০১.
প্রশস্ত এক স্বপ্নের মধ্যে একটা হাতের দেখা পাওয়া।কোনো কঙ্কাল নয়। তবে একটি শুকনো কালো হাত। লালচে হয়ে যাওয়া নখ। পেশীগুলি উন্মুক্ত হয়ে গেছে এবং হাড়ের উপরে পুরনো রক্তের চিহ্ন রয়েছে, যা একে আরো স্বপ্নিল করে তুলেছে। আর স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল কুড়াল দিয়ে কেটে নেয়া বর্গক্ষেত্রের চিহ্ন। আর এটা দেখে মনে হলো জন্তু-জানোয়ারের হাত নয়। এটা একটা মানুষের হাত।
হাতের স্পর্শ লাগতেই অ্যানাটমির ত্বকীয় অংশগুলো ভীষণ বর্বরতার দৃশ্যের মতো করে বের হতে লাগলো। পেটের ভেতর নাড়িভুড়ি মোচড় দিয়ে যেই বের হবে, তখনই কুকুর আর একজন গার্ড চিৎকার করতে করতে দৌড়ে এগিয়ে এসে গোলগোল চোখ করে আবারো শূন্যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। স্বপ্নের মধ্যে না বাস্তবের গোলকধাঁধা। কার মধ্যে আছি?
গার্ড বলতে লাগলো, আরে এই মৃত ব্যক্তি কখনও কারও সাথে কথা বলে নি। কখনও গাছের কাছে যায় নি এবং প্রতিদিন সকালে সে নিজের ফুসফুসের অংশগুলো টুকরো টুকরো করে নিজের হাতে খেয়ে নিতো।
: তুমি কি এখানে নতুন!
০২.
চোখ থেকে অবিন্যস্ত এক দীর্ঘ দীঘল বিন্যাস এলিয়েছে। শরীরের কাঠামোর কোয়ার্ক কণার মাঝখানে দাগ দিয়ে বলা জন্ম থেকেই আমরা পাগল ও মুর্খ।হালকা ফুলের একটা বাউণ্ডুলে ছাপ। চিকন ডোরাকাটা দাগে নির্ঘাত পাগলামোর হাসি। পদক্ষেপের প্রতিটি আওয়াজ সুগোল চোখের কোটরের ভেতর আগুন ঝরিয়ে শীতল সাপের মতো শান্ত। এখানে মনে হয় রাস্তাটা কেমন যেন বেশি শান্ত। ধীর গতি। সামনে দাড়িয়ে ভীষণ তর্কাতর্কি করছিল, সুন্দরী মেয়েটার সাথে। বিরক্ত হয়ে তর্ক শুনছিলাম।
মেয়েটার চোখে চোখ নামালাম।যদিও চেখ সরাতে কষ্ট হচ্ছিল। তবু সে আমাকে একটা শব্দ বেছে নিতে বললো। কোনো প্রতিবাদ না করে বাচ্চা ছেলের মতো তার কথা মেনে নিয়ে একটা শব্দ বেছে নিলাম। হাত।
মেয়েটির টোল খাওয়া মুখের আর চেখের তরল রঙ কেমন যেন ঝিলিক দিচ্ছিল।
আপনি সেই মানুষ যে হাত শব্দ পছন্দ করলেন।সে নিখুঁত এক ছোঁয়ায় ভ্যান গঁগের মতো করে হাতের একটা স্কেচ আঁকলো। আর যখন রেখার বুননে টান দিয়ে তৈরি করছিল নিজে নিজের মতো ভাঙতে লাগলাম।
একগাল হেসে ব্রিটনি স্পিয়ার্সের মাদকতার মতো তীব্র এক আগুনের দিনে, আপনি হাত শব্দ পছন্দ করেছেন। আর এই সেই হাতের অংশ। অবাক হয়ে দেখলাম শুকনো সেই কালো হাত। কিছু বলতে গেলাম।তখনি তীব্র এক শব্দ। না ভুলই মনে হলো। অনেকগুলো শব্দ মিলেমিশে বধির করে দিলো। ছু্ঁতে গেলাম। প্রতিবিম্বের ফ্যাকাসে টোনে মিলিয়ে যেতেই, ফুসফুসের অংশ হাতের টুকরো টুকরো অংশে মিশে গেছে। তখনই সামনে কাঁচের একটা দেয়ালের ওপর ছায়াকন্ঠ ভয়ের গান গাইছে।
০৩.
এলোমেলো রেখায় গরম কাঠে বিদ্ধ। অর্পিত এক মানুষের মুখে আলো পড়লে ঝিলিক দেয়। ঘুমের আগলে পাথরের শব্দে মৃতদের সাথে খেলা করি। আগুনের তাপ নেই স্তব্ধতার ধারাবিবরণীর মতো রহস্য সময় ছায়ার টানে চৌকি নিয়ে বসা। ঠিক মাঝখানে আলো জ্বলছে। কাবুল দখল হলে ভয়ে মানুষ যেমন দৌঁড়ায় রানওয়ের দিকে। মানুষের অবশ শরীর লেপ্টে থাকে ল্যান্ডিং গিয়ারে। বহন করার চেষ্টা করি।
বেগুনি ভাজছে একজন। মাঝখানে রূপকথার মাটির গভীর থেকে জেগে ওঠে আত্মা। শয়তান পিয়ানোবাদকের পিয়ানো বাজানো শুনি আর ভাবি। শালা জিও পলিটিক্সের খপ্পরে আমরা সবাই। দূরে মেহগনি গাছ।
একা।
পায়চারি পাখির চোখের মনি বিছিন্ন করতে করতে। হাসতে হাসতে মেয়েরা ঢলে পড়ে। ধাক্কা খেলাম।তারপর দৌড়াই।প্রতিদিন পৃথিবীর পাতা, ক্যালকুলাসের বিন্যস্ত বিন্যাস, হাইজেনবার্গের কি এক অনিশ্চয়তার টান। যোনির নিচে,স্তনের ভাঁজে, লোমশ শরীরের ঘামে মাদকতার টান। কাশতে কাশতে ভেতর থেকে নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসে। সঙ্গমের সময় মেহগনি ধরাছোঁয়ার কবিতা লেখার নাম করে টুক করে হাত ধরে। কেঁপে ওঠে শরীর। আলোরা পাশ থেকে নিভে যায় এক এক করে।
মৃত হাত তার টেনে নিয়ে চলার ক্ষমতা থাকার কথা নেই। তাহলে সেও টেনে নিয়ে চলে। সাব- কনসাস।
নির্ভেজাল এক পাথরের ওপর ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ।শুধু সেই সুন্দরীর হাসির শব্দ।চারপাশে আগুনের মাঝে মায়াবী এক প্রত্যাবর্তন।আপাতত মৃত সেই হাত এখন আমার সঙ্গী। শামুকের খোলসের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে সূর্যের রঙ। গিলে খেয়ে নিচ্ছে শূন্যতা। মৃত হাত আর ঈশ্বরের চোখ মুখোমুখি। ঈশ্বরের চোখ নেমে আসে বিলুপ্ত পিয়ানোর সামনে।
পুনশ্চ: শামুকের খোলসের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে সূর্যের রঙ।
বাহ্ গল্প ভাল লেগেছে৷
উত্তরমুছুন