প্রলাপ
উড়ো—উড়ো—
উড়ে যাও।
তোমার ডানায় পুরাতন রবিন হুডের রাষ্ট্রনীতি লেখা আছে?
ডানা একদিন থাকবে না, থাকে না কখনো—
ডানা তার রূপ পাল্টায়, আমারও মুখের রূপ ডানার মতো!
আমি একদিন তুমি হয়ে যাবো।
বড়—বেশি বড়—
আরও অনেক বড় হও।
দুলাল কাকার দোকানে কেয়ামতের গল্পটাই আমার কাছে সত্য ইতিহাস!
ইতিহাস একদিন থাকবে না, থাকে না কখনো—
ইতিহাস তার রূপ পাল্টায়, নাগ নাগিনীর সিনেমা এখন কি আর হয়?
তোমারটা একদিন আমার হবে।
খেলো—খেলতে থাকো—
খেলাইতে থাকো যতো পারো।
বক্সের ভেতর তোমার ব্রয়লার প্রজন্ম বাড়ছে!
অনেক আগে সিন্দাবাদ আসতো, এখন আর কেউ আসে না—
দুধ খেয়ে বড় হয়েছি, মগজে পিকাসো মাঝে মাঝে বিশ্বাস করায়
তোমাদেরটা একদিন আমাদের হবে।
আয়না এবং আমি
দ্যাখো!
তোমাকে বোধয় আর কক্ষনো ছোঁয়া হবে না আমার।
তোমার কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আমার ইন্দ্রিয় ওঁম হবে না—
চুলের ফাঁকে যদিও এমনি করেই নাকের ঘ্রাণ শুঁকি—কিন্তু তাতে কী?
কি-ই বা হবে তোমার গালের নরম মাংসে আমার আঙ্গুল দিলে?
চুলগুলো তোমার মুখের আদল ঢাকলে—
হয়তো এখন আর আমার হাত পকেট থেকে বের হতে চাইবে না।
প্রেমের শুঁকনো রসের গন্ধ—চারপাশে ভীষণ অসহ্য লাগবে মনে হয়।
তোমার ঠোঁটের গন্ধ আর নিতে ইচ্ছে করে না ইদানীং।
দ্যাখো!
তোমাকে বোধহয় আর কক্ষনো ছুঁতে পারবো না আমি।
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে অনবরত মিথ্যে গণিত কেমন জানি গুলিয়ে যাবে মনে হচ্ছে—
কথার ছলে তোমার হাসিগুলো সত্যি সত্যি মনে হয়—কিন্তু তাতে কী?
কেন-ই বা তোমার চোখের ভ্রু কুঁচকালে আমার ঠোঁটে ঠাণ্ডা লাগে?
গলায় ওই রুপোর চেইনটা নিয়ে খেলতে খেলতে—
হয়তো তোমার গলায় একটা চুমু খাওয়া হবে না কোনদিন।
প্রেমের শ্যাওলার সবুজ—পায়ের নিচে খুব পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে।
তোমার বুকের গরম আর পেতে ইচ্ছে করে না ইদানীং।
ত্বরণ
আচ্ছা তোমার জমি আছে?
আ......রে বাবা
তোমার নিজের না হলেও চলবে!
বলছিলাম, স্বাধীনভাবে থাকার মতো একটা জায়গা আছে তো?
নেই! না?
যাই হোক!
তো যে কাজটা করছ
সেই কাজের মাইনে-টাইনে দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু থাকবে তো?
ঠিক জানো না?
মানেটা কি? আরে বাবা বলছিলাম তোমার কাজ-কামের কোন সঞ্চয়-টঞ্চয় হয় কি না?
ঠিক জানো না?
বাহ! বেশ বেশ
তোমার মামা অবশ্য বলেছেন আমায়!
তুমি গ্রাজুয়েশন টা কমপ্লিট করো নি।
তাহলে তো প্রফেশন চেঞ্জের তেমন কোন অপশনও নাই।
আচ্ছা কোন বিজনেস করার প্ল্যান আছে না কি তোমার?
না... মানে থাকে না? অনেকেই তো বিজনেস করছে!
তাই না?
ওহ আছা আছা!
তোমাকে দিয়ে তো আবার বিজনেস হবে না।
কিন্তু যতদূর শুনেছি!
তোমার নাকি অংকে বেশ দখল ছিল!
কী? কী বলছ?
জীবনের গণিত আমাদের সিলেবাসে থাকে না?
হ্যাঁ হ্যাঁ! কী যে বল না!
বোকা ছেলে!
জন্মের আগে থেকে মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত গণিতের দখলে!
আর তুমি নাকি বলছ গণিত আমাদের সিলেবাসেই নেই।
পাগল–টাগল হলে না কি?
আচ্ছা বাদ দাও!
তুমি অন্তত আমায় একটা ব্যাপার কনফার্ম করো—
তোমার কি কোন প্রডাকটিভ প্ল্যান আছে?
মানে জীবনে এমন কিছু করার ইচ্ছে আছে কি না
যেটা দিয়ে অন্তত খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারবে।
ওরে বাবা! এটারও ঠিক ঠিকানা নেই?
তাহলে বাবা! আমায় মাফ করো!
আমি তোমায়, আমার মেয়ে দিতে পারবো না!
দরোজার পাশের নীল ওড়না
মুছে যাক, আকাশের সাথে টেক্কা দেয়া উঁচু স্বপ্নের ভিত
স্বপ্নের পেছনে জমে থাকা, ঈশ্বর হওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে যাক।
কিছুক্ষন আগে অংকের ওজন নিতে না পারায়
কলা পাতার সবুজ রঙ গলে গিয়ে শিশিরের জল হয়ে গড়িয়ে পরেছে মাটিতে,
গনি চাচার মতে—
ইহা পৃথিবীর পাপের ফল।
আমাদের শঙ্কা অনেকটাই পাকাপোক্ত!
বিশেষ সূত্রে পাওয়া তথ্যে—
আগামী কাল যে ছেলেটি আত্মহত্যা করবে
সে
একদিন স্বপ্ন দেখতো!
সে
একদিন তর্ক করতো!
সে
একদিন যুদ্ধ করতো!
কাঁচের বোতলে গাছের শেকড় বাড়ে— বোতলের জল কালো হয়ে যায়।
গনি চাচার মতে—
ইহা পৃথিবীর মনের ভুল।
বাতাসের জন্ম আমার পেট থেকে
যদি প্রলেপের কোন সরল অংক থাকে
তবে মাধবীর কপালের সিঁদুরের রঙ একদম মানান সই!
ওই রঙে আমার কোন আপত্তি ছিল কোনদিনই—
কারন প্রেমের তো আর কোন রঙ হয় না
আর রঙহীন আবরনের ছবি প্রায় শূন্যের মতো।
প্রলেপ যদি শূন্য হয়, তাহলে তার আবার রঙ কীসের?
যদি প্রলেপের কোন প্রতিষ্ঠান থাকে
তবে শ্রীনগরের বেশ্যাখানাই সঠিক পাঠাগার!
পড়ুয়া হওয়ার পেছনে আমার ন্যুন্যতম আগ্রহ ছিল না কোনদিনই—
কারণ সব কিছুর সাথে সাথে বর্ণমালাটাও বেঈমানি করে বসে
কারণ বিশ্বাসের আর কোন প্রতিশব্দ আমার জানা নেই।
তাহলে বই যদি শব্দহীনতায় ভোগে, তাহলে আমার মূর্খতায় অভিযোগ কীসের?
যদি প্রলেপের কোন পোশাক থাকে
তবে মুখ ঢেকে ধর্ম হত্যায় আমার মত আছে!
উলঙ্গ কিংবা শাড়িতে মোড়ানো শরীর, আমায় সমান ভাবায়—
কারণ মাংসের পোশাক অথবা ত্বকের পোশাক
কেউই মন চেনায় না।
তাহলে আর আমার বোকামিতে তোমাদের এতো চিন্তা কীসের?
সরল গল্প
রাস্তার পাশে ফুটপাতে যে ছেলেটি মাথা নামিয়ে বসে আছে
ওর আজ একটাও বেলুন বিক্রি হয় নাই।
খেলনা বেলুন
বাচ্চারা যে রঙ্গিন বেলুন নিয়ে বাসায় খেলা করে
যে বেলুনে অনেক বাতাস থাকে
বেঁচে থাকার বাতাস
সেই বাতাস আজ বিক্রি হয় নি।
ছেলেটার বাড়ি একটা বস্তিতে
ঘরে মা আছে
ছোট একটা বোন আছে।
মা অন্যের বাসায় রান্না করার কাজ করে
এক কথায় কাজের বুয়া বলতে পারেন।
মহিলা প্রায়ই খুব ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরেন!
কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলেন
কী আর কমু! স্যারের আর স্যারের দুই ছেলের সব কাজ করেই বাসায় ফিরতে হয়।
ম্যাডাম তো আর সবসময় বাসায় থাকেন না।
মায়ের এমন কথা শুনে ছেলেটিও কষ্ট পেত।
আর ছোট বোনটা মাত্র ১০ কি ১১ বছরের হবে।
বস্তির ইস্কুলে নাকি একজন মাষ্টার তাকে খালি ব্যথা দেয়।
কিছু জিজ্ঞেস করলে, থতমত করে কেঁদে ফেলে।
বোনের এমন কান্না শুনে ছেলেটি মনে কষ্ট পায়।
—ইস্ যদি বোনটারে একটা ভালো ইস্কুলে ভর্তি করাইতে পারতাম।
রাত হয়ে গেছে
ছেলেটি হাঁটছে। বস্তির কাছাকাছি চলে এসেছে প্রায়
হঠাৎ বস্তির মুখে ছেলেটি দুটো লাশ পায়।
লাশের গায়ের কাপড়গুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
পাশে ডাস্টবিন। একটা কুকুর মাঝে মাঝে চিৎকার দিচ্ছে।
লাশদুটো দেখে ছেলেটিও একটা চিৎকার দিলো।
নস্টালজিক
স্পর্শ করছি তোমার সবুজের আড়ালে লাল রঙের দীঘি
ঠাণ্ডা জলের মিষ্টি বাতাস তোমার পণ্যের থেকেও দামি মনে হয়
প্রেমের একমুঠো ঘাম
স্মৃতির দীর্ঘ রেখা
রাস্তার সাদা কাব্য
উঁচু দেয়ালের গন্ধ
আরও যে কতো কিছু!
স্পর্শ করছি তোমার আঁচল তলে হারিয়ে যাওয়া ফড়িং
গরম নিঃশ্বাসের আঁচে ভেসে থাকা শিশির বিন্দু খুব দামি মনে হয়
ধানের মাঠে খেলার পিচ
মার্বেলের ভেতর আরেকটি পৃথিবী
বটতলায় নাগরদোলা
আরও যে কতো কিছু!
স্পর্শ করছি তোমার বৃষ্টির শহরে লুকিয়ে রাখা আরেক তুমি
নরম ঠোঁটে বেঁয়ে যাওয়া নিকোটিন ইটের ভাঁটার থেকেও দামি মনে হয়
শাপলার গায়ে জড়িয়ে থাকা সাদা
খোলা মাঠে উত্তপ্ত রোদের ডাক
বেদের মেয়ের কোমরে থাকা শিশু
কিংবা
আরও যে কতো কিছু!
সত্য বচন
হেরে যাই— প্রতিবার , প্রতিদিন!
রাতের শেষে আরেকটি সময় দাঁড়িয়ে থাকে আয়নার সামনে
আমার মতো একজন শরীর
প্রতিদিন, প্রতিবার—
আমাকে একটি করে হারিয়ে যাওয়ার গল্প শোনায়!
মরে যাই— প্রতিবার, প্রতিদিন!
তোমার শেষে, তোমার মতো আরেকটি সময় দাঁড়িয়ে থাকে
রুক্ষ চোখে, লাল আগুনের জল
প্রতিবার, প্রতিদিন—
আমার গালের উপর এঁকে দেয়, আঁতুড় বাড়ির মানচিত্র!
সয়ে যাই— প্রতিবার , প্রতিদিন!
মুক্ত মঞ্চে বসি যখন, তোমার মতো আরেকটি তুমি
প্রেমের কথা বলে যাও
প্রতিদিন, প্রতিবার—
আমি বুঝতে থাকি, অবশেষে আমি শুধুই একজন প্রেমিক ছিলাম!
মন্তব্য