এক
গ্রহণ করার মতো মায়া। নিবেশরেখায় অবাক মুকুলিত মল্লিকায় দুলে দুলে বিদেহ চলেছে শূন্য চোখে। কাছে কোথাও নেভা নিঝুম নদীর মৃদু জল। মহুলভল্লে গেঁথে দেবার আগে আলো বেঁকে যাচ্ছে ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে...
বৃষ্টি—বৃষ্টি—কোথায় বৃষ্টি?
বৃষ্টিতে ধুয়ে যেত জানি। বিদেহ মনে রক্ত লেগে আছে গায়ে গায়ে। তুলনামূলক রক্তের গন্ধে মুমূর্ষুর উপর মুখ নামিয়ে আনছে খুব ধীরে ধীরে
নিশাতখড়্গে যোগীর তণুদল।
ঠাহর করে বসে আছি কতদিন, যদি এক লহমায় আকাশে বিদ্যুৎশিখর লাল হতে হতে নীল হতে হতে কাঁপতে কাঁপতে জ্বলতে জ্বলতে নিভে যায়! নিভে যায় সর্পমুখ বাতাসের মধ্যে শব বাহকেরা! রহস্য-উপন্যাসের নিপুণ যবনিকা এদের জন্য নয়। অনেকটা পুরোনো দিনের বাড়ির ঘুলঘুলি থেকে চড়ুইয়ের ডাকের মতো মায়া। এই মায়া লালন-লালিত।
এই মায়া সফল গণহত্যা শেষে পুরোনো শহরের ভিড়ে মিশে যায়। কাঠকয়লায় আঁকা চাঁদ সমস্ত ভেতরসুদ্ধ ধোঁয়া আর বমনের গন্ধে উথলে ওঠে সুদূর কপিলাবস্তু নগরে...
দুই
কী হবে? প্রশ্ন কেন? নিজেই তো চলেছি। যাবতীয় ঘটনা উদাহরণ দৃষ্টান্ত ব্যাখ্যা শেষে নৃমুণ্ড কুমোরের অপার নির্মিতিমালায়। নিজের ধর থেকে মুন্ড এক কোপে বিচ্ছিন্ন করে কলকব্জা রক্ত রোমসুদ্ধ চামড়ার ফাঁস হাতে নেড়েচেড়ে দেখেছি সুজন, কী বিস্ময়!
বিস্ময় শরীরের জ্ঞান। তুরগ ছুটে খেলনা নৌকোগুলো পথের ক্ষণস্থায়ী ঘোলাটে জলে উল্টে পাল্টে ছড়িয়ে আছে, পুনঃপ্রণীত আকাশ উজাড় করে বৃষ্টি দেবে সেই আশায়। অসংখ্য ভাঙনের নৈশ ছড়িয়ে যায় বিষাদের অগ্নিহোত্র নিয়ে।
কী হবে, নিজেই চলেছি পরামিশ্রিত ছায়ায়। রোদ ছড়িয়ে আরও প্রসারিত হয় আরও ঝুঁকে পড়ে চোলাইয়ের গ্লাসে। হাওয়াতে ঝটকা লেগে আটকে রয়েছে দুধের হাহাকার।
টুকরো টুকরো ইটের চাঙড় নিয়ে ছিন্ন মাথাটা গাছে চড়ে ক্রমশ উপরে ওঠে শিশুদের ওষধির খোঁজে...
তিন
রঙের ব্যুহে ভরে ওঠা পলাশের রঙ। পলাশ ডুবে গিয়েও ভেসে ওঠে বালি বাষ্পে ছেয়ে যায় আর দুপুরের রোদে ঘোরে একলা ছেলের মতো পলাশ...
কীভাবে একটা লোক একদিন ভঙ্গিসূত্রে গাছ হয়ে যায়!
পুরনো জলের শব্দে শরীরের কোরক উড়ে গিয়ে বসে পাতায়
বন্ধ ছায়া দীর্ঘতর। ক্রমশ ব্যাপ্ত উৎস, নির্বাক সূচি, বিবেচনাহীন রাশি রাশি শাদা পাখ ফেলে গেছে হাঁস। অপরাধ সব ক্ষমা করে দিও পলাশের মতো
চার
সমস্ত গা ভরে ঢেলে রাখে বিশদ জলের রক্ত।
পিছু হটতে হটতে সংসার পৃথিবীর তুহিন কখন রক্তের ছোট্ট মুখটা আঁকে জানে না দিগ্বলয়ের জমাট শপিংমল। বিক্রয়লব্ধ পণ্য আর মানুষী আছড়ে পড়েছে হাড়ের মুখে। শূন্য হয়ে গেছে মাথাজল আর চোচিন লণ্ঠন
সমস্ত বিক্রয়লব্ধ পণ্য আর রক্তের রং একই ঠিকানার সাথে মিল খায় কিনা দেখতে এসেছে মেয়েটি। বিষণ্ণ উঠোন, বিষণ্ণ ঘামে ভেজা চিবুক, বিষণ্ণ চাঁদের রং ফুরিয়ে যায় গাছে গাছে।
মেয়েটি অবাক অণু—তরঙ্গিণী। এই দেহাতি হাওয়ায় জনবিরল মনখারাপও নামছে কত প্রান্তিক প্রান্ত কর্ণিকার ঘাটে। ভেসে যাওয়া গলিত শবের শিশ্ন মাংস উদর খেতে খেতে সারমেয় জানে না এই অনিশ্চিত স্রোতে ডুবে যাবে কিনা! কত তারিফ বন্দিশ বন্দনায় কত জলীক পাখি, জল থৈ থৈ অনুভূতিময়। অল্প অল্প শিশির পড়ে মেয়েটির ঠোঁটে। দৃশ্য দৃশ্যান্তর ইন্দ্রিয়ের ঘষটানো ভরা ফাগুনের রং জ্বলে যায় তীব্র ঝাঁঝে...
পাঁচ
ক্ষতস্থান অল্প হ'লেও, যখন সংকেতমাত্রই
জল, মাছ, মৃত্যু — যে-ই হও, ঘননীল।
রৌদ্রে নত, ভাবছি এবার হিসেব রাখি পলাশের থোকায়। বুঁদ হওয়া পোকার দল, ওমের গন্ধ
যে-ই হও। অচিন সপ্তগ্রাম কিংবা পূর্ণিমা রঙের জলদানা যেই হও, দিনান্তে ভাতের গন্ধে হিসেবি হাড়হাভাতেরা। ভাবছি এবার তাদেরও হিসেব রাখি।
বৃষ্টি পড়ছে আটচালাতে। বৃষ্টিও সতর্ক। কিঞ্চিৎ তার গ্রীবা। আত্মঘাতী গন্ধ যার সুগন্ধবাহীত, শরীর দেখা যায়। টের পাই হেঁটে আসছে কিঞ্চিৎ লোক। একটা নতুন বউয়ের গন্ধ যে কখনো পেলো না...
সুন্দর কবিতা
উত্তরমুছুন