সারাদিন বইসা থাকি। আর খাই। আর ডাকাডাকি করি। সেক্সের জন্য পার্টনার খুঁজি। সুরেলা ডাকে তাহাদের খুঁজি। তাহারা আমার ডাকে দেয় না তো সাড়া। তবু ডাকি। তাছাড়া আমার কোনো কামকাজ নাই। মানুষের জীবনের তো কত মহৎ উদ্দেশ্য থাকে। মাগার আমার জিন্দেগীতে কোনো এইম নাই। এইমলেস হওয়াটা অবশ্য এই জমানায় ফ্যাশন হয়া গেছে। কেউ যদি নিজেরে এইমলেস ডিক্লেয়ার করে ফেলে, তাহলেই সে হয়া যায় মোটিভেশান স্পিকার। মাগার আমি তো স্পিকারও হইতে পারবো না। কারণ মানুষ যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষা আমি তো কইতে পারি না। আর আমি যে ভাষায় ডাকাডাকি করি, সেই ভাষা মানুষ বোঝে না। আমার জন্ম কেমনে হইছে? বলতে পারবো না। তবে মরণ কেমনে হইবো, তা আমি প্রতিদিন চোখের সামনে দেখি।
তবে সারাদিন আমার যেহেতু কোনো কাজ কাম নাই, তাই ভাবা প্র্যাকটিশ করাই আমার একমাত্র কাজ হয়া গেছে। এই প্রকান্ড বাজারটাতে বইসা বইসা নানান কিসিমের মানুষ দেখি। কত খানকি আসে আর কত যে ভদ্দরলোক আসে এই বাজারে; তার কোনো হিসাব নিকাশ নাই। খানকিগুলার পাছা অপুষ্ট। তবে ভদ্দরলোকগুলার পাছাগুলা অমায়িক। পোল্ট্রি মুরগির মতো নাদুসনুদুস। বাজারে তেনারা বেসাতি করতে আসেন। কেউ কেনে আর কেউ বেচে। দৃশ্যগুলা অমায়িক। কত ভদ্দরলোকরে দেখলাম ভিড়ের মধ্যে আচানক কোনো খানকির পাছায় হাত বুলায়া দিতে। এগুলা প্রতিদিনই হয়। খানকিগুলা অবশ্য তেমন কিছু বলার সাহস পায় না। চুপচাপ সহ্য করে। আমি বুঝি না ওরা এইরকম করে কেন?
তো এই বিরাট অনন্ত বাজারে আলু বিক্রি হয়। বিক্রি হয় বেগুন আর সরিষার তেল। সরিষার তেল ছাড়াও আরো বহুত তেলের প্রকারভেদ আছে। সেগুলাও বিক্রি হয়। মগজের দাম এইখানে খুব কম। মগজ তো মানুষ কিনতেই চায় না। মুরগির মগজগুলা ফেলানোই হয়। এইখানে দামী জিনিস হইলো হাড্ডিছাড়া গোস্ত। এইটার বিশাল ডিমান্ড। আরেকটা জিনিসের ডিমান্ড আছে। সেইটা হইলো আইডিওলজি। আর আইডিওলজি'র অপর নাম গড। এই গডের অফুরন্ত ক্ষমতা! গডের বিশাল ডিমান্ড আছে বাজারে। তার নামেই বেচাবিক্রি চলে আরকি।
আমি এই বাজারটায় ২১ দিন হইলো আসছি। আমার পাছা অপুষ্ট বইলা কেউ আমারে পুছে না। যাদের সাথে এই বাজারে আমি আসছিলাম তারা কেউই আর বর্তমান নাই। শুধু একজন আছেন। তিনি আমার মালিক। আমার জানমালের একমাত্র অধিকারী। তিনি খুব সুন্দর কইরা গলা কাটেন। বিসমিল্লাহ বইলা এক পোঁচে কামিয়াবি হাসিল করেন। মানুষের ভাষা খুব কঠিন একটা জিনিস। এরা বলে আই লাভ চিকেন। কিন্তু আসলে এরা বলতে চায় চিকেন খায়া আমার বেধড়ক আনন্দ হয়। এইরকম ডাবল মিনিং মনুষ্য বাজারে প্রচলিত আছে। ২১ দিনের অভিজ্ঞতায় আমি দেখছি এগুলা। মানুষেরা পলিটিক্স করে। এই পলিটিক্স জিনিসটা মজার। টাউট বাটপারি করাকেই এরা পলিটিক্স বলে। যেমন এই বাংলাদেশের বাজারে পাকিস্তানি কক খুবই জনপ্রিয়। শ'য়ে শ'য়ে হাজারে হাজারে কোটিতে কোটিতে পাকিস্তানের কক বেচা হয় এই বাজারে। তবে বাঙালিগুলার বিরাট অংশ মানুষ পাকিস্তানরে লাইক করে না। কিন্তু আবার এইরকম নজিরও আছে যারা পাকিস্তানের ক্রিকেটার আফ্রিদিরে বিবাহ করতে চায়। পুরাই গুবলেট একটা অবস্থা। মানুষরে বুঝতে পারা কঠিন বিষয়। তার থেকে আমাদের মুরগি-জীবন সহজ। অন্তত এত প্যাচগোছ নাই। জন্ম নিব এবং মইরা যাবো। মানুষগুলা খায়া ফেলবে আমাদের। যেইরকম কইরা আমার ভাই ব্রাদারগুলারে খাইছে সেইভাবেই।
আজকের দিনটা খুবই ঝলমলে। পাক-পবিত্র। সুবেহ-সাদিকের পর থেকেই বাজার স্বর-গরম। মানুষজন ভিড় করে হাড্ডি-ছাড়া গোস্ত কিনতেছে। ১০০০ কেজির একটা বিরাটকায় নিরিহ গৃহপালিত জন্তু জবেহ হইছে বাজারে। মগজ বাদে সবই মানুষ কেনার জন্য দাঁড়ায়া আছে। দোকানের মালিকগুলা ভিড় কমাইতেই পারতেছে না। বাচ্চাগুলা খালি চিল্লাপাল্লা করতেছে। সমীক্ষা করে দেখলাম, আজকে বাজারে শসা আর বেগুনের দাম চড়া। তাই মানুষ গোস্তই বেশি করে কিনতেছে। আর কিনতেছে আলু।
অনেকক্ষণ যাবত একটা ভদ্রলোক আমার দিকে তাকায়া আছে। লোকটা লাল টিপ আর শাদা শঙ্খের চুড়ি পরা। লোকটারে দেখে মনে হইতেছে, সে কনফিউজড। মেবি আমার অপুষ্ট পাছা লোকটারে কনফিউশানে ফেলে দিছে। লোকটা আস্তে আস্তে দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো।
মালিক বললেন, কী লাগবো বউদি বলেন? পাকিস্তানি কক দিব? নাকি পোল্ট্রি?
বউদি বললেন, নাহ পাকিস্তানি ককে মজা নাই। পোল্ট্রিও কেমন প্লাস্টিকের মতো হয়ে গেছে।
মালিক বললেন, তাইলে দেশি দেই? ৫ কেজি?
বউদি বললেন, ওরে বাবা! এত নিয়ে কী করবো? মানুষ তো আমি একা। তার থেকে আপনি ঐ ককটা মেপে দেখেন তো কত কোজি হয়? আর আমার কক'টার চামড়া কিন্তু ছিলায়া দিতে হবে।
মালিক আমারে ঘাড়ে ধইরা মেশিনে বসাইলো। আমি তো ইশারা দেখেই বুঝতে পারছিলাম।কিন্তু বুঝতে পারলেই তো আর হয় না। আমাদের জীবনের মূল্য আর কত! মনুষ্য জীবনে পলিটিক্স আছে, মুরগি-জীবনে তো নাই। তাই মুরগির কোনো সোস্যাল রাইটও নাই। আমরা তো ভোট দেই না। আমাদের জাতিসংঘও দেখে না। আমাদের মানবাধিকারও নাই।
মন্তব্য