কবি, কথাসাহিত্যিক, লিটলম্যাগ সম্পাদকের মুখোমুখি হবার বিশেষ বিভাগ ‘দশকথা’। দশটি প্রশ্ন বনাম দশটি উত্তর। আপাতভাবে সংক্ষিপ্ত এই সাক্ষাৎকার সিরিজ আশা করি পাঠকের ভালো লাগবে। আজ এই বিভাগে বিন্দুর মুখোমুখি হলেন কবি অসীম নন্দন।
১। আপনার প্রথম লেখা কবে এবং কীভাবে?
অসীম নন্দন: যতদূর মনে পড়ে, আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। স্কুল ছুটির পর আমার বেস্টফ্রেন্ড অন্তু আর আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরতেছিলাম। দুইজনে বৃষ্টিভেজা ব্যাপারটা দারুণ এনজয় করতেছিলাম। আমরা দুইজনে ঐসময় মাঝেমাঝেই হিমুগিরি করতে রাস্তায় বের হতাম। মানে হুমায়ূন আহমেদে সেই বয়সে দারুণ ফ্যাসিনেটেড ছিলাম, এই আরকি। তো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তখন একটা লাইন মাথায় আসছিল। সেই বয়সে আমি প্রতিদিনই ডায়েরি লেখার ট্রাই করতাম। তো সেই দিন রাতে ডায়েরি লিখতে বসে মনে হলো, কবিতা লেখার ট্রাই করা যেতে পারে। তখনই লিখেছিলাম। আসলে কবিতা ছিল না জিনিসটা। ছড়ার মতন কিছু লেখার ট্রাই করেছিলাম। যদিও এখন সম্পূর্ণ লেখাটা তেমন স্পষ্ট মনে নাই। আসলে নিজের কোনো কবিতাই আমার মুখস্ত নাই তেমন। তবে প্রথম দিকের লাইনগুলা এইরকম ভাবে শুরু করেছিলাম, 'বৃষ্টি পড়ে দূর আকাশে/ রাস্তায় মোরা হাঁটছি পাশে/ রিমঝিম ঝিম শব্দ আসে/ মনটা যেন আকাশে ভাসে'। এরপর আর মনে নাই। ঐসময় আমাদের 'বোকাটা' নামে একটা ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি গ্রুপ ছিল। অন্তু, আবির, ভুবন, চন্দন'দা আর আমি। এই আমরাই তখন বাসার ছাদে গানের আড্ডা দিতাম। আমি গান পারতাম না। গানের লিরিক্স আমার মুখস্ত থাকে না। ভুবন গান জানতো। তো ভুবন গাইতো আর আবির বালতি/ডেকচি বাজিয়ে তাল দিত। আবিরের হাতের তাল ভালো ছিল। চন্দন'দাও মাঝেমাঝে গাইতো। আমি আর অন্তু Rap করার চেষ্টা করতাম। ব্যাপারগুলা ফানি। রবীন্দ্রসংগীতেও আমরা Rap করতাম। তো এই আমরাই তখন আমার লেখা এই ছড়াটাকে সুর দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। অনেকটা Rap করার মতো বানাইছিলাম। সেই সময় ডেকচি/পাতিল বাজিয়ে বাজিয়েই আমরা ব্যান্ড করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। স্বপ্নপূরণ হয় নাই। জীবন তো আসলে আনপ্রেডিক্টেবল একটা জিনিস। স্বপ্নগুলা আমাদের নানানভাবে ইন্সপায়ার করে। আর জীবনের রিয়ালিটি আমাদের নানান ডাইমেনশনে ডিফারেনশিয়েট করে। যে কারণে আমাদের ব্যান্ড বানানো আর হয়ে উঠে নাই। এবং আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি জীবনের রিয়ালিটিতে। যাক, কবেকার কোন স্মৃতি মনে করতে গিয়ে কতোকিছু মনে পড়ে গেল। মানে ব্যাপারটা আমার জন্য নস্টালজিক আর আমি নিজেও একটু নস্টালজিক মানুষ।
২। কবিতা আপনার কাছে কী?
অসীম নন্দন: কবিতা আমার কাছে ডিসকোর্সের ভাষা। মানে আমার চিন্তায় আমার স্বপ্নে যা কিছুই ভাবনার বুদবুদ হয়, তাকেই ডিসকোর্স করার চেষ্টা হলো কবিতা। এইটা আসলে তো একরকম লিঙ্গুইস্টিক পলিটিক্স। মানে ধরেন, আপনাকে আমি মিষ্টি খাইতে নিষেধ করলাম। আর আপনি সেই মিষ্টিটাকেই আপনার ইমেজিনারি রিয়ালিটি বানায়ে ফেললেন। এইটা তো একরকম পলিটিক্স। আমরা যদি মহাভারত কিংবা রামায়ণের পদ্যগুলা পড়ি তাহলে এই পলিটিক্সের ব্যাপারটা কিছু কিছু বুঝতে পারবো। কবিতায় কীভাবে হাজার হাজার বছর ধরে প্রপাগাণ্ডা চালানো পসিবল; সেই ব্যাপারটারই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ এই মহাভারত-রামায়ণ। কিংবা লালন ফকিরের গীতিকবিতাগুলাকেও আমরা এই পলিটিক্সে রাখতে পারি। যা কিছু আমার যন্ত্রণা, যা আমি সোজাসাপ্টা বলতে চাইতেছি কিন্তু পারতেছি না--তাকেই ধরতে চাই কবিতায়। আর আমার দেখা স্বপ্ন এবং রিয়ালিটির সাথে রিলেট করার জন্যই আমি কবিতায় ডিসকোর্স করি নিজেকে। তাতে হয়তো পাঠক নিজেরে রিলেট করতে পারে, আবার না-ও করতে পারে। আর ভাষার যে বিবিধ ব্যবহার তা তো কবিতায় ধরা যায়। তবে সেই রিয়ালিটির রিলেশনে যাতে একটা হোঁচট খাওয়ার প্রবাবিলিটি থাকে, এই ব্যাপারটাও আমি কবিতায় চাই। হোঁচট না খেয়ে তো আমরা হাঁটতে শিখতে পারি না। নাকি?
৩। কবিতা মানুষকে কী দিতে পারে?
অসীম নন্দন: কবিতা মানুষকে ডাইমেনশনাল ইমাজিনারি রিয়ালিটির সামনে দাঁড় করায়া দিতে পারে। সেই সাহসটা জোগায় আরকি। ছোটবেলায় আমরা তো ছড়া শিখি। কেন শিখি? ননসেন্স রাইমের মধ্যে তো তখন আমরা সেন্স ইমাজিন করি। আম পাতা জোড়া জোড়া মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া। কিংবা খোকন খোকন ডাক পাড়ি। এইসব ননসেন্স রাইম যখন শিশুকালে আমাদের শোনানো হয়, তখন আমাদের সামনে একরকম ডাইমেনশনাল দুনিয়া হাজির হয়। আমরা কল্পনা করি, মনে কর যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। কাজলাদিদির কথায় আমরা বেদনার সুখ ফিল করতে শিখি। আর এইসব হবার সাথে সাথে লিঙ্গুইস্টিক ইমাজিনেশন আমাদেরকে সেন্সেটিভ হতে শেখায়। কবিতা মানুষকে হোপফুল হতে শেখায়। আবার এনার্কি করতেও শেখায়। হোপ এবং এনার্কি'র মাঝে অদ্ভুত ছন্দ আছে, সেটাই রিয়েলাইজ করায়। আমার বাবা একসময় তাঁর জীবনের গল্প বলতে গিয়ে নানান কথা বলেছিলেন। তিনি হয়তো কোনো পেপারে পড়েছিলেন, একজন লেখক মানুষের মননে দারুণ প্রভাব ফেলতে পারে। তো সেই কথাই আমাকে বলতে গিয়ে নিজের জীবনের গল্প বলেছিলেন। যখন আমার গ্র্যান্ডফাদার মারা যান, তখন বাবা বেকার মানুষ। রোজগার কীভাবে করা যেতে পারে তা নিয়ে কখনোই সেই সময়ের আগে তাকে ভাবতে হয়নি। আর লেখাপড়াও তিনি বেশি দূর পর্যন্ত করেন নাই। তো সেই অর্থচিন্তায় এক নতুন রিয়ালিটির সাথে তিনি পরিচিত হন। বাবার জীবনে ঐ পিরিয়ডটা হতাশার চরম সময় ছিল। আর সেই হাতাশার মাঝে রবিঠাকুরের 'গীতাঞ্জলি' ছিল বাবার অন্যতম সঙ্গী। তিনি আশা পেয়েছেন। বেঁচে থাকার উৎসাহ পেয়েছেন। সেই এডিশনের বইটা এখনো আমার বুকশেলফে আছে। আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি ৩০/৩৫ বছর আগেকার সেই কবিতার বই।
৪। আপনার কবিতা লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি৷ ভাবনা থেকে সৃজন পর্যায়ে নিয়ে যেতে কী করেন?
অসীম নন্দন: বিশেষ কোনো ফরম্যাট আসলে নাই। কোনো কোনো সময় হয়তো কয়েকটা শব্দ মাথায় এসে আমাকে ট্রিগার করে। আবার কখনো কখনো চিত্রকল্প/ভাব এসে ইগনাইট করে। তো এরকম ট্রিগার বা ইগনাইটেড হলে লিখে ফেলি। বিষয়বস্তু ঠিক করে ফরম্যাটে সেইরকমভাবে লেখা হয় না আরকি। কবি শামীম কবির সম্ভবত একসময় এরকম কিছু বলেছিলেন যে, কবিতা তাঁর কাছে হাগা-মোতা পাবার মতন ব্যাপার। আমার ক্ষেত্রেও অনেকটা সেইরকম। চাপ পাইলে লিখে ফেলি। এডিটের ব্যাপারটা আমি বেশি করতে পারি না। মানে একবার লিখে ফেললে তারপর সেই লেখার প্রতি কেন যেন মমতা কমে যায়! এই আরকি।
৫। আপনার লেখার অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
অসীম নন্দন: এই কোয়েশ্চেনটা খুব প্রেডিক্টেবলি ইরেটিটিং জিনিস। অনুপ্রেরণা আসলে রোটেট হতে থাকে। তাই নাম বলা শুরু করলে থামানো মুশকিল। কখনো কখনো একজন রিকশাচালক, একজন মুদি দোকানদার কিংবা একজন গ্যাংস্টারও আমাকে ইন্সপায়ার করে। কখনো কখনো অতন্দ্রিতা'র মেমোরি আমাকে ইন্সপায়ার করে। আবার টেক্সটের টেস্ট যেরকম সময়ের সাথে সাথে রিডিংয়ের সাথে সাথে চেঞ্জ হয়, সেইরকম অনুপ্রেরণাও বদলে যায়। একটা এক্সামপল যদি দিতে চাই তাহলে বলা যায়, আমার প্রথম বই উৎসর্গ করেছিলাম শার্ল বোদলেয়ার এবং একজন শ্যামাপাখি'কে।
৬। আপনার উত্থান সময়ের গল্প বলুন৷ সে সময়ের বন্ধু, শত্রু, নিন্দুক, সমালোচক— এসব কীভাবে সামলেছিলেন?
অসীম নন্দন: উত্থান হলেই পতন অবশ্যম্ভাবী। তাই আমি উত্থানও চাই না, পতনও চাই না। প্রথম বই প্রকাশের গল্প বলা যেতে পারে। নভেম্বর মাসের কনফেশন বইটা প্রকাশের ক্ষেত্রে রাতুল রাহা খুব হেল্প করেছিলেন। প্রথমে তারিকুল ইসলামের (কালপুরুষ) সহযোগীতায় একটা প্রকাশনীর সাথে কথা হয়েছিল। তখন তো আমি ঢাকা শহরটাকে সেই অর্থে জানি না। তারপর জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে হঠাৎ সেই প্রকাশনী জানালো, বই তারা পাবলিশ করতে পারবে না। তখন মেলারও দেরি নাই। এই সময় কবি রাতুল রাহা হেল্প করলেন। চৈতন্য প্রকাশনী'র রাজীব চৌধুরীর সাথে কথাবার্তা যা বলার সব রাতুল রাহা'ই বলেছিলেন। আর রাতুল'দাই রাত জেগে বুক-মেকিং দেখেছিলেন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো ২০১৬'র বইমেলায় শেষ পর্যন্ত আমার বই আর মেলায় ঢোকে নাই। মেলার পর অবশ্য বই হাতে পেয়েছিলাম। নিন্দুকেরে বাসি আমি সবচেয়ে ভালো। এইরকম যে একটা কথা প্রচলিত আছে তাকে আমি সমীহ করি। তবে আমার ব্যাড লাক, এখনও সেইরকম অর্থে নিন্দুক আমার চোখে পড়ে নাই। এইজন্য মাঝেমাঝে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে আমার সন্দেহ হয়! আমি চাই আপনারা আমার নিন্দা করেন! আমার বিষয়ে ডিসটিংগুইসড ক্রিটিক করেন। কিংবা স্রেফ প্রপাগান্ডাও করতে পারেন। বর্তমান সময়ে অবশ্য আমরা সবাই জানি যে, ঢাকা তথা বাংলাদেশের লিটারেচার অনেকটা গ্যাং নিয়ন্ত্রিত। অবশ্য এইটা শুধু আজকের দিনের ঘটনা না। যুগে যুগে দেশে দেশে এই ব্যাপার ছিল এবং আছে। সেই জন্যই কলকাতায় হাংরিয়ালিস্টদের সাথে কৃত্তিবাসের ক্যাচাল ছিল। ঢাকার তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন চিপায়-চাপায় বিভিন্ন গ্যাংয়ের আড্ডা চলে। ইটস লাইক গ্যাংওয়ার। ঢাকায় আমি মাত্র তিন বছর যাবত আছি। এর আগে আমি ঢাকা শহর চিনতাম না। অবশ্য এখনও চিনি না। সে যাক। ঢাকায় এসে বিভিন্ন পিকিউলিয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে এইখানে বলা যায়, আমার দ্বিতীয় কবিতার বই বৃক্ষরোপণ গান'র কাজ করতে গিয়ে বাঙ্ময়'র সাথে পরিচয় হয়। মানে বাঙ্ময় থেকেই বইটা পাবলিশ হয়েছিল। বাঙ্ময়'র মতো স্ট্রাগলিং পিরিয়ড আমারও চলতেছে। এখনও চলতেছে। তো বাঙ্ময়'র সূত্র ধরেই পরিচয় হয় বিন্দু'র সাথে। আর লিটলম্যাগ বিন্দু যে স্ট্যান্ডপয়েন্ট হিসেবে কাজ করে, সেই স্ট্যান্ডপয়েন্টের সাথে কোথাও যেন মিলে যায় আমাদের। তারপর এই ওয়েবজিনের দুনিয়ায় আমরা কাজ করতে শুরু করি একসাথে। আমাদের সপ্তাহে সপ্তাহে দেখা হওয়া লাগে না। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা লাগে না। আমরা স্রেফ লিটারারি এজেন্ড কিংবা গ্যাংস্টারের মতো কাজ করি। এই আরকি।
৭। সাহিত্য দিয়ে কেউ দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চায়, কেউ স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে চায়, কেউ সন্ত্রাস–মৌলবাদ ঠেকাতে চায়, আরো নানাকিছু করতে চায়। আপনি কী করতে চান?
অসীম নন্দন: আমি একটা সেক্যুলার দুনিয়ার স্বপ্ন দেখি। বাংলাদেশকে যদিও কেউ কেউ সেক্যুলার স্টেট বলে উপস্থাপন করতে চায়, তবে আমি বলবো আমদের কথায় এবং কাজে বিস্তর অসংগতি আছে। আর আমি সংবিধান মতে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু আস্থা রাখাটা কঠিন হয়ে গেছে। মানে আমরা তো দেখতেছি এইখানে ফ্যাসিবাদের প্র্যাকটিসই হয় বেশি। আর যদি বলি আওয়ামীলীগের কথা, তাহলে তো ডিটেইলে যাওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসাবে তো আমরা আওয়ামীলীগকেই প্রধান হিসেবে জেনে এসেছি। আমি বলতেছি না বামফ্রন্ট বিপক্ষে কাজ করেছে। কিন্তু বামফ্রন্ট তো কন্ট্রাডিক্টরি বেশ কিছু কাজের কারণে প্রধান সারিতে আসতে পারে নাই। এবং আমজনতার থেকে কেমন যেন বিচ্ছিন্নই থেকে গেছে। অথচ এই আওয়ামীলীগের সময়েই তো অভিজিৎ রায়-সহ ব্লগারদের নির্মমভাবে হত্যা করলো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এখনও তো বিচারকার্য সম্পন্ন হয় নাই। বিচারহীনতার এই কালচার কবে ধ্বংস হবে? এই আওয়ামীলীগের ক্ষমতাকালেই তো হলি আর্টিজেনের জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে গেল। রামুতে ঘটলো মাইনরিটি'র উপর হামলা। আর পাহাড়ী কমিউনিটি'র উপর সেটেলারদের পাওয়ার প্র্যাকটিস তো চলতেই আছে। বাউলগানের উপরও আঘাত করা হয়েছে এই সময়ে। তারপর ভাস্কর্য ইস্যু তো আছেই। মানে আমরা যে কালচারাল ডেভেলপমেন্ট এক্সপেক্ট করেছিলাম সেইটাও অন্যান্য এক্সপেকটেশনের সাথে সাথে ঘোলা হয়ে গেছে। এই কিছুদিন আগেই নারায়ণগঞ্জের জনৈক কাউন্সিলর সেই অঞ্চলে গানবাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে গিয়ে আলোচিত হলেন। তো মনোনয়ন দেবার সময় কি এইসব ব্যাপার খুঁটিনাটি দেখা উচিত নয়? আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারমূল্যের ব্যাপারটা তো আমরা প্রতিদিন বাজারে গিয়ে টের পাই। এবং প্যান্ডেমিকের সময়ে দেখলাম স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থার করুণ অবস্থা। অবশ্য শিক্ষাব্যবস্থার রুগ্ন অবস্থা তো আজকের নতুন নয়। এই রোগ বহু প্রাচীন। অথচ আওয়ামীলীগ ছাড়া আমাদের হাতে অন্য কোনো অপশনও যে নাই, তা আমরা মোটামুটি ভালোভাবেই জানি। এখন আমি আসি আমার সাহিত্যের কথায়। সাহিত্য করে আমি দুনিয়াটা রাতারাতি পাল্টায়ে ফেলতে পারবো না, জানি। কিন্তু আমি এটলিস্ট সিগনেচার রেখে যেতে চাই। মানে আমার সময়ে দেখা সোসিও পলিটিক্স, সিভিল পলিটিক্স, জেন্ডার পলিটিক্স এবং এরকম সকল কিছুরই একটা প্রমাণ আমি রেখে যেতে চাই।
৮। যে জীবন আপনি এত বছর যাপন করলেন, তা আপনাকে আলটিমেটলি কী শিক্ষা দিলো?
অসীম নন্দন: জীবন আমাকে প্রতিদিনই নতুন নতুন শিক্ষা দেয়। নির্মোহ এবং কল্যাণকর হয়ে উঠাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। মানে আমাদের আরবান সোসাইটিতে এই যে Rat-race চলতেছে, সেই ফাঁদে পা দিলেই অতৃপ্তির আগুনে দগ্ধ হতে হয়। তাছাড়া আর কোনো নিয়তি থাকে না তখন। বাপ-দাদা'র মুখে যেমন শুনেছি, 'মোটা ভাত মোটা কাপড়' থেকেও সুখী হওয়া যায়। আর সেই জন্য জীবনকে আলতো করে ধরে রেখে উদযাপন করলে, মনে হয় 'লাইফ ইজ বিউটিফুল'।
৯। করোনা তথা মহামারী আপনার লেখালিখিতে কোনো প্রভাব রেখেছে কি?
অসীম নন্দন: প্যান্ডেমিক অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে। মানুষের মৃত্যুর ভয়ের রঙ সম্পর্কে আমি জেনেছি। এই সময়ে আমি দেখেছি, মানুষ রোগে ভুগে মরতেও রাজি আছে তবে না-খেয়ে ক্ষুধায় মরতে মানুষ রাজি নয়। এটাই তো জীবনের সততা।
১০৷ পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
অসীম নন্দন: পাঠকের উদ্দেশ্যে আমার কথা একটাই, কিপ রিডিং এন্ড এনজয় দ্যা ওয়ার্ল্ড। যারা বছরে মানে ১২ মাসে ৬টা বইও পড়েন না তাদের জন্য সমবেদনা। আর যারা বছরে ৩০০'র বেশি বই পড়ার চেষ্টা করেন, তাদেরকে স্যালুট। কিন্তু এক্সকিউজ মি। মাফ করেন। লাইফে এত রাশের কিছু নাই। হজম করাটা জরুরি। বছরে হাজারটা করে বই পড়লেও এক জীবনে দুনিয়ার এক শতাংশ বইও আপনি পড়ে শেষ করতে পারবেন না। তাই বইটা বন্ধ করে গিয়ে আকাশের নিচেও একটু দাঁড়ান, বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেন। সিলেক্টিভ মননশীল বই পড়েন। ৫০টা পড়লেই এনাফ। আর যারা মোবাইলে শুধু টিকটক, পাবজি আর ফেসবুক দেখেই ভাবতেছেন--লাইফ ইজ সো মাচ থ্রিলিং, তাদের জন্য মেট্রোরেল ডেভেলাপ করা হইতেছে! আপনি চাইলে মেট্রোরেলে চড়ে নেপচুনে চলে যেতে পারেন! টিকেট বুকিং ইজ অন!! এবং সবশেষে হ্যাপী বুক রিডিং।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
কবি অসীম নন্দন ১৯৯৪ সালে টাংগাইল জেলার মধুপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। প্রকাশিত কবিতার বই দুইটি। বৃক্ষরোপণ গান (২০১৭, বাঙ্ময়), নভেম্বর মাসের কনফেশন (২০১৬, চৈতন্য)।
মন্তব্য