১.
তখনই এমন হয় যখন কিছু না হলেই ভাল্ লাগে।
তোমার দুঃখ চিৎ হয়ে করে চিৎকার ঐ ফুলের বাগানে
আমার দুঃখ তোমার দুঃখকে লাফিয়ে কোরে ক্রস্
বসে থাকে পোষা কুকুরের মতো
জড়োসড়ো দৃষ্টি...
২.
স্তব্ধতা, আরও স্তব্ধতা— আমাকে চিৎকার কোরে ওরা
নিজেদের কথা বলে। দূর-জানালা, অনেক হাওয়া, এসব
দেখেও, আমি আঁকি অন্য কোনো দৃশ্য। আর; অন্য
কোথাও, অন্য সুরে বেজে ওঠে যে-স্তব্ধতা, আমার ভেতর
সেই স্তব্ধতা, আরও স্তব্ধতা—
ওদের প্রতিদিন দেখা হয়...
৩.
ঘন দিন ঘনতর রাত
কান পেতে শুনি বৃষ্টির আওয়াজ
চোখে রেখে অথই পাপবোধ
জলে পা ফেলি, করি জীবনের ক্ষমাপ্রার্থনা।
বিমূর্ত জল— আদৌ আছে কিনা
এমন প্রশ্নে বৃষ্টি নামে জোরে
ধুলোপড়া রাস্তাঘাট হয়ে যায় অচেনা, সুন্দর।
ঘন দিন ঘনতর রাত
শান্তি উড়ে যায় যদি আকাশে
মানুষে-মানুষে যদি হয়ে যায় দেখা
তবে, চোখে-চোখ— মৃদু সুরে:
“আপনার ’পর বর্ষিত হোক বৃষ্টি।”
৪.
ধরো, সেদিন যে আমি রাস্তায় বের হয়ে প্রায় অবাক হতে
হতে একটা রিকশার ওপর
আর আমার পাশে বসা একজন কামিজ—
সে তো আর আমার প্রেমিকা না কিন্তু
ঠিক তখনই বজ্জাত বিল্ডিংগুলো
যেভাবে ঢেকে দিলো চাঁদটাকে—
সেটা তো রীতিমতো বিভৎস। আর
সেই সবুজ কামিজ, সে উঁকি দিয়ে খুঁজতে গেলে চাঁদ—
আমার মনে হতে থাকল— চাঁদটাই তো উঁকি দিতে চায়,
আমাদের রিকশায়; বেয়াদব বিল্ডিং!
অতঃপর বসন্ত-ভ্রমণের চাঁদ ঢেকে গেলে যখন আমাকে
শুনতে হলো:
“দেখসো? কীরকম লাল-জ্বলজ্বলে পলাশ ফুলের গাছ!”—
তখন আমি দৃশ্যের দিকে তাকালাম। আমার ভালো
লাগলো। কিন্তু মুগ্ধ আমি হতে পারলাম না। তখন মুগ্ধ
হওয়ার কোনো উসিলা আমি খুঁজি। এবং পাই।
নিরুত্তরে মনে-মননে সেই উসিলা জপতে থাকি আমি:
দুইটা চোখ, তাতে জোনাকির আলো
দুইটা চোখ, তাতে জোনাকির আলো
দুইটা চোখ, তাতে জোনাকির আলো...
সহসা আকাশ ফুঁড়ে স্বস্তি’র অবতার এসে বসলো
আমাদের রিকশায়...
ধরো,
সেদিন যে আমি রাস্তায় বের হয়ে অবাক হতে হতে আর
আমার পাশে বসা একজন কামিজ আমি এইমাত্র তার
কথা বললাম।
৫.
একটা বৈদ্যুতিক তারে শুয়ে আছে নিয়তির স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ।
টানা বারান্দায় বসে আছে এক নিঃসঙ্গতার ছায়া—
দুইটা কুকুর রাস্তার অঙ্গে নীরবে শয়ন; চাহিদা-বশে।
আকাশ যেন এক অসীম আইডিয়া...
মোনাজাতের মতো ভেসে আসছে পাখির প্রভাত-ধ্বনি।
বেড়ালের ম্যাঁও যেন গাণিতিক সূত্র—
বৃক্ষের খোয়াব, তবু মুকুলের নাস্তি; স্যাডনেস মাখা তাই
পাতার হলুদ।
বেখেয়াল কলা-গাছ এক ঘাড়-ভাঙা ঘোড়া...
যদি এরূপ পেইন্টিং হয় জগতের মুখ
তবে সমস্ত জুড়ে কেন মানুষের ছায়া?
মানুষ তো সর্বোচ্চ মানুষের মতো একা — একা তার
পোর্ট্রেইট — প্রকৃতির রঙে আঁকা...
মন্তব্য