কবি, কথাসাহিত্যিক, লিটলম্যাগ সম্পাদকের মুখোমুখি হবার বিশেষ বিভাগ ‘দশকথা’। দশটি প্রশ্ন বনাম দশটি উত্তর। আপাতভাবে সংক্ষিপ্ত এই সাক্ষাৎকার সিরিজ আশা করি পাঠকের ভালো লাগবে। আজ এই বিভাগে বিন্দুর মুখোমুখি হলেন কবি ও চিত্রশিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য।
১। আপনার প্রথম লেখা কবে এবং কীভাবে?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: আমার প্রথম লেখা কবে, আর কীভাবে ভুলে গিয়েছি। সেটা খুবই ছোটবেলায় হতে পারে। আর ৬/৭ বছর বয়সে হবে হয়ত। প্রথম লেখা ছাপা হওয়ার কথা মনে আমি একটা ৪৪ লাইনের পদ্য লিখেছিলাম, অন্ত্যমিল দিয়ে। পদ্যের বিষয় মা। প্রথম লাইন এমন—‘মা নাই যার...’। সেটা লিখেছিলাম ৮ বছর বয়সে, গেলো শতাব্দীর ১৯৮৯ সালে। এই ঘটনা মনে থাকার কারণ বাবা আমার কাছ থেকে ওটা নিয়ে স্থানীয় একটা কাগজ মানে একটা মাসিক সাহিত্য পত্রিকায় ছাপিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। ওই জাতীয় পদ্যকে যদি কবিতার আত্মীয় ধরেন, তবে আমার শুরু।
২। কবিতা আপনার কাছে কী?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: কবিতা আমার কাছে দৈনন্দিন কাজকর্মের মতোই ব্যাপার যেমন ঘুম, স্নান, খাওয়া, বাজারে যাওয়া ইত্যাদি। ধ্যান বা প্রত্যাদেশ এই জাতীয় কিছু আমি কবিতাকে মনে করি না।
৩। কবিতা মানুষকে কী দিতে পারে?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: কবিতা মানুষকে কিছুই দিতে পারে না, দিতে চায়ও না। তবে মানুষ চাইলে বা নিতে জানলে কবিতা থেকে অনেককিছুই নিতে পারে।
৪। আপনার কবিতা লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি৷ ভাবনা থেকে সৃজন পর্যায়ে নিয়ে যেতে কী করেন?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: যেকোনো অবস্থাতেই আমার মাথায় কবিতা আসতে পারে। তার জন্যে বিশেষ কোনো ক্ষণের দরকার হয় না। প্রথম লাইনটা হঠাৎই আসে মাথায়, তারপর পরের লাইনগুলি তৈরি হয় প্রথম লাইনটাকে ঘিরে।
৫। আপনার লেখার অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: আমার লেখার অনুপ্রেরণা মূলত নারী-প্রেম। তারপর মানবিক যাতনা।
৬। আপনার উত্থান সময়ের গল্প বলুন৷ সে সময়ের বন্ধু, শত্রু, নিন্দুক, সমালোচক— এসব কীভাবে সামলেছিলেন?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: আমি কোনো কবি বা লেখক, কিছুই নই, বা হতে পারিনি, তবে হওয়ার যে বাসনা তা লালন করে চলেছি চিরদিন। তাই আমার উত্থান-পতন কিছুই ছিলো না, নাই। আমি কখনো কোনো প্রতিযোগিতায় যাই নাই। লাইনে দাঁড়াই নাই। কোনো সম্পাদকের সঙ্গে লেখা ছাপানোর জন্যে খাতির জমাই নাই। তেমন কোনো আড্ডায় বা মঞ্চে যাই নাই। টেলিভিশনে যাই নাই। পুরস্কার নিই নাই। কারো কাছে কোনো সুবিধা গ্রহণ করি নাই। তাই আমাকে ওই অর্থে কিছুই সামলাতে হয় নাই। তাও যা এসেছে তাকে পাত্তা দিই নাই। কারণ কারো কাছে আমার চাওয়া পাওয়া বা হারাবার কিছু নাই।
৭। সাহিত্য দিয়ে কেউ দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চায়, কেউ স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে চায়, কেউ সন্ত্রাস–মৌলবাদ ঠেকাতে চায়, আরো নানাকিছু করতে চায়। আপনি কী করতে চান?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: আমার কাছে সাহিত্য বন্দুকও নয়, সাহিত্য তাবিজও নয়। তাই আমি সাহিত্য দিয়ে কিছুই ঠেকাতে চাই না। সাহিত্য হলো সুন্দর, যা নির্মিত হলে পাশের অসুন্দর ধসে পড়ে বা বেকার হয়ে যায়। আমি তাই সুন্দর সৃষ্টি করতে চাই।
৮। যে জীবন আপনি এত বছর যাপন করলেন, তা আপনাকে আলটিমেটলি কী শিক্ষা দিলো?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: জীবন যে শিক্ষা দিয়েছে তা হলো, জীবন আসলে যাপনের ব্যাপার নয়, জীবন উদযাপনের ব্যাপার। জীবনকে উদযাপন করতে পারলেই কেবল জীবনের অর্থ তৈরি হয়।
৯। করোনা তথা মহামারী আপনার লেখালিখিতে কোনো প্রভাব রেখেছে কি?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: না। আমার কাছে পৃথিবী হচ্ছে শুরু থেকেই মহামারির দেশ। নানা প্রকার মহামারি একটার পর একটা চলতে থাকে। তাই এইসব আমাকে কাটতে পারে না।
১০। পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: আমি কখনো কিছু জানার জন্যে পড়ি নাই। আমি বরাবরই আনন্দ লাভের জন্যে পড়েছি। আর কবিতা পড়ে কবিতার অর্থ বুঝতেও যাইনি কখনো। কারণ কবিতা ধাঁধা নয়, কিংবা অর্থকরী ফসলও নয়। কবিতা হলো মায়া। মায়ায় ভুলতে হয়, ডুবে যেতে হয়।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য।
জন্ম : ২৪ আগস্ট ১৯৮১, চকরিয়া, কক্সবাজার, বাঙলাদেশ। লেখালেখি আর ছবি আঁকাই মূল কাজ। পড়াশোনা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রকলায় স্নাতকোত্তর । বইয়ের সংখ্যা: ১৬ টি।
প্রকাশিত বই:
পাখি ও পাপ (২০১১, কবিতা)
শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় (২০১১, মুক্তগদ্য)
ডুবোজ্বর (২০১২, গল্প)
কাপালিকের চোখের রং (২০১৩, কবিতা)
পুরুষপাখি (২০১৪, মুক্তগদ্য)
আরজ আলী : আলো-আঁধারির পরিব্রাজক (২০১৫, প্রবন্ধ)
মহিষের হাসি (২০১৫, কবিতা)
রাজহাঁস যেভাবে মাছ হয় (২০১৬, গল্প)
আকাশ ফুরিয়ে যায় (২০১৭, মুক্তগদ্য)
হুহুপাখি আমার প্রাণরাক্ষস (২০১৭, কবিতা)
উদ্ভিদ ও বৃন্দাবনী (২০১৯, কবিতা)
কুসুমকুমার (২০১৯, মুক্তগদ্য)
ফুলের অসুখ (২০২০, গল্প)
কবিতালেখকের জার্নাল (২০২০, মুক্তগদ্য)
আমি ও গেওর্গে আব্বাস (২০২০, মুক্তগদ্য)
বনভাঙা গান (২০২১, স্মৃতি-আখ্যান)
দারুণ কথা বলেছেন কবি৷ পছন্দ হয়েছে৷
উত্তরমুছুন