মধ্যরাত… মতিঝিল-কমলাপুর সংযোগ সড়কে ঘুটঘুটে অন্ধকারে একা হাঁটছি… এমন অন্ধকারে অনেক সময়, যে কোন কুকুর আমার পথ চলার সঙ্গী হয় নতুবা আমার কল্পিত ছায়া… আজ কেউ নেই… কবিতাকেই ভাবছি… ভাবনার মধ্যখানে ধুম করে কুড়িগ্রাম চলে এলো, যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ থাকা সহ নানাবিধ সমস্যার কারণে কুড়িগ্রাম যাওয়া হয়ে উঠছে না… কিন্তু আমার শরীর জুড়ে উত্তরের হিম বাতাস… কবি রাশেদুন্নবী সবুজ’র কবিতা সে বাতাসের সাথে মিশে আমাকে আবেগতাড়িত করে তুললো,
উত্তরে সবুজ পাতার মাঝেকুঁড়ি ফুটে তবু প্রকাশিত নামসে আমার কুড়িগ্রাম![রাশেদুন্নবী সবুজ]
এত স্বল্প কথায় গল্প বলা একমাত্র কবিতাতেই হয়ে ওঠে… প্রাণের যে স্পন্দন কবিতায় খুঁজে পাই, অন্যকোন শিল্প মাধ্যমে এতোটা পাইনা, এ জন্যই আমি কবিতার লোক!কবিতার প্রতিটি শব্দের ভাঁজে-ভাঁজে যে অমৃত সুধা কবি ছড়িয়ে দেন সেটা পান করা মাত্রই পাঠক উম্মাদনায় ভোগে… আজ আমার উম্মাদনার রাত…
কিছুদিন আগে, আমার ছেলেকে ‘সময়’ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছিলাম, ‘বাবা, বর্তমান বলতে কোন কাল নাই! কারণ বর্তমানের একক কে শূন্য(০) ধরে যদি এগিয়ে যাই, তাহলে শূন্যকে ভাঙ্গতে-ভাঙ্গতে শেষ এককে আনলেও তা মুহুর্ত্তে অতীত হয়ে যাবে! অর্থাৎ বর্তমানের স্থিতি একেবারে নাই।’
ছেলে আমার কথা মনে রেখেছে…গত সপ্তাহে ‘Tense’ পড়াচ্ছি… ‘Present Indefinite Tense’ ‘Present Continues Tense’… ছেলে আমার উপর মহা বিরক্ত!
‘বাবা, তুমি বলছিলা, বর্তমান কালের স্থিতি একেবারে নাই, এখন তাহলে বর্তমান কালের এতো ভাগ কেন পড়তে হবে?’
আমি অনেকক্ষণ বাকশূন্য রইলাম! পাশে থেকে আমার সহধর্মিনি আমাকে উদ্ধার করলেন!ছেলেকে তাঁর মা বুঝালেন- ‘যেহেতু আমাদের পাঠ্যসূচী অনুসারে এই বই পড়তে হবে কাজেই যা আছে মনদিয়ে পড়ে নাও’।
আমার পুত্রের কাছে তার মা’র উত্তর মনপুত হলো না সেটা ওর মুখ দেখে বুঝলাম তবে আমি অনেক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেলাম…
উপরের ঘটনা এই কারণে বললাম যে, আমাদের চলমান সময় বড়ই বিরক্তকর…কিছুই বলার নেই, আবার অনেক কথা বলা প্রয়োজন।
জাতিকে মেধাশুন্য করার যত প্রক্রিয়া আছে সকল প্রক্রিয়া চলমান… বলার কিছুই নেই…
মওলায় স্কুল খুলে দিয়েছে…মহা খুশির সংবাদ…তবে নিন্ম আয়ের মানুষ থেকে মধ্য আয়ের জনগণের সন্তানেরা স্কুলে শুধুই কাগজে-কলমে আছে নাকি স্বশরীরে আছে দেখার কেউ নেই। সেদিন দ্যাখলাম বুর্জয়া মিডিয়া দেখাচ্ছে- স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েরা আড্ডা মারছে তার আদ্যপান্ত!স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে না তার আদ্যপান্ত! অথচ কত হাজার-হাজার সন্তান লেখাপড়ার আনন্দ আলো থেকে হারিয়ে গিয়েছে সে খবর অন্তরালে থেকে যাচ্ছে…আশার কথা, দু-একটি পত্রিকা খবর ছেপেছে- ‘ক্লাসে ছাত্রী বলতে আছে শুধু একজন’,বাকিরা ইতিহাস… আর প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থায় রাজনৈতিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রকৃয়া শুরু হবার পর থেকে যে ‘হরিবল’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো তার রেশতো কাটেইনি বরং মওলায় স্কুল খোলার পর আমার ব্যক্তিগত জরিপে যেটা দেখেছি, আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে শিশুশ্রম থেকে শুরু করে ধনীর বাড়ির দুলালের এসিস্টেন্ট কাম গৃহপরিচালিকার সংখ্যা…
জীবন উৎসবের খোঁজে…
অনেক আগে শোনা একটা গল্প বলি, গ্রামের এক সহজ-সরল গৃহকর্তার হঠাৎ শহরে কাজ থাকায় তিনি শহরে চলে গ্যাছেন… এইদিকে গৃহিণী গৃহশূন্য ভেবে অন্যএক পুরুষের শয্যা সঙ্গিনী হলেন…বিধিবাম, গৃহকর্তার শহরের কাজ দ্রুত শেষ হওয়ায় তিনি ঘরে ফিরে এলেন। দরজা খোলায় ছিলো, সামান্য শব্দ করে তিনি ঘরে ঢুঁকে পরলেন… ঘরে ঢুঁকেই তিনি অবাক। এই গরমে গৃহিণী কাঁথা গায়ে শুয়ে আছেন। গৃহকর্তা গৃহিণী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিগো! এই গরমে গায়ে কাঁথা দিয়ে কাঁপছ কেন?’
গৃহিণী ভয়ে কাঁপতে- কাঁপতে বললেন- ‘হঠাৎ করে জ্বর এসেছে…’
গৃহকর্তা অস্থির হয়ে আদরের বউয়ের পায়ের কাছে বসে পায়ে হাত দিয়ে জ্বর মাপার চেষ্টা করতে গিয়ে আরো অবাক হলেন, জিজ্ঞাসা করলেন- ‘চারটা পা কেন?’
গৃহিণী এবার ভীষণরকম কাঁপতে- কাঁপতে বললেন- ‘আমার দুইটা পা, জ্বরের দুইটা পা’।
সহজ-সরল গৃহকর্তা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেন- ‘আহারে! আমার কতবার জ্বর হলো কিন্তু জ্বরের পা দেখা হলো না, বউয়ের বদৌলতে সেটা দেখতে পেলাম’।
এমন সহজ-সরল মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা…এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য এতো সহজ মানুষ আমরা আর চাইও না। কিন্তু বাঙালির রক্তে-রন্ধে যে সহজতার-সরলতার বীজ বোনা ছিল, তা আজো বিদ্যমান। নতুবা সত্য-সুন্দর আশ্রিত সবকিছু ধুয়েমুছে বঙ্গপোসাগরে চলে যাচ্ছে তবুও এ জাতি নীরবে চলছে তো চলছেই…! আবার ইতিহাস কয়, বাঙালি বীরের জাতি তাই আশায় বুক বাধি…সত্য-সুন্দর আসিবে নিশ্চই…
ভাই, একবার বললেন বাঙালি সহজসরল আবার বললেন বীরের জাতি, কোনটা সঠিক?
উত্তরমুছুনমধ্যম মানের রচনা৷ অত ভাল লাগল না
উত্তরমুছুনপ্রচলিত ধাচের। লিখে যান ভাই।
উত্তরমুছুন