নতুন একটা শুরু। যদিও তার আগে মানুষের চোখে মুখে মৃত্যুভয় ও অবিশ্বাস দেখতে হয়। এটা কখনো কখনো ভীতিকর। বইপত্র পড়ে বা চলচ্চিত্র দেখে অনুভব করা যাবে না। তবে প্রতি মহামারীতে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেটা হলো, সুনির্দিষ্ট এবং যাচাইকৃত তথ্য আপনাকে কিছু সাহস ও সুরক্ষা দিতে পারে।
১০. পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
নাজমুস সাকিব রহমান : অবশ্যই। জানতে চাইবো, তারা কেন ইন্টারভিউ পড়েন?
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
নাজমুস সাকিব রহমানের জন্ম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১৯৯৩ সালের ১০ নভেম্বর। তিনি স্কুল ফ্রম জার্নালিজম। যুক্ত আছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। গল্প-কবিতা ছাড়াও তিনি প্রচুর গদ্য লিখেন। নেন সাক্ষাৎকারও। তার একমাত্র প্রকাশিত বই রাউলা (২০২০)। নিজের ফেসবুক ওয়াল ছাড়াও মহাবিশ্বের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে।
মন্তব্য