“বিরক্তিভরা দিনগুলাে আমি আজ উপহার পাঠাচ্ছি তোমাকে।
দুঃস্বপ্নের শতসহস্র রাত...”
—ভাস্কর চক্রবর্তী
অনেকগুলো পাখি খুলে যাওয়া জানালায়
কোনটাকে ধরি…
কার ঠোঁটে রাখি ঠোঁট
ক্ষয়ে যাওয়া সাবানের মতো আমার দু’চোখ
বেঁচে থাকা ভালো বাড়ি থেকে পালিয়ে পালিয়ে
যোনিহীন আকাশের গায়ে ক্ষুধার্ত কামনার
ক্ষত এঁকে, কে তুমি নিতে চাও
খুন করো প্রতিদিন—
আগুনের থাবা শ্মশানের চারপাশ থেকে উঠে এলে
তাকে বলি— ভালোবাসা চলমান গান
বুক ভরে নিতে চায় সবুজ কুঁড়ির আঘ্রাণ
লেখা কি অত সহজ কৌশিক’দা!
লেখা আর না লেখার মাঝে শুয়ে ব্যবছিন্ন মালভূমি, পিডমণ্ট...
ভিক্ষুকের মতো শূন্য মুখ আমার
প্রতারিত সেই শিশুর বাবার অস্থিবাকলের স্বর দেওয়ালে দেওয়ালে
ঘুমন্ত চাঁদোয়ায় মাঝরাত ধরে তোমাকে টেনেছি
শুধু এই এক দড়ি টানাটানি প্রাচীন হরফ জুড়ে
দেখেছি তোমার স্তনের চতুস্পার্শে একটা বহমান নদী
সে নদীর তুষারক্ষরিত জল—
ভেসে যায় পচা-গলা মাছেরা
দূরান্বয়ী সঙ্গম রেখে গেছে প্রেতচ্ছায়া
রেখে গেছে মেঘেদের মাঠ, বিহ্বল পাহাড়
টানা রিক্সা ঠেলে ঠেলে বয়ে চলি কবিতার লাশ
সেই সব লাশের শরীর কাটাছেঁড়া আমারই মতন
ঝপাং করে হেলে পড়ছে কাত হয়ে
কত সামান্য এ বেঁচে থাকা
মরে যাওয়া ন্যারেটিভ কিছু নিষ্ক্রিয় চুম্বক
তোমার সে আঙুলের ফাঁকে ঠাসা টাসা মিথ্যুক দিন
কোথায় পালাব বল জানেমন!
একা মানুষেরা পারে না পালাতে বড়জোর দোতলায়, তিনতলায়
সিগারেটের ধোঁয়া খুলে দিচ্ছে তোমার ইউনিফর্ম
ছাতা ছাড়া বৃষ্টিবিকেলগুলো পথের তামাশা মাখছে
আমি শালা ঠকবাজ, শয়তান
ঠকাচ্ছি বিকল শরীর, আমার
মৃত্যুর মতো সুখকর কিছু আছে নাকি পৃথিবীতে
শক্তি জ্যাঠার স্বপ্ন দেখতে দেখতে মরে যাওয়া
জীবননান্দের থ্যাঁতা হাড়-পাঁজরার গন্ধ
মুখ দিয়ে উঠে আসা দুঃখময় লালস্রোত
এ সব কি কোন স্কিজোফ্রোনিয়া?
ঘাড় হেঁট করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে
মরে যাওয়া ভূতেরা, বাতিল ঘড়ি,চাবির রিং-এর নকশা
সবই রয়েছে ত্রিভূজ-অতিভূজ মার্কা গল্পের টানে
তোমার শরীরের জ্যা কেটে কেটে বানাচ্ছি অরিগ্যামি
জোড়াতাপ্পি পেটকাটি-চাঁদিয়াল
বীর্য শলাকায় জ্বলছে পুরুষের যত কান্না-ক্রোধ ধ্বনি
তুমি যদি প্রশান্তি দাও— নগ্ন করো ঋতু
স্বাধীনতা ভেঙে দাও— দিনযাপনের সেতু
কবিতা তবে আত্মঘাতী— এসে দাঁড়াচ্ছে বাস
যা যা বলেছিলে— ‘মেহেরুন্নেসা’ এ লেখার শবযাত্রা বারোমাস
মরে যেতে যেতে গিরগিটির মতো বেঁচেছি অনেক উঁচু এক মগডালে উঠে
বেঁচেছি তো প্রেমিকার ধর্ষিত হাহাকার নিয়ে
বন্ধুরা চলে আসে; খিল খুলে চলে যায় সবেদাগাছের দিকে...
মাতলামির শেষে পেচ্ছাপের কি ভীষণ আওয়াজ!
রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটায়
আমার যৌনগন্ধী কলসিগুলো নড়েচড়ে সাড়া দুপুর তোমার সাথে
অংক খাতা মিশে যাচ্ছে কুচকাওয়াজে
মেরুন জামার চুমকিগুলো,জড়োয়া ঝুমকো
জীবনটাই তো প্রত্যাখ্যাত নাভির ভিতর খসতে থাকা পলেস্তারা
ধাতু-অধাতু সংজ্ঞাগুলো ফিজিক্স ল্যাবে আত্মহারা
শূন্যতাকে আঁকড়ে ধরে উঠতে চেয়েছি মাঠের মাঝে
বিয়ের সানাই— রংচটা শেষ বসন্তেরা জ্বলছে সাঁঝে
তুমি যখন ঠিক তিনটেয় স্নানের ঘরে,
আমার যেন সর্বনাশা আরশোলা চোখ শুধুই তোমায় কামড়ে ধরে
জবরদস্তি-ধস্তাধস্তি পিঠের নিচে নাবিক জাহাজ
রোজই তোমায় দরজা ঠেলে— সাবান মাখাই
ঘষতে ঘষতে হলদে সোনা: বেরিয়ে পড়ে শস্যদানা
মুখোশবিহীন তোমার ঠোঁটে জমছে কেবল সাবান ফেনা
ঢুকে যাচ্ছি,মিশে যাচ্ছি বুদবুদেতে
একটু পড়েই ডাক পড়বে খাবার টেবিল সাজিয়ে দিয়ে
চুলের পাশে শুচ্ছে দুপুর লেখার খাতা সাজিয়ে নিয়ে
শ্যাম্পু করার সিরসিরানি পায়রা ডানা ঝটপটাচ্ছে
মরুভূমিতে ঝুলতে থাকে বিকেলেগুলো
সূর্য যেন পুনর্জন্ম—
ফিরে আসার জন্য ডোবে,
খাদ্য-খাদক ফড়িং ওড়ে ব্যাঙের মুখে
কোথায় গেলে লেখ্য জীবন ফিরে পাব পাতালবাসর?
স্কুলের ছাদে বসছে পেঁচা মিথুনবাতাস মাথায় নিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে চলে গেছি বহুদূর
তোমার-আমার নিজস্ব এক গ্রাম
মরা ইঁদুরেরা পড়ে থাকে চিৎপাত
স্পর্শ করলে চিবুকে জমছে ঘাম
ভুলের উপর ভুল চেপে যায় সর্বাহারা
মন্ত্রপূত আকাশ-তারা...
আমায় চেনায় নীল ভূ-খণ্ড আতর গন্ধ,মোরগঝুঁটি
আমি হঠাৎ শিবের মতন কামাচারী ব্যার্ঘ্রচর্ম
পরছি খুলছি জিনস-জমা-প্যান্ট... মাথুর বিলাস
সাপের দাঁতে ছোবল মারছে কোন আজানা
বেরিয়ে আসি গোলকধাঁধায় নড়বড়ে সেই বাড়ির উঠোন
আসন পাতল বসতে দিল গল্প করল মুঠো ভরে
শুনতে শুনতে নায়ক হচ্ছি; হেরেও যাচ্ছি বজ্রনাদে
লুডোর ঘুঁটির ছক্কারা আজ পুড়িয়ে মারছে
এসব জিনিস ভাল্লাগে না—
চুপচাপ লোকগুলো আজ অদ্ভুত গাছ হয়ে যায়
আমার সামনে
অনেক রকম গাছগাছালি তাদের পাতাগুলো বেশ দুর্বোধ্য
মনে হয় পড়তে পারি না বৃক্ষশোভন কঙ্কালের ছাই
কারো কবরের পাশে যেন জলে ভেজা আজান পড়ে থাকে—
আমার হঠাৎ হঠাৎ খিদে পায়
খেয়ে নিই ডায়েরির পাতা,বালিশের নিচে রাখা চাঁদ
তুমি আর জ্যোৎস্না সমার্থক আমার কাছে
ধান শালিকের জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া প্রেম
খুঁজছি ক্রমশ পেরেকের কালো গর্তগুলো
যেখানে আজও আশ্চর্যময়ী লাগে তোমাকে
তোমায় দেখলে বেড়ে যায় জল—লবঙ্গতৃষ্ণ
বেড়ে যায় যৌনতার তান, শুঁড়িখানার ক্বাথ
ঘুরে ফিরে আসে শুধু অন্যরকম আশাবরী রাত
নীল-লাল রোদ আমাকে ডরায়
একদিন বসেছিলাম হাঁটু ভেঙে তোমার উপর
মদের গ্লাসে ঢেলেছিলাম চায়নিজ ইঙ্ক
সোনালী জংঘায়,স্তনের নিকটে —খয়েরি আঁশের মতো
তোমার উড়ন্ত রোমকূপ পরদেশী কবিতার খাতা হয়ে যায়
ঢেলে দেওয়া বীর্যেরা কতটা স্বাধীন; পরাধীন
হাতে হাত রেখে জড়িয়ে ধরা ক্লান্ত প্রজাপতি দিন
রোমহর্ষক সময়গুলো কিভাবে যেন বাধাহীন কেটে গেলে
আর তো দেখা হবে না বল কতদিন...
ছুঁতে পারব না তোমার তেজস্ক্রিয়তা
অগণিত নিউটন-প্রোটন হে, মডেল কন্যা
কেন তুমি এসেছিলে ডুবন্ত নাবিকের কাছে?
বলে যাও লাজুকতা —লিখে রেখে যাও চরম স্বীকারোক্তি, ক্ষত
তোমার চক্ষুতারা, জৈব রসায়ন এতদিন নিবিড় পড়েছে আমায়
সাঁতরেছে বানভাসি যুবতীর মতো ভয়াল হাড়গোড়
তারকাটা সাইকেল মুচকি হেসে ফিরে গেছে বাড়ি
ধুয়ে নিলেই ধোওয়া যায় না উজ্জ্বল পললরেখা
এ স্লিপ অ্যাপনিয়া স্বধর্মে বারবার জন্মায়
ইদানিং বড্ড বিরক্তির ছায়া ফুটে ওঠে তোমার স্ক্রিনে
আমাকে সাম্রাজ্য চ্যুত করে তোমরা কী পেলে?
সিজার কি কেঁদে যাবে প্রিয় নারীটির কোলে মাথা রেখে
দীর্ঘ দীর্ঘতর পথের ভিতর... ঘুমপাড়ানি হাওয়া
হাত ধরো টেনে তোলো ঝুরঝুরে চোরাবালি থেকে
অন্তর্জালের গ্রন্থি ছিন্ন করে তুলে ধরো অসামাপ্ত সর্গগুলো
তোমার জিহ্বা, লালা আমার মুখে রেখে যাচ্ছে
হ্যালুসিনেশন রশ্মি অথবা, অ্যাবসিলিউট কবিতা
সেইসব খসড়া খাতা ফেলে দিয়ে
হাঙর মুখো রাতে;
কৌশিক'দা আমি আসছি...
নষ্ট জন্মে বারবার
ফিরে আসছি মেফিস্টোর দেশে।
আগুনের থাবা শ্মশানের চারপাশ থেকে উঠে এলে
উত্তরমুছুনতাকে বলি— ভালোবাসা চলমান গান
বুক ভরে নিতে চায় সবুজ কুঁড়ির আঘ্রাণ
লেখা কি অত সহজ কৌশিক’দা!